# শিশির_কণা পর্ব ৩

৩।।
#শবে_বরাত
আমরা আসরের সালাত আদায় করলাম, মুসলিমার সাথে বিকালবেলার খোলামেলা বাতাসে ছাদের ওপর উঠলাম।
মুসলিমাকে বললাম-
-” হাদিসে সিয়াম পালনের ব্যাপারে কথা আছে সেটাকেও অস্বীকার করবি?”
-” মটেই না, হাদিস অস্বীকার কারির পরিণাম জাহান্নাম।”
-” তাহলে হাদিসে সিয়ামের ব্যাপারে কথা আছে যে?”
-” ওটা দুর্বল বা পরিত্যক্ত হাদিস হিসাবে হাদিসের ইমামগন প্রমান করেছেন।
যেমন, একটি হাদিসে বলা হয়েছে-
“যে ব্যক্তি শাবান মাসে ১৫ তারিখে সিয়াম পালনন করবে, জাহান্নামের আগুন কখনো স্পর্শ করবেনা। ( মোকছুদোল মো’মেনিন, বার চন্দ)
এবং আরেকটি দুর্বল বাবা পরিত্যক্ত হাদিস আছে আবার সেটার সহিহ হাদিসও ইছে”
-” হাদিসটা শুনতে আগ্রহী বল শুনি!”
-” আচ্ছা-
“হযরত আলী ইবনে আবু তালেব(রাঃ) থেকে বর্ণিত নবীকারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পনের শাবানের রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাবে এবং দিনেরবেলা রোজা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহতাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি? কোন রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহতাআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন।(ইবনে মাজাহ, আস- সুনান ১/৪৪৪)”
ঠিক এমনটাই সেই সহিহ হাদিস হলো-
বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য ইমাম সংকলিত সহিহ হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন-
“ প্রতি রাতে রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে আল্লাহপাক প্রথম আসমানে নেমে বলেন, আমিই রাজাধিরাজ, আমিই রাজাধিরাজ। আমাকে ডাকার কেউ আছো কি? আমি তারডাকে সাড়া দিব। আমার কাছে চাওয়ার কেউ আছো কি? আমি তাকে প্রদান করব।আমার কাছে কেউ ক্ষমা চাওয়ার আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। প্রভাতের উন্মেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে তিনি বলতে থাকেন।”
তাহলে কি দরকার দুর্বল হাদিস পালন করার?”
-” ঠিক বলেছিস মণি।”
-” আপু এটা অনেকের কাছে বেঠিক মনে হচ্ছে সঠিক বুঝের অভাবে। যেখানে রাসুল (সাঃ) শাবান মাসের অর্ধেক এমনকি সম্পূর্ণ মাস সিয়াম পালন করেছেন সেখানে কেনো আমরা একটা দিন নিয়ে মাতামাতি করবো?
এমনি সাহাবীগন তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীগন কেউ করেননি, ইতিহাস বলে কিছু তাবে তাবেয়ীগন শুরু করেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন তৎকালীন এই রাত পালনের প্রতিবাদে মদীনার প্রখ্যাত তাবে তাবিয়ী আব্দুর রহমান ইবনু যায়িদ ইবনু আসলাম(১৮২ হিঃ) বলেন-
আমাদের কোনো উস্তাদ,আমাদের মদীনার কোনো ফকিহ, কোনো আলিমকে দেখিনাই শাবান মাসের মাঝের রাতের দিকে কোনো রকম মনোযোগ দিয়েছেন বা ভ্রুক্ষেপ করেছেন।এ বিষয়ে সিরিয়ার তাবেয়ী মুহাদ্দিস মাকহুল(১১৩হিঃ) যে হাদিস বর্ণনা করেছেন তা কখনো কারো মুখে শুনেনি (ইবনু ওয়াদ্দাহ, আল বিদাউ পৃঃ ৪৬)
তারা সর্বদা ফজিলতে বা আমলি বিষয়ে পালনের জন্য রাসুল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীগনের কর্মের উপরে বিশ্বাস করতেন। তাদের যুগের অবস্থা ও আমাদের যুগের অবস্থা একটু মিলিয়ে দেখা দরকার।”
-” হ্যাঁ তাইতো ভাবার বিষয়।”
-” এতো মাতামাতি না করে আমরা যা পারি সেইভাবে সিয়াম পালন করার চেষ্টা করি। আর রাতের ইবাদতের ব্যাপারে তো সহিহ হাদিস আছে।
সেখানে আমাদের জন্য প্রতি রাতেই তো শবেবরাতের মতো ফজিলত অর্জন করতে পারছি।
রাসুল (সাঃ) লাইলাতু নিসফি শা’বানে কি কি করেছেন তা আমরা জানি?”
