#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_১৪

বাসায় ফিরতে রাত হলো আসাদের।হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসার পর সকল বন্ধুদদের সাথে আড্ডা দিয়েছে সে।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসল আসাদ।মনে মনে ভাবলো,আজকে যা দেখল তা কি চোখের ধোঁকা ছিল নাকি সত্যিই দেখেছিল সে।চোখ দুইটি দেখার পর অবচেতন মনটা শুধু তাকেই খুঁজছিল। কিন্তু আশানুরূপ কাউকে খুঁজে পাইনি আসাদ।

“আব্বা আসবো?”

“আরে মা!তোমার আবার পারমিশেন লাগবে নাকি?আসতো।”

“অব্যশই লাগবে।ছেলে ছোট হলে সেটা এক কথা ছিল।ছেলে এখন আমার বড় হয়ে গেছে।কয়েকদিন পর বিয়ে করে বউ আনবে।তো নক করে আসতে হবেনা।” ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন সেলিনা মীর।

“মা কি বলতে চাইছো বলো তো?আজ তোমার কথায় আমি ঘোর প্যাঁচের অাভাস পাচ্ছি।হা…হা..হা..!!”

“একদম হাসবিনা।আমি এডভোকেট মানুষ। এত ঘোরায় প্যাঁচায় কথা বলতেও পারবোনা।তাই সরাসরি বলি কেমন!”

“হা…হা…আমি জানতাম!দেখি এখন বল,কি ব্যাপার?”

“আমি তোর বিয়ের জন্য একটা মেয়ে পছন্দ করেছি আসাদ।” মায়ের কথা শুনে চমকে উঠলো আসাদ।মুখের হাসিটাও মেঘে ঢেকে গেল তার।

“শোন বাবা, মেয়েটা খুব ভাল।মেয়েটা ডাক্তার।ওই সাফার বান্ধবীর বোন।খুব মিষ্টি দেখতে।সাফা আর তুলিতো ওকে মিষ্টি আপু বলেই ডাকে।”

“মা, এখন আমি বিয়ের জন্য প্রস্তুত না।”

“এমন করলে তো হবেনা আসাদ।বিয়ে তো একদিন করতে হবে, তাই না।আর তোকে এখনই বিয়ে করতে বলছিনা।তুই শুধু মেয়েটার সাথে একবার দেখা কর।তারপর না হয় সিদ্ধান্ত নিস।” মায়ের কথা শুনে মুখটা নিচু করে ফেলল আসাদ।সে জানতো একদিন না একদিন এই বিষয় তার সামনে আসবেই।কিন্তু মন কখনো সায় দেয়নি এই বিষয় নিয়ে ভাবার।এই ছয়টা বছর সে কোন মেয়েকে নিয়ে ভাবেনি।কি এমন ছিল সেই হঠাৎ দেখার ভালোবাসায় যা তাকে এখনো ছয় বছর পিছনে আটকে রেখেছে। বা বলা যায় যে সে নিজে সেচ্ছায় আটকে আছে।

“আসলে আব্বা মেয়েটার জন্য আমার খুব কষ্ট হয়।খুব কষ্ট করে মেয়েটা আজ এতদূর এসেছে।” মায়ের কথা শুনে মুখ তুলে তাকল আসাদ আর বলল,”কেন মা?”

“আসলে মেয়েটার মা বাবা থেকেও যেন নাই।তুলির মা বাবার কাছেই থাকে মেয়েটা।তুলির আপন মামাতো বোন সে।শুধুমাত্র গায়ের রঙের কারনে তারা বাবা তার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দিতে চেয়েছিল।কিন্তু মেয়েটার সাহস আছে বলতে হবে।তা না হলে কি নিজের বিয়েতে নিজে পুলিশ ডেকে বিয়ে ভাঙ্গতে কয়জনে পারে বল?”

আসাদ আবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল আর বলল,”শুধুমাত্র গায়ের রঙের কারনে এইরকম করলো!”

“হ্যা রে।কিন্তু মেয়েটা এতোটা কালো না শ্যাম বর্ণের।কি মায়াবী চেহারা তার।তোর বাবা তো বলেই ফেলল মেয়েটা নাকি দেখতে তোর দাদীজানের মতো।তাছাড়া ওর কাছে আমি ঋণী।”

“বুঝলাম না মা। ঋণী মানে?”

