#শিশির_কণা
শামসুল ইসলাম
(পর্বঃ- ১৪)

-” ভালোই তো ভক্ত হয়ে গেছিস হুজুরের! শিশিরকে তোর থেকে আমি ভালো চিনি, তুই কি জানিস শিশিরের প্রকৃত পরিচয়?”

আমি হতচকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
-” রত্না তুই কি বলতে চাচ্ছিস?”
-” তুই কি শিশিরের পরিচয় বিস্তারিত জানতিস?”
-” আমার কাছে তো কিছুই অজানা মনে হয় না, আর কথা হচ্ছে! বিয়েটা আমার পরিবারের সকলের সিদ্ধান্তে হয়েছে, সুতারাং তাদের প্রতি আমি যথেষ্ট আস্থাশীল।”
-” ভালো! তবে শিশির ভাই ছেলেটা ভালো, কিন্তু তাঁর কোনো প্রকৃত পরিচয় খুঁজে পাওয়া যাইনা।”
অজস্র জিজ্ঞাসু নেত্রে বললাম-
-” খুলে বলতো, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! তুই আসলে কি বলতে চাচ্ছিস?”
-” শিশির পালিত সন্তান! বর্তমান সে যে বাবা মায়ের পরিচয়ে পরিচিত তাঁরা আসলে তাঁর আপন কেউ নই।”
-” তুই এসব কিভাবে জানলি?”
-” শিশিরের বর্তমান মা আমার দুঃসম্পর্কিত ফুফু। তাই জানি আমি! আর আফসোস হচ্ছে, তোর মতো একটা অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়ের একজন পিতৃ পরিচয়হীন ছেলের সাথে কিভাবে বিয়ে হলো! এটাই আমার মাথায় আসছে না। তাই প্রকৃতপক্ষে সত্যকথাটি তোকে জানালাম, তোর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথাগুলো ভেবে বললাম। সময় থাকতে খোঁজখবর নিয়ে তালাক দিয়ে দিস, অনেক ভালো ছেলে অপেক্ষা করছে তোরজন্য।”
আমার ভীষণ রাগ হচ্ছে রত্নার ওপরে, শিশিরের সম্পর্কে মন্দ কথার জন্য মনেহচ্ছে একটা থাপ্পড় দিই!
তবুও নিজেকে শান্তকরে বললাম-
-” শোন রত্না! আমার কাছে তাঁর পরিচয়টা গুরুত্বপূর্ণ নই, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিশির কেমন! সে অসম্ভব ভালো মানুষ। আমার কোনো আপত্তি নেই তার এসব পরিচয়ে। আশাকরি আমার বরের সম্পর্কে আজকের পর থেকে আর কখনো আমার কাছে কানভারী করতে আসবি না।”

রত্না আমার সাথে আর কাথা না বাড়িয়ে বললো- ” সত্যাটা জেনে নিস।”
রাত্মার কাছ থেকে রাগ দেখিয়ে শিশিরের কাছে চলে এলাম, শিশির আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-” কি হয়েছে, আর অতক্ষণ কি কথা হলো তোমাদের?”

