#ললাট_লিখন
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৫

আরশী কোনো কিছুর কূলকিনারা পাচ্ছে না। এই বাড়ির সবাই শিক্ষিত এবং সচেতন তবুও এর মধ্যে থেকে এতবড় ষড়যন্ত্র কে করতে পারে? ডাক্তার ছামাদ এই জঘন্য কাজের সঙ্গে জড়িত আছে এটা ও নিশ্চিত। আরশীর ধ‍্যান ভাঙলো বাইরে থেকে কারো কথার আওয়াজ শুনে। আরশী পেছনে তাকিয়ে দেখলো ডাক্তার ছামাদ দাঁড়িয়ে আছে নিজের ব‍্যাগ নিয়ে। আরশী ভ্রু কুচকে জিঙ্গাসা করলো,

> আপনি এখনো ফিরে যাননি?
> ফিরে গেলে চলবে কিভাবে? আপনার ওষুধ আর ঐতিহ্যের চেকআপ করে তবেই আমার ছুটি। তখন ওরকম না হলে আপনি এতক্ষণে সুস্থ হয়ে যেতেন। আসুন আপনার জ্বরটা মেপে দেখি। কিছু মনে করবেন না। ছেলেটা উন্মাদ হয়ে গেছে।
> আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে আপনি আমার অসুস্থতার কথা মনে রেখেছেন কিন্তু আপনাকে এতো চিন্তা করতে হবে না। আমি সুস্থ আছি। ঐতিহ্য এখন ঘুমিয়ে আছে আপনি বরং আগামীকাল আসুন।
> না না রুগী দেখতে হলে একটা নিয়মকানুন জানতে হয়। আজকের মধ্যেই ইনজেকশন না দিলে আরও ঝামেলা হবে। আপনি আসুন এখন।
> একদিনে কিছুই হবে না। যদি হয় সে দায়ভার আমার। প্লিজ আমার রিকুয়েস্ট রাখুন আর দ্রুত এখান থেকে আসুন।
> আমি কিন্তু ওর চিকিৎসা আর করবো না। এভাবে আমাকে বাধা দিয়ে বাড়াবাড়ি করছেন কেনো?

