শেষটা_সুন্দর পর্ব___৩২
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)

নির্ঝর তরীর কানের কাছে মুখ নিয়ে নিচুস্বরে বলল,

‘আমার ডিঙিরানী!’

তরী গভীর ঘুমের মধ্যে হালকা নড়ে উঠলো। কয়েক সেকেন্ড মুখ নেড়ে আবার স্থির হয়ে গেল। নির্ঝর গালে হাত রেখে গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে। তার হাতের আঙুল গুলো কখনো তরীর চোখ ছুঁয়ে দিচ্ছে, কখনো কপাল ছুঁয়ে দিচ্ছে, কখনো বা গাল ছুঁয়ে দিচ্ছে।একটুপর তরীর মাথার চুল গুলোয় আঙুল দিয়ে বুঝতে পারলো চুলে অনেক ময়লা হয়েছে। আরেকটু ঝুঁকে গিয়ে সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চুলের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিল। মুহুর্তে তার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। কিছু কিছু জায়গার চুলের গোড়ায় হালকা ঘা দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ফুলে উঠেছে। হাতটা আপনা-আপনি মুঠ হয়ে এলো তার। মনটা পুনরায় বিষিয়ে উঠলো। কতটা কষ্টে তার তরীরানী এতগুলো দিন অতিবাহিত করেছে তা ভেবে পাগলপ্রায় অবস্থা। ইচ্ছে করছে নিজেকে এর চেয়েও দ্বিগুণ কষ্ট দিতে।

জলন্ত চোখ জোড়া তরীর মুখপানে চেয়ে পুনরায় নিভে এলো। চাদর সরিয়ে তরীর গলা উন্মুক্ত করে পরখ করলো। গলার কাছে কালশিটে দাগ। স্যালাইনমুক্ত হাতটা উঁচু করে দেখলো আচঁড়ের স্পষ্ট দাগ। বুকের কোথাও তীব্র জ্বলুনি অনুভব করলো সে। অনেকটা কাঁটা ক্ষতে মরিচ পোড়ার মতো! সেই সঙ্গে তরীর নিখোঁজ হওয়ার পেছনের মানুষটার টুঁটি ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। মানুষটাকে সে ছাড়বে না। শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত মানুষটাকে সে ছাড়বে না। তরীকে দেওয়া প্রতিটি আঘাত, প্রতি ফোঁটা চোখের জলের দাম সে নিজ হাতে নিবে!

ভেজা দৃষ্টি মেলে সে তরীর ডান হাতের কবজিতে ঠোঁট ছোঁয়াল।

কেবিনের দরজায় শব্দ হতে নির্ঝর পেছন ঘুরে তাকাল। তার চাহনিরত অবস্থায় মমতাজ বেগম হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকলেন। তার পেছন পেছন ঢুকলেন নির্ঝরের বাবা-মা! তরীকে দেখে কিছুক্ষণ বিস্ফারিত নয়নে চেয়ে রইলেন তারা। আস্তে আস্তে হুশ ফিরতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। এই কান্না আনন্দের। তরীকে ফিরে পাওয়ার আনন্দের!

____________

ডক্টর সুব্রত কুমার বাবুর কেবিন থেকে বের হলেন মমতাজ বেগম। তরীর মেডিকেল রিপোর্ট আনতে গিয়েছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে তরীকে খুঁজে পাওয়ার খবরটা সবাইকে জানানো হয়েছে। তরীর বাবা-মা জীবনের সাথে ঢাকায় রওনা দিয়েছে। সব ঠিক থাকলেও তরীর স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত সবাই। মেয়েটা ভয়ানক দূর্বল আর অসুস্থ।

কিছুদূর এগিয়ে পুনরায় দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি। হাতের মেডিকেল রিপোর্টটার দিকে চেয়ে রইলেন। বর্তমানে দুটো জিনিস তার মস্তিষ্কে ঘোরাফেরা করছে। এর মধ্যে একটা জিনিস নিয়ে তিনি চিন্তিত। আরেকটা নিয়ে চিন্তিত নয়, কিঞ্চিৎ বিস্মিত তিনি। কিছু একটা ভেবে উল্টো ঘুরে ফের তিনি কেবিনে ঢুকলেন। ডক্টর সুব্রত কুমার বাবুর দিকে রিপোর্ট ঠেলে দিয়ে বললেন,

‘আর একটু কষ্ট দিবো। রিপোর্টটা আমি নিতে পারবো না। আমার ছেলে নির্ঝরকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওকে একটু বুঝিয়ে দিন। আমি বলতে পারবো না।’

ডক্টর সুব্রত কুমার বাবু নাকের ডগায় চশমা ঠেলে বললেন,

‘ঠিক আছে। পেশেন্টের হাজব্যান্ডকে পাঠিয়ে দিন। উনাকেই প্রয়োজন আমার।’

‘জ্বি!’

মমতাজ বেগম দ্বিতীয় বারের মতো কেবিন থেকে বের হলেন। এবার আর কোথাও দাঁড়িয়ে পড়লেন না। হনহন করে তরীর কেবিনের দিকে হেঁটে এলেন। নির্ঝর এখনো তরীর পাশে বসে আছে। তাকে আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ কোনোটা দিয়েই তরীর পাশ থেকে সরানো যায় নি।

তরীর কেবিনে ঢুকে দেখলেন নির্ঝর এখনো ঠায় বসে আছে। নির্ঝরের মা নাহিদা বেগম বাটিতে কাপড় ভিজিয়ে তরীর মুখ মুছে দিচ্ছে। তিনি এগিয়ে গিয়ে তরীর মাথার কাছে টুল টেনে বসলেন। নির্ঝর ব্যতিব্যস্ত হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো,

‘বড় মা, রিপোর্ট কোথায়? কি বললো ডক্টর? তরী ঠিক আছে তো?’

মমতাজ বেগম একটু হাসার চেষ্টা করলেন। কিছুক্ষণ উসখুস করে মলিন মুখে বললেন,

‘নির্ঝর, তোর তরীকে পছন্দ নয়?’

নির্ঝর অবাক হয়ে বড় মায়ের দিকে চেয়ে রইলো। হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন করছে? সে কিছু না বললেও নাহিদা বেগম ভেজা কাপড় রেখে বললেন,

‘ বড় আপা, কি বলছেন এসব? তরীকে হারিয়ে আমার ছেলে পাগল হয়ে গেছিল। বিগত দিনগুলো কিভাবে কাটিয়েছে আপনি দেখেননি? ঘুমের মধ্যে পর্যন্ত কান্নাকাটি করেছে তরীর জন্য। এরপরও আপনার মনে হয় তরীকে ও পছন্দ করে না?’

‘আসলে নাহিদা……..থাম, তোকে পড়ে বলছি।’

মমতাজ বেগম থেমে গেলেন। একটুপর নির্ঝরের দিকে চেয়ে হুকুমের স্বরে বললেন,

‘তরীকে আমরা দেখছি। তুই গিয়ে ডক্টরের সাথে কথা বলে আয় নির্ঝর।’

‘ঠিক আছে।’

তরীর মুখের দিকে এক পলক চেয়ে নির্ঝর উঠে দাঁড়ালো। চিন্তিত মুখে কেবিনের দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলো।

হসপিটালের পশ্চিম দিকের কর্ণার ঘেঁষে ডক্টর সুব্রত কুমার বাবুর বসার চেম্বার। নির্ঝর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সেদিকে এগিয়ে চলল। সুব্রত বাবুর সাথে তার একবার দেখা হয়েছে। প্রভা পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

কেবিনের দরজায় নক করে নির্ঝর বলল,

‘আসবো?’

ভেতর থেকে গম্ভীর কন্ঠের ইতিবাচক উত্তর ভেসে এলো। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সের সুব্রত কুমার বাবু দারুণ কর্মঠ। তার চিকিৎসার নাম ডাক প্রচুর। ডাক্তার মহলে তাকে সবাই এক নামে চিনে। নির্ঝর ভেতরে ঢুকে চেয়ার টেনে বসে পড়লো তার সামনে। কয়েক মিনিট নিরবে কেটে গেল। সুব্রত কুমার বাবু গভীর মনোযোগ দিয়ে রিপোর্ট চেক করছে। একটুপর চশমার উপর দিয়ে নির্ঝরকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,

‘কয় মাস হলো বিয়ে হয়েছে?’

নির্ঝর স্বাভাবিক ভাবে বলল,

‘ছয় মাস আরো বেশ কিছুদিন।’

‘বউ পছন্দ হয়নি? পরিবার থেকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে?’

নির্ঝর পুনরায় চমকে উঠলো। বড় মা, ডাক্তার এরা সবাই হঠাৎ তার পছন্দ নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে কেন? তরীকে পছন্দ করার প্রশ্ন আসছে কেন? সে তো মেয়েটাকে ভালোবাসে। ঠিক যতটা ভালোবাসলে তার জন্য হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা যায় তার থেকেও বেশি ভালোবাসে। এদের বোঝাবে কি করে! সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘আমি তরীকে ভালোবাসি।’

‘ভালোবাসেন? ভালোবাসার মানুষকে পাঁচটা মাসের বেশি সময় কাছে পেয়েও তাকে স্পর্শ করেননি সেটা বিশ্বাস করতে বলছেন?’

