#শেষটা_সুন্দর পর্ব___২০
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
ফুপির বাসায় তরীর থাকার ঘর পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিবার আসলে গেস্ট রুমে থাকা হতো। কিন্তু এবার তাকে নির্ঝরের নামে বরাদ্দকৃত রুমটাতে থাকতে বলা হয়েছে। আগে তার পরিচয় ফুপির ভাইয়ের মেয়ে ছিল। এখন এ বাড়ির বউ! ছোট বউ!
দোতলা বাড়ির দক্ষিণ দিকের বেলকনিসহ রুমটা নির্ঝরের। তরী সেটা জানে। এ বাড়ির প্রতিটি ইট, বালি, সিমেন্টের কণা তার চেনা। ঘরের কোনায় কোণায়, বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা তেলাপোকা থেকে শুরু করে সব চেনা। শুধু চেনা ছিল না নির্ঝর। এই মানুষটাকে ভালো মতো আবিষ্কার করার আগেই তার সাথে জীবন জুড়ে গেল।
বাবা-মাসহ সবার সাথে কথা বলে ঘন্টাখানেক পর ভেড়ানো দরজা ঠেলে তরী নির্ঝরের রুমে ঢুকলো। তারা আসবে বলে রুমটা আগে থেকে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। ফ্লোরসহ ঝকঝকে, তকতকে প্রতিটি জিনিস। বিছানায় এক রঙা সবুজ চাদর বিছানো। মনে হচ্ছে পুরো প্রকৃতি বিছানায় ঠেলে রেখেছে। একটা হাই তুলে তরী বিছানার দিকে যেতে মাঝপথে থেমে পড়লো। নির্ঝর নিচ থেকে বার বার বলে দিয়েছে ঘুমিয়ে যেন না পড়ে। আগে শাওয়ার নিতে হবে।
থমথমে মুখে সে ড্রেসিং টেবিলের পাশ থেকে লাগেজ টেনে খুলে ড্রেস বের করলো। তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। খুব দ্রুত শাওয়ার শেষ করে ঘুমাতে হবে।
নির্ঝর রুমে ঢুকার সাত মিনিটের মাথায় খট করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে গেল। না চাইতেও মাথা উঁচু করে সে তরীর দিকে তাকালো। তরী থ্রি পিস পড়েছে। ঢিলেঢালা জামা কাপড় চুলের পানিতে ভিজে একাকার। সে দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল। ছোট্ট টেবিলটার দিকে ইশারা করে বলল,
‘খাবার উপরে নিয়ে এসেছি। খেয়ে নাও!’
তরী ছোট করে বলল,
‘খাব না আমি। মাথা ব্যথা!’
‘মাথা ব্যথার সাথে খাওয়ার কি সম্পর্ক? অল্প একটু খেয়ে মেডিসিন খাও।’
তরী কোনো উত্তর দিল না। ভেজা টাওয়ালটা বিছানার একপাশে রেখে আরেক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। নির্ঝর জানালার পাশে চেয়ারে বসে ছিল। তরীকে না খেয়ে শুয়ে পড়তে দেখে উঠে এলো। খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে বিছানার উপর রাখলো। কিছুটা হুকুমের স্বরে বলল,
‘তরী উঠে পড়ো তো! আমি খাইয়ে দিচ্ছি।’
তরী চোখ না খুললেও বুকের ভেতর তোলপাড় সৃষ্টি হলো। আজ পর্যন্ত নির্ঝর তার অনেক যত্নাদি নিয়েছে। জোরপূর্বক ফলমূল মুখে তুলে দিয়েছে। কিন্তু কখনো প্লেটে করে ভাত-মাংস তুলে খাওয়ায়নি। এটা তাকে করতে হয়। প্রায়ই নানা রকম অজুহাত দেখিয়ে নির্ঝর তার হাত দিয়ে খেয়ে নেয়। আজ সে বেশ অবাক হলো।
নির্ঝরের হাতে খাবার খাওয়ার লোভ জাগলো। তবে খুব তাড়াতাড়ি সে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলো। নির্ঝর গাড়িতে তাকে যেইহারে ধমক দিয়েছে, এরপর তার হাত থেকে খাওয়া মানে হার মেনে নেওয়া।
তরীকে নিরব দেখে নির্ঝর আরো দুবার ডাকলো। উত্তর না পেয়ে তরীর হাত ধরে টেনে তুলল। খাটে বালিশ রেখে তাতে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল। তরী বিরক্তি নিয়ে বলল,
‘এমন করছেন কেন? মানুষ মনে হয় না আমাকে?’
‘একদমই মনে হয় না। এবার লক্ষী মেয়ের মতো বড় করে হাঁ করো তো।’
‘খাবো না আপনার হাত থেকে?’