ডাক্তার ছামাদ রেগে যাচ্ছেন দেখে আরশীর কৌতূহল আরও বৃদ্ধি পেলো। ও ঠোঁটে কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,
> আপনাকে সে ভাবনা ভাবতে হবে না। আমিও ভেবেছি আমার চেনা একজন ভালো ডাক্তার আছে এখন থেকে উনাকে সেই দেখবে। প্লিজ আসুন এখন।
আরশী মুখটা কঠিন করে ফেলেছে। পাশেই ওর শাশুড়ি ছিল উনি আরশীকে কিছু বলতে গেলো কিন্তু পারলো না। আরশী হাতের ইশারায় উনাকে থামিয়ে দিল। ডাক্তার রেগেমেগে রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই ঐতিহ্যের ঘুম ভেঙে গেলো। ওর চোখ লাল হয়ে ফুলে আছে। হয়তো ঘুম হয়নি তাই জন্য এমন হচ্ছে। আরশীকে দেখে ঐতিহ্য ব‍্যস্ত হয়ে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আরশী ওর পাশে গিয়ে বসতেই ঐতিহ্য কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না। আরশী ওকে থামিয়ে বলল,
> আপনার কথাগুলো বুঝতে পারছি। আপনি সুস্থ না হলে কিছুই প্রামাণ করতে পারবো না। চলুন আমার সঙ্গে।
আরশী ঐতিহ্যের হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে নিলো। ওর শাশুড়ি মানা করলো কিন্তু ও শুনলো না। ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে কাকে একটা ফোন করলো। আরশী খাতা কলম ঐতিহ্যের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
> আমি যা প্রশ্ন করবো আপনি শুধু তার উত্তর দিবেন। সংক্ষিপ্তাকারে লিখবেন।
কথাটা বলে ও প্রশ্ন করতে শুরু করলো। কিন্তু ওদের কথার মধ্যেই দরজায় ধাক্কা পড়লো। আরশী তাড়াতাড়ি ঐতিহ্যের হাত থেকে খাতাটা নিয়ে বিছানার নিচে লুকিয়ে দরজা খুলে দিলো। সাদা পোশাকে মধ্যে বয়সি একজন লোক ভেতরে প্রবেশ করলো। আরশী উনাকে ভেতরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে বলল,
> আমজাদ আঙ্কেল,আমি আপনার জন‍্যই অপেক্ষা করছিলাম। আপনি উনাকে ভালো করে দেখুন উনি ঠিক হবে কিনা? তাছাড়া উনি কথা বলতে না পারুক সমস্যা নাই তাই বলে ওকে সপ্তাহে একদিন কি জন্য চেকআপ করতে হয় এটাও বলুন।
> আচ্ছা মা তুই চিন্তা করিস না আমি দেখছি।
ডাক্তার আমজাদ ঐতিহ্যকে ভালো করে দেখলেন। প্রাথমিকভাবে উনি ঐতিহ্যের মধ্যে তেমন কোনো রোগের লক্ষণ খুলে পেলেন না। গলাটা দেখলেন ঠিক আছে শুধু একটা রিপোর্ট করতে হবে। উনি রিপোর্ট দেখে ওষুধ দিবেন তবে উনার বিশ্বাস ঐতিহ্যের অসুস্থতা দীর্ঘস্থায়ী না। নিয়মিত ওষুধ সেবনের ফলে ঠিক হয়ে যাবে। আরশি কথাগুলো শুনে একটা পরিকল্পনা করলো। নিয়ম অনুযায়ী আজকে ওকে বাবার বাড়িতে যেতে হবে। আরশী সিদ্ধান্ত নিলো একা যাবে না। গেলে ঐতিহ্যকে নিয়ে যাবে এবং যা করার সেখানে গিয়েই করতে হবে। কথাটা ভেবে ও ডাক্তারকে বিদায় করে ঐতিহ্যকে বুঝিয়ে বলল যেভাবেই হোক ওকে শান্ত থাকতে হবে। নয়তো এই বাড়ি ছেড়ে ও বাইরে যেতে পারবে না। আরশীর নির্দেশ অনুযায়ী ও মাথা নাড়লো। দুপুরের পরে পার্লার থেকে লোক আসলো আরশীকে সাজানোর জন্য। আরশী ওর শাশুড়ির কাছে বায়না ধরেছে ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে যাবে নয়ত লোকজন হাসাহাসি করবে। বলবে বিয়ের দিন যেমন একা গাড়িতে গিয়েছিল এবার এসেছেও একা। আরশী আর কিছুইতেই ছোট হতে পারবে না। ওর কথায় যুক্তি আছে দেখে ওর শাশুড়ি রাজি হলো তবে উনি প্রায় দেখতে যাবেন ছেলেকে। রাতে অনুষ্ঠানের শেষে আরশী ঐতিহ্যকে নিয়ে নিজের বাড়িতে রওনা দিলো। যদিও সহজ হয়নি ওদের আশাটা। কারণে ওর শাশুড়ি বাদে সবাই ওর বিরোধিতা করেছিল। আরশী ঐতিহ্য নিয়ে গাড়ি থেকে নামতেই ওর ছোট মা আর ভাবি দৌড়ে আসলো। উনাদের চোখেমুখে হাসির ঝলক। ভাবি আল্লাদ করে ঐতিহ্যের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো। ওর ছোট মা নানারকম কথা জিঞ্জাসা করছে। ও বাড়িতে কে কে আছে সবাই কেমন এসব কথা। আরশীর সেদিকে খেয়াল নেই।। এখানে সবাই যে এখন ভালো হয়ে গেছে এটা ওর অজানা নেই।
“কথায় বলে ধন থাকলে মান বাড়ে”তেল দেওয়া মাথায় সবাই তেল দিতে উস্তাদ। হঠাৎ ভালো হলেই আগের করা ব‍্যবহার ও ভুলতে পারবে না। ইচ্ছে করলেই স্বাভাবিক হওয়া যায় না। আগের কথাগুলো বারবার মনের কোনে উকি দিবে।। তাছাড়া এখানে আসার পেছনে ওর উদ্দেশ্য ছিল সেটা পূরণ করে তবেই ও বাড়িতে ফিরবে। আরশী আনমনে নিজের রুমে গিয়ে বসলো। ঐতিহ্য চুপচাপ বসে আছে। নতুন পরিবেশ কিছুই ওর চেনা জানা নেই। তাছাড়া কতদিন যে এভাবে শান্ত হয়ে বসেনি তার ঠিক নেই। মাথায় মধ্যে সব সময় কেমন জানি ঘুরপাক খাই মনে শান্তি নেই।। কখন কি করে বুঝে উঠতে পারেনা। ওকে এভাবে চুপচাপ ভাবতে দেখে আরশী ওর পাশে গিয়ে বসলো।তারপর শান্ত কন্ঠে বলল,
> আগামীকাল সকালবেলায় আমাদের ডাক্তারের চেম্বারে যেতে হবে। শুনেন আপনি একদম ভয় পাবেন না। আমি আপনার সঙ্গে আছি।
ওর কথায় ঐতিহ্য মলিন হাসলো। এই মেয়েটাকে ওর একটুও পছন্দ ছিল না। প্রথমে ভেবেছিল ও সবার মতো বিশ্বাস করতে পারছিল না। কিন্তু এখন ভরসা হচ্ছে। কথাটা ভেবেই ও নিজের হাতটা আরশীর হাতের উপরে রাখলো। আরশী চমকে উঠে ভেবেছিল হাতটা সরিয়ে নিবে কিন্তু পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে শুধু বলল, আমি নিজের ভাগ্য নিজেই তৈরী করে নিবো। আমি না চাইতেও আপনার সঙ্গে জড়িয়ে গেছি। এক সঙ্গে লড়াই করবো। বিয়ের পর মেয়েদের জীবনে স্বামী নামক লোকটার সাপোর্ট বড্ড বেশি প্রয়োজন। কর্মহীন স্ত্রীর ভাগ্য নির্ভর করে তার স্বামীর কর্মের উপরে।সমাজে সর্বপেক্ষা সুলক্ষণা হিসেবে নারীকে বিবেচনা করা হয় সেই নারীর স্বামীর রুটি রুজির পরিমাণের উপরে নির্ভর করে। আমিও চেয়েছিলাম আমার স্বামী আমার অর্ধাঙ্গ হয়ে উঠুক। জানি আপনিও একদিন আমার অহংকার হয়ে উঠবেন শুধু সময়ের অপেক্ষা।।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

আসুন নামাজ ও কোরআন পড়ি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here