#মেঘফুল_৭
#লেখনীতে_উম্মে_সুমাইয়া_আক্তার
________________________________

জান্নাত খপ করে মেঘালয়ের শার্টের কলার খামছে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে, চাপা কন্ঠে বাঘিনীর ন্যায় রাগান্বিত হয়ে বললো,” কার সাথে ফোনে কথা বলছিলেন? আমাকে দেখেই লাইন কেটে ফেললেন কেন? ও আচ্ছা বুঝতে পেরেছি, আপনার সেই প্রেমিকা! এতই যখন তাকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করলেন? তাকে ভালোবাসা সত্যেও ডিভোর্স কেন দিলেন? আবার এখন আমার জীবন নষ্ট করে,আমাকে তিলে তিলে শেষ করে তাকে ফিরিয়ে আনতে চান। কাপুরুষ কোথাকার! আপনার লজ্জা হওয়া উচিৎ।”

মেঘালয় জান্নাতের থেকে শার্টের কলার ছুটিয়ে নিলো। তাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। চোখমুখ শক্ত করে তার দুইহাত বিছানায় চেপে ধরে তার উপর ঝোঁকে বললো,” চুপ! বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। বাপের বাড়িতে এসে কি পাওয়ার বেড়ে গেছে? আরেকবার আমার এই বিষয়ে নাক গলালে তোমাকেও ডিভোর্স দিবো। ভেবেছিলাম তোমাকে কষ্ট দিবো না। কিন্তু তুমি আমাকে কষ্ট দিতে বাধ্য করলে!” বলে নর্দমার কীটের মতো তাকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিলো। হন হন করে হেঁটে রুম থেকে বেড়িয়ে চলে গেলো।

জান্নাত চাপা কান্নায় ভেঙে পরলো। তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মেঘালয় এখনই তার সাথে সাইকোর মতো আচরণ করছে, না জানি পরে আর কি করে! তার সাথে কি আদৌ সে সংসার পাততে পারবে? অজানা ভয়ে তার হৃৎপিণ্ড ক্রমশ উঠানামা করছে।


এশার পর ডিনার করার জন্য দীলু এসে জান্নাতকে বললো,” আপু দুলাভাইকে নিয়ে ডিনার করতে আসো। বাবা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।”

জান্নাত চিন্তিত মুখে বললো,” ঠিকাছে। ”

দীলু জান্নাতের চিন্তিত মুখ দেখে বললো,” আপা কি হয়েছে তোমার? এত চিন্তিত লাগছে কেন? আর দুলাভাই-ই বা কোথায়? ”

” ও কিছু না। তোর দুলাভাই বাইরে গিয়েছেন। আসতে একটু দেরি হবে।” শো না, বাবাকে বলিস খেয়ে নিতে।”

” আচ্ছা। ”

দীলু চলে গেলে জান্নাত কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেও এখন তার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে মেঘালয়কে নিয়ে। সে মনে মনে বললো,” এখন আমি কি করবো! উনি যদি বাসায় না ফিরে? বাবাকে কি জবাব দিবো আমি? আমার সাথেই কেন মানুষগুলো এরকম অদ্ভূত আচরণ করে? কি অপরাধ করেছি আমি?” ও আর্তনাদ করে বললো,” আল্লাহ আমাকে পথ দেখাও। আর যে সইতে পারি না গো মাবুদ!”

পরক্ষণেই একটু ভেবে বললো,” আচ্ছা তাকে একটা ফোন দিলে কেমন হয়? কিন্তু যদি আমাকে তিরস্কার করেন?” তারপর বললো,” তিরস্কার করলে ডিরেক্ট আমার শ্বশুরের কাছে ফোন দিবো।”

যেই ভাবা সেই কাজ। ও মেঘালয়ের নম্বরে কল দিলো। একবার রিংটোন হলো মেঘালয় রিসিভ করলো না। জান্নাত আবার কল দিলো। এবার রিসিভ করে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,” কি হয়েছে? আমাকে কল দিলে কেন?”

” কেন কল দিয়েছি মানে! আপনি বাসায় আসছেন না কেন?”

” আসবো না। তুমিই থাকো তোমার বাপের বাড়িতে!”

” আজব! আপনি বাসায় না আসলে বাবার কাছে ফোন দিয়ে বলবো,আপনি নিখোঁজ হয়ে বসে আছেন!”

মেঘালয় তার বাবার কথা শুনে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,” ঠিকাছে আসছি!”