ম্লান হেসে বললাম-
-” চলুন পরে বলবো সব, চার ঘন্টা অপেক্ষা করে অনেক কষ্ট করেছেন। চলুন কিছু খেয়ে নিই।”
-” আচ্ছা চলো।”
মুখে কথাবার্তায় স্বাভাবিক হলেও মনের ভিতরে অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছি, ক্রমান্বয় চিন্তারাজ্য আমার মনে ভর করছে। হৃদয় আমার পুড়েপুড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে,শিশির এই কথাটি কেন আমার সাথে লুকালো!
শিশির না হয় লুকালো, কিন্তু আম্মু খালামণি সবাই আমার সাথে এমন করলো কেনো?
হাজার দুশ্চিন্তায় আমার ভিতরে নিমজ্জিত করে ফেলছে।
হাটার গতি মন্থর হয়েগেছে, শিশির খপ করে হাত ধরে বললো-
-” কি হয়েছে তোমার! শরির খারাপ করেছে? এমন করছো কেন?”
মনেহচ্ছে পড়ে যাবো নিচেই, শিশিরকে বললাম-
-” আমি হাটতে পারছিনা, শক্তকরে ধরুন যেন পড়ে না যাই।”
বেশ কিছুক্ষণ হাটার পর একটা খাবার হোটেলে প্রবেশ করলাম, শিশির বললেন-
-” চলো হাতমুখ ধুয়ে নিবে।”
হাতমুখ ধুয়ার পর তাঁর রুমাল বের করে দিলেন, আমি হাতমুখ মুছলাম।
শিশির আমাকে নিয়ে একটা কেবিনে বসলো, আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
-” কণা! তুমি রত্নার সাথে কথা বলার পর থেকে আর স্বাভাবিক নেই, বিষয়টা লক্ষ্য করেছি। আমি আশাকরি সব খুলে বলবে।”
কিভাবে বলবো! শিশিরকে কষ্ট দিতে চাইনা এসব বলে, আবার অজানা বিষয়ে না জানা পর্যন্ত আমি দগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।
তবুও আর দ্বিধান্বিত না হয়ে সরাসরি বললাম-
-” রত্নাকে কিভাবে চিনেন?”
-” ওহ! বুঝিছি, নিশ্চয় কিছু একটা বলে তোমার কানভারী করেছে সে। রত্না আমার দুঃসম্পর্কিত মামাতো বোন। সাথে আমাকেও অনেক পছন্দ করতো একটা সময়, অনেকবার প্রেম নিবেদন করেছে।কখনোই সাড়া দিইনি তাঁর প্রেমে, কারন তাঁর চিন্তা ছিল অবৈধ সম্পর্ক করা যা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। আমি প্রেম নই বিয়েতে বিশ্বাসী, আমার সমস্তরকম প্রেম ভালোবাসা সব আমার বিবাহিতা স্ত্রীর জন্য জমিয়ে রেখেছিলাম, যা আমার কণা নামের বউয়ের জন্য এখন সেটা উজাড় করে দিচ্ছি।
রত্নার প্রেম প্রত্যাখ্যান করার পর, সে আমাকে বলেছিল কখনো যদি সুযোগ পাই সুদেআসলে উসুল করে নিবে। যা আজ তার বহিঃপ্রকাশ। তবে আমার ভাবনায় আসেনা, সে কেন আমার মতো কালো বেখাপ্পা একটা ছেলের প্রতি আকর্ষিত!”
আমার জন্য জমিয়ে রাখা প্রেমের কথা শুনে আমার হৃদয়ে আনন্দে পুলকিত হলো। পরক্ষণে আমার বিগত জীবনে দুই শিশিরের সাথে অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য নিজেকে অপরাধী মনেহচ্ছে।
মনের ভিতর উথালপাতাল করছে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করার জন্য, তা হচ্ছে তার প্রকৃত পরিচয় জানতে পারা।
মনেমনে বললাম-” থাক! পরে জিজ্ঞেস করবো।”
শিশিরকে বললাম-” পিয়াজু খাবো!”
কারন চপ পিয়াজু অনেক পছন্দের আমান।
-” কণা তুমি তো দেখছি স্বাস্থ্যের প্রতি অনেক অসচেতন! সেই ১১টার সময় কোনরকম দুলুকমা ভাত খেয়েছ, আর এত সময় না খাওয়া। খালিপেটে তেলেভাজা খাদ্য না খাওয়াই সর্বাত্তম। অন্যকিছু খাই, তারপরে বাড়ি যেয়ে পিয়াজু খাবে কিনে নিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ্‌।”
আমার খাওয়ার স্বাদ মিটে গেলো, চুপচাপ বসে থাকলাম।
শিশির বললো-” ভাজাভুজা ছাড়া অন্যকিছু কি খাবে?”
-” খাবোনা, বাড়ি চলুন?”
শিশির বুঝতে পারলেন আমি কিঞ্চিৎ অখুশি তাঁর প্রতি। তাই তিনিও মুখ গোমরা করে বললেন- “ঠিকআছে চলো, আমিও খাবোনা যদিও ক্ষুধা লেখেছে।”
খপ করে হাত ধরে বললাম-
-” কি ব্যাপার দোকানদার সাহেব, না খেয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?”
-” বাড়ি! আমার বউ খাচ্ছেনা, আমিও খাবোনা।”
-” আমি খাবো!”
-” খাও! কি খাবে বলো? কিন্তু আমি খাবোনা।”
শিশিরের নাকের ডগায় মৃদু টান দিয়ে বললাম-
-” যদি খাইয়ে দিই খাবেন না?”
শিশির উদ্বেলিত হয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললেন-
-” কে বলেছে খাবোনা! আমি কি কখনো বলেছি খাবোনা? অবশ্যই খাবো, হাজার বার খাবো।”
-” তাই না! দোকানদারের কথার ফুলঝুরি আছে খুব, এই কথায় তো আমাকে কাবু করে দিয়েছেন।”
-” হাহাহা আচ্ছা বলো কি খাবে?”
-” আপনি যা খাওয়াতে ইচ্ছুক তাই খাবো।”
শিশির দৈমিষ্টি অর্ডার করলো।
অনেক তৃপ্তি সহকারে দুজন দুজনের খাইয়ে দিলাম ও খেলাম।
কিছুক্ষণ পর মাগরিবের আযান ভেসে আসলো, বিল পরিশোধ করে আমরা দুজনে হাতধরে একটা মসজিদের দিকে রওনা করলাম। আমাকে মহিলাদের সালাত আদায়ের স্থানে ঢুকিয়ে দিলেন, শিশির মসজিদে প্রবেশ করলেন।
যশোরে অনেক মসজিদ আছে মহিলাদের সালাত আদায়ের জন্য নির্ধারিত জায়গা, যারজন্য আমাদের সমস্যা হয়নি।