‘হাউ ফানি! সব দোষ আমার হাতের তো? এই হাত রাখবো না আমি। তোমার খাওয়া শেষ হলেই কেটে ফেলবো। নাও হাঁ করো!’
তরী হাল ছেড়ে দিল। নির্ঝর তাকে খাইয়ে ছাড়বে। এতটুকু সে চিনে মানুষটাকে। দ্বিরুক্তি না করে হাঁ করলো। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। চোখ ভেঙে ঘুম পাচ্ছে। সে চোখ বন্ধ করে কয়েক লোকমা খেল।
একটুপর হাত উঁচু করে বাধ সাধলো। নির্ঝর আর জোর করলো না। একটা ট্যাবলেট খুলে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিল। তরী এটার অপেক্ষায় ছিল। চুপচাপ ওষুধ গিলে সে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো। পেটের কাছে চাদরটা গলা পর্যন্ত টেনে দিল। মাথার যন্ত্রণা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকলো সে।
উচ্ছিষ্ট খাবারের প্লেটটা নির্ঝর সরিয়ে রাখলো। সে ইতোমধ্যে খেয়ে ফেলেছে। তরীর বাবা-মায়ের সাথে একত্রে খেতে হয়েছে তাকে। একটুপর নিজের শুকনো টাওয়ালটা নিয়ে তরীর পাশে বসে পড়লো। ভেজা চুল নিয়ে মেয়েটা শুয়ে পড়েছে। পরীক্ষার আগে অসুস্থ হলে ভয়ানক বিপদ হবে। সে অালতো হাতে ভেজা চুলগুলো মুছে দিতে থাকলো। তরী লাল চোখে একবার নির্ঝরের দিকে তাকাতে নির্ঝর চোখের ইশারায় ঘুমিয়ে পড়তে বলল। তরী সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করলো।
চুলগুলো ভালোমতো মুছে দিয়ে সে তরীর কপালে হাত রাখলো। গা হালকা গরম। এতটুকু শরীরে জ্বর টর এলে সহ্য করবে কিভাবে? অবশ্য মেডিসিন খাইয়ে দিয়েছে সে। আপাতত কপালসহ মাথায় হালকা করে ম্যাসেজ করা শুরু করলো। মাথা ব্যথাকে গুডবাই জানানোর জন্য।
_____________
বেলকনিতে হেঁটে হেঁটে পড়া মুখস্থ করছে তরী। বিড়বিড় করে মুখ নেড়ে লাইনগুলো মনে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। হঠাৎ করে ঝিরিঝিরি বাতাসের ঝাপটা এসে পরশ ছুঁয়ে দিল। পায়চারি থামিয়ে সে দাঁড়িয়ে পড়লো। দু পা এগিয়ে গ্রিলে হাত রাখে মৃদু হাসলো। এখন রাত। গ্রিলের ওপাশে যতদূর চোখ যায় অন্ধকার আর অন্ধকার। বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে একটা করে বাড়ি। সব বাড়িতে আলো নিভে গেছে। সবাই গভীর ঘুমে। অথচ সে দেখেছে, ঢাকা শহরে রাত এগারোটায় সবেমাত্র দিন শুরু হয়। লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যায়।
‘তরী?’
তরী মুখ ঘুরিয়ে তাকাল। রুমের ভেতর থেকে নির্ঝর ডাকছে। এতক্ষণ সে রুমে ছিল না। নিচে ড্রয়িং রুমে দেখে এসেছিল! বিকেলের খাবারটা নির্ঝর তাকে জোর করে খাইয়েছিল। কিন্তু রাতের খাবার সে নিচে সবার সাথে একত্রে খেয়েছে।
‘তরী? কোথায়? আছো?’
তরী আর দেরি করলো না। বেলকনি থেকে রুমে ঢুকলো। হাতের বইটা টেবিলের উপর রেখে বলল,
‘এই তো!’
নির্ঝর একবার আপাদমস্তক পরখ করলো তরীর। এখন খানিকটা সুস্থ মনে হচ্ছে। বিকেল বেলা তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। সে বিছানার এক কোণে বসে বলল,
‘পড়াশোনা কতদূর?’
‘পরীক্ষার হল অবধি আগে পৌঁছাই। প্রশ্ন হাতে পাই। তারপর বোঝা যাবে পড়াশোনা কতদূর করেছি।’
‘হাউ ফানি!’
তরি বিড়বিড় করে বলল,
‘হাউ বজ্জাত!’
‘কিছু বললে?’
‘নাহ।’
‘গুড! এখন বলো চা, কফি কিছু খাবে?’
‘না! আমি ঘুমিয়ে পড়বো আজ।’
এত তাড়াতাড়ি বলতে নিয়েও নির্ঝর থেমে গেল। আজ জার্নি করে এসেছে। লম্বা দূরত্বের জার্নি। দ্রুত ঘুমিয়ে পড়া দরকার। সে উঠে বিছানার চাদর ঠিকঠাক করলো। বালিশ সোজা করে একপাশে জায়গা করে দিল। বিছানা ঝেরে বলল,
‘ঠিক আছে। এবার ঘুমিয়ে যাও!’
