#রৌদ্রদেশে_মেঘের_বেশে
#পুষ্পিতা_প্রিমা
[১৫]
জায়িদের গায়ে বেশ কয়েকজায়গায় ছুরির আঘাত লেগেছে। রক্তক্ষরণ হওয়ায় রক্ত দিতে হয়েছে। আর আনহার কপালের কাছে সামান্য ফুটো হয়ে গিয়েছে।
জ্ঞান ফিরতেই জায়িদ নিজেকে আবিষ্কার করে হসপিটালের বেডে। সারা শরীরে তীব্র ব্যাথা অনুভব হতেই চোখ মুখ খিঁচে ফেলল। ক্ষীণস্বরে ডাকল,
‘ আম্মা?
কেবিনের বাইরে থাকা জিনিয়া আর জাহেদা ছুটে এল। জায়িদের মাথার উপর বসে জাহেদা চুলে বিলি কেটে কপালে চুমু বসালেন। জায়িদ চোখ মেলে মা বোনকে দেখে শক্তি পায় যেন৷ উঠে বসার চেষ্টা করতেই জিনিয়া বলে,
‘ উঠোনা ভাইয়া৷ তুমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নও৷
জায়িদ তারপর ও উঠে বসে। বোনের দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকে।
জিনিয়া ধীরেসুস্থে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষনের মধ্যে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে৷ জায়িদ চুপ করে মাথা লাগিয়ে রাখে জিনিয়ার মাথায়৷ জাহেদা ভাইবোন দুজনের মাথায় হাত বুলায়।
অনেকক্ষণ পর জায়িদ আপনাআপনি নেমে পড়ে বেড থেকে৷ কারো বারণ শোনেনা৷ শফিক সাহেব জোর করে ধরে রাখার চেষ্টা করে। জায়িদ একটি কথাই বলে যায়,
‘ বেশিদূর যাচ্ছিনা আমি৷ এক্ষুনি আসছি।
সবাই জায়িদের পিছু পিছু দৌড়ে। আনহার কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে জায়িদ। শুয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে খারাপ লাগে৷ তারজন্য মেয়েটি ও আঘাত পেল। এপাশ থেকে ওপাশ মুখ ফিরিয়ে শুতেই আনহার চোখ যায় জায়িদের কাছে। অনেকক্ষণ দর্শনের শেষে জায়িদ বলে,
‘ আসব?
আনহা উঠে বসতে বসতে জবাব দেয়,
‘ আপনি আসতে গেলেন কেন এই শরীরে। আমাকে ডেকে পাঠাতে পারতেন।
জায়িদ সেসব কথা তোয়াক্কা করে বলল,
‘ গাড়ির নাম্বার প্লেট মুখস্থ করতে বলেছি। করেছিলে?
আনহা সাথে সাথে জিভে কামড় দেয়। সে মুখস্থই করেনি। জায়িদের রাগ উঠলে তা দেখাল না সে৷ মেয়েটার দোষ নেই। দোষ তার নিজের। আরেকটু সতর্ক থাকা উচিত ছিল।
জায়িদ বেরিয়ে যেতেই আবার থমকে দাঁড়ায়। আনহার কাছ থেকে নিজের ফোন খুঁজে। আনহা কাঁপাকাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেয় জায়িদকে। জায়িদ যখন ফোন দেখছিল তখন আনহার প্রাণ যায়যায় অবস্থা। সব ঠিকঠাক আছে তো? নইলে এই লোক তো তুলকালাম ঘটিয়ে ছাড়বে।
আবার বেরোতে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আনহার চেহারায় পূর্ণ দৃষ্টি রেখে বলল,
‘ ঠিক আছ?
আনহা হেসে মাথা নাড়াল। বেরোতেই হোঁচট খেল জায়িদ। আনহা আতঁকে উঠে বলল,
‘ অফিসার আমার মনে হয় আপনার রেস্টের দরকার।
জায়িদ আনহার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেল। আনহা নিজের মাথা চাপড়াল। এসব বলার কি দরকার ছিল? মাঝেমাঝে এত ন্যাকামি করে বসি আমি?
