#সময়ের_পালাবদল
শামসুল ইসলাম
পর্বঃ- ০৯
.
তালহা ঘুমানোর জন্য বিছুনায় গা এলিয়ে দিলো, মুহুর্তের মধ্যে গভির ঘুমের রাজ্যে ডুবে গেলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর তাহেরা সকালের নাস্তা তৈরি করে ঘরে এনে দেখলো তালহা এখনো গভির ঘুমে আচ্ছন্ন।
ডাকাডাকি করার পর তালহা জাগ্রত হলো, তাহেরা বললো-
« আপনি নাস্তা করে নিন।»
« আচ্ছা দাও।»
তাহেরা নাস্তাপানি রেখে ঘর থেকে বের হবে এমন সময় তালহা পিছন থেকে হাত ধরে বললো –
« কোথায় যাও?»
লজ্জাই মুখটা লাল করে তাহেরা বললো-
« ইয়ে মানে একটু বাইরে যাচ্ছি আম্মাদের সাথে খেতে।»
« উহু যেতে পারবেনা, এখন ভদ্র মেয়ের মত তোমার বরকে খাইয়ে দিবে ও তুমি খাবে।»
« ইয়ে মানে আমার ভিষন লজ্জা করছে।»
তালহা তাহেরা হাতধরে পাশে বসিয়ে পরম যত্নে তাকে খাইয়ে দিলো ও নিজে খেলো।
সকালের খাওয়াদাওয়া সমাপ্তের পর তালহা একটা কোদাল ঘাড়ে করে চরের দিকে পা বাড়ালো ফসল চাষের জন্য।

হাসুর দুচোখে ঘুম নেই! সব কেমন যেন গোলকধাঁধার মত লাগছে। আঃ মজিদকে হত্যার পর কফিল মিয়ার ষড়যন্ত্র পুরোটা ষোলকলায় পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু হাসির মুখে তাঁর বাবার এমন কর্মকান্ডের কথা শুনে হাসুর চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
এভাবেই বেশ কইদিন অতিবাহিত হলো, হঠাৎ কফিল মিয়ার ছোট ছেলে রাজিবের সাথে একটা ছোটখাটো বিষয়ে বাকবিতণ্ডা লাগে। এভাবে এককথা দুকথা হতে হতে রাজিব তাঁর বাবার গায়ে হাত উঠায়, কফিল মিয়া রাজিবকে রাগের বশে প্রহার করতে উদ্রি্ত হয় ফলে রাজিব তা প্রতিহত করার জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে তাঁর বাবার মাথায় আঘাত হানে।
কফিল মিয়া বেহুশ হয়ে যায়, গ্রামের ডাক্টার প্রাথমিক চিকিৎসার পর জানায় অবস্থা বেগতিক তাকে দ্রুতবেগে শহরে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে হবে।
রাজিব তাঁর বাবার হাবভাব দেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়, কফিল মিয়াকে হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
একটা প্রবাদবাক্য আছে-” যত পানিতে নামবে ততো কাপড় ভিজবে।”
তো কফিল মিয়া অনেক কলাকৌশল করে আব্দুল মজিদকে তাঁর সন্তানের হাতেই হত্যা করান, যদিও হাসু অবৈধ সন্তান।
তেমনিভাবে কফিল মিয়া নিজ সন্তানের হাতেই নিজের জীবন বিসর্জন দিতে হলো। এটা যেন এক সময়ের পালাবদল, কারো ঘরে ইটের খোয়া ছুড়লে নিজের ঘরে পরবর্তিতে আস্তো একটা ইট পড়ে তা প্রমান করে বাস্তবতা।
আমরা কোন বিপদ বা কষ্ট হলে আল্লাহকে ভুলে যায়, এমন কথাও অনেক সময় বলি যে-” আল্লাহ যতো বিপদ সব আমাকে দেই।”
বিষয়টা তা নয়, আল্লাহপাক হুটকরে মানুষের ওপর গজব নাযিল করেন না। কারন তিনি পরম দয়ালু মেহেরবান, তাঁর প্রিয় বান্দাবান্দীদের একটু সময় দেন তাঁর পথে প্রত্যাবর্তন করার জন্য।
যখন মানুষ আল্লাহর নির্ধারিত বিধান অমান্য করে ভুল পথে পা বাড়াই তখনি আল্লাহপাক তাঁদের পাকড়াও করেন।
যেমনটা কফিল মিয়া ও আব্দুল মজিদ।

তালহা সর্বপ্রথম চরে বসেবসে একটা পরিকল্পনা তৈরি করেন কি চাষাবাদ করবেন!
