#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_১৩
বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে নিজের রুমে এসে বিশ্রাম নিচ্ছিল আসাদ।মায়ের ডাক শুনে বিছানায় আধাশোয়া হয়ে বসল সে।
“মা কিছু কি বলবে?”
“না আব্বা, কিছুনা।শুধু তোকে দেখতে আসলাম। ”
“ওহ মা,আমিতো সবসময় এখন এখানেই থাকবো।তোমার কাছে।”
“তবুও মনে হচ্ছে এটা কোন স্বপ্ন।ঘুম থেকে উঠলে দেখবো তুই নেই।”
“মা,কেন তুমি আমায় এতো ভালোবাস?”
“তুই আমার কলিজার টুকরা।বলে বুঝাতে পারবোনা কতটা মিস করেছি তোকে এই ছয় বছর।”
মায়ের এমন কথাশুনে আসাদ জড়িয়ে ধরল তার মাকে।কপালে চুমু দিয়ে বলল,
“আর কখনো তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না আমি।”
মায়েদের ভালোবাসা আসলেই অন্যরকম।মমতা, ভালোবাসা আর নিরাপত্তায় মুড়ে যে আবরন এই সম্পর্ক সৃষ্টি করে অন্য সম্পর্কে তা শতভাগও করেনা।আমরা মানুষেরা সময় থাকতে এই সম্পর্কের ও এই ভালোবাসার কদর করিনা।হারিয়ে গেলেই বুঝি মা মানুষটা ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ আপন ছিলোনা। একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামী (সা:) রাসুল (সা:)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? জবাবে রাসুল (সা:) বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন, আছেন। রাসুল (সা:) ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত। ইসলাম মাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন, মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম’- (ইবনে মাজাহ-মিশকাত, পৃ. ৪২১)।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানে হাটছিলো আসাদ।হাতে তার এক মগ কফি।ফোনটা বেজে উঠাতে পকেট থেকে বের করল সে। এত সকালে জিহানের ফোন দেখে কিছুটা আবাক হলো আসাদ।
“এত সকাল সকাল ফোন দিলি।ঘুম ভাঙ্গলো কেমনে তোর হুম…!!”
“সিঙ্গেল থাকলে হয়তো পারতাম না।এখন পেরেছি কারন আমি এখন পুরোদমে সাংসারিক বুঝলি!”
“ও হ্যা! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।তো কেমন আছে মিস প্যারা সরি আই মিন মিসেস শাহিনা?”
“আজ এতো সম্মান দিলি যে আমার বউকে?”
“হা..হা..হা..তখন সে তোর গার্লফ্রেন্ড ছিলো মানে অনিশ্চিত কেউ আর এখন সে তোর বউ মানে তোর রাব্বাতুল বাইত। সম্মান তো দিতেই হবে নাকী!”
“ওরে বাবা!বুঝলাম কিন্তু রাব্বাতুল বাইত মানেটা কি?”
“আরবিতে প্রিয়তমা স্ত্রীকে বলা হয়, ‘রাব্বাতুল বাইত – ঘরের রাণী’।
“ওহ আজকেই শাহিনাকে বলবো সেটা।একদম খুশি হয়ে যাবে ও।আচ্ছা শোন তোর হসপিটাল জয়েনিং লেটার আজকে পেয়ে যাবি।”
“ওকে।থ্যাংক্স দোস্ত।”
“মেনশেন নট।আজকে ফ্রি আছিস তুই?”
“হুম আছি তো কেন?”
“আজ হাসপাতালে ব্লাড কেম্পিং হচ্ছে।আমাকে ইনভাইট জানানো হয়েছে পরিদর্শন করার জন্য।যাবি তুই?”
“হাসপাতালে ব্লাড কেম্পিং!কারা আয়োজন করেছে এটা?”
“হাসপাতালের নিউকামার্স ডাক্তাররা।প্রতি ছয় মাস পর পর করে থাকে ওরা।যাতে হাপাতালের ব্লাড ব্যাংকে রক্তের অভাব না হয়।”
“খুব ভালো উদ্যােগ।শুনে খুব ভালো লাগছে যে নতুন ডাক্তাররা তাদের দায়িত্ব খুব ভালো করে বুঝছে।কবে বের হবি?”