কিছুক্ষণের মধ্যে আবার ও ফিরে আসে জায়িদ। আনহাকে বলে,
‘ আপাতত গ্রামের বাড়িতে সবার সাথে থাকো। আমি পরে দেখছি।
জায়িদ যেতেই আনহা লাফ দিয়ে উঠল যেন। সে তো এটাই চেয়েছিল। এই একটা কথার জন্য এতকিছু হয়ে গেল।
হসপিটাল গ্রামের পুলিশে লাল হয়ে গেল। জায়িদকে দেখতে এসেছে। ইন্সপেক্টর ইশতিয়াক তালুকদার আহত সন্ত্রাস হামলায়৷
শফিক সাহেব কিডনি পাচারের বিষয়টা চেপে গেলেন৷ ওই মহিলাকে কোনো অপারেশন করানো হয়েছে কিনা তা যদি জানা যেত তাহলে কিছু তথ্য পাওয়া যেত৷ সবার মতে তো অপারেশন করানো হয়নি৷ অপারেশন না করালে কিডনি নেবে কি করে? আর গ্রামের হাসপাতালে এমন কোনো উচ্চ ধরণের চিকিৎসার যন্ত্রপাতি ও নেই। তাহলে কি শফিক সাহেবের কোনো ভুল হচ্ছে?
আসলেই কি ওই মহিলা তিনদিনের জ্বরে মারা গিয়েছেন?
আইন তো প্রমাণ ছাড়া কিছুই বুঝেনা। এই হসপিটালের ডাক্তারদের সাথে ও এমন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে আটকে যাচ্ছেন শফিক সাহেব৷ সন্দেহের বশে কোনোকিছু করা কি উচিত?
শফিক সাহেবকে সাহস দিল জিনিয়া। জায়িদের সাথে কথা বলবে বলে আশ্বাস দিল শফিক সাহেবকে। তার সচল মস্তিষ্ক জানান দিল,
‘ এই চক্র অনেক বড়। পাচারকারীরা দেশের প্রত্যেকটা হসপিটালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নিশ্চয়ই। দেশের বড় বড় রাঘববোয়ালদের সমর্থনেই অপরাধীরা অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে। নাহলে এর বিস্তৃত কখনোই এতদূর ছড়াতে পারেনা।
আনহাকে আবার দেখতে পেয়ে খুশিতে পাগলপারা হয় সোরা। আনহা সোরাকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাসে। সোরাকে দেখে বারবার অবাক হয়। এই মেয়ে কত অল্পতে আপন করে নিয়েছে তাকে।
______________
দুপুরবেলায় ফিরে জায়িদ। তার শরীর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারা আক্রমণ করেছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে। জায়িদকে ফিরতে দেখে জিনিয়া সালমা বেগমের কাছে দৌড়ে যায়। শরবত নিয়ে আসে। জায়িদকে দিতেই ঢকঢক করে খায় সে। খেয়ে না জিরোতেই প্রশ্ন ছুঁড়ে জিনিয়াকে৷
‘ গতকাল রাতেই আমাদের মিশন ক্যান্সেল হয়েছে জানিস?
