#হঠাৎ_দেখা
#পর্ব_০৫
বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে সাথে ধমকা হওয়া। দুই বন্ধুর হাতে ধোয়া উঠা গরম কফি।
“হা..হা..মিস প্যারা আমাদের বন্ধুটাকে প্যারা দিবে আর আমাদের ডাক্তারসাহেব তা গ্লুকোজ এর মতো গিলে নিবে।”
সাব্বিরের মুখে ডাক্তারসাহেব কথাটা শুনে আসাদের কানে রাবেয়ার কন্ঠে নিশ্চুপস্বরে বলা ডাক্তারসাহেব বলাটা বেজে ওঠল।সাথে দেখা দিল মৃদু হাসির ঝলক আসাদের ঠোঁটের কোণে।
“কিরে এইভাবে মিট মিট করে হাসছিস।প্রেমে পড়লি নাকী।”
“তুই কিভাবে জানলি?”আশ্চর্য হয়ে প্রশ্নটা করল আসাদ।
“তুই যাকে সেই মায়াবী চোখের কথা বলেছিলি সে কিন্তু আমার সিক্রেট ইনফর্মার ভুলে যাসনে।” কথাটা বলেই চোখাচোখি হয়ে গেল দুই বন্ধুর। সাথে সাথে হেসে উঠল তারা।
আসাদ এই দুইদিন ধরে অপেক্ষা করছে রাবেয়ার।আজ আসার কথা তার।তবে কখন আসবে তা সে জানে না।কেন জানি খুব অস্থির লাগছে তার।মানুষের মুখে লাভ এট ফার্স্ট সাইট শুনেছে সে।তবে কখনো বিশ্বাস করেনি।তবে আজ সে বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছে।নিজেই তো এর চাক্ষুস প্রমান।
“এখনো আসছেনা কেন?”হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার করিডোরে দাড়িয়ে বিড় বিড় করতে লাগল আসাদ।এই করিডোর থেকে হাসপাতালের সামনের সব অংশ স্পষ্ট চোখে পড়ে।
“এত অস্থির হচ্ছিস কেন বলতো? মেডিকেল এক্সামের রেজাল্টের দিন বা ওটিতে এসিস্ট করার সময়ও তো এত নার্ভাস হতে দেখিনি তোকে।বলতো কি হয়েছে আজ তোর।” কথাটা বলেই করিডোরের রেলিং এর উপর বসে পড়ল জিহান।
জিহানের কথার কোন উওর না দিয়ে পায়চারি করতে শুরু করলো আসাদ।প্রথম প্রেম বলে কথা।কবিরা বলেন প্রথম প্রেমে পড়ার মতো সর্বনাশা এই পৃথিবীতে আর দুইটা নেই।
এদিক ওদিক তাকাতে গিয়ে আসাদের হঠাৎ চোখ গেল হাসপাতালের ডানপাশের ক্যানটিনের বাইরে দাড়িয়ে থাকা বোরকা পড়া এক মেয়ের দিকে।হাতে তার কিসের যেন প্যাকেট।আর অন্য হাতে পানির বোতল।দূর হওয়াতে চেহারা এত বুঝা যাচ্ছে না তবে অবয়বটা চিনা চিনা লাগছে আসাদের।অবয়বটা যতই সামানে এগিয়ে আসছে ততই পরিচিত মনে হচ্ছে তার।
পছন্ড গরম পড়ছে আজ।আসার সময় ছাতা নিয়ে আসলেও রোদ্রতাপে ঘেমে একাকার এখন রাবেয়া।পানির বোতলের মুখ খুলে কিছুটা পানির ছিটকে দিল চোখে মুখে।তারপর রুমাল দিয়ে ভালো করে মুখহাত মুছে নিল সে।পুনরায় নিকাবে নিজেকে আবৃত করে হাটা শুরু করল হাসপাতালের দিকে।
উপর থেকে প্রথমে নেকাব ছাড়া ঠাহর করতে না পারলোনা আসাদ।কিন্তু মেয়েটি যখন নেকাব পড়ল তখন চিনতে আর দেরী হলো না তার।
“আরে এইভাবে দৌড়ে কই যাচ্ছিস তুই।আসাদ আস্তে নাম।”পিছন থেকে জিহানের ডাক যেন তার কান অবদি পৌছালো না।
হাসপাতালের ঢুকার সময় রাবেয়ার অনেক নার্ভাস লাগছিলো। দুইদিন অপেক্ষার পর আজ আবার দেখা হবে।কিন্তু কেন যেন খুব অস্বস্তি হচ্ছিল তার। কি জানি চিনবে কিনা?কেমনে খোঁজ মিলবে তার।কাউকে জিজ্ঞেস করবে নাকী অপেক্ষা করবে।এইসব ভাবতে ভাবতেই ওয়ার্ডের সামনে এসে দাড়ালো সে।
“আসসালামু আলাইকুম চাচা,কেমন আছেন?”
