মরিচিকা
পর্ব-৩
#তানিশা_লাবন্য

হঠাৎ আসিফের ম্যাসেজ পেয়ে ভিতরটা কেমন ছলাৎ করে উঠে। আমি রিপ্লে দিলাম আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ ভালো রেখেছে। আসিফ বলে এত্ত দিন হল আসলাম একদিন ও একটা কল ম্যাসেজ কিছু দিলানা৷ আমি কেমন আছি মরে গেছি নাকি বেচে আছি কিছুই জানার চেষ্টা করলে না অনু??? আমি রিপ্লে দিলাম আমি না নিলে খবর নেয়ার মত অনেকে আছে তোমার জীবনে। আর আমি মনে করি আমি এখনও এমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ হতে পারিনি যে আমি খবর নিলে তুমার কিছু যায় আসবে।তখন আসিফ বলে এইভাবে বলছো কেন অনু??? তুমি আমার স্ত্রী।
আমি বললাম বাহ মনে আছে তাহলে আমিতো ভুলেই গেছিলাম। তখন আসিফ আর কোন রিপ্লে দিল না।

এইভাবে কাটতে লাগলো আমার দিন কাল। ছেলে মেয়েদের স্কুল, লেখাপড়া, বিকালে হাটতে যাওয়া। আর হলিডে তে ওদের নয়ে ঘুরতে যাই এইখানে সেইখানে। এরই মধ্যে একদিন ছেলে মেয়েদের নিয়ে পদ্ম রিসোর্ট এ গেলাম। ওইখানে ভালো ভালো ছবি তুললাম আর একটা ছবি খুব সুন্দর হয় তাই ফেসবুক এ প্রফাইলে দিলাম। সাথে সাথে প্রশংসার ফুলঝুরি পড়তে লাগে। এরই মাঝে শুনলাম আসিফ দেশে এসেছে। ননদ আমাকে কল দিয়ে বলে তার ভাই নাকি ছেলে মেয়েদের দেখতে আসবে আজ বিকালে তাই আমি ছেলে মেয়েদের খাইয়ে ওদের বলে দিলাম তুমাদের আব্বু আসবে কোন শয়তানি করবেনা কিন্তু আর তোমার আব্বুর সাথে ভালো ব্যবহার করবে। ছেলে মেয়েরা বলল ঠিক আছে। তাই আমি আমার রুমে দরজা লাগিয়ে বই পড়তে লাগলাম।কারন আসিফ আমাকে দেখতে আসবেনা আর আমিও ওর সামনে পড়তে চাইনা। কাজের খালা কে বলে দয়েছি নাস্তা পানি দেয়ার জন্য সব রেডি করে রাখা আছে।

বই পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারিনাই।
দরজার ঠক ঠক আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আমার। ভাবলাম ছেলে মেয়েরা এসেছে হয়তবা। দরযে খুলে দেখি আসিফ দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওকে দেখে কেমন অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। ও কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ভিতরে এসে দরজা আওয়াজ করে লাগিয়ে দেয়। আমার ভিতর কেমন যেন কেপে উঠে। এসেই আমার দুইগালে এমনভাবে চাপ দিয়ে ধরে যেন দাত বের হয়ে যাবে। বিছানার উপর ফেলেই আমার উপর চড়ে বসে। তাৎক্ষনিক কর্মকানডে আমি পুরো অবাক। আমাকে বলে এই তোকে এত্ত বড় সাহস দিয়েছে কে?? ফেসবুকে তোর ছবি দেয়ার!!! নিজের সুন্দর চেহারাটা মানুষকে দেখাতে চাস????এত তোর লজ্জা লাগেনা!! এই তুই কথা বল। এই বলে জোড়ে মুখ ছেড়ে দেয়। আর আমি ছারা পেয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই আমার উপর থেকে। আর পাগলের মত হাসতে থাকি ও কিছুটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে হয়ত আমার হটাৎ হাসি ও নিতে পারছেনা!!
আমি হাসতে হাসতে বললাম আমি সুন্দর!? আমি যদি সুন্দর হতাম তাহলে আমার স্বামী কখন ও অন্য নারী কে বিয়ে করতে চায় নাকি!!! আচ্ছা কোন পাগলেও এইকথা বিশ্বাস করবে? বল আসিফ…

তখন আসিফ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন আমি কিছুটা রেগে গিয়ে বললাম ছবি দিয়েছি আরও দিব আমার ইচ্ছা এই তুমি কে?? আমি এখন স্বিদ্ধান্ত নিয়েছি তুমাকে তালাকনামা দিব। সই করে দিও। আসলে এই জীবনে একা থাকা খুব কঠিন। তুমিত ঠিকি আরেক মেয়েকে নিয়ে সুখে থাকবে আর আমি সন্যাসির মত একা জীবন কাটিয়ে দিব কেন?? আমারও অধিকার আছে কারও ভালোবাসা পাওয়ার। আদর সোহাগ পাওয়ার। আর যখন তখন আমার শরিলে হাত দিবেনা। লজ্জা করেনা!!! এইভাবে আমাকে ব্যাথা দিতে!!! আমি আর তোমার মুখ দেখতে চাইনা এক্ষনি চিৎকার করার আগে এইখান থেকে বের হও। এই বলে ধাক্কিয়ে ওকে ঘর থেকে বের করে দিলাম। দরজা লাগিয়ে ইচ্ছে মত কান্না করলাম। তালাক এর কথা ত বলে দিলাম সত্তি কিভাবে তালাক দিব??? আমার যে কলিজা ছিরে যাবে। তখন নিজেকে নিজে বুঝালাম কারও জীবন এ আগাছা হয়ে পড়ে থাকার চেয়ে বিদায় নেয়া খুবি ভালো। ও ওর নতুন বউ নিয়ে রং তামাশা করবে আর আমি দেখেও কিছু বলতে পারব না। ভিতর ভিতর দুঃখ পাব। এর থেকে চলে যাওয়াই ভালো হবে।

তাই পরদিন একজন উকিলের সাথে দেখা করে। আসিফের বর্তমান ঠিকানায় নোটিশ পাঠিয়ে দিয়ে দিলাম৷ এসে আবার ছেলে মেয়েদের নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।এইভাবে ১ সপ্তাহ যাওয়ার পর একদিন শ্বাশুড়ি আমার বাসায় আসে আমি উনাকে দেখে খুব অবাক হই কারন উনি এখানে আসার কথা না। এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললেন মা রে আমার আসিফকে তুই বাচা মা। আমার ভিতর ধক করে উঠে। আসিফের আবার কি হল???আমি মাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলাম মা কি হয়েছে ভালো ভাবে বলুন। আর কান্না বন্ধ করুন।তখন আমার শ্বাশুড়ি বলে ৩ দিন আগে তুমার দেয়া তালাক এর নোটিশ আমাদের বাসায় যায়। আসিফ ওইটা পাওয়ার পর থেকে খায়না ঘুমায় না। সারাদিন বিছানায় পড়ে থাকে। আজকে ত আমাকে ধরে পাগলের মত কান্না করতে করতে বলে মা অনুকে এনে দেও ওকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকব?? তখন আমি বলি এই তুইনা ২য় বিয়ে করবি বলছিলি এখন আবার অনুকে চাস কেন??

তখন আমার ছেলে বলে যখন অনু আমার থেকে দূরে যেতে থাকল তখন আমি অনুর মর্যাদা বুঝি। ওর যত্ন ভালোবাসা সব বুঝতে পারি। আর যেই মেয়ের সাথে কথা বলতাম কয়দিন কথা বলার পরই বুঝি ও আমাকে অনুর মত কক্ষন ও ভালোবাসতে পারবেনা। তাই ওর সাথে অনেক আগেই কথা বলা ওফ করে দেই। আমি ভাবছিলাম অনুকে দেশে এসে বুঝিয়ে সব বলব কিন্তু ও আমার কোন কথা না শুনে রুম থেকে বের করে দিছে। ও যে সত্যি তালাক নামা দিবে তা কখনও আমি ভাবতে পারিনি কারন আমার বিশ্বাস ছিল ও কখনও এমন করতে পারেনা।তুমি যদি ওকে না এনে দাও তাহলে আমি বিষ খাব তবুও তালাক দিব না। মা প্লিজ আমাকে অনু এনে দাও। এই বলে আমার শ্বাশুড়ি কাদতে লাগলেন।

আমি সব শুনে সান্ত হয়ে বসে আছি। আমার শ্বাশুড়ি আমার উত্তর এর আশায় মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছুক্ষন সময় নিয়ে তাকে বললাম দেখুন মা আপনি মুরুব্বি মানুষ আমি আপনাকে অসন্মান করতে চাইনা। তবুও একটা কথা বলতে হয় আপনাদের মা ছেলে দুইজন এর রুপ দেখা হয়ে গেছে। আপনারা গিরগিটির মত রং পরিবর্তন করেন। আর আপনাদের কথায় ত সব হবেনা। আমার ও নিজের কিছু স্বিদ্ধান্ত আছে। আমাকে সময় দিন আমি ভেবে আপনাকে জানাবো।আমার শ্বাশুড়ি আমার এমন উত্তর কখন্ব আশা করেনি হয়ত। কারন ১০ বছর তাদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ আর না তে না বলেছি তাই হয়ত ভাবছে এখনও তাই করব। কিন্তু এই এক ধাক্কায় আল্লাহ আমাকে সব শিখিয়েছে।

আমি কখনও ভুলব না আমার স্বামীর পরকিয়ার কথা, আমার শ্বাশুড়ির ওই অন্যায় উপদেশ। কিছুই ভুলিনি। কিছুইনা….
আমার শ্বাশুড়ি শেষ বারের মত আমার হাত ধরে বললেন মা ভুলত মানুষই করে আমি তুমার সাথে অন্যায় করেছি তা কখনও অস্বিকার করবনা। আমার ছেলেও করেছে কিন্তু এই অভাগি পাপি মায়ের কথা চিন্তা করে দেখ। আমার ছেলে তার সাজা পেয়েছে দৈনিক মানসিক অশান্তি ওকে ঘুমাতে দেয়না। ও কান্না করে।এই বলে আমার শ্বাশুড়ি চলে গেল।

আমি কি করব কিছুই বুঝ মতে পারছিনা। ছেলে মেয়েদের দিকে তাকালে কিছুই ভালো লাগেনা। আমি চাইনা ওরা একটা অসুস্থ পরিবেশে মানুষ হোক। ভালো থাকুক….। দুইদিন ভাবার পর ঠিক করলাম আমাদের কি করা উচিত….
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here