#মেঘের_আড়ালে_মেঘ”৮”
#জেরিন_আক্তার_নিপা

হঠাৎ ব্রেক করায় ইরফান ঝাঁকি খেয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল। গাড়ির সামনে চলে আসা মানুষটার কথা ভেবে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে এলো। একটা মেয়ে। ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেছে। মাথার চুলের জন্য মুখ দেখা যাচ্ছে না। ইরফান ব্যস্ত হয়ে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বলল,

“এইযে আপনি ঠিক আছেন? আপনার লাগেনি তো? শুনছেন…

একদিন মেহরীনের নিজের একটা নাচের স্কুল হবে। সে ছোট ছোট মেয়েদের নাচ শেখাবে। এটা তার স্বপ্ন। সে জানে না তার এই স্বপ্ন কখনও সত্যি হবে কিনা। সে যেখানে নাচ শেখাতে যায়, আজ সেই ম্যামের সাথে কথা হয়েছে। ম্যাম বলেছেন উনি লোনের ব্যবস্থা করে দিবেন। তার স্বপ্ন সত্যি হবে! তার নিজের নাচের স্কুল হবে! এসব ভাবতে ভাবতেই হাঁটছিল সে। সে যে রাস্তা পার হচ্ছে এটা খেয়ালই ছিল না। নিজের দোষেই হঠাৎ গাড়ির সামনে এসে পড়ল। ভাগ্য ভালো লোকটা ঠিক সময় ব্রেক কষতে পেরেছে। নইলে আজ সে আলুভর্তা হয়ে যেত। নাচের স্কুলের স্বপ্ন তো অনেক দূর প্রাণ পাখি খাঁচা ছেড়ে উড়াল দিচ্ছিল একটুর জন্য।
ইরফান আবার বলল,

” খুব বেশি লেগেছে? চলুন আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”

পড়ে গিয়ে মেহরীন কনুইয়ে ব্যথা পেয়েছে। ছড়ে গিয়ে জ্বালা করছে ভীষণ। রক্তও বেরিয়ে এসেছে। হাঁটুতেও ব্যথা পেয়েছে। মুখের সামনে আসা চুল ঠিক করে জামা থেকে ময়লা ছাড়তে ছাড়তে মেহরীন ইরফানের দিকে তাকাল। তাকিয়ে ওকে দেখেই আবার মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল। চোখ বড় বড় বিড়বিড় করে বলল সে,

“এটা তো সেই পাগল লোকটা। যে রাস্তায় সবার সামনে আমাকে…
আল্লাহ, আল্লাহ! এই লোকের গাড়ির সামনেই এসে পড়তে হলো? রাস্তায় অন্য কোন গাড়ি ছিল না! লোকটা পাগল। না জানি আজও তেমন কিছু করে বসে।”

ইরফান মেহরীনের মুখ দেখেছে। এক মুহূর্ত সে থমকে চেয়ে রইল। তারপর নিজেকে বোঝাল, এটা হামনা না। হামনার মত দেখতে শুধু। ইরফান সহজ গলায় বলল,

“আপনি কি বেশি ব্যথা পেয়েছেন?”

মেহরীন রোবটের মত ওঠে দাঁড়াল। কাঠ কাঠ গলায় বলল,

“না,না। আমি ঠিক আছি। আমার কিচ্ছু হয়নি। আমি একদম ঠিক আছি।”

কোনরকমে কথাগুলো বলে মেহরীন ইরফানের সামনে থেকে ছুটে পালাচ্ছিল। ইরফান তাকে পেছন থেকে ডাকল।

“শুনুন, আপনার সাথে আমার ভীষণ জরুরি কথা আছে। দয়া করে আমাকে দুমিনিট সময় দেবেন? ”

মেহরীন ভেবে পেল না, এই লোকের তার সাথে কী জরুরি কথা থাকতে পারে। সে কোন ঝামেলায় পড়তে চায় না। এই লোকের কথা শোনার তার কোন দরকার নেই। পাগলের থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। মেহরীন কিছু না বলে চলে যেতে নিলে ইরফান বলতে লাগল,