জিনিয়া মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘ জানি। তোমাকে ফোনে কাকে যেন বলতে শুনেছি।
ভাইয়া তুমি এখন। এসব ছাড়ো। আগে সুস্থ হও। তোমাকে এভাবে দেখতে আমার ভালো লাগছেনা।
জায়িদ চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
‘ জুননু আমার মনে হচ্ছে আমরা কেউ এখানে সেফটি নেই। বিশেষ করে আমি থাকায়। আমি থাকায় এখানে তোদের বিপদ আর ও বাড়তে পারে।
জিনিয়া ভয়ে জায়িদকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল।
‘ তুমি আমার কাছে এক আকাশ বিশ্বাস, ভরসা। তোমার মতো ভাই সব বোনের জন্য ছায়া, ঢালসরূপ। আতঙ্ক নয় ভাইয়া।
জায়িদ জিনিয়ার মাথায় হাত বুলায়।
________________
বাড়ির পেছনে মস্ত বড় পুকুরের ঘাটে বসে পা দিয়ে পানি নাড়ানো ছেলেটাকে দেখে সোরা মুচকি হাসে লুকিয়ে। কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ের সাথে নাহিল ও নেমে পড়ে পুকুরে। পড়নে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর গায়ে গেঞ্জি। পানি গোলা করাই যেন তার মূল উদ্দেশ্য। আনহা আর সোরা নাহিলের নাক চেপে ডুব দেওয়ার দৃশ্য দেখে হেসেই গড়াগড়ি খেল। নাহিল হাসাহাসির আওয়াজ ভেসে আসতেই থেমে গেল। সোরা আর আনহাকে দেখে আর ডুব মারল না। সোরাকে ডেকে বলল,
‘ গামছা এনে দিতে।
সোরা গামছা আনল। ছুঁড়ে মারার মতো করে বলল,
‘ ছোটদাভাই ধরুন। পানিতে পড়ে গেলে আমার দোষ নেই কিন্তু।
ঘনঘন ডুব দেওয়ায় নাহিলের চোখ লাল। লাল চোখে আর ও রাগ মিশিয়ে নাহিল ধমক দিল।
‘ ছুঁড়ে মারবে না সোরা। দিয়ে যাও।
সোরা বিরক্তি নিয়ে পা বাড়াল। নাহিলের কাছ থেকে দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে তোয়ালে বাড়িয়ে দিল। নাহিল মুখ মুছে হাত বাড়াল। গামছাসহ সোরাকে টেনে ফেলে দিল পুকুরে। উল্টে পড়ে যেতেই একপ্রকার হাসাহাসি বয়ে গেল সেখানে। আনহা তো ভারী মজা পাচ্ছে। এভাবে যদি অফিসারকে ফেলে দেওয়া যেত। ইশশ।
রাগে, দুঃখে, অপমানে ঠোঁটের সাথে সাথে নাক কাঁপল সোরার। ভেজা চুল, আর কাপড়ে লজ্জা আর ভয়ের সাথে সাথে অস্বস্তিতে মরল সে। নাহিলের ঠোঁটের কোণায় হাসি। এই শ্যামাবতীকে রাগাতে তার ভীষণ ভালো লাগে। রাগলে ও মেয়েটাকে ভীষণ ভালো লাগে। এটুকুনি একটা মেয়ে রাগ থাকবে কেন? ভয় থাকবে। নাহিলকে প্রচুর ভয় পাবে। কিন্তু না? উল্টো নাহিলকে ভয় দেখায় এই মেয়ে। সোরার দিকে হাঁটতেই সোরা ডুব মারল। আন্দাজে উঠে দাঁড়াতেই চোখ বড়বড় হয়ে গেল। বুক কাঁপানো, মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো অদ্ভুত শক্তিধর জাদুকরটির এতকাছে নিজেকে আবিষ্কার করতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয় সোরার। চোখের চৌম্বকীয় শক্তির কাছে হার মেনে সম্মোহনী ব্যক্তির মতো চেয়ে থাকতে হলো সোরাকে।
নাহিলের হাসি থামেনা। অন্যদিকে আনহার। হাসির মাঝে ও যেন চোখ সরল না নাহিলের৷ স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে নাহিল ভ্রু নাচাল। বলল,
‘ ভেজা কাক দেখেছ কখনো?
সাথেসাথে সোরার গাল বেয়ে টুপটাপ জল পড়ে। পুকুরের পানির সাথে কি তার তুলনা চলে? সেই জল চিনে ফেলল নাহিল?