-” জানবো কি করে? সব তো মোকসুদুল মো’মেনিন বইয়ে মাথা নষ্ট করে রেখেছে।
আরেকটি হাদিস ইমাম তিরমিযী ইবনু মাজাহ হযরত আয়েশা ( রাঃ) এর সুত্রে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যাতে বলা হয়েছে যে “ গভীর রাতে কাউকে না বলে একাকী বাকী গোরস্তানে যেয়ে মুর্দাদের জন্য দো’আ করেছেন।
তিরমিযী উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর উস্তাদ ইমাম বুখারী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন।
(তিরমিযী, আস-সুনান ৩/১১৬, ইবনু মাজাহ, আস সুনান, ১/৪৪৪, আহমাদ বিন হাম্বল, আল মুসনাদ ৬/২৩৮)
-” তাহলে লাইলাতু নিসফি শা’বান মাসে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই?”
-” ১৫ তারিখে যা আমরা “শবে বরাত” উপলক্ষে করি তা নেই। তবে রমজানের পুর্বে এমাস নফল ইবাদত বন্দেগীর জন্য খুব মর্যাদাপুর্ন যা ইতিপূর্বে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমান করেছি। অনেক হাদিসের ইমামগন বলেছেন যয়ীফ হাদিস আমোলী হলে তা আমোল করা দোষের নয়। সহীহ বাদদিয়ে নফলের জন্য যয়ীফ হাদিস নিয়ে বাড়াবাড়ির দরকার নেই।”
-” মণি থাম থাম!”
-” তাহলে মসজিদে যে ঘটাকরে ইবাদত বন্দেগী সব যয়ীফ বানোয়াট জাল হাদিস?”
-” এটাই প্রমান করতে চাইছিলাম, শা’বান মাসের গুরুত্ব অনেক যা আমরা প্রকৃত গুরুত্ব বাদ দিয়ে নিজেদের তৈরি করা ও বিতর্কিত বিষয়ে হিংসা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছি। কেউ এটা প্রমান করতে উঠেপড়ে লেগেছে আবার কেউ এটা বিদআত ঘোষণা করতে মাথা নষ্ট করছে। কিন্তু আমাদের দোষ কি জানো আপু?”
-” কি দোষ গো ছোট বুবু?”
-” একদম মজা করবেনা মোন দিয়ে শুনবে।”
মনে হচ্ছে মণি রাগ করছে, মুচকি হাসি দিয়ে-
-” আচ্ছা বল শুনছি?”
-” আমরা হুঁজুকে বাঙ্গালি, ফরজ ওয়াজিব সুন্নাতকে অবমূল্যায়ন করে নফল নিয়ে সমাজে মারামারি করছি।
যদি জীবনে ১০০ টি “শবে বরাত” পরিপুর্ন আবেগ নিয়ে ইবাদতে কাটাই, যদি একটি ফরজ ইবাদত ছেড়ে দিই তাহলে নাজাতের আশা করা যাইনা। আল্লাহর ফরজ ইবাদত অমান্য করে একরাতে কাঁদাকাটা করে তাঁর কাছ থেকে ভালো ভাগ্য লিখিয়ে নেওয়ার মতো চিন্তা কোনো পাগল ছাড়া কেউ করবে?”
