#ললাট_লিখন
কলমে:লাবণ‍্য ইয়াসমিন
পর্ব:৩

আরশী একপা দুপা করে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো। বাইরে শনশন বাতাস বইছে।চারদিকে আধার কাটে পূর্ব আকাশে রক্তিম সূর্য উঁকি দিচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নির্জন রাস্তা বাস্ত হয়ে পড়বে।ঠান্ডা বাতাসে হাত পা আরও ঠান্ডা হয়ে উঠছে। ঠোঁট শুকিয়ে আসছে।আকাশে বাতাসে শীতের আগমনী সুর বাজছে।আরশী বেলকনীতে গিয়ে থামলো।পিছন ফিরে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা গায়ে কালো রঙের শার্ট তবে বেশ ফর্সা। আরশী কৌতূহলী হয়ে ভ্রু কুচকে জিঞ্জাসা করলো,
> কে আপনি? এখানে কি চাই?

আরশীর প্রশ্ন শুনে ছেলেটা মোটেও বিচলিত হলো না। বরং যেভাবে ছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলো। আরশী এবার এগিয়ে গিয়ে নিজের হাতটা ছেলেটার কাধে রাখতে গেলো ঠিক তখনই ছেলেটা ওর দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকালো। আরশীর চোখেমুখে আতঙ্ক কারণ ওর সামনে ঐতিহ্য দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কিছুক্ষণ আগেই তো ওকে নিচে দেখে এসেছে তাহলে এখানে দাঁড়িয়ে আছে ও কে? ওর ভাবনার অবসান হলো ঐতিহ্যের ছোঁয়া পেয়ে। ছেলেটা একদম ওর কাছে এসে দাঁড়িয়ে নিজের ঠান্ডা হাতটা ওর গলাই চেপে ধরেছে। আরশী ভয়ে হাত পা ছুড়তে লাগলো কিন্তু পারলো না। ঐতিহ্য ওকে ঝাপটে ধরে দেওয়ালের সঙ্গে ওকে মিশিয়ে ধরলো। ওর গলাই ভীষন যন্ত্রণা করছে দম বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হলো ও এখুনি মারা যাবে। আস্তে আস্তে ওর চোখ দুটো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেলো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ও জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলো।

আরশীর জ্ঞান ফিরলো মুখে পানির ঝাপটা লেগে। মাথার উপরে ফ‍্যান ঘুরছে। আরশীর মাথাটা কেমন ভারি লাগছে। ও নিজের শক্তি প্রয়োগ করে উঠে বসতেই ওর শাশুড়ি জিঙ্গাসা করলো,
> তুমি ঠিক আছো? জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। কখন থেকে জ্বর এসেছে?
> আম্মা বেলকনিতে ঐতিহ্য আমাকে….

আরশী আর বলতে পারলো না ওর শাশুড়ি বলে উঠলো,

> ঐতিহ্য বেলকনিতে কিভাবে যাবে ওতো আমার সঙ্গে ছিল। গতকাল রাতে ও কেমন করছিল তাই ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলাম। যাইহোক বেলা হয়েছে, তুমি উঠছো না দেখে তোমাকে ডাকতে এসে দেখি তুমি অচেতন হয়ে ভুল বকছো। তোমার শশুর ডাক্তার ডেকেছে উনি এখুনি আসছে।

আরশীর ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এই মহিলা কি আমাকে পাগল করতে চাইছে? ভোরবেলায় বলল এক কথা আর এখন বলছে আরেক।কি যন্ত্রণায় পড়লাম। কি হচ্ছে আমার সঙ্গে কিছুই বুঝতে পারছি না। সব রহস্য ওই বেডা ঐতিহ্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। নামের কি বাহার। আরশীর চুপচাপ দেখে ওর শাশুড়ি আবারও বলল,
> চলো তোমাকে চেঞ্জ করতে সাহায্য করি। খাইয়ে হবে তো?
> আম্মা আপনি ব‍্যস্ত হবেন না। সামান্য জ্বরে কিছুই হবে না। আপনি নিচে যান আমি এখুনি আসছি।