সোরার দিকে ঝুঁকে চোখে চোখ রেখে নাহিল কান ধরল। দূরে সরে গিয়ে টুপ করে ডুব দিল সোরা। এক ডুবে উঠল পুকুরের পাড়ের কাছে। কারো দিকে তাকালো। বামহাতের কব্জি দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সোরা দৌড় লাগাল। নাহিল জিভে কামড় বসালো। বেশি বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলল নাকি? রাগগুলো এত সুন্দর, রাগাতেই তার ভালো লাগে শ্যামাবতীকে।
আনহা কোমরে হাত দিয়ে নাহিলের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচাল। নাহিল লজ্জায় পড়ে মাথার পেছনটা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
‘ কানে ধরলাম তো।
আনহা হেসে উঠল। বলল,
‘ পড়েছ তাহলে ভাইডি ? তাহলে মরো এবার।
নাহিল বলল,
‘ মরব কেন? বাঁচতে হবে। প্রচুর বাঁচতে হবে।
_______
রাতের চাঁদের আলোতে উঠোনে পাটি বিছালো জাহানারা। জিনিয়াকে ডেকে বলল,
‘ কিছুক্ষণ মাটিতে পাটিতে বসো। নাতবৌ। মাটির ছোঁয়া লাগাইতে হয়।
জিনিয়া হাসল। বাকিদের ডাকল। সালমা বেগম বড় বাটি করে ঝালমুড়ি মেখে পাঠাল সোরাকে দিয়ে। দুপুর থেকেই সোরাকে আর বের হতে দেখেনি নাহিল। যেইমাত্র দেখল হামলে পড়ল ঝালমুড়ির বাটির উপর। সোরা অন্যদিকে মুখ করে রাখল। নাহিলের হাতে বাটি ধরিয়ে এগোতেই নাহিল তার ওড়নার কোণা চেপে ধরল। সোরা এদিকওদিক তাকিয়ে আঁতকে উঠল। জাহানারা বেগম আলো আধাঁরিতে দাঁড়িয়ে দেখেন দুজনকে। নাহিল ফিসফিস করে বলল,
‘ সরি সোরা। এই দুইবার বলেছি। আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি। আমি তো তোমাকে,
জাহানারা ডাক ভেসে এল।
‘ সোরা ভেতরে আয় তো।
ভয়ে গলা আবার শুকোলো সোরার। জিনিয়া ডাক দিল,
‘ দাদু সোরা একটু পড়ে যাক। আমাদের পাশে এসে বসুক।
সোরা বাঁচল যেন।
গানের কলি খেলার এক পর্যায়ে আনহার পালা এল। তারমধ্যেই জায়িদের ডাক পড়ল। ঘর থেকে বের হয়ে জায়িদ দাঁড়িয়ে আছে। জিনিয়া বলল,
‘ যাও না। প্রয়োজন মনে হচ্ছে।
আনহা ওড়নার কোণা ঘোরাতে ঘোরাতে গেল। গাইল,
কি জাদু করিলা, পিরিতি শিখাইলা
থাকিতে পারি না ঘরেতে, প্রাণ সজনী
থাকিতে পারি না ঘরেতে
কি মন্ত্রন পড়িলা, ভাবেতে মজাইলা
থাকিতে পারি না ঘরেতে, প্রাণ সজনী
থাকিতে পারি না ঘরেতে
জায়িদ ধমক দিল।
‘ জাস্ট শাটআপ।
সবাই ওদিকে খিলখিল সুরে হেসে উঠল। নাহিল ঢলে পড়ল সোরার কাছে। সোরা দূরে সরল।
আনহা মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ গানের কলি খেলছি আমরা।
জায়িদ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল অনেকক্ষণ। এই মেয়েটা সামনে এলেই বিরক্তি বাড়ে। অসহ্য।
আনহা আবার ও গাইল,
‘ কি জাদু করেছ বলোনা
ঘরে আর থাকা যে হলোনা?
বুঝিনি কখনো আমি হয়েছি তোমার ,,,,
জায়িদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ গলা তো ভালোই। সিংগার হও।
আনহা ওড়নার কোণা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
‘ বর নাই। কাকে এত শখের কথা কমু ভাই?
জায়িদ চেঁচিয়ে উঠল,
‘ এই অসভ্য মেয়ে তোমার মত মেয়ের ভাই কেন হতে যাবো? আমার জুননুর,
জায়িদকে থামিয়ে দিল আনহা। বলল
‘ ভাই হবেন না? তো কি হবেন? হুহ?হুহ? বর হবেন? আইমিন জামাই হবেন? হতে চান? তাহলে এক্ষুনি চলে আসুন এখানে।
জায়িদের কপালে গাঢ় ভাঁজ পড়ল। তোতলিয়ে বলল,
‘কোনখানে? কিসের কথা বলছ?
আনহা বলল,
‘ এখানে।
জায়িদ স্বাভাবিক থাকতে চেয়ে ও পারছেনা। ঠাটিয়ে চড় দিতে ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে।
আনহা হেসে ঢলে পড়ার অবস্থা হলো। হাসতে হাসতে হাত নেড়ে বলে,
‘ আচ্ছা বলুন। কেন ডেকেছেন?