নির্ঝর কপাল কুঁচকে তাকালো। এই ডাক্তার কি বুঝাতে চাইছে? তাকে কনফিউজড দেখে ডক্টর সুব্রত কুমার মৃদু হাসলেন। নির্ঝরের চোখে চোখ রেখে বললেন,

‘আপনার ওয়াইফ! শী ইজ স্টিল ভার্জিন! মেডিকেল রিপোর্ট তাই বলছে।’

কিছুটা সময় লাগলো নির্ঝরের ব্যাপারটা বুঝতে। বুঝতে পেরে লজ্জায় কুঁকড়ে গেল। এই জায়গাতেই বোধ হয় ডাক্তার আর সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য। তারা যে কথা অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ভাবে বলতে পারে সাধারণ মানুষ তা পারে না। সে মাথা নিচু করে বলল,

‘আসলে ও বাচ্চা মানুষ। তার উপর পড়াশোনা করছে। মাইন্ড ডিস্ট্র্যাক্ট যাতে না হয় সেজন্য খুব কাছাকাছি যাইনি!’

সুব্রত কুমার ভীষণ অবাক হলেন। এতক্ষণে একটু মনোযোগ দিয়ে সামনে বসে থাকা ছেলেটির দিকে তাকালেন। ছেলেটাকে এতক্ষণ সাধারণ পুরুষের কাতারে ফেললেও এখন মনে হচ্ছে ছেলেটা অনন্য। আর দশটা পুরুষের মতো নয়। এর চিন্তা ভাবনা অন্যরকম। তিনি ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে বললেন,

‘কতদিনের সম্পর্ক? প্রেমের বিয়ে?’

‘এক তরফা প্রেম বলতে পারেন। কিন্তু পূর্ণতা পেয়েছে। তরী সম্পর্কে আমার কাজিন হয়। আমার বড় মায়ের ভাইয়ের মেয়ে। আজ থেকে বছর সাতেক আগে আমাদের গ্রামের বাড়ি দেখেছিলাম। প্রথম নয়, এর আগে ছোটবেলায় দেখেছিলাম। কিন্তু ওই বার দেখি যখন তখন কিশোর বয়স আমার। দেখেই মায়ায় জড়িয়ে গেলাম। এমন ভাবে জড়িয়ে গেলাম যে ভালো না বেসে থাকতে পারলাম না। দিন-রাত শুধু ওর মুখটা চোখের সামনে ভাসতো। বইয়ের পাতা খুললে পেইজের দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকতাম। অথচ অক্ষর চোখে পড়তো না। প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা এতটা তীব্র ছিল যে ওই বাচ্চা মেয়েটা আমার একমাত্র ধ্যান, জ্ঞান ছিল। যখন থেকে বুঝতে পেরেছি ওই মেয়েটিতে আমি চরম মাত্রায় ফেঁসে গেছি, তখন থেকে কখনো তার মুখোমুখি হয়নি। মাঝে মধ্যে গ্রামে গেলে লুকিয়ে এক নজর দেখে আসতাম। ওতেই আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতো। অন্তত একমাস লাগতো স্বাভাবিক হতে। কয়েক মাস আগে ভাইয়ের বিয়েতে দেখা দেই। মুখোমুখি হই তার। ছোট্ট একটা ইন্সিডেন্টের মধ্য দিয়ে আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। তারপর আমার খুশি দেখে কে! কিন্তু ওই যে! কয়েক মাস পর তার বোর্ড পরীক্ষা। সেজন্য দূরে দূরে থাকলাম।’

‘এত বছরের ভালোবাসার মানুষকে দিনের পর দিন পাশে পেয়েও এতটা দূরত্ব সৃষ্টি করে থাকা, ভীষণ অবাক করা বিষয়। কষ্ট হয়নি?’

‘সত্যি বলতে ওর মুখের দিকে তাকালে, চোখে চোখ রাখলে আমার ভেতরে যে কি হয়ে যায় কে জানে। আমি শুধু জানি, কোনো রকম গভীর স্পর্শ ছাড়াও ওর মুখের দিকে চেয়ে আমি এ জনমটা কাটিয়ে দিতে পারবো।’

সুব্রত কুমার বাবুর মুখে তৃপ্তির হাসি। বিংশ শতাব্দীর এই যুগে এসে প্রথম তার মনে হলো নব্বই দশকের প্রেমগুলো এখনো জীবন্ত আছে। কেউ কেউ এখনো নিজেকে বিলিয়ে অপরজনকে ভালোবাসে। তিনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘যাকে এতটা ভালোবাসেন সে জানে? জানলে, সে কতটা ভালোবাসে আপনাকে?’