“এই তো দশটার দিকে।”
“ওকে তাহলে দেখা হচ্ছে আল্লাহ হাফেজ।”
_____________________________
প্রায় এগারোটা নাগাদ হাসপাতালে পৌছাল আসাদ আর জিহান।স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের গেটের সামনে দাড়ালো আসাদ। নিজের বিদ্যাস্থান ও পুরানো কর্মস্থানে ফিরে এসে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে আসাদের।অনেক কিছু বদলে গেছে।নতুনত্বের ছোঁয়ায় আরো অপূর্ব হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ। পরক্ষনে রাবেয়ার কথা মনে পড়ে গেল তার।ছয় বছর আগে ঠিক এই জায়গায় শেষবার দেখা হয়েছিল তাদের।চাপা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল আসাদ।
“কিরে চল ভিতরে।”
“হ্যা চল।”বলে হাসপাতালের ক্যান্টিনের অপজিট পাশে
গেল তারা।বিভিন্ন ধরনের টাবু টাঙিয়ে রক্তপ্রদানের কার্যক্রম চলছে।ডাক্তার আর সেচ্ছাসেবক দলের সবাই ব্যস্ত সময় পার করছে ।আসাদ কিছুটা দূরে দাড়িয়ে সব পর্যাবেক্ষন করছিলো।হঠাৎ তার চোখ গেল কালো বোরকা পড়া এক মেয়ের দিকে।গায়ে তার ডাক্তারি এপ্রোন।নিচু হয়ে ঝুকে রক্ত নেওয়ার কাজ চালাছে সে।পিছন থেকে মেয়েটার অবয়ব খুব চেনা পরিচিত মনে হচ্ছে আসাদের।মেয়েটা যখন ঘুরে দাড়ালো তখন কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে দাড়ালো আসাদ।নিজ চোখে বিশ্বাস করতে পারছেনা সে।কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়।হয়তো ভুল দেখছে সে।কিন্তু চোখ দুইটি চিনতে কোনরকম ভুল হতে পারেনা তার।আজ ছয়টা বছর মনের গহীনে স্বযত্নে এঁকে রেখেছিল চোখ দুটিকে সে।পিছন থেকে জিহানের ডাকে হুশ ফিরলো আসাদের।
“কিরে এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন?”
“হু!!..হ্যা..হ্যা…এক মিনিট।” কথাটা বলে পুনরায় সেদিকে তাকালো আসাদ।কিন্তু মেয়েটিকে আর দেখতে পেল না সে।কোথায় যেন হারিয়ে গেল মেয়েটা।
“আমি কি সত্যি তাকে দেখলাম নাকি এটা আমার ভ্রম ছিলো শুধু।কিন্তু মেয়েটার চোখ গুলো যে দেখতে একদম রাবেয়ার মতো ছিলো।”মনে মনে ভাবলো আসাদ।তারপর থেকে সারাটাদিন অবচেতন মন শুধু রাবেয়াকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলো আসাদের।
______________________________
“আর কইবার বলবি,আমি বলবো তো আপুকে।সাফা,এবার তো ফোনটা রাখ!”
“না তুলি।আগে তুই বল আংকেল আন্টি আর মিষ্টি আপুকে পরশু পার্টিতে আনবি।”
“দেখ আব্বু আম্মু আসবে সেটা নিশ্চিত থাক।কিন্তু আপুরটা বলতে পারিনা।আসবে বললেও দেখা যাবে শেষ মুহূর্তে হসপিটাল থেকে কোনো না কোন ইমার্জেন্সি এসেছে বলে উধাও হয়ে যাবে।আর আপুকে কি দরকার তোর?তোর বেস্ট ফ্রেন্ড আমি, মিষ্টি আপু না বুঝলি!”
“হ্যা বাবা জানি জানি।রাগ করছিস কেন?মিষ্টি আপুকে আমার খুব ভালো লাগে তাই তো বললাম।আর আম্মুও বলেছে আপুকে বলতে।প্লিজ তুই আপুকে যেভাবে পারিস নিয়ে আসবি।ওকে।”
“ওকে ফাইন!আমি চেষ্টা করে দেখবো।”
“ওকে জানেমান!!এই না হলি আমার বেস্ট ফেন্ড!”
“হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।আচ্ছা তোর আসল মতলবটা কি বলতো।”
“হা.. হা..এই যা ধরে ফেললি!!মতলব হলো তোর মিষ্টি আপুকে আমি আমার সুইট ভাইটার বউ করতে চাচ্ছি বুঝলি।”
“কিহ!!তুই কি সত্যিই বলছিস?সাফা দেখ ফাইজলামি করবি না বলে দিলাম।”
“আরে সত্যি বলছি।আম্মুতো একপ্রকার আন্টির সাথে কথাও বলে ফেলেছে।তোর আম্মু বললো আপুর সাথে কথা বলে জানাবেন আর আম্মুও এদিকে ভাইয়ার সাথে কথা বলে নিবে।”
“আল্লাহ,আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছেনা।এক মিনিট, ভাইয়াকে তো কখনো দেখলামও না।”
“পার্টিতে আসবি না তখন দেখে নিস।আর শোন আপুকে এইসব কিছু বলিসনা।”
“ওকে ওকে বলবো না।আচ্ছা রাখি এখন।আল্লাহ হাফেজ।”
চলবে….
®নওশিন সালাবিল