#মেঘের_আড়ালে_মেঘ”২০”
#জেরিন_আক্তার_নিপা

অনন্ত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হুমায়রা তার হাত ধরে টেনে বলল,

“দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলুন।”

অনন্ত লাফিয়ে ওঠে ব্যস্ত হাতে পকেট থেকে ফোন বের করেই কানে ধরল। হুমায়রা চোখ ছোট ছোট করে তাকে দেখছে। লোকটা পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি? কেউ কল দেয়নি,শুধু শুধু ফোন কানে ধরে রেখেছে কেন? আজব!

“ফোন কানে ধরে আছেন কেন? লাইনে তো কেউ নেই।”

“নেই? ও আচ্ছা, এই সময় আমার একজন ক্লায়েন্টের কল করার কথা ছিল। ভীষণ জরুরি কল।”

“কল তো করেনি। করলে রিসিভ করবেন। এখন শুধু শুধু ফোন কানে ধরে রাখবেন কেন?”

অনন্ত ফোন কান থেকে নামিয়ে হুমায়রার হাত ছাড়িয়ে বলল,

“আমার ভীষণ জরুরি একটা কাজ আছে। আমি আজ আসছি।”

হুমায়রা বুঝতে পারছে না, হঠাৎ করে অনন্তর কী হলো। এমন উদ্ভট আচরণ করছে কেন?
অনন্ত বুঝতে পারছে তার কপালে ঘাম হচ্ছে। জ্বর আসছে তার। আর কয়েক পা বাড়ালেই সে বরবাদ হয়ে যাবে। তার বরবাদি তাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে।

“তুমি ভেতরে যাও। আমি আসছি।”

হুমায়রাও আজ নাছোড়বান্দা হয়ে গেল। সে অনন্তর সামনে গিয়ে দাঁড়াল।

“আসছি মানে! এতটুকু পথ এসে এখন বাড়ির সামনে থেকে ফিরে যাবেন! না,না। আপনাকে ভেতরে যেতেই হবে। আমার নতুন বোনকে দেখবেন না? মেহরীন আপনার কথা কতবার জিজ্ঞেস করেছে। আজ আপনাকে দেখলে ও ভীষণ খুশি হবে। অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে।”

অনন্ত কপাল মুছতে মুছতে ভাবছে,

“মিষ্টি! হ্যাঁ, সত্যিই মেহু ভীষণ মিষ্টি মেয়ে। কিন্তু রেগে গেলে এই মিষ্টি মেয়ে গুলোই নিম পাতার থেকেও তেতো হয়ে যেতে বেশি সময় লাগে না।

মনে মনে দীর্ঘশ্বাস চাপল অনন্ত। এই হুমায়রাকে তার কী করতে ইচ্ছে করছে তা সে নিজেও ভেবে পাচ্ছে না। এখন মনে হচ্ছে দুই মেয়ের মাঝে চাপা পড়েছে সে।

“মন ভালো থাকলে মেহু যতটা সহজ, রেগে গেলে ঠিক ততটাই ভয়ানক হয়ে ওঠে। আল্লাহ তুমি আজ আমাকে ভালো করেই ফাঁসিয়েছ। আজ কোন ভাবেই শেষ রক্ষা হবে না। আমার বাঁচার কোন পথ খোলা নেই আর। এখনই নিজের জন্য ইন্নালিল্লাহ পড়ে ফেলি।”

“বিড়বিড় করে কী বলছেন? হঠাৎ আপনার কী হলো বলুন তো? এমন আজব বিহেভ করছেন কেন? আমার দুলাভাইয়ের বাড়িতে যেতে চাইছেন না কেন?”

“না মানে হুমায়রা আমার সত্যিই জরুরি কাজ আছে।”

“কাজ টাজ পরেও অনেক করতে পারবেন। এখন ভেতরে চলুন।”

হুমায়রা অনন্তকে এক প্রকার টেনে ভেতরে গিয়ে গেল। হুমায়রা ডোরবেল চাপার সময় অনন্তর মনে হচ্ছে হুমায়রা ডোরবেল না, তার কলিজা চেপে ধরছে। মেহু দরজা খুলে দিয়ে হুমায়রার সাথে তাকে দেখলে কী বলবে সে! অনন্তর ইচ্ছে করছে হুমায়রাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দৌঁড়ে পালিয়ে যেতে। ফাঁদে পড়লে শয়তানও আল্লাহকে ডাকে। অনন্ত চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে ডাকছে।