মেঘালয় তার শ্বশুর বাড়িতে আরও একদিন থেকে আড়াই দিনের সময় তার বাসায় চলে এলো। প্রভার সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটা মাধ্যম সে খুঁজে পেয়েছে। আমানের থেকে অনেক কষ্টে,প্রভার বান্ধবী পিউয়ের নাম্বারটা এনেছে। সেদিন আমানের সাথেই এ বিষয়ে ফোনে কথা বলছিলো। জান্নাত আসায় লাইন কেটে ফেলে। ফলে জান্নাত ভেবেছে সে প্রভার সাথে যোগাযোগ করেছে। জান্নাতের ধারণা আগে মিথ্যে হলেও মেঘালয় তা এখন সত্য করবে। সে নির্জন এবং বিশাল খোলা একটা মাঠে আসলো। পিউকে কল দিলো।
ওপাশে,
” হ্যালো! কে আপনি?”

” পিউ আমি মেঘালয়! চিনতে পেরেছো?”

” আল্লাহ,এত্তদিন পর! কি মনে করে কল দিলেন ভাইয়া?

” একটু দরকার ছিলো। কেমন আছো?”

” ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ভাইয়া?”

” ভালো। ইয়ে, পিউ তুমি কি প্রভার নাম্বারটা আমাকে দিতে পারবে?”

” কিন্তু, আপনার আর প্রভার মাঝে না ডিভোর্স হয়ে গেছে?”

” হ্যাঁ,আমি তাকে আবার ফিরিয়ে আনতে চাই। প্রভার সাথে কি তোমার যোগাযোগ হয়?”

” হ্যাঁ, কিন্তু অনেক দিন হলো কথা বলছি না। মনে হচ্ছে প্রভা ভীষণ ব্যাস্ত।”

” ও আচ্ছা। আমাকে তার নাম্বারটা দাও, প্লিজ।”

” ঠিকাছে ভাইয়া আমি আপনার নাম্বারে তার নাম্বার সেন্ড করে দিচ্ছি। ও হ্যাঁ একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। আপনি তাকে ডিভোর্স কেন দিলেন? একচুয়ালি আমার কাজের চাপে প্রভাকে আমি বিষয়টা সেভাবে জিজ্ঞেস করতে পারিনি!”

” বাদ দাও পিউ। অনেক প্যাঁচাল ছিলো। দোয়া করো এখন যেন তাকে ফিরিয়ে আনতে পারি।”

“হ্যাঁ অবশ্যই। এখন রাখছি।”

পিউ কল কেটে প্রভার নাম্বারটা মেঘালয়কে সেন্ড করে দিলো। মেঘালয়ের ঠোঁটের কোণে শুকনো হাসির ঢেউ খেলে গেলো। ও প্রভার নাম্বারটা ডায়াল করে ইতস্তত করছে, এখন তাকে কল দিবে কি? না দিবে না?
প্রভা ভীষণ রাগী। এখন যদি মেঘালয় কল দিয়ে বলে,” আমি মেঘালয়!” নির্ঘাত প্রভা তাকে তার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করবে। তাকে,তার বাবার নামে এক লহমায় কতগুলো ভর্ৎসনা করবে। তবুও সে কল করবে। যেকোনো মূল্যে সে তাকে আবার ফিরে পেতে চায়। তার হাত কাঁপছে তবুও ইতস্তত করতে করতে শেষ পর্যন্ত কল দিয়েই ফেললো। একবার,দু’বার রিংটোন হলো। শেষে তিনবারের সময় প্রভা কল রিসিভ করলো।
ওপাশে,
” আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন?”

মেঘালয়ের মুখ দিয়ে এখন কথাই বেরুচ্ছে না। গলা শুকিয়ে গিয়েছে। হৃৎপিণ্ড ধুকপুক করছে। কপালে ঘামের ফোঁটা দীর্ঘ হচ্ছে। নোলা দিয়ে ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়েও কিছু বলতে পারলো না। এক রাশ অস্বস্তি-জড়তা আর বিরক্তি নিয়ে কানে ফোন গুঁজে অসহায়ের মতো চুপ করে রইলো। ওদিকে প্রভা হ্যালো, হ্যালো বলেই যাচ্ছে। শেষে একটা কথা বললো,” কথা বলেন না আবার ফোন দিয়েছেন কেন? যত্তসব ফালতু, থার্ডক্লাস!”

মেঘালয় শেষ কথাটি শুনে কানে হাত দিয়ে কপাল কুঁচকে কল কেটে ফেললো। তারপর আহতস্বরে বললো,” অপস! এত দেখছি আগের থেকেও অনেক বদমেজাজী হয়ে গিয়েছে। তাকে নিয়ে আমি আবার ঘর বাঁধার স্বপ্নও দেখছি,বাহ!”