★★★
রাতের খাবারদাবার শেষ করে দুজনে টুকিটাকি কুটকুট করে গল্প করেই যাচ্ছি, আমার তো চুপকরে থাকতে মটেই ভাল্লাগেনা। সারাক্ষণ মনচাই শিশিরকে বকবক করে মাথা ধরিয়ে দিই, সেও অনেক মূল্যায়ন করে আমার বকবকানির।

স্বামী স্ত্রী পরস্পর এমন হওয়া উচিৎ, পরস্পরের কথাবার্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
তেমনিভাবে আমাদের সাথে যে কেউ কথা বললে তাঁর কথাগুলো গুরুত্বের সাথে শ্রবণ করা।
আমি শিশিরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথা বলছি, সেও আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এখন লজ্জাসংকোচ কিছুই করেনা তাঁর প্রতি।
এভাবে দুজনে অনেক রাত পর্যন্ত গল্পগুজব করলাম, মনেহচ্ছে কথা শেষ হবার নই।
শিশির উঠে বসলেন, আমাকেও হাতধরে তুলে বসালেন, শিশির বললেন-” একটা গল্প শুনবে?”
-” হ্যাঁ! শুনছি তো! বলেন আমি তো উৎসুক জনতার মতো আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি শুনার জন্য।”
-” এখানে না, চলো ছাদে রাতের নির্মল চাঁদের আলোয় দুজনে গল্প করবো।”
-” এতরাতে?”
-” হ্যাঁ, রাসুল (সাঃ) সুন্নাত এটা, এমনকি তিনি চাঁদনী রাতে স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) সাথে দৌড় প্রতিযোগীতা পর্যন্ত করেছেন।”
-” তাহলে যেতে পারি যদি আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগী করেন! হাহাহা।”
-” আচ্ছা চলো?”
ছাদের ওপর উঠলাম, শিশির বললেন-
-” গল্পটি মনযোগ সহকারে শুনবে!”
আমি শিশিরের গা ঘেঁষে দাড়িয়ে তাঁর ডান হাতটি ধরে বললাম-” জ্বি আচ্ছা বলুন ইনশাআল্লাহ্‌ আমার সমস্তরকম মনযোগ আপনার প্রতি মননিবেশ করলাম।”
-” সময়টা ছিল অনেক বছর পূর্বে, যখন বৃহত্তর যশোর জেলায় সর্বহারাদের উৎপাত ছিলো প্রকোপ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই এদের যাত্রা শুরু, অভাব অনটন হিংসা বিদ্বেষ এসবকে কেন্দ্র করেই সর্বহারাদের উৎপত্তি।
একটা পর্যায় সর্বহারায় বিপুল সংখ্যক লোকজন প্রবেশ করতে থাকে, তাঁদের অত্যাচার দিনদিন মানুষকে অতিষ্ঠ করে দেই। চারিদিকে তাঁরা খুন রাহাজানি মারামারি রক্তারক্তিতে মানুষজন সব আতংকে দিনরাত অতিবাহিত করতেন।
সর্বহারারা বিভিন্ন নামে বিভক্ত হয়ে যাই পরবর্তীতে যেমন, পুরোবাংলা, হকপার্টি, দেবুপার্টি, বামপন্থি ইত্যাদি দলে বিভক্ত হয়ে যায়। তাঁরা একাক এলাকা ক্ষমতাবলে দখল করে সে এলাকাই তাঁরা আধিপত্য বিরাজ করতো। তেমনিভাবে আমাদের ঝিনাইদহে পুরোবাংলার প্রভাব ছিলো আকাশ ছোঁয়া, যদি কেউ বিয়ে করে নতুন বউ ঘরে আনতেন তাহলে সন্ত্রাসীরা যদি ঠিক পেতো তাহলে তাঁরা বরকে বেঁধে রেখে বা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নতুন বউকে পালাক্রমে ধর্ষণ করতো।
আবার যদি কোনো বিবাহিতা নারী বা কুমারী মেয়ের প্রতি তাঁদের কুদৃষ্টি পড়তো তাহলে তাঁরা তাঁদের ছাড় দিতনা।
তেমনিভাবে রাহেলা বেগম নামে একজন বিদুষী সুন্দরী মহিলা ছিলেন, তাঁর স্বামীর নাম ছিলেন রবিউল ইসলাম। তো রাহেলা বেগমের দিকে এক সন্ত্রাসীর কুদৃষ্টি পড়ে, বিভিন্নভাবে সুযোগ খুঁজতে থাকে তাঁর চরিতার্থ করার জন্য।
অনেক উপায় অবলম্বন করে যখন রাহেলা বেগমের চরিতার্থ করতে ব্যর্থ হন! তখন সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রাহেলা বেগমের বাড়িতে আক্রমণ করেন। রবিউল ইসলামের মা ছিলেন অনেক সাহসিনী মহিলা।
তো যাইহোক, সন্ত্রাসীরা প্রথমে বাড়িতে প্রবেশ করে উড়ো ফায়ার করে ফলে পাড়াপড়শিরা ভয়ে কেউ সেদিন ঘর থেকে বের হননি।