“আপনে আইচ্ছেন। আল্লাহর রহমতে ভালা আছি।সবই তো আপনের আর ওই ভালা ডাক্তারের জন্য।”
“না চাচা সব আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য।আচ্ছা চাচা এইগুলো আপনার জন্য এনেছি।”
দুধ,কলা আর পাউরুটির প্যাকেট হাতে পেয়ে খুশি হয়ে গেলেন বৃদ্ধ লোকটি।রাবেয়া হঠাৎ অস্বস্তির সাথে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগলো।কিন্তু না, কোথাও দেখা যাচ্ছে না মানুষটাকে।চাচার সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলে বিদায় জানিয়ে চলে আসার জন্য ওঠে দাড়াল সে।
দৌড়ে নিচে নেমেও রাবেয়ার দেখা পেল না আসাদ।
“কোথায় গেল মেয়েটা?”
পরক্ষনে মনে পড়ল চাচার কথা।সেদিকে গেছে হয়তো।মনে পড়তেই ওয়ার্ডের দিকে দৌড় লাগালো সে।গিয়ে দেখতে পেল রাবেয়াকে।মনে হচ্ছে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।
“কি করব? যাব ওর সামনে। না এইভাবে না।”কথাটা বলেই পিছনে চলে গিয়ে পুনরায় ওয়ার্ডের দিকে ধীর পায়ে হাটা শুরু করল সে। যাতে মনে হয় সে তো ওয়ার্ডের দিকেই অাসচ্ছিল।নিজের কর্মকান্ডে নিজেই আশ্চর্য হলো সে।আসাদের কর্মকান্ডগুলো আবাক চোখে দেখছিল সেখানে উপস্থিত সবাই।
রাবেয়া যখন ওয়ার্ডরুম থেকে বের হচ্ছিল তখনই সে দেখতে পেল আসাদকে।এইদিকে আসচ্ছিল সে।আসাদও দেখতে পেল রাবেয়াকে।
“কেমন আছেন, ডাক্তারসাহেব?”
“ডাক্তার হিসেবে তো সেটা প্রথম আমার জিজ্ঞেস করা উচিত আপনাকে।পায়ের অবস্থা কেমন আপনার?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভাল।ধন্যবাদ জিজ্ঞেস করার জন্য।”
“এইটা আমার দায়িত্ব মিস রাবেয়া।”
“জ্বি।”
কিছুক্ষন নিরব থাকলো দুইজন। নিরবতা ভেঙ্গে আসাদ বলল, “চলুন আপনার পায়ের ড্রেসিংটা করে দিই।”
আসাদের পিছন পিছন হাঁটা শুরু করল রাবেয়া।নার্সের হাতে ড্রেসিং এর দায়িত্বটা দিয়ে হাতের উপর হাত ভাজ করে দরজায় দাড়িয়ে রইল আসাদ।
ড্রেসিং শেষ করে নার্সটা চলে গেল।নার্স চলে যাওয়ার পর আসাদ রাবেয়ার সামনে এসে দাড়াল।
“মিস রাবেয়া একটু সময় হবে আপনার আমাকে দেওয়ার জন্য।”
“জ্বি…মানে…ঠিক বুঝলাম না।”
“মানে আপনাকে আমাদের হাসপাতালের ক্যানটিনের স্পেশাল এক কাপ কফি খাওয়াতাম।যদি আপনার সময় হয় আরকি।”
কফির কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ থাকলো রাবেয়া।কিছু বলছেনা দেখে আসাদ মনে করল সে অস্বস্তি বোধ করছে।তাই সে বলল “ইটস ওকে।সময় না হলে কোন সমস্যা নেই।আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড।”
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মা বার বার বলেছেন গ্রাম থেকে বাবা ফিরে আসার আগেই চলে আসতে।কিন্তু…
“মিস রাবেয়া….!”
“জ্বি…ওহ হ্যা…না মানে সময় হবে না কেন।চলুন।”
“চলুন তাহলে।” মৃদু হেসে কথাটি বলল আসাদ।
রাবেয়া ভাবছে তার সামনের মানুষটা কি জানে,হাসলে এই মানুষটাকে কত সুন্দর দেখায়।উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের চেহারার এই হাসিটা সবাইকে আকৃষ্ট করবে মানুষটার প্রতি।কেন জানি রাবেয়ার খুব ইচ্ছে হয় এই মানুষটার হাসির দিকে তাকিয়ে থাকতে।পরক্ষনে কিছু মনে করে চোখটা সরিয়ে নিল সে।
জীবনের সবকিছুর কিছু সঠিক সময় থাকে।সেই সঠিক সময়ের জায়গায় অসময়ে জীবনে কিছু ধরা দিলে তাকে যেতে দিতে হয়। অসময়ের ভালোলাগা,
ভালোবাসা,প্রেমও ঠিক তেমনি এক জিনিস। আর মানুষের জীবনে এই অনুভূতিগুলোও আসে দেখে শুনে ঠিক সেই অসময়ে।
চলবে……
®নওশিন সালসাবিল
[ “জঘন্য পাপগুলোর একটি হলো যখন একজন মানুষ তার অপর ভাইকে বলে, “আল্লাহকে ভয় করো” এবং সে তার জবাবে বলে, “তোমার নিজেকে নিয়ে চিন্তা করো।”
— আব্দুল্লাহ বিন মাস’উদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)♥]