“আমার ছেলের খুব জ্বর। কাল রাত থেকে একবারও জ্বর ছাড়েনি। সে জ্বরের ঘোরে বারবার তার মা’কেই চাচ্ছে। আপনি তো আমার ছেলেকে দেখেছেন। ওর জন্যই আমি আপনাকে খুঁজছিলাম। আপনার সাহায্য আমার খুব দরকার। আপনি আমার কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। আমার সাথে একটাবার আমার ছেলেকে দেখতে চলুন। প্লিজ। আপনার কাছে আমার অনুরোধ। আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।”

ওই বাচ্চা ছেলেটার কথা শুনে মেহরীন দাঁড়িয়ে গেল। রাত থেকে ছেলেটার জ্বর, এটা শুনেই তার কেমন খারাপ লাগতে লাগল। কিন্তু সে একটা কথা বুঝতে পারছে না। ছেলেটার জ্বর, সে তার মা’কে খুঁজছে। তাহলে এই লোক তার বউকে ছেলের কাছে না নিয়ে তার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছে কেন? সে কীভাবে সাহায্য করবে? কিছুই মাথায় ঢুকছে না।

“আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না, তাই না? আমি সত্যি বলছি আমার ছেলে অসুস্থ। তাকে ঠিক করার জন্য আপনাকে লাগবে। আপনি একটু সাহায্য করুন।”

ইরফান কখনও কারো সামনে এভাবে কাকুতি মিনতি করেনি। কিন্তু ছেলের জন্য আজ তা করতে হচ্ছে। মেয়েটা হয়তো তাকে বিশ্বাস করছে না। মেহরীন ঘুরে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বলল,

“কিন্তু আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করব?”

ইরফান মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। যাক মেয়েটা তাকে বিশ্বাস করেছে তো!

“আপনার কিছুই করতে হবে না। আপনি শুধু আমার সাথে আমার বাড়িতে চলুন।”

মেহরীন চোখ ছোট ছোট করে কপাল কুঁচকে তাকাল। ইরফান বলল,

“বাড়িতে আমার বাবা আছেন। আয়ামকে আপনি শুধু একটা বার দেখেই চলে আসবেন। ”

মেহরীন ভাবতে লাগল। লোকটা সত্যি বলছে তো? নাকি লোকটার কোন ধান্দা আছে। কিন্তু লোকটার চোখ বলছে, উনি সত্যি বলছেন। আর ছেলেটাকে সে নিজেও দেখেছে। কেনই যেন ইরফানকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল ওর। মেহরীন বলল,

“ঠিক আছে। আপনার বাসায় যাব। কিন্তু আমি বেশি দেরি করব না। ন’টার আগে চলে আসব।”

“ঠিক আছে।”

মনে মনে দ্বিধায় ভোগলেও মেহরীন ইরফানের গাড়িতে গিয়ে বসল। ইরফান গাড়ি চালাতে চালাতে সকালের কথা ভাবছে। আয়ামকে দেখতে ডাক্তার এসেছিল। আয়ামকে সারাক্ষণ মাম্মী মাম্মী করতে দেখে ডাক্তার বলেছিল।

“দেখো ইরফান। আমি জানি তোমার স্ত্রী মারা গেছে। এটা তুমি বুঝো। আমি বুঝি। কিন্তু তোমার ছেলেটা তো বুঝে না। ওর বয়সই কত হয়েছে বলো। চার/সাড়ে চার। মৃত্যু কী ও তা জানে না। ওর মা যে আর কোনও দিনও আসবে না, এটা সে বুঝে না। হঠাৎ করে মা’র চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না সে। ওর মনে চাপ পড়ছে। শারীরিক মানসিক দুইভাবেই আয়াম অসুস্থ হয়ে পড়ছে।”

“আমি বুঝি, আঙ্কেল। কিন্তু আমি কী করব বলুন। ওকে তো এতদিন ঠিকই সামলে রাখতে পেরেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ কাল…