প্রথমে রবিউল ইসলামকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন, আর তাঁর মাকে পাশের রুমে আটকে রাখে।
রাহেলা বেগমকে তাঁরঘরে নিয়ে যখন সর্বনাশ করবেন, আল্লাহর অশেষ রহমাতে রবিউল ইসলামের মা ঘর থেকে কোনো উপায়ে বের হন।রান্নাঘর থেকে ধারাল বটি এনে সরাসরি ঘরে প্রবেশ করেন, যে নরপশু প্রথমে রাহেলা বেগমকে সর্বনাশ করতে চেয়েছিল তাঁকে এলোপাথাড়িভাবে জখম করতে থাকেন।
মহিলার এমন কর্মকাণ্ড দেখে বাকি সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
আহত নরপশু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান, পালাতে সক্ষম হন।
এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হলে আহত নরপশু রবিউল ইসলামের বাড়িতে আক্রমণ করে সপরিবারে গুলিকরে করে মৃত্যুর দুয়ারে পাঠিয়ে দেই। একমাত্র বাঁচিয়ে রাখে তাঁদের একমাত্র ৬ মাসের একটা ছেলে সন্তান।”
কথাগুলো বলে শিশিরের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে এলো, চাঁদের আলোয় পরিস্ফুটভাবে বুঝাতে পারলাম শিশিরের চোখ বেয়ে পানি গড়াচ্ছে!
গল্পটি শুনে আমিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলামনা।
শিশির আবার বললেন-
-” কণা জানো! সেই ৬ মাসের সন্তানটি কে?”
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- ” কে?”
-” সেই ৬ মাসের এতিম ছেলেটিই তোমার সামনে দাড়িয়ে থাকা শিশির!”
ভিষন কান্না পাচ্ছে আমার, এতোটা কষ্ট তাঁর বুকের ভিতরে আর আমি বুঝে উঠতে পারিনি এখনো!
শিশিরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম, অনেকক্ষণ কাঁদলাম। শিশির আমাকে আবার বললেন-
-” কণা জানো! কখনোই নিজেকে এতিম মনে হয়নি! কারন আমি বাবা মার অভাব কখনোই বুঝিনি। আমার বাসায় যে আম্মু আছেন, আমি ছোট থাকতে তাঁর সন্তান হয়ে মারা যায়, তাঁর দুধ পান করেই আমি আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি।
আমি কখনোই জানতাম না, রমিজ উদ্দীন ও রওশনারার পালিত সন্তান আমি। মাত্র কয়েক বছর হলো জানতে পেরেছি তাও বিশ্বাস হয়না এখানো। বাড়িতে যে ছোটভাই দেখেছো, সে কখনোই বিশ্বাস করেনা আমি তাঁর মায়ের পেটের কেউনা। শাকিল আমাকে নিজের আপন ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসে, এইতো দুবছর হলো গ্রামে মা বাবাসহ দাদির কবরটা দেখে এসেছি, তাউ ঠিকমত তথ্য কেউ দিতে পারেননি, আর আমার পারতপক্ষে আপন কেউ নেই।
রমিজ উদ্দীন আমাকে বুকের ভিতরে আগলে রেখে মানুষ করেছেন, আমার একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছিল ছোটবেলা। তিনিই আমাকে তাঁর এক কিডনি দিয়েছিলেন। তাঁর উছিলায় আমাকে আল্লাহপাক বাঁচিয়ে রাখছেন।
তিনি তাঁর সমস্তরকম সম্পদ আমাদের দুইভায়ের মাঝে সমান বণ্টন করে দিয়েছেন।
তাঁদের মতো পিতামাতা পেয়ে সত্যিই আমার আসল পিতামাতাকে ভুলে গেছি।
দো’আ দানখয়রাত সব করি আমার মৃত জীবিত পিতামাতার জন্য, মানুষের দুজন পিতামাতা হয় আর আমার চারজন জান্নাত দিয়েছিলেন আল্লাহপাক। যা তিন জনকে চিরতরে হারিয়েছি আর একজন মাত্র আমার ঘরে আছেন। আমার আম্মুর জন্য কলিজা ছিড়ে দিতেও কখনো দ্বিধান্বিত হবোনা।
আমি বিয়ের পূর্বেই তোমাকে সব বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তোমার আমার গুরুজনেরা বলতে দেননি, আজ না বলে পারলামনা। সত্যকথা বলতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি তাই বলে দিলাম।”