“সেদিন যদি মেয়েটা না থাকতো তাহলে তোর বাবাকে বাচাঁনো সম্ভব হতো না।”

“এইসব কি বলছ তুমি? কি হয়েছিল বাবার?কই তোমরা তো আমাকে কিছুই জানাওনি!”

“তোর তখন রিসার্চের কাজ চলছিল তাই তোকে জানায়নি। সেদিন হঠাৎ শপিংমলে তোর বাবা হার্টস্টোক করে ফেলে।আমি তো পাশেই ছিলাম কিছুই তো বুঝতে পারিনি।সেখানে বসেই কাঁদতে লাগলাম।কি করব বুঝতেই পারছিলাম না।কোথা থেকে মেয়েটা আসলো আর তোর বাবাকে চেক করল।আমাকে আশ্বস্ত করলো যে তোর বাবার কিছুই হয়নি।তারপর এম্বুলেন্সকে ফোন দিয়ে আনিয়ে হসপিটালে ভর্তি করালো।পরে জানতে পারলাম মেয়েটা সেই হসপিটালের একজন ইন্টার্ন ।এখন তো অব্যশ ডাক্তার সে।তখন যদি মেয়েটা না আসতো তাহলে…হয়তো তোর বাবা আজ…” কথাটা বলেই আঁচল মুখে চেপে কাঁদতে লাগলেন সেলিনা মীর।

মাকে একহাতে জড়িয়ে ধরল আসাদ।বাবার এমন বিপদের সময় পাশে ছিলোনা সে।কতটা ব্যর্থ সন্তান সে।মেয়েটার প্রতি কৃতজ্ঞবোধ করল সে।

চোখ মুছে সেলিনা বেগম বললেন,”জানিস তুই মেয়েটা খুব পর্দাশীল।সেদিন তো আমি ওর মুখ দেখিনি।সাফার সাথে তুলির বাসায় যখন গেলাম সেদিন ওকে তুলির বাসায় দেখে আবাক হয়েছিলাম।আমি না চিনলেও সে আমাকে ঠিকি চিনে ফেলেছিল।আব্বা, মেয়েটা একটু শ্যাম বর্ণের হতে পারে কিন্তু ওর মনটা খুব আলোকিত।ইসলামকে যে জানে,মন দিয়ে মানে এমন মেয়েদের মন অব্যশই কুলষিত হবেনা।তুই শুধু একবার ওকে দেখ।তোর পছন্দ হলে আমরা কথা আগে বাড়াবো তার আগে না।”

“কিন্তু মা আমি…..”

“দেখতেই তো বললাম শুধু।এইটুকু কর মায়ের জন্য।”

মা বাবার জন্য কখনো বেশি কিছু করা হয়নি।আর যার জন্য সে অপেক্ষা জিনিসটা করবে সে তো নেই।তাহলে কার জন্য এই ব্যর্থ অপেক্ষা!!তার চাইতে মা বাবার খুশিটাকে এখন প্রাধান্য দেওয়া জরুরি।

“ঠিক আছে মা।যেমন তুমি চাও।”
আসাদের সম্মতি পেয়ে খুশি মনে চলে গেলেন সেলিনা মীর।আর ফোন দিলেন তুলির মা স্বপ্না চৌধুরিকে।

________________________________
কলেজ শেষে তুলিকে বিদায় জানিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে লাগল সাফা।ড্রাইভাররকে বলেছিল ঠিক সময়ে আসতে কিন্তু এখনো তার দেখা নাই। তাই বিরক্তি নিয়ে দাড়িয়ে রইল সাফা।শীত শীত অনুভব হচ্ছে তার।দূর থেকে গাড়িতে বসে সাফাকে দেখছিল সাব্বির।ড্রাইভারের ডাকে ধ্যান ভাঙলো তার।

“স্যার গাড়ি কি টান দিমু?”