ইরফান থেমে গেল। ডাক্তার আঙ্কেল বললেন,

” কাল হঠাৎ কী ইরফান? আমার কাছে লুকিও না। ছেলেটার ভালো আমিও চাই। মন থেকে চাই।”

ইরফান বাধ্য হয়ে বাবা, হুমায়রা, ডাক্তার আঙ্কেল সবার কাছে মেহরীনের ব্যাপারটা বলল।

“হুবহু হামনার মতই দেখতে। প্রথমে আমিও হামনা ভেবে ভুল করেছিলাম। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম। ওটা হামনা না। হামনার মতই দেখতে অন্য কেউ। আয়াম ওই মেয়েকে দেখেই হামনা ভাবছে। ওকে সাথে করে বাসায় নিয়ে আসার জন্য জেদ করছিল।”

হুমায়রা, বাবা হাঁ করে চেয়ে আছে। ওরা যেন ইরফানের কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। বাবা বললেন,

“এই কথা তুই আমাকে আগে বলিস নি কেন? ওই দিন আমি তোকে কত জিজ্ঞেস করলাম। তুই কোন কথাই বললি না।”

ডাক্তার আঙ্কেল বললেন,

“আহ তুই থামবি। আমাকে ইরফানের সাথে কথা বলতে দে। ইরফান, ওই মেয়েটা যদি সত্যিই হামনার মত দেখতে হয়, তাহলে তো হয়েই গেল। ওকে আয়ামের বেবিসিটার হিসেবে রেখে দাও। অন্তত যতদিন না আয়াম বুঝতে পারবে যে, ওর মা মারা গেছে।”

“কিন্তু আঙ্কেল, মেয়েটাকে আমি চিনি না। কোথায় থাকে, নাম কী, কী করে কিছুই জানি না। একদিনের একটু দেখা। ওই মেয়েকে আমি কোত্থেকে খুঁজে বের করব।”

“ইরফান, মন থেকে চাইলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। যদি নিজের ছেলের ভালো চাও তো ওই মেয়েকে নিয়ে আসো।”

সেই যে ইরফান মেয়েটাকে খুঁজতে সকালে বের হয়েছে। ওই দিন যেখানে মেহরীনকে দেখেছিল, সবার প্রথমে সেখানে যায় ইরফান। এগারোটা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করে। কারণ সেদিন এগারোটার দিকেই মেহরীনকে ওখানে দেখেছিল। তারপর সেখানকার আশেপাশের সব জায়গায় ঘুরে দেখেছে। সারাটা দিন পাগলের মত এখান থেকে ওখানে ঘুরে বেড়িয়ে এখন এই ভাবে মেয়েটাকে পেয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি সে। ইরফান উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ জানাল। মেহরীন গাড়িতে বসে এখন উসখুস করছে। এখন তার মনে হচ্ছে লোকটার কথা শুনে গাড়িতে উঠে মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছে সে। না জানি লোকটা এখন তাকে কোথায় নিয়ে যায়। সে কী করবে, লোকটাকে গাড়ি থামাতে বলবে? বললে যদি লোকটা গাড়ি না থামায়! তাহলে কি চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দেবে? ইশশ! অনন্ত বলেছিল ফেরার সময় কল করতে। অনন্ত সাথে থাকলে এরকম কিছুই হত না। তারই দোষ। সে কেন অনন্তর কথা শুনেনি। এখন এই বিপদ থেকে তাকে কে রক্ষা করবে? অনন্ত জানতে পারলে অতি পাকনামির জন্য তার সাথেই রাগ দেখাবে। মেহরীন গাড়ি থামানোর কথা বলতে যাচ্ছিল মাত্র। কিন্তু ওর বলতে হলো না। তার আগেই ইরফান গাড়ি থামাল। মেহরীনের আত্মা এতক্ষণ হাতে ছিল। সে তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ল। ইরফানও গাড়ি থেকে মেনে মেহরীনকে বলল,