সর্বপরি সিদ্ধান্তে উপনীত হলো এখন তিল ও বাদাম চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
আল্লাহর নাম নিয়ে কোদাল দিয়ে সর্বপ্রথম চরের নিজের জমির সীমানা নির্ধারণ করলো, এবং কিছু আগাছা ছিলো তা পরিস্কার করে সমস্ত জমি কোদাল দিয়ে নিজেনিজে চাষের উপযোগী করলো।
তালহার কাজ করতে দুপুর গড়িয়ে যায়, তাহেরা তালহার ফিরতে দেরি হওয়াই কিছু খাবার পানি নিয়ে উপস্থিত হলো মাঠে। তাহেরা সালাম প্রদান করলো, তালহা জবাব দিয়ে বললো-
« কি ব্যাপার তুমি মাঠে কেন?»
« দির্ঘক্ষন হলো আপনি ফিরছেন না তাই নিজে চলে আসলাম। এই নিন পানি ও খাবার খেয়ে নিন।»
তালহা পানি দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে বিসমিল্লাহ বলে খাবার মুখে দিতে যাবে এমন সময় তালহা সজোরে ” উহ্” বলে উঠালো।
তাহেরা বিস্ময় নয়নে জিজ্ঞেস করলো-
« কি হয়েছে প্রিয়?»
« নাহ্! তেমন কিছু না।» কথাটি বলে হাত লুকালো তালহা।
তাহেরা বিষয়টা অনুধাবন করতে পেরে এক প্রকার জবরদস্তি করে তালহার হাতটি ধরলো।
তাহেরা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো-
« এ কি হাল করেছেন আপনার হাতের?»
« হাহাহা, কোই কি হাল করলাম?»
« এতোগুলো ফুসকা পড়েছে হাতে কিভাবে!»
« অনেকদিন হলো কাজকাম করিনা তাই এমন হলো একটু।»
« বাড়ি চলুন আজ আর কাজ করতে হবেনা।»
« তা হয়না বউ, আমাকে কাজ করতেই হবে তাছাড়া পেট চলবেনা আমাদের।»
« আজ আর না, আগামীকাল করবেন ইনশাআল্লাহ্‌ আবার।»
« না বউ, আমাকে বেশিবেশি কাজ করতে হবে কারন আমরা কষ্ট করলেও আমাদের সন্তানাদিদের কষ্ট করতে দিব না ইনশাআল্লাহ্‌।»
সন্তানের কথা শুনে তাহেরার মাথা নিচু করে ফেললো লজ্জাই।
তালহা আরেকটু কাছে যেয়ে তাহেরার থুতনির নিচে হাত দিয়ে উচু করে তাঁর চোখে চোখ রেখে বললো-
« তোমার মত স্ত্রী থাকতে আমার এসব কষ্ট কোন ব্যাপারই না, সব কষ্ট নিমিষে ম্লান হয়ে যায় তোমার মুখের দিকে এক পলক তাকালে।» কথাগুলো বলে তালহা তাহেরার কপালে একটা ভালোবাসার চুমু একে দিলো।
তাহেরা লজ্জাই লাল হয়ে গেলো, তাঁর এমন লাজুকতা লক্ষ্যকরে তালহা বললো-
« প্রিয়তমা প্রেয়সী আমার তুমি একটুখানি এখানে বসে থাকো, বাকি কাজটা পরিসমাপ্তি করে একসাথে বাড়ি যাবো ইনশাআল্লাহ্‌। তুমি যদি আমার সামনে থাকো তাহলো আমার কাজের স্পৃহা চক্রবৃদ্ধিহারে বৃদ্ধি পাবে।»
কথাগুলো বলে কোদাল হাতে নিয়ে উঠতে যাবে এমন সময় তাহেরা বললো-
« এই শুনুন?»
« বলো!»
হাতেরা উঠে যেয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে তালহার মুখটা মুছিয়ে দিয়ে বললো-
« আহারে আমার বরটা রৌদ্রে পুড়ে কালো হয়েগেছে।» এটা বলে তালহার কপালে একটা চুমু দিয়ে মাথা নিচু করে বললো কাজে যান।
তালহা মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো-
« আজ আমি ধন্য হয়ে গেলাম, আমার বউর ভালোবাসার পরশে,এখন মনে হচ্ছে সারাদিন কাজ করার স্পৃহা আমার শরিরে জমা হয়েছে।»
« আহারে এত ঢং করতে হবেনা, তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করুন যোহরের আযান হবে একটু পর।»
« ওহ্ তাই তো!! একটু অপেক্ষা করো আমি কাজটি শেষ করে আসছি ইনশাআল্লাহ্‌।»
তালহা কাজে চলে গেলো, তাহেরা মুচকি হাসি দিয়ে তার দিকে অপালক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। ঐদিকে তালহা কাজের ফাঁকেফাঁকে তাহেরাকে দেখে নেই, তাঁদের স্বামী স্ত্রীর এমন পবিত্র ভালোবাসা দেখে আসমানের ফিরিস্তারাও দো’আ করেন।
.
………(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here