‘আমি সবসময় চেয়েছিলাম, ও আমাকে একটু ভালোবাসুক। আমি যতোটা ভালোবাসি ততটা বাসার দরকার নেই। জাস্ট একটুখানি ভালোবাসলেই আমি খুশি। কিন্তু ও আমাকে একটু নয়, আমার ভাবনার থেকে বেশি ভালোবাসে।’

‘আচ্ছা, ছোট্ট একটা প্রশ্ন করি? মেডিকেল রিপোর্টটা যদি অন্য রকম আসতো? এসব কেসের ক্ষেত্রে সচরাচর যায় হয় আর কি! আপনার ওয়াইফ যে এভাবে নিজের সম্ভ্রম প্রটেক্ট করেছে সেটা একটা মিরাকল বলা চলে। বাই এনি চান্স, যদি সে সম্ভ্রম হারাতো তখনো কি তাকে এতটা ভালোবাসতেন? তাকে ছেড়ে দিতেন না? একবারও মনে হতো না যে…..’

নির্ঝর তড়িৎ গতিতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মূহুর্তে চোখ দুটো লাল হয়ে এলো তার। তরী পৃথিবীর শ্বাস গ্রহণ করছে অথচ সে তার থেকে দূরে রয়েছে, তাকে ছেড়ে দিয়েছে এসব সে কখনো ভাবতেই পারে না। একই পৃথিবীর অক্সিজেন দুজন যতক্ষণ গ্রহণ করবে ততক্ষণ তাদের কোনো কিছুই আলাদা করতে পারবে না। সে লাল চোখে ডক্টরের দিকে চেয়ে রুক্ষ স্বরে বলল,

‘আপনাকে আগেই বলেছি, আমার ভালোবাসা ওর শরীর অবধি সীমাবদ্ধ নয়। আমি ওকে ভালোবাসি। ওকে তো আমি জোরপূর্বক নিজের সাথে ধরে রাখিনি যে ছাড়ার প্রশ্ন আসবে। ও আমার অস্তিত্ব। ওর জন্যই আমি পৃথিবীতে এক্সজিস্ট করছি। নিজের অস্তিত্ব ছেড়ে আমি বাঁচবো কি করে?’

সুব্রত কুমার বাবু সহসা বলার মতো কিছু খুঁজে পেলেন না। তিনি ইশারায় নির্ঝরকে শান্ত হতে বললেন। নির্ঝর কিছুক্ষণ পর চেয়ারে ধপ করে বসে পড়লেন। কয়েক সেকেন্ড নিরবতার পর ডেস্কের উপরের রিপোর্ট টা নির্ঝরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

‘পেশেন্টের রক্তে উচ্চ মাত্রার ড্রাগ পাওয়া গেছে। গত দিনগুলোতে প্রচুর অ্যালোকোহলও নেওয়া হয়েছে। টানা পনেরো-ষোলোটা দিন এসব নেওয়ার ফলে কিছুটা এডিক্টেড হয়ে গেছে। ঘুম ভাঙলে পাগলামি করবে বা উদ্ভব আচরণ করবে। তখন সামলাতে হবে।’

নির্ঝরের বুকের ভেতর পুনরায় রক্তক্ষরণ শুরু হলো। কাঁপা কাঁপা হাতে সে রিপোর্ট টা হাতে নিল। তার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে সুব্রত কুমার বাবু চটপট বললেন,

‘তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। চিকিৎসা দিলে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কোনোকিছু নিয়ে মেন্টালি প্রেশার ক্রিয়েট করা যাবে না। এতদিন কোথায় ছিল, কেমন ছিল, আপাতত ওসব জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত থাকবেন। ‘

‘হুঁ!’

নির্ঝর বিদায় জানিয়ে রিপোর্ট হাতে কেবিন থেকে বের হলো। করিডোর ধরে হাঁটার সময় বাইরে তাকাল। পৃথিবীর বুকে সন্ধ্যা নেমেছে। কতগুলো দিন পর সে একটা পরিপূর্ণ সন্ধ্যা দেখলো। লম্বা করে শ্বাস নিয়ে এগিয়ে চলল।

তরীর রুমের কাছাকাছি যেতে সবার উৎফুল্লতা শুনে বুঝতে পারলো তরীর জ্ঞান ফিরেছে। থমকে গেল সে। পা দুটো থেমে তার। বুকের ভেতর সুখের ঝড় বইছে। সেই সাথে তীব্র ভয়। তরীর মুখোমুখি হওয়ার ভয়। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো তার। তবুও ঠোঁটে পরিপূর্ণ হাসি ঝুলিয়ে সে কেবিনে ঢুকলো।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here