-“নাহ!!! কেউ করবেনা!”
-” আরো দেখ ফরয ইলম, আকীদা,সালাত,যাকাত, সিয়াম, হজ্ব, হালাল উপার্জন, সাংসারিক দায়িত্ব, পিতামাতা, সন্তানসন্ততি ও স্বামী ও স্ত্রীর দায়িত্ব, পর্দ, সামাজিক দায়িত্ব, সৎকাজের আদেশ অসৎকাজ থেকে নিষেধ ইত্যাদি সকল ফরয ইবাদত, যার ক্ষেত্রে যতোটুক প্রযোজ্য, পালন না করে “শবে বরাত” রাতের নফল ইবাদত করা হলো দেহের ফরয সতর আবৃত না করে উলঙ্গ অবস্থায় টুপি পাগড়ি পরে ফযীলত লাভের চেষ্টার মতই আবান্তর ও বাতুল কর্ম।”
আর আমাদের জন্য প্রতিদিন “শবে বরাত” যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। পুরুষেরা ঘটা করে বছরে মসজিদে একদিন না যেয়ে প্রতিদিন বাড়িতে রাতে জাগরণ করে ইবাদত বন্দেগী করলে যা দেখে আমাদের মা তাদের সন্তান সন্ততিরা উৎসাহীত হতে পারবে। এটাই আমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর।”
-” বুঝলাম, রাসুল (সাঃ) যা করেছে তা পরিবর্তন করে আমরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ইবাদত বন্দেগী তৈরি করে নিচ্ছি।”
-” হ্যাঁ আসলেই “শবে বরাত” আমাদের জন্য “ভাগ্য রজনী” যদি সঠিক শিক্ষা ও আমোল করতে পারি। তাহলেই “লাইলাতু নিসফি সাবান“ এর প্রকৃত শিক্ষা অর্জন হবে যদি বেদআত কর্মগুলো পরিত্যাগ করে সুন্নাত কর্মগুলো গ্রহন করতে পারি।”
-” হ্যাঁ কিন্তু মনে হচ্ছে নানুভাই এখনি মাগরিবের আযান দিবেন।”
-” কণাপু দেখেছো গোধূলিলগ্নে আকাশটা কতো সুন্দর?”
-” হ্যাঁ অসম্ভব সুন্দর।”
-” একটা গান গাইতে ইচ্ছা করছে।”
-” গান! আমারো শুনতে ইচ্ছা করছে গাঁ গাঁ শুনি!!”
-” একটি কাননে ফুটেছি ফুল যে,
– আমরা শত ফুল।
– খোশবু আমাদের সেজে ওগো,
-” প্রিয় রাসুল।
আরেকটি অন্তরা শুনাই-
– ঐ দিগন্তে উড়ে চলি,
– আমরা মুক্ত পাখি।
– গোধূলির রঙে মিশে প্রেমের ছবি,
– আমরা আঁকি।”
কিছুক্ষণ পর মসজিদের মিনার থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসলো। দুইবোন মনের সুখে নিচে নামলাম।
★★★
হালুয়া রুটির স্বাধ মিটে গেলো ছোটবোন মণির কথাই, মাগরিবের সালাত আদায়ের পরই পড়তে বসলাম। মনের ভিতরে বিকম্পিত হচ্ছে আমার শিশিরের জন্য। পড়ার মাঝেই ফাঁকিবাজির মতো ফোনটা হাতে নিয়ে মণিকে বললাম-
-” তুই পড় আমি একটু বাইরে থেকে হাটাহাটি করে আসি।”
-” ও মা কি বলো!! মাত্র তো বাইরে থেকে আসলে?”