এদিকে জান্নাত মেঘালয় এবং তার পরিবারের প্রতি রীতিমতো বিরক্ত। এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষকেই তার কাছে খাপছাড়া, ছন্নছাড়া লাগে। কেমন ভবঘুরে! কারো প্রতি কারো যেন সহানুভূতি নেই। ভালোবাসাটা যেন তারা আড়ালে-আবডালে রেখে দিয়েছে। বিয়ের প্রথম প্রথম তার সাথে কত ভালো আচরণ করতেন তার শাশুড়ী। এই মহিলাটারও এখন রূপ বদলে গিয়েছে। তার শশুরকে যতটা না ভালো মনে করেছিলো, লোকটা তার চাইতেও বদ। তার বাবার চাইতেও ভয়ংকর। অল্পতেই ঊনিশ-বিশ হলে রেগে যান। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। আর মেঘালয়কে তো উঠতে বসতে বকাঝকা করেন। ও বুঝতে পারছে না এরা আসলেই কি,বাপ ব্যাটা নাকি মেঘালয় তাদের কুড়িয়ে পাওয়া সন্তান! পরিবার এমন একটি বন্ধন। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে যেখানে সবাই একসঙ্গে থাকে। আনন্দে হাসে আর দুঃখে একে অপরের চোখের জল মুছে দেয়। ভালোবাসা আর পরিবার এই দুটোই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। যেকোনো পরিবারে বাবা চিন্তিত থাকেন পার্কিং স্পেস নিয়ে, ছোটরা চিন্তায় থাকে খেলাধুলোর জায়গা নিয়ে। মা চিন্তায় থাকেন সকাল-দুপুর আর রাতের খাবার নিয়ে। আমরা সবাই ঘরে ফিরতে চাই,পরিবারকে ভালোবাসতে চাই। কারণ এতেই সত্যিকারের সুখ নিহিত। পরিবার থেকেই মানুষের গতি-প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ঘর ও পরিবারকে তাঁর অন্যতম দান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,’ আল্লাহ তোমাদের ঘরকে করেছেন তোমাদের আবাসস্থল।’[১]

কিন্তু মেঘালয়ের পরিবারটা ভীষণ অদ্ভূত। এই যেমন- মেঘালয়ের ইচ্ছা হলো খাসি দিয়ে কাচ্চিবিরিয়ানি খাবে। সে তার টাকা দিয়ে সবকিছু এনে তার বউকে দিবে রান্না করার জন্য। রান্না শেষ হলে সে একাই পরিবেশন করবে। একবারও ভাববে না যে, খাবারের এক অংশ আমার পিতামাতাকে দেই। তার খেতে ইচ্ছে করছে সে একাই খাবে। কেউ তাকে কিচ্ছুটি বলবেও না। তার বাবাও একই কাজ করেন। তার ইচ্ছা যদি হয় কাবাব খাবেন। তিনি একটা আস্তো মুরগী এনে সেটা মিসেস রুবিকে দিয়ে রান্না করিয়ে,সেটা তিনি একাই খাবেন। এইরকম সিস্টেম কি আদৌ কোনো পরিবারে আছে?
যেখানে হাদিসে আছে,আল্লাহর রাসুল (সা.) হজরত আবু জর (রা.)-কে বললেন,” হে আবু জর, তরকারি রান্না করলে তাতে ঝোল বাড়িয়ে দিয়ো এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক কোরো।[২]

আর সেখানে পরিবার তো দূরের কথা ছেলে তার জন্মদাতাকে,পিতা তার সন্তানকে ফেলে, সুস্বাদু খাবার একাই ভক্ষণ করেন। এই রকম একটি সম্পর্ককে কি আদৌ পরিবার বলা যায়? মোটেই না। কারণ ইসলাম একজন প্রতিবেশীর প্রতি যদি এতটা সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা বলে,তাহলে পরিবার তো আরও গভীর একটি বন্ধন! কাজেই এটা কি প্রতিবেশীর চেয়েও ঊর্ধ্বে হবে? একদমই না।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। কোনো কিছুকে তার সঙ্গে শরিক কোরো না এবং পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।'[৩]

ইসলাম প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচার ও সদ্ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের অভাব-অনটনে পাশে থাকার প্রতিও উদ্বুদ্ধ করেছে। ক্ষুধার্ত প্রতিবেশী রেখে যে মুমিন উদরপূর্তি করবে ইসলাম তাকে পূর্ণাঙ্গ মুমিন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,”ওই ব্যক্তি মুমিন নয়,যে পেট পুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।[৪]

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীদেরকে প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচ করতে নিষেধ করেছেন। ‘হে মুসলিম নারীগণ! তোমাদের কেউ যেন প্রতিবেশীকে হাদিয়া দিতে সংকোচবোধ না করে। যদিও তা বকরির খুরের মতো নগণ্য বস্তুও হয়।[৫]

আদর্শ মুসলিম পরিবার তাদের সন্তানদের ইসলামী শিক্ষা প্রদান করবে। কোনো কারণে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো সম্ভব না হলে, অন্তত দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয়(ফরজ) ধর্মীয় জ্ঞান যেন শিশুরা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। কেননা প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা মুসলমানের জন্য ফরজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।’[৬]

ইসলামী পঠনসামগ্রী থাকা আদর্শ ইসলামী পরিবার প্রাতিষ্ঠানিক ইসলামী শিক্ষার ওপর নির্ভর করবে না। বরং পরিবারে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করবে।যাতে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও বিধি-বিধানের পাশাপাশি কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ, ইসলামী সাহিত্য ও ইতিহাস-ঐতিহ্যবিষয়ক বই থাকবে। শিশুদের ইসলামী সাহিত্য পাঠে অভ্যস্ত করে তুলবে। বর্ণিত আছে, ‘জ্ঞান মুমিনের হারানো সম্পদ। যখন সে তা পায় সংরক্ষণ করে এবং অপর হারানো বস্তুর অনুসন্ধান করে।’(শায়খ আলবানি এই বর্ণনার সনদকে সহিহ বলেছেন।)
পাপ ও পাপের উপকরণ থেকে মুক্ত থাকবে আদর্শ মুসলিম পরিবার। কেননা পাপের উপকরণ পাপ কাজে উৎসাহিত করে। আর পাপ পারিবারিক শৃঙ্খলা ও শান্তি নষ্ট করে। এমনকি কোনো ভালো উপকরণের মন্দ ব্যবহার বেশি হলেও তা পরিবার থেকে দূরে রাখবে। আর যে উপকরণের মন্দ ব্যবহারই বেশি তা অবশ্যই পরিহার করবে। ভালো ও মন্দ জিনিসের ব্যবহার বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদিস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত আতর বিক্রেতা ও কামারের হাপরের মতো।আতর বিক্রেতার কাছ থেকে হয়তো তুমি আতর কিনবে বা তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কামারের হাপর তোমার শরীর বা কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।’[৭]

আবদুর রহমান হাসান জানকা বলেন,‘ব্যক্তি ও পরিবারের মধ্যে বিচ্ছেদ ও দ্রোহের আগুন নেভাতে শিকড় থেকে চরিত্র সংশোধন করতে হবে। কেননা পাপে মত্ত ব্যক্তিরাই পরিবার ও আপনজন থেকে দূরে সরে যেতে চায়। পাপ তার ভেতর অস্থিরতা দূর করে।’[৮]

সবমিলিয়ে মেঘালয়কে তার পিতামাতা কোনো উত্তম শিক্ষা দেন নি। তারউপর মিসেস রুবি, তার আসল মা নন। তিনি তার সৎ মা। মেঘালয়ের যখন ছয় বছর, তখন তার জন্মদাত্রী মারা যান। তার জীবনটা হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। সে হয়ে উঠে বদমেজাজী, এক রুখো আর দুনিয়ামুখী। এর মূল কারণ তার একাকিত্ব। তার আচার-আচরণ, চরিত্রই বলে দেয় সন্তানের জন্য পিতামাতার সময় দেওয়া কতখানি জরুরী! সন্তান জন্ম দিলেই হয় না,তাদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হয়।জান্নাত তার সব দিক বুঝতে পেরে ভীষণ দুঃখীত হলো। এবার তার পালা। মেঘালয়ের উত্তম শিক্ষাহীনতার কারণে,তার জীবনটাও কি সে বিভীষিকাময় করে তুলবে? ও ভাবতে পারে না। কল্পনা করতেও পারে না। ভীষণ কান্না পেলো। এরমধ্যেই একটা জায়গায় তার চোখ আটকে গেলো…
_________
রেফারেন্সঃ-
[১]সূরা নাহল,আয়াত:৪০
[২]মুসলিম,হাদিস:২৬২৫
[৩]সূরা নিসা,আয়াত:৩৬
[৪]আদাবুল মুফরাদ,হাদিস:১১২
[৫]বুখারি,হাদিস:৬০১৭
[৬]সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিস:২২৪
[৭]সহিহ বুখারি,হাদিস:২১০১
[৮]আল আখলাকুল ইসলামিয়া ও আসাসুহা:১/৩৮

চলবে……….

বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। জাজাকুমুল্লাহু খাইরান। উহিব্বুক ফিল্লাহ প্রিয় পাঠকবৃন্দ।🧡

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here