“আল্লাহ এই জীবনে তো কত মাইয়াই আইলো গেল। কারোর কাছেই তো ধরা খাওয়াও নাই। তাইলে আজ ক্যান নিজের গার্লফ্রেন্ডের কাছে ধরা খাওয়াইতাছো! বাঁচাইয়া নেও আল্লাহ। এইডাই শেষ বার। এর পর থেকে ভালো হয়ে যামু তুমি তো সবই জানো।”

অনন্ত শক্ত করে চোখ বুজে দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে। দরজা খুলে দিল ইরফানের বাবা। হুমায়রাকে দেখে মিষ্টি হেসে তিনি বললেন,

“এসো মা। কতদিন পর এলে। কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আঙ্কেল। আপনারা সবাই কেমন আছেন?”

অনন্ত হুমায়রার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। বাবা ওকে দেখতে পেয়ে বললেন,

“আলহামদুলিল্লাহ। সবাই ভালোই আছে। তোমার সাথে ও কে?”

হুরায়রা লজ্জা পেল। মৃদু হেসে বলল,

“আপনারা তো আমার এনগেজমেন্টে যাননি। তাই চিনেন না আঙ্কেল। ওর সাথেই আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে।”

“ও…সেকি মা, তোমরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছো। ভেতরে আসো বাবা। আজ প্রথম তুমি আমাদের বাড়িতে এলে।”

অনন্ত ভেতরে গিয়ে উঁকিঝুঁকি পেরে মেহরীনকে খুঁজছে। দেখছে আশেপাশে কোথাও মেহরীন আছে কিনা। ওরা সোফায় বসল। হুমায়রা জিজ্ঞেস করল,

“মেহরীন, আয়াম ওরা কোথায় আঙ্কেল?”

“আর বোলো না মা। মেয়েটা যে কী বেখেয়ালি। সকালে লিফটের সামনে জুতা ছিড়ে পড়ে গেছে। পায়ে ব্যথা পেয়ে পা ফোলে এত বড় হয়েছে। এখন ঘরে ঘুমিয়ে আছে।”

“সেকি! অনেক ব্যথা পেয়েছে আঙ্কেল? পা ভাঙেনি তো?”

“না। মনে হয় ভাঙেনি। ইরফান পেইনকিলার দিয়ে গেছে। ব্যথা কমেছে বলেই ঘুমিয়ে গেছে।”

মেহরীন পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে শুনে অনন্তর নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে কষ্ট হচ্ছে। ছুটে মেহরীনের কাছে চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। ওকে দেখার জন্য মন আকুপাকু করছে। কিন্তু চাইলেও এখন সে মেহরীনের সামনে যেতে পারবে না। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে মেহরীন ঘুমিয়ে আছে। জেগে থাকলে কী হতো ভাবতে পারছে না সে। এত কাছে এসেও মেহরীনকে না দেখে চলে যেতে হবে ভেবে কষ্টও হচ্ছে খুব।

“তোমরা বসো। আমি মেহরীনকে ডেকে দেই।”

অনন্ত তৎক্ষনাত বাধা দিয়ে বলে উঠল,

“না,না। থাক। উনাকে আর কষ্ট দিতে হবে না। উনাকে ডাকবেন না আঙ্কেল। উনি ঘুমাক। আমরা বেশিক্ষণ থাকব না৷ এক্ষুনি চলে যাব। ”

হুমায়রাও বলল,

“ও ঠিকই বলেছে আঙ্কেল। মেহরীনকে এখন ডাকতে হবে না। এমনিতেই হয়তো বেচারি ব্যথায় অস্থির হয়ে ছিল। ও একটু রেস্ট নিক।”

“আচ্ছা ডাকব না। কিন্তু তোমরা এভাবে খালি মুখে চলে যাবে! এক কাপ চা অন্তত খেয়ে যাও।”

“না আঙ্কেল। আপনি অস্থির হবেন না। আমরা কিছুই খাব না। আয়াম কোথায় আঙ্কেল?”

“আয়াম স্কুলে। এখনও ফিরেনি।”

“ওকে কে আনতে যাবে? দুলাভাই দুপুরে বাড়ি আসবে আজ?”