‘আমি তো এখানে ঘুমাব না।’
তরীর নির্বিকার উত্তরে নির্ঝরের হাত থেমে গেল। সোজা হয়ে ভ্রু যুগল কুঁচকে তরীর দিকে তাকালো। সন্দিহান দৃষ্টিতে বলল,
‘এখানে ঘুমাবে না মানে? কোথায় ঘুমাবে তাহলে?’
‘মায়ের সাথে ঘুমাব আজ।’
নির্ঝরের বুকের ভেতর অজানা আতংকে কেঁপে উঠলো। চোখে মুখে এসে ভর করলো দুশ্চিন্তার ছাপ। প্রবল দুঃখ বোধে জর্জরিত হয়ে গেল। সর্বনাশ! তরীর সাথে না ঘুমালে তো তার ঘুম হবে না। এটা অবশ্য ঠিক যে সে তরীর সাথে লেপ্টে ঘুমায় না বা তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় না। কিন্তু গত মাসগুলোতে তরী আর তার মাঝে এক হাত দূরত্ব বজায় রেখে ঘুমিয়ে অভ্যাস হয়েছে। ঘুমের ঘোরে একটু আধটু হাতে হাত রেখেছে। প্রায় প্রতিদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে তরীর মুখ আবিষ্কার করে জাগ্রত হতো। তরীকে এক হাত দূরে রেখেও খুব নিকটে অনুভব করতো। নিজের খুব কাছে তার অস্তিত্ব অনুভব করতো। তরী তার পাশে আছে এটা ভেবেই প্রশান্তিতে বুক ভরে উঠতো। সেই তরীর সাথে এক বিছানায় না ঘুমালে ঘুম হবে কি করে? সে এগিয়ে এসে তরীর নিকটে দাঁড়াল। বিস্ফোরিত নয়নে বলল,
‘অসম্ভব!’
তরী ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘কি অসম্ভব।’
‘মায়ের সাথে ঘুমাবে মানে? তাহলে আমি কি করবো?’
‘প্রতিদিন যা করেন তাই করবেন। নাক ডেকে বেহুঁশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে থাকবেন। কানের কাছে কেউ চিল্লাফাল্লা করে কিছু বললেও তার কিছু আপনার মস্তিস্কে ঢুকবে না।’
‘তরী প্রতিদিন যা করি সেসব করার জন্যই তোমাকে পাশে প্রয়োজন আমার। প্রশান্তিতে ঘুম!’
নির্ঝরের কথা তরীর বোধগম্য হলো না। সে একটা হাই তুলে টেবিলের বইটা হাতে তুলে নিল। ঘুমজড়ানো কন্ঠে বলল,
‘আমি আসছি!’
সে হাঁটা শুরু করলো। কয়েক পা এগোতেই নির্ঝর তার হাত টেনে ধরলো। অনুরোধের স্বরে বলল,
‘এখানে ঘুমাও না প্লিজ। আসলে আমার এই রুম নিয়ে একটা ভুতুড়ে কাহিনি আছে। প্রায়ই আমার মৃত দাদুকে হাঁটতে দেখি। সেজন্য কিঞ্চিৎ চিন্তিত।’
নির্ঝরের খাপছাড়া মিথ্যে ধরতে তরীর দুই সেকেন্ড সময় লাগলো না। দ্বিতীয় বারের মতো হাই তুলে বলল,
‘ আমি অলৌকিক কর্মকান্ডে ভীষণ ভয় পাই। আমার বাবার থেকে ভূতকে বেশি ভয় পাই। আমি এখানে ঘুমাচ্ছি না।’
নির্ঝরের রাগ তরতর করে বেড়ে গেল। এই মেয়ে অনুরোধ রাখার মতো মানুষ না। তরী হাতটা ছাড়াতে চাইলে সে আরো কঠোর হাতে চেপে ধরলো। তরী সঙ্গে সঙ্গে মৃদু স্বরে আর্তনাদ করে উঠলো। নির্ঝর তার তোয়াক্কা না করে শক্ত গলায় বলল,
‘রুমের বাইরে এক পা রাখতে পারবে না। এখানেই ঘুমাবে তুমি।’
তরী কিছু বলার চেষ্টা করলো। তার আগেই দরজার বাইরে মিলিত পদধ্বনির আওয়াজ এলো। নির্ঝর তরীর হাত ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
‘নির্ঝর ভাইয়া!’