“না,একটু দাড়াও।”কথাটা বলেই সাফার দিকে তাকালো সে।খেয়াল করল কলেজের গেইটের পাশে কিছু ছেলে সাফাকে দেখে শিস বাজাতে শুরু করেছে।এতে যে সাফা বিরক্তবোধ করছে তা ওর চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।হাতকে মুঠো করে দৃশ্যটা দেখতে লাগল সাব্বির।

প্রছন্ড রাগ লাগছে সাফার।পাাশের ছেলেগুলো সে কখন থেকে শিস বাজিয়ে আজেবাজে মন্তব্য ছুড়ছে তার দিকে।মাথার কাপড়টা আরো ভাল করে টেনে দিল সে।হঠাৎ দেখলো ঐ ছেলেগুলোর মধ্যে থেকে একজন তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে খুব বাজে ভঙ্গিতে কথা বলছে।চাইলে সাফা ছেলেগুলো কে উচিত শিক্ষা দিতে পারতো কিন্তু ঝামেলাা বাড়বে বলে কিছুই বলছেনা সে।সাফার কিছু না বলাতে বাকী ছেলেগুলোও যোগ দিল ঐ ছেলেটার সাথে।

“কি গো মেডাম,একলা নাকি?”

“আমরাও একলা,আপনিও একলা।”

“সাথে তো কেউ নাই মনে হচ্ছে,ও মেডাম!”

“ভাই,আমি আছি সাথে।”পিছন থেকে বলে উঠল একজন।কারো কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরে তাকালো বখাটেগুলো।তাদের সাথে তাকাল সাফাও।সাব্বিরকে দেখে সেখানেই বরফের মতো জমে গেলে সাফা।সাব্বির ক্রাচে ভর দিয়ে সেখানে এলেই দৌড়ে পাললো ছেলেগুলো।সাফার সামনে এসে সে বলল,
“জানো তো পর্দা ছাড়া মেয়েরা ডাকনা ছাড়া খাবারের মতো।যেই খাবারের উপর সারাক্ষন নোংরা মাছিরা ঘুরে বেড়ায়।আজ পর্দা মেইন্টেন করে চললে এমন পরিস্থিরর সম্মুখীন হতে হতো না।ইসলাম তোমাদের সুরক্ষার জন্য ঢাল হিসেবে এই পর্দা ফরজ করেছে অথচ তোমরাই নিজেদের ভালো বুঝোনা।”

সাব্বিরের কথায় খুব কষ্ট পেল সাফা।বোরকা, নেকাব না পড়লেও যথেষ্ট শালীন কাপড় পড়ে সে।তবুও এমন কথা শুনতে হলো তাকে।

“আর আপনি জানেন তো,ইসলামে মেয়েদের উপর পর্দা ফরজ করার আগে ছেলেদের উপর পর্দা ফরজ করা হয়েছে ।আর ছেলেদের পর্দা হলো তাদের চোখ।তাদের বলা হয়েছে বেগানা নারী দেখলে চোখ নামিয়ে নিতে।তো এখানে ওরা সেটা না করলো দোষ না আর আমরা মেয়েরা যথেষ্ট শালীন হয়ে চলাফেরা করলেই দোষ। তাই না।”
আসলেই তো সাফার কোন দোষ নেই।ছেলেদের তো বলাই হয়েছে বেগানা নারী দেখলেই চোখ নামিয়ে রাখতে কিন্তু সেটা মানে কয়জন!নিজেকে সামলে নিয়ে সাব্বির বলল,”গাড়িতে উঠো!”

সাব্বিররে গাড়ি সামনেই দাড়িয়ে আছে।কিন্তু সাফা নিজ জায়গা থেকে একটুও নড়ল না।

“কি হল কথা কানে যায় না!গাড়িতে উঠো।” সাব্বির এইবার ধমক দিয়ে বলল।সাব্বিরের ধমকে গাড়িতে উঠে বসলো সাফা।সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে পড়ল সাব্বির।ফ্রন্ট মিররে একবার সাফাকে দেখে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলল,”মীর ভিলা চল।”

চলবে……

®নওশিন সালসাবিল।

[ আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষদের প্রতি পর্দা পালনের বিষয়টি কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘(হে নবি! আপনি) মুমিন (পুরুষদের) বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, এটা তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। তারা যা কিছু করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত।এবং (হে নবি! আপনি) ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচু রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তাছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে;এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত দাসি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’
(সুরা নূর : আয়াত ৩০-৩১) ♥ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here