“জানি না।”

“আপনিও তো মেহরীনকে একা রেখে আয়ামকে আনতে যেতে পারবেন না। আচ্ছা তাহলে আমি ফেরার সময় আয়ামকে সাথে নিয়ে ফিরব। মেহরীন অসুস্থ। আয়াম আজ নাহয় আমার কাছেই থাকুক। এখানে থাকলে ও মেহরীনকে জ্বালাবে।”

“আচ্ছা মা। তুমি ফোন করে ইরফানকে বলে দিও। নইলে আবার আয়ামের জন্য টেনশন করবে।”

ইরফানের নাম শুনে অনন্তর মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হুমায়রার সাথে সে বেরিয়ে এলো। অনন্ত এখান থেকে বাড়ি চলে যেতে চাইলে হুমায়রা যেতে দিল না। তাকে সাথে নিয়ে আয়ামের স্কুলে গেল। সেখান থেকে অনন্তকে ওদের বাড়িতে নিয়ে গেল।
.
মেহরীনের ঘুম ভাঙলে বেড থেকে উঠতে নিলে পায়ের ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল। পড়ে যেতে নিয়ে বিছানার কোণায় বসে পড়ল।

“ওহ আল্লাহ! ঘুমিয়ে দেখি পায়ের ব্যথা আরও বেড়েছে। ঘুমানোর আগে তো এত ব্যথা ছিল না। ইশশ কী ব্যথা। পা ভেঙে গেল নাকি?”

মেহরীন আয়ামকে ডাকল। আয়াম বাসায় থাকলে তো তার ডাকে সাড়া দিবে! সে আবার বাবাকে ডাকল। বাবাও আসছে না।

“আমাকে একা বাড়িতে রেখে কোথায় গেল সবাই? বাবা, ও বাবা! কোথায় আপনারা?”

তাকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে সবাই বাড়ি ছেড়ে চলে গেল নাকি? নিজের পাশে কাউকে না পেয়ে মেহরীনের মন খারাপ হয়ে গেল। তার সবচে বেশি রাগ হচ্ছে ইরফানের উপর।

“অফিসে কী এত কাজ লোকটার? উনার সামনেই পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলাম। আমাকে ধরতে পারল তো না-ই। এখন আবার আমাকে এই অবস্থায় রেখে অফিসে গিয়ে বসে আছে। এহহ, কী এত কাজ উনার! সারাদিন তো চোর চোট্টাদের নিয়ে পড়ে থাকেন। ভালোই হয়েছে এই লোক আমার স্বামী না৷ বউয়ের খেয়াল রাখতে হয়,যত্ন নিতে হয়,ভালোবাসতে হয়।”

ইরফানের সাথে তার মিছেমিছি বিয়ে হতে গিয়ে যে সত্যিকারে বিয়ে হয়ে গেছে, এই কথা মনে পড়ে জিভ কামড় দিল মেহরীন। নিজের ভুল শুধরানোর জন্য বলল,

“থাক,সত্য বিয়ে হয়েছে তো কী হয়েছে? আমি এই লোকের সাথে সারাজীবন থাকতে যাচ্ছি নাকি? তিন মাসের মধ্যেই ডিভোর্স নিয়ে চলে যাব, হুহ্। এরকম কেয়ারলেস বর আমার লাগবে না।”

মেহরীন নিজের বুঝতে পারছে না, সে অনন্তর বদলে ইরফানকে নিয়ে ভাবছে। তাকে তো তার ভালোবাসার মানুষের কথা সবার আগে মনে করা উচিত ছিল। সে তো অনন্তকে ভালোবাসে। তাহলে মেহরীনের ইরফানের উপর রাগ হচ্ছে কেন? সে নিজের অসুস্থতার সময়ে ইরফানকে পাশে চাইছে কেন?
.
হুমায়রা আয়ামকে নিয়ে বাড়ি ফিরেই ইরফানকে কল করে জানিয়ে দিয়েছে। যা ছেলে পাগল বাবা! ছেলেকে স্কুলে গিয়ে না পেলে সাথে সাথে ওখানেই হার্ট এ্যাটাক করে মারা যাবে। অনন্ত দুপুরে হুমায়রাদের বাড়িতে খাবে। হুমায়রা নিজের ভালোবাসার মানুষটার জন্য চুলার আঁচে দাঁড়িয়ে যত্ন করে নিজের হাতে সব আইটেম রান্না করছে। আয়াম অনন্তের সাথে বসার ঘরে সোফায় বসে আছে। আয়াম হাজারটা প্রশ্ন করছে। বেচারা অনন্ত বাধ্য হয়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। ইরফানকে তার পছন্দ না হলেও সে একটা বাচ্চা ছেলের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না। তার শত্রুর ছেলে হলেও ছেলেটা ভারী মিষ্টি। বাচ্চাদের কোলে নিয়ে, চুমু খেয়ে আদর করা অনন্তর ধাঁচে নেই। তবুও আয়ামের সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছে তার।
.
ইরফান ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং সেরে আজ তাড়াতাড়িই বেরিয়ে গেল। সকালে দেখে এসে মেহরীন ব্যথা পেয়েছে। এখন ব্যথা কমেছে নাকি বেড়েছে জানা হলো না। কল তুলছে না মেয়েটা। শুধু শুধু তাকে টেনশন দিচ্ছে। একবার নিজে থেকে কল করে বলে দিলেই পারত, সে ঠিক আছে। তাহলে ইরফানকে মাথায় এক বোঝা চিন্তা নিয়ে ক্লায়েন্টকে অ্যাটেন্ড করতে হতো না।
তার উপর আবার আয়ামকে হুমায়রা নিয়ে গেছে। আজকাল আয়ামের দুষ্টুমি যা বেড়েছে, হুমায়রা ওকে সামলাতে পারলেই হলো। ও গিয়ে আয়ামকে নিয়ে আসবে নাকি? হ্যাঁ, যাবার পথে আয়ামকে ওর নানুর বাড়ি থেকে তুলে নিয়েই হবে। ইরফান গাড়ি স্টার্ট দিল। একদিকে মেহরীনের চিন্তা অন্যদিকে আয়ামের চিন্তা। চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাবে সে।

“এই ছেলে আর ছেলের মা মিলে আমাকে পাগল করে ছাড়বে।”

“ছেলের মা” কথাটা কানে বাজতে লাগল ইরফানের। মেহরীন আয়ামের মা না। আয়ামের মা হামনা। ইরফান মেহরীনকে আয়ামের মা বলছে কেন?

“আজকাল আমার সাথে এসব কী হচ্ছে? আমি শুধু হামনাকে ভালোবাসি। অন্য কারো প্রতি আমার কোন টান নেই। তিনটা মাস! শুধু তিনটা মাস কোন ভাবে কেটে যাক। ওই মেয়েকে আমি তিন মাস পর ডিভোর্স দেব। এক বছর পর পুরোপুরি ভাবে ওই মেয়েকে মুক্ত করে দেব।”

ইরফান ড্রাইভ করে হামনাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। লিফটে উঠে চারতলায় চলে এলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপল সে।
হুমায়রা রান্নাঘরে। কলিংবেলের শব্দ শুনে ওখান থেকেই বলল,

“আসছি।”

অনন্ত বলল,

“আমি দেখছি। ”

বলেই দরজা খোলার জন্য উঠে এলো অনন্ত। দরজা খুলে সামনে ইরফানকে দেখতে পেয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল তার। ইরফানও অনন্তকে নিজের শ্বশুরবাড়িতে দেখে কম অবাক হলো না। দু’জনই একদৃষ্টিতে বেশ অনেকক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। কারো চোখের পলক পড়ছে না। দু’জনের মুখে কোন শব্দ নেই।
অনেকক্ষণ হয়ে গেলে হুমায়রা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

“কে এসেছে? কোন সাড়াশব্দ নেই কেন? অনন্ত, আপনি কোথায় গেলেন?”

দরজার সামনে ইরফানকে দেখে হুমায়রা হেসে বলল,

“বাবাহ! আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে। দুলাভাই আজ শ্বশুরবাড়ি এসেছে! বিনা নিমন্ত্রণে! ঘুম ভেঙে কার মুখ দেখেছিলাম আমি?”

ইরফানকে বিস্মিত চোখে অনন্তর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হুমায়রা বলল,

“চিনতে পারেন নি নিশ্চয়ই। অবশ্য চিনবেন কী করে? বড়লোক মানুষ। আমাদের এনগেজমেন্টে তো আসলেন না৷ ইনি হচ্ছে আপনার ভায়রা ভাই। আপনার একমাত্র শ্যালিকার হবু স্বামী।”

চলবে___

সবার মন্তব্য আশাকরি। দুই লাইনে হলেও নিজেদের অনুভূতি জানাবেন।
গ্রুপ লিংক
👇
https://www.facebook.com/groups/928548141001685/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here