অল্প বয়সী একটা ছেলে ঝনঝনে কন্ঠে ডাক দিল। নির্ঝর স্মিত হেসে হাত নেড়ে কাছে ডাকলো। তরীর একমাত্র ভাই তাফসি! বয়সের তুলনায় পড়াশোনায় বেশ এগিয়ে গেছে। সপ্তম শ্রেনীতে পড়ে। অবশ্যই পড়াশোনায় তরীর থেকে ভালো। তাফসি এগিয়ে এসে বলল,
‘তরী আপুকে মা ডাকছে। মা আজ আপুর সাথে ঘুমাবে।’
নির্ঝরের মুখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো। তরী মুচকি হেসে বলল,
‘আমি বরং যাই। তাফসি তুই তোর নির্ঝর ভাইয়ার সাথে ঘুমা আজ।’
তরী ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেল। নির্ঝর পরপর কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। তাফসি তার পাশে বসে পড়তে সে আহত স্বরে বলল,
‘ব্রো, সিগারেটের ব্যবস্থা করতে পারবে?’
‘কি? ভাইয়া আপনি সিগারেট খান?’
নির্ঝরের হুশ ফিরলো। জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে তাফসির মাথায় একটা গাট্টা মারলো। সুর টেনে বলল,
‘হাউ ফানি! আমি সিগারেট জীবনে স্পর্শ করিনি। আসলে তোমায় ছোটখাটো একটা ম্যাজিক দেখাতে চাইলাম। তুমি জানো না যে আমি ম্যাজিক পারি। হরেক রকমের ম্যাজিক। এই ধরো অদৃশ্য হয়ে যেতে পারি!’
তাফসি ফিক করে হেসে দিল। নির্ঝর সুর পাল্টে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
‘মজার বিষয় না এটা ব্রো। অদৃশ্য হতে পারি না এটা ঠিক। তবে ম্যাজিক পারি আমি। এই ধরো, হাতের তালুতে অনেক বড় বড় জিনিস লুকিয়ে ফেলতে পারি। তারপর একটা সাদা রুমাল দিয়ে সিগারেট ঢেকে দিবে তুমি। একটুপর রুমাল সরিয়ে দেখবে সেটা গোলাপ হয়ে গেছে। টকটকে লাল গোলাপ।’
তাফসি আগ্রহ দেখাল ম্যাজিক দেখার। সে একদৌঁড়ে রুম থেকে বের হলো। মিনিট পাঁচেক নির্ঝর হাঁসফাঁস করলো। আজ যে তরীর বিরহে প্রচন্ড দুঃখের গান শুনবে আর সারারাত সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়বে। তার ভাবনার মাঝে তাফসি একদম নতুন এক প্যাকেট গোল্ডলিফ সিগারেট হাতে হাজির হলো।
________________
ভোরবেলা নামাজ শেষ করে তরী পড়তে বসলো। পড়ার মাঝখানে নোট প্রয়োজন পরতে সে মায়ের পাশ থেকে উঠে পড়লো। এ বাড়ির কেউ এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। সে সাবধানে সিঁড়ি মাড়িয়ে নির্ঝরের রুমের দিকে এগোল।
নির্ঝরের রুমের দরজা ভেড়ানো ছিল। হালকা একটু ধাক্কা দিতে সেটা খুলে গেল। রুমের ভেতর ঢুকতে তরী বড়সড় ধাক্কা খেল। সমস্ত ফ্লোর জুড়ে কাপড়চোপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিছানার চাদর, বালিশ সব ফ্লোরে বিছানো। ঘরজুড়ে সিগারেটের গন্ধ। এখানে ওখানে সিগারেটের টুকরো, আর ছাই পড়ে আছে। আর সেসবের মাঝে নির্ঝর হাত-পা ছড়িয়ে ফ্লোরে বসে আছে। মাথাটা খাটের সাথে হেলানো। তরী এগিয়ে গিয়ে মুখে হাত রেখে বলল,
‘এসব কি? রুমের এ অবস্থা কেন?’
নির্ঝর জাগ্রত ছিল। তরীর কন্ঠ পেয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মাথার চুল এলোমেলো তার। চোখ দুটো টকটকে লাল। চোখের নিচে কালি। পুরোদস্তুর বিধ্বস্ত চেহারা। যে কেউ দেখে মনে করবে রাত জেগে পড়াশোনা করেছে। সে ভারী মাথাটা খাট থেকে সোজা করে বলল,
‘তরী তুমি এসেছ? দেখো রুমের কি অবস্থা করেছে দাদু! কাল রাতে এসেছিল। তোমার লাগেজ থেকে সব কাপড় চোপড় বের করে ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। বুদ্ধি করে আমার লাগেজে হাত দেয়নি।’
‘আপনার দাদু মহিলা মানুষ হয়ে রাতে সিগারেটও খেয়েছে?’
‘হুঁ! সিগারেট দাদুর ভীষণ পছন্দের।’
(চলবে…)
রাতে আরেক পর্ব দিবো। 🖤