“আমার সাথে চলুন।”

বলেই সে হাঁটতে লাগল। এতটুকু পথ এসেই যখন পড়েছে তাহলে ছেলেটাকে দেখে যাবে ভেবে মেহরীন ইরফানের পেছন পেছন হাঁটতে লাগল।
হুমায়রা দরজা খুলে দিয়েছে। দরজা খুলে সে সামনে মেহরীনকে দেখে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার। ইরফান বলেছিল, মেয়েটা হুবহু হামনার মতন দেখতে। কিন্তু এ তো হামনাই। এই মেয়ে আর হামনা আলাদা দু’জন তা মনেই হচ্ছে না। হুমায়রা দরজার সামনেই জমে দাঁড়িয়ে রইল। ইরফান এগিয়ে গেলে মেহরীনও হুমায়রাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। এতক্ষণ হুমায়রার মুখ দিয়ে একটা কথাই বের হলো।

“আপু!”

ঘরে ঢুকতেই আয়াম মেহরীনকে দেখে চিৎকার করে উঠল।

“মাম্মী! মাম্মী তুমি এসেছ। পাপা তুমি মাম্মীকে নিয়ে এসেছ।”

আয়ামের চোখ মুখে খুশির ঝিলিক। ইরফানের বাবা অবিশ্বাস্য চোখে মেহরীনকে দেখছে। ইরফানের শ্বশুরও এসেছে। উনিও হাঁ করে মেহরীনকে দেখছেন। উনাদের এমন আচরণে মেহরীন অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। ইরফান বাবাকে জিজ্ঞেস করল,

“আয়ামের জ্বর ছেড়েছে বাবা?”

বাবার কানে তার কথা পৌঁছুলে তো? আয়াম দুই হাত বাড়িয়ে দিলে মেহরীন ধীর পায়ে এগিয়ে গেল। আয়াম তাকে কাছে পেয়ে ঝাপটে ধরেছে।

“তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো মাম্মী? আমি তোমাকে আর কোথাও যেতে দেব না। তুমি আমার কাছে থাকবে।”

হুমায়রা এতক্ষণে এই ঘরে চলে এসেছে। বাবার পাশে সে দাঁড়ালে বাবা বিস্মিত গলায় বললেন,

“হামনার সাথে আমার কি কোন যমজ মেয়ে হয়েছিল, হুমু?”

হুমায়রা বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে বাবার দিকে তাকাল। বলল,

“কেমন পাগলের মত প্রশ্ন করছো বাবা! আমি কীভাবে জানব? আমি তো আপুর থেকে চার বছরের ছোট। আপুর সাথে যমজ হয়েছে নাকি তা তো তোমার জানার কথা।”

হুমায়রা ইরফানের কাছে গিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

“দুলাভাই, আপুর কি যমজ কোন বোন ছিল? এই মেয়ে কি আমাদের বোন?”

ইরফান মনে মনে না হেসে পারল না। ইরফানকে সে এসব জিজ্ঞেস করছে! ইরফান নিজেই তো কনফিউজড। সে তো হামনার সাথে ছিল পাঁচ বছর। হুমায়রা বোন হয়ে ছোট থেকে সাথে থেকেও যেটা জানে না, ওটা সে জানবে কীভাবে?
ওই ঘরে হামনার ছবি দেখে মেহরীন বেচারিও কম ধাক্কা খায়নি। আয়ামকে ছেড়ে হামনার ছবির সামনে গিয়ে চোখ বড় বড় করে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। মেহরীনের তখনকার অবস্থা বর্ণনা করার মত না। সে ঘুরে সবার দিকে দেখল। এই কারণেই তো প্রথম দিন ওরা তাকে ছবির মেয়েটা ভেবে ভুল করেছে। আজ এখানে আসার পর মানুষগুলো তাকে এজন্যই ওভাবে দেখছিল। ওর নিজেরই তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। দু’টা মানুষ টুইন না অথচ তাদের কত মিল৷ কীভাবে সম্ভব এটা!
মেহরীন তোতলাতে তোতলাতে বলল,