জায়িদ বলল,
‘ হ্যা। ওই মানে,
জায়িদ ভুলে গেল কি বলতে এসেছিল। আশ্চর্য! কি যেন বলতে এসেছিল?
এই মেয়েটার প্যাঁচালে পড়ে সব ভুলে গিয়েছে।
গটগট পায়ের আওয়াজ তুলে আবার ঘরে ডুকে গেল জায়িদ। আনহার কোমরে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে পড়ল। আবার উঠল। জিনিয়া বলল,
‘ তুমি এভাবে হাসতে পারো আনহা? আমি তোমার হাসি দেখেই শেষ। আমার ভাইয়াকেই পেলে বিরক্ত করতে?
আনহা হাসল। বিড়বিড় করে গাইল,
‘ প্রাণসজনীরে ছাড়া থাকতে পারিনা ঘরেতে।
______________
রাত বাড়তেই সাহিলের ফোনে কল দিল জিনিয়া। বাইরে ভারী বৃষ্টি। চিন্তা হচ্ছে তার। সাহিল ফোন ও তুলছেনা।
ঘনঘন বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছে। জিনিয়ার চিন্তা বাড়তে লাগল ক্রমশ। তিনবার রিং হতেই কল তুলল সাহিল। ব্যস্ত গলায় জবাব দিল,
‘ জিনি আজ ফিরতে দেরী হবে। এখানে যে রিসোর্ট বানানোর কথা চলছে সেটার জমি নিয়ে একটু ঝামেলা চলছে। এখানে আলাপআলোচনা শেষ হলে ফিরছি। আর কল দিওনা।
জিনিয়ার মন খারাপ হলো। আজ চাঁদের আলোয় নদীর পাড়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। বৃষ্টি হওয়ায় চাঁদ ও নেই আকাশে। অন্যদিকে সাহিল ও নেই। ভীষণ মনখারাপ নিয়ে দোতলার ঘরে শুঁতেই ভীষণ ভয় লাগল জিনিয়ার। সোরা কিংবা আনহাকে ডেকে নেওয়ার দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে সাহিলের ফোন আসে আবার। ওপাশ থেকে ব্যস্ত কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
‘ জিনি ভয় লাগছে?
জিনিয়া কাঁদতে গিয়ে হেসে ফেলল। বলল,
‘ ওহে শ্যাম আপনি বুঝিয়া যান কি করে সব?
সাহিলের হাসি শোনা গেল।
‘ আমি সব বুঝিতে পারি রূপসা।
জিনিয়া বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে পড়ে। হয়ে পড়ে বাকহারা। হাত থেকে ফোন গড়িয়ে বিছানায় পড়ে।
‘ রূপসা! তাকে রূপসা ডাকল?
চট করে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল জিনিয়া। নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে প্রিয়তমর মুখ থেকে বেরোনো কথার উপমার প্রমাণ খুঁজতে বের হয়ে পড়ল সে। সত্যিই সে রূপসার মতো রূপসী?
দরজার খটখট আওয়াজে হুশ ফিরল জিনিয়ার। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই ভেজা গায়ে ডুকে এল সাহিল।
জিনিয়া বলল,
‘ আপনি না দেরী হবে বলেছেন?
‘ সারপ্রাইজ দিলাম। খুশি হওনি?
জিনিয়া মৃদু স্বরে আওয়াজ করে বলে,
‘ খুব।
সাহিল ছাতা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল। জিনিয়ার দিকে তাকাতেই জিনিয়া চোখ নামিয়ে ফেলল। বলল,
‘ খাবার তো খেয়ে এসেছেন?
সাহিল বলল,
‘ হুমম। এদিকে এসো।
জিনিয়া গেল না।
‘ ভিজে যাবো আমি। আপনি চেন্জ করে নিন। ঠান্ডা লেগে যাবে।
সাহিল শুনল না। জিনিয়ার পেছনে গিয়ে বেঁধে ফেলল আষ্টেপৃষ্টে। নরমকন্ঠে বলল,
‘ ভিজে যাও। আমার কি?
চলবে,