ইনিয়েবিনিয়ে দুচারটা নির্ভেজাল মিথ্যা বলে বাইরে এসে ডাটা অন করলাম। কারণ আমার রুমে পড়ার টেবিল পাশে টেন পাবেনা। আবার আমার প্রেমের খবর কেউ জানেনা অনেকটা গুপ্তহত্যার মতো গুপ্তপ্রেম হা হা হা।
ডাটা অন করেই দেখি আমার জান্টুশ মেসেজে করেছে « শবে বরাতের শুভেচ্ছা»
দেখেই মেজাজ খারাপ হলো! সারাদিন কথা বলিনি সেই সকালে কথা বলিছি আর না। ভাবলাম হয়তো কয়েকশ মেসেজ করবে, কিন্তু তা করিনি!!
মোনটা খারাপ হয়ে গেলো। মেসেজ রিপ্লে করলাম এসব শবেবরাত মানিনা। এটার অন্য নাম আছে যা “লাইলাতু নিসফি শা’বান” তোমার সাথে আড়ি আর কথা হবেনা আগামী দুচার দিন।
শিশির নিয়ে কিছুই তো বলা হয়নি, সে হচ্ছে আমার জানের জিগার পরাণ পাখী, যাকে আমি সারাক্ষণ বুকের পিঞ্জরে আটকে রাখি।
তারসাথে আমার সম্পর্ক ফেসবুকে, কখনোই ফোনে কথা হয়নি। এককথাই ফেসবুক প্রেম, কখনো দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। শুধু আমার পিক দেখেছে সে কিন্তু আমাকে সে কখনোই দেখা দিইনি। কতো কতো অনুরোধ করেছি কিন্তু পরিণাম শুন্য।
আমি অনেক অনেক ভালোবাসি!!
সেও আমাকে বাসে কিন্তু মাঝেমধ্যে দ্বিধান্বিত হয়ে যাই। আমাদের ঝগড়াঝাঁটি হলে কখনোই সে আমার অভিমান ভাঙ্গাতে আসেনা বরং বেলা শেষে তারকাছে আমিই ফিরে যাই।
শিশির এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতিতে। বাড়ি হচ্ছে খুলনা, থাকেন কবি জসিমুদ্দিন হলে।
আমার চেহারাচাট্টি মোটামুটি খারাপনা, নিজের বর্ণনা নিজে দেওয়া ঠিক না যদি কপালে থাকে দেখা হলে আমাকে দেখে নিয়েন।
যাইহোক, আমাদের সম্পর্ক হয় একটা ফানি পেজে কমেন্টের মাধ্যমে। সেখান থেকে আমাদের রিপ্লাই দেওয়ানেওয়া। এভাবে একপর্যায় ফ্রেন্ডস রিকুয়েস্ট তারপরে চ্যাটিং হাই হ্যালো। অনেকদিন পরপর খোঁজখবর নিই আমরা পরস্পর, তারপরে একটা পর্যায় আমারা সারাক্ষণ চ্যাটিং। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলো। সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হলাম, কলেজের সমস্ত ছেলেরা প্রায় আমার রূপে ক্রাশ খাইছে।
কাউকে পাত্তা দিইনি আম্মুর কথা ভেবে। আম্মু বলেছেন-
“ আমাকে যেনো তোদের দুইবোনের জন্য কোনো কেলেঙ্কারি বা কষ্ট না পেতে হয়।”
আমি সেই চিন্তাই এসব আর ভাবিনা, কিন্তু কাল হলো আমার শিশির!!
মাঝেমধ্যে চ্যাটিং করতে করতে একপর্যায় তার প্রতি অভ্যাস হয়ে যাই। সারাক্ষণ কথা বলতে মোন চাইতো, আমরা দিনে রাতে আট দশ ঘন্টা প্রায় চ্যাটিং করতাম।
একপর্যায় অনুভব করলাম শিশিরকে আমি মোনের গহিনে অনুভব করছি।
এককথাই শাহরিয়ার শিশির আমার হ্রদয়ের অনুভবে মিশে গেছে।………(চলবে)

লেখাঃ শামসুল ইসলাম

★★★
গ্রন্থপঞ্জীঃ-
– হাদিসের নামে জালিয়াতি
– এহ্ইয়াউস সুনান
– খুতবাতুল ইসলাম
– কোরআন সুন্নাহর আলোকে শবে বরাত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here