“কে এটা? হুবহু আমার মত দেখতে! মনেই হচ্ছে না এটা অন্য কেউ। মনে হচ্ছে যেন আমার ছবিই কেউ টানিয়ে রেখেছে। কিন্তু আমি তো জীবনে কখনও আপনাদের দেখিনি। আজ প্রথম এই বাড়িতে এলাম। এভাবে কোনদিনও ছবিও তুলি নি আমি। তাহলে… ”

মেহরীনের বিস্ময় ইরফান বুঝতে পারল। কারণ প্রথম দিন সে-ও এসবই ভেবেছিল। ইরফান মেহরীনের কাছে এসে বলল,

“ঠিক বলেছেন, এটা আপনি নন। ও আমার স্ত্রী হামনা।”

মেহরীন এখনও যেন কিছু বুঝতে পারছে না। সে নিজের হাতে চিমটি কাটছে।

“হ্যাঁ? আপনার স্ত্রী? ”

“জি। আপনাকে ঠিক ওর মতই দেখতে। তাই সেদিন আপনাকে দেখে আমরা বাবা ছেলে দু’জনই হামনা ভেবে ভুল করেছিলাম।”

“হুম। কিন্তু উনি এখন কোথায়?”

ইরফান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“না ফেরার দেশে। সাত মাস আগে আমার স্ত্রী মারা গেছে।”

মেহরীন ঝট করে একবার ইরফানের দিকে ফিরল। না, ইরফানের মুখের ভাবের পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু মেয়েটা দুনিয়ায় নেই। মারা গেছে শুনেই মেহরীনের কান্না পাচ্ছে। কত সুন্দর সুখের সংসার, স্বামী সন্তান ফেলে মেয়েটাকে চলে যেতে হয়েছে। আসলে মানুষের জীবন সত্যিই ক্ষনস্থায়ী। তারপরও মানুষ এই জীবনে কত স্বপ্ন দেখে। বেঁচে থাকার কত ইচ্ছা মানুষের। মানুষ জানে একদিন সে সব ছেড়ে চলে যাবে। তবুও আপনজনদের মায়া কাটাতে পারে না। মেহরীনের চোখ ছলছল করছে। কেঁদে ফেলবে সে। কিন্তু সম্পূর্ণ অচেনা একটা মেয়ের জন্য, তার পরিবারের মানুষের সামনে কেঁদে ফেললে সে নিজেই লজ্জা পাবে ভেবে খুব কষ্টে নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে। মনে মনে নিজেকে শাসন করছে। না, ওদের সামনে কাঁদলে চলবে না।
.
আয়াম সেই কখন থেকে মেহরীনকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। তার ভয়,তার মাম্মী তাকে রেখে চলে যাবে। একবার গেলে মাম্মী আর আসবে না। তাই সে কারো কথাই শুনছে না। মেহরীনকেও ছাড়তে রাজি হচ্ছে না। ওদিকে আবার রাত হয়ে গেছে। মেহরীনকে ফিরতে হবে। অনন্ত বলেছিল, বাসায় ফিরে যেন কল দেয়। সে তো এখন কল দেওয়ার সুযোগটাও পাচ্ছে না। দু’জন বয়স্ক লোক সারাক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে চাইলে লজ্জা পেয়ে হেসে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। হুমায়রা মেয়েটা তাকে প্রশ্ন করে করে পাগল করে দিচ্ছে। অবশ্য মেয়েটার দোষ নেই। সে যদি মেয়েটার বোনের মত দেখতে হয়, আর তার বোন সাত মাস আগে মারা যায়। তাহলে যে কারোরই এই অবস্থা হবে। মেয়েটা মনের কৌতূহল মিটাতেই তাকে নানান প্রশ্ন করছে। মেহরীনও হুমায়রাকে নিজের ছোট বোনের মত ভেবে হেসে হেসে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।

চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here