ম্যাডাম
পর্ব(০৬)
#Writer_Nandita_priti
ম্যাডামের সঙ্গে দূরত্বটা আমার ক্রমে বাড়তে লাগলো।অফিসে ম্যাডাম সারাদিন থাকতেন।কিন্তু ভুলেও আমার সঙ্গে কথা বলতেন না।আমার প্রয়োজনে আমি যেতাম।এদিকে মাও মনমরা হয়ে সারাদিন বসে থাকতো।আমার হৃদয়ে উতাল পাতাল করা যন্ত্রণা জমা হতে থাকলো।একদিন সাহস করে ম্যাডামের কেবিনে চলে গেলাম।ম্যাডাম একপলক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
কি প্রয়োজন?
ম্যাডাম আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।
ম্যাডাম আমার মুখের উপর বলল
আপনার সঙ্গে অফিসিয়ালি কথা ছাড়া আমার আর কোনো কথা নেই।
কিন্তু আমার আছে ম্যাডাম।
মিস্টার দিগন্ত আপনি নিশ্চয়ই জানেন এটা অফিস।আর অফিসে কোনো ধরণের আনঅফিসিয়ালি কথাবার্তা আমার পছন্দ নয়।
আমি ম্যাডামের কথা শুনে অবাক। আনঅফিসিয়ালি কথাবার্তা উনার পছন্দ নয়।অথচ আমার সঙ্গে এই অফিসেই কি কান্ডটাই না করলেন?এগুলো অফিসিয়ালি কাজকর্ম ছিল মনে হয়।
কি হলো?মূর্তির মতো এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের কাজে যান।
যাবোতো।অফিসে যদি কথা বলতে না পারি তবে অফিসশেষে কফিশপে দেখা করি। কবে আর সময়টা আমাকে বলুন।
আপনি কেবিন ছেড়ে যাবেন কি না মিস্টার দিগন্ত?
আপনি আমাকে ডেইট বলেন,,আর সময় বলেন।তারপর আমি চলে যাচ্ছি।
ম্যাডাম বিরক্ত হয়ে বললেন
বুঝতে পারছি না।আমার সঙ্গে আপনার এত কথা কিসের?
সেটা গেলেই না জানবেন।বুঝবেন।
ওকে। পরে আমি আপনাকে সময় জানাচ্ছি।
ঠিক আছে ম্যাডাম।
একথা বলে আমি কেবিন ছেড়ে বের হলাম।যাক দেখা অন্তত করা যাবে।পরের দিন শুক্রবার ছিলো।একটা কফিশপে আমি আর ম্যাডাম বসে আছি ম্যাডাম মাথা নিচু করে বসে আছেন।কালো রঙের কুর্তি পড়েছেন।মাথার চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।
ম্যাডাম আপনি কি শোক দিবস পালন করছেন?
ম্যাডাম মাথা তুলে ভ্রু কুঁচকে বললেন
মানে?
মানে এই যে কালো রঙে নিজেকে রাঙিয়ে দিয়েছেন।এই জন্য বললাম।
ম্যাডাম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন
ফাজলামো করবেন না। যা বলতে ডেকেছেন বলে ফেলুন দয়া করে।আমার কাজ আছে।আর আপনার গার্লফ্রেন্ড দেখলে অসুবিধা হবে না?
ম্যাডাম আমার গার্লফ্রেন্ডকে আজ ডেকেছি।আপনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।
ম্যাডাম কথাটা শুনামাত্র বসা থেকে দাঁড়িয়ে রাগান্বিত হয়ে বললেন
আমি আপনার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে চাই না।আর তাই আর এক মুহূর্ত আমি এখানে দাঁড়াতে চাই না।
একথা বলে রাগ দেখিয়ে ম্যাডাম চলে যেতে পা বাড়ালেন।আমি নিজের মনেই হাসলাম।আমার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ম্যাডাম অনেক জেলাস দেখছি।আমি আরাম করে চেয়ারে বসে বলল
রিদিতা…
আমার মুখে ম্যাডাম নিজের নাম শুনে চমকে উঠে পেছন ফিরলেন।ম্যাডামের চোখেমুখে অবাকের এক্সপ্রেশন।ম্যাডাম বললেন
আ আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
আমার জানার কথা তাই।আর অফিসে আপনি আমাদের এমডি সাহেবা আমরা কর্মচারীরা জানবো না?
আমার উত্তর শুনে ম্যাডাম ভ্রু কু্চকালেন।আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বললাম
এখানে এসে শান্ত হয়ে বসুন।
আমার কথামতো ম্যাডাম এসে আবার চেয়ারে বসলেন।আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে বললাম
আমি বরাবর ভালোবাসায় বিশ্বাসী।জানো তখন আমার বয়স দশ এগারো হবে হয়তো।সেই বয়সে আমার একটা মেয়েকে ভালো লেগে যায়।কি হিসাবে আমি জানি না।আমার খেলার সঙ্গী কেউ ছিলো না।মেয়েটার পরিবার সুইডেন যাবে।আমার মায়ের বান্ধবী মেয়েটির মা।দেশের বাইরে যাওয়ার আগে দেখা করতে আসেন।মেয়েটা আমাদের বাসায় আসার পর আমার খেলার সঙ্গী হয়েছিলো।আমি এটা জানতাম বিয়ে করলে একটা ছেলেমেয়ে একসঙ্গে থাকতে পারে।তাই আমার ভালো লাগার মেয়েটাকে আমি বিয়ে করতে চাইলাম।আমি সকলের সম্মুখে মেয়েটার হাত ধরে টানাটানি শুরু করলাম বিয়ের জন্য।মেয়েটা বারবার আমার হাত থেকে নিজের হাত মুক্ত করতে চাইছিলো।আমার অবস্থা দেখে মেয়েটার মা ছুটে এসে আমার হাত থেকে মেয়েটির হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু পারলো না।এত শক্ত করে আমি ধরেছিলাম।তখন বাবা রেগে আমার দিকে নিজের স্যান্ডেল ছুড়ে মারে।স্যান্ডেল এসে আমার কপালে লাগে।অনেকখানি জায়গা কেটে যায়।আমি মেয়েটার হাত ছেড়ে দেই।তারপর ওইদিন মেয়েটি চলে যায়।তবে যাওয়ার আগে মেয়েটি চুপিচুপি আমার রুমে এসেছিলো।এসে আমার কপালের কাটা জায়গায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো।আর জানেন কি বলেছিলো?
ম্যাডাম স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি মৃদু হেসে বললাম
বলেছিলো যখন আমরা বড় হবো।তখন আমরা দুজন দুজনকে বিয়ে করবো।কিন্তু জানেন ম্যাডাম স্বার্থপর মেয়েটি আজও ফিরে আসে নি।মিথ্যাবাদী ছিলো মেয়েটা।আমি একা আর কত থাকবো তাই গার্লফ্রেন্ড যোগাড় করলাম।
ম্যাডাম রাগান্বিত হয়ে বলল
আপনার প্রেমকাহিনী শুনতে আমি নারাজ।বুঝলেন আপনি?
আমি মুচকি হেসে বললাম
নিজের প্রেমকাহিনী নিজেই শুনতে নারাজ তুমি রিদি?
ম্যাডাম অবাকচোখে তাকালেন আমার দিকে।আমি বিনিময়ে মৃদু হাসলাম।
—-
চলবে…