> পারবে একা আসতে?
> পারবো। সামান্য জ্বরে আমার কিছু হয়না। আপনি চিন্তা করবেন না।

আরশী উনাকে জোর করে নিচে পাঠিয়ে দিয়ে গোসল করে সবুজ রঙের একটা শাড়িতে নিজেকে জড়িয়ে নিলো। মনে হচ্ছে মাথাটা একটু বেশিই ঘুরছে। হঠাৎ জ্বর কিভাবে আসলো ও বুঝতে পারছে না। ভোরবেলায় সুস্থ ছিল এবং বেলকনিতে ঐতিহ্য যখন ওর গলা টিপে ধরে তখনও ঠিক ছিল। যাইহোক ভয় পেয়েছিল হয়তো তাই জ্বর আসে গেছে। বড়লোক বাড়িতে আসতে না আসতেই ননীর পুতুল হয়ে গেছে সামান্য ভয়ে আবার জ্বর ও আসছে। আরশী তাচ্ছিল্যের সুরে কথাগুলো বিড়বিড় করে সাবধানে পা ফেলে নিচে নেমে আসলো। ডাইনিং রুমটা এখন আর আধার নেই। এখানে এসে ওর চোখ আবারও আরেক বার দাঁড়িয়ে গেলো। আরশী যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। ডাইনিং রুমে সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্রে ভরা। কি নেই এখানে। ওকে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর শাশুড়ি এগিয়ে এসে ওর হাত ধরলো। আরশী চমকে উঠলো তবে সামলে নিয়ে উনার সাহায্যে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। ঐতিহ্য কি একটা বাটিতে নিয়ে মনোযোগ সহকারে চামচে করে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে অনন্তকালের অভুক্ত। আরশী ওর পাশে বসে আছে কিন্তু ছেলেটা একবারও ওর দিকে ফিরে তাকালোনা। আরশীর ইচ্ছে করলো ওর সামনে থেকে খাবারটা কেড়ে নিতে। কথাটা ভেবে ও চুপচাপ নিজের খাবারের দিকে মনোযোগ দিলো। এর মধ্যেই ওর শাশুড়ি পাশ থেকে থেকে বলল,

> ঐতিহ্য পাশের মেয়েটা তোমার স্ত্রী মানে বউ। আজ থেকে তুমি ওর সঙ্গে থাকবে। মেয়েটা ভীষণ ভালো। তোমার সঙ্গে গল্প করবে ছবি আঁকবে।
ওর শাশুড়ির কথা শেষ হতেই ঐতিহ্য ওর দিকে তাকালো। আরশীও কৌতুহলবশত আগেই ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল হঠাৎ ঐতিহ্যের তাকানোর জন্য দুজনের চোখাচুখি হয়ে গেলো। আরশী ভ্রু কুচকে ঐতিহ্যের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ওই চোখে কোনো রহস্য নেই। আছে সরলতা আর মায়া। আরশীর হৃদয় জুড়ে হঠাৎ করেই ঐতিহ্যের জন্য মায়া অনুভব হচ্ছে। এতো সুন্দর একটা ছেলে কিভাবে যে বোবা হলো আরশীর আক্ষেপ হচ্ছে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলো।হঠৎ পাশ থেকে আওয়াজ আসাই ওদের ধ‍্যান ভাঙলো। আরশী চুপচাপ খাবার শেষ করে সোফায় গিয়ে বসতেই কলিংবেল বেজে উঠলো। ওর শাশুড়ি গিয়ে দরজা খুলে পাশে সরে দাড়াতেই সাদা শার্ট পরিহিত একটা যুবক ভেতরে প্রবেশ করলো। আরশী কৌতূহলী হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে ডাক্তার কিন্তু বয়স তুলনামূলক ভাবে খুবই কম। লোকটা ওর শাশুড়ির সঙ্গে আলাপ করে ওর পাশে এসে বসলো। আরশীর শাশুড়ি পরিচয় করিয়ে দিলো,
> উনি ডাক্তার ছামাদ হুসেইন। পেশায় নামকরা ডাক্তার। বয়স দেখে কেউ বুঝতেই পারেনা উনি এই বয়সে এতোটা নাম করে ফেলেছে।
আরশী উনার কথায় মলিন হেসে কথার সাড়া দিলো। ও খুব ভালো করে লোকটাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। উচ্চতা যাইহোক লোকটা প্রয়োজের তুলনায় একটু বেশিই কিচন। এই জন‍্যই বয়স অনুমান করতে ঝামেলা হচ্ছে। লোকটা উজ্জ্বল শ‍্যাম বর্ণ তবে হাসলে মুখে টোল পড়ে। আরশীর ধ‍্যান ভাঙলো উনার হাতের সিরিজ দেখে। ওর আবার ইনজেকশন দেখে ভীষন ভয় করে। তাছাড়া জ্বরের পরিমাণ না দেখে লোকটা ওকে ইনজেকশন কেনো দিচ্ছে ওর মাথায় আসলো না। উনি এসেই ইনজেকশনের জন্য পাগল হচ্ছেন। ওর একবার মনে হলো কিছু বলবে কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো যদি শাশুড়ি কিছু বলে তখন? ওর ভাবনার অবসান হলো ঐতিহ্যের কান্ড দেখে। ছেলেটা কোথা একটা থেকে দৌড়ে এসে ইনজেকশনটা কেড়ে নিয়ে আরশীর হাত ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে চলল। সব কিছু যেনো চোখের নিমিষেই ঘটে গেলো। আরশীর যেতে চাইছে না কিন্তু ঐতিহ্য নাছোড়বান্দা হয়ে ওকে ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। আরশীর এবার আরও ভয় করছে।ছেলেটা যদি ওকে খুন করে তখন কি হবে? কথাটা ভেবেই ও চিৎকার দিতে গেলো কিন্তু পারলো না ঐতিহ্য ওর মুখ চেপে ধরলো। আরশী ভয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐতিহ্য ওর মুখ থেকে হাত নামিয়ে সিরিজ থেকে তরল ওষুধ টা নিয়ে তরতাজা একটা ফুলের টবের মধ্যে ফেলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাছটার পাতা ঝরতে শুরু করলো।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন

*আসুন নামাজ ও কোরআন পড়ি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here