শিশিরের চোখে অনবরত পানি ঝরছে, আমিও জড়িয়ে ধরে আমার চোখের সমস্ত পানি তাঁর বুকে ঝরাচ্ছি।
শিশির আমাকে বুক থেকে ছাড়িয়ে, দুই স্কন্ধে হাত রেখে বললেন-
-” প্লিজ কণা, আমার আম্মুকে কখনোই কষ্ট দিওনা। যত রাগ অভিমান কষ্ট সব আমার উপরে প্রয়োগ করবে, তাঁকে কখনো কষ্ট দিবেনা উদাত্ত আহবান।”

আমি শিশিরকে জড়িয়ে ধরে বললাম-
-” এই কণা জীবিত থাকতে তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত আমার শাশুড়ি ও স্বামীর খেদমত করে যাবো ইনশাআল্লাহ্‌। কখনোই উহ্ শব্দ উচ্চারণ করতে হবে না আমার জন্য।”

শিশির আমাকে আরেকটু শক্তকরে জড়িয়ে ধরে বললেন-
-” আমীন, আল্লাহপাক যেনো আমাদের সবাইকে কবুল ও মঞ্জুর করে নিন।”

শিশিরকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলাম, অনাবিল শান্তির ছোঁয়া বয়ে যায় আমার এ অন্তরে। শিশির বললেন- ” অনেক গল্পগুজব হয়েছে, সাথে রাত্র ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, এবার ঘুমাতে হবে। তাছাড়া ফজরের সালাত আদায়ে দুষ্কর হয়ে যাবে।”
-“আচ্ছা জানু চলুন।”
-” হা হা হা প্রেয়সী চলো!…………(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here