মনের কোণে🥀
#পর্ব_৩
আফনান লারা
.
ছাদে দাঁড়ানো যাচ্ছেনা বাতাসের তোড়ে।এই সময়টায় এত বাতাস বয়ে যাবার কারণ কি?মনে হয় যেন লুকোচুরি খেলা খেলছে সবাই।
রামিশ চশমায় ফু দিয়ে দূরবীন দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে প্রায় দু মিনিট ধরে।কয়েকটা মেয়ে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে ছুটে গিয়ে নাবিলের হাতে দূরবীন ধরিয়ে বললো,’দেখো দেখো রমনীদের মেলা বসেছে ঐ ছাদে’

নাবিল ওর জোরাজুরিতে দূরবীনে চোখ রাখলো।শুরুতেই এক ছটাক রমনীর দেখা মিললো।সত্যি মনে হলো মেলা বসেছে।
সবার মাথায় গামছা পাতা।খিলখিলিয়ে হাসে আর একজন আরেকজনের সাথে কৌতুক নিয়ে রসিকতা করে তা বোঝা গেলো।নাবিল দূরবীনটা নিচে নামিয়ে নেবার সময় থমকে গেলো হঠাৎ।
মিষ্টি কালারের থ্রি পিস পরা খোলা চুলের মেয়েটাকে সে এর আগেও দেখেছে।
এটা তো সেই মেয়েটা যে ওর ফোন চুরি করেছিল।তবে চোরটা এতগুলো মেয়ের মাঝে কি করে?
আবার কি চুরি করতে এসেছে?
মেয়েটা চুলগুলোকে ইচ্ছে করে বাতাসের সাথে খেলতে লাগিয়ে দিয়ে ঘুরছে বেশ।যেন এমন বাতাস সে এর আগে দেখেনি।
ঘুরতে ঘুরতে তার চোখ যখন ছাত্রাবাসের ছাদে পড়লো।দূরের দুটো ছেলে দেখে থেমে গেলো সে।বাকি মেয়েগুলো ও দেখতে পেয়ে হাসতে হাসতে পালিয়ে গেছে।কিন্তু লিখি দাঁড়িয়ে ছিল।নাবিল ও চুপচাপ দেখছে ও ঠিক কি করে।
লিখি পায়ের থেকে স্যান্ডেল নিয়ে জিভ বের করে কিসব বলে দেখালো।মনে হলো বলতেছে’জু*তা দিয়া পি*ডামু’

জুতা চোরের মুখে এই গা*লি খাটেনা।তাচ্ছিল্য করে হেসে নাবিল দূরবীন নামিয়ে উঁচু স্থান থেকে নেমে রামিশের হাতে দিয়ে বললো,’রমনীদের মাঝে রাক্ষসী একটাও আছে।জানো?’

‘রাক্ষসী ও কিন্তু একজন রমনী
পৃথিবীর সকল নারী রমনী।
সকল নারী সৌন্দর্যের অধিকারিনী।রাক্ষসী হোক বা রাজকুমারী হোক তাদের মাঝে মিল হলো তারা নারী।বুঝলে বোকা ছেলে?’

‘কবির কাছে সবই সুন্দর।তবে আমি কবি না।আমি সাধারণ জনগণ।রাক্ষসীকে রাক্ষসী দেখি,চোর ও দেখি রমনী বেশে’

‘চোর??জানো ঐ হোস্টেল কত নামকরা?ওটাতে চোর আসবে কই থেকে?’

‘খুঁজে বের করে আনলে দেখিও চোর নাকি অন্য কিছু’
—–
‘আচ্ছা বাবা কিছু জেনেছে?’

‘নাহিদকে সঙ্গে করে কতদূর নিয়েছিলি আগে সেটা বল’

‘সব বলে দিছে?আমি নিছি নাকি।ঐ তো জোঁকের মতন লেগে ছিল।বললেও কি!!আমি কোনদিকে গেছি, এটা তো বাবার জানার কথানা।’

‘তোর বাবার যোগাযোগ কতদূর জানিস না?সানফ্লাওয়ার নামে যত বাস আছে এই স্টেশনে চলাফেরা করে সব হাজির করে জিজ্ঞেস করবে দুপুরে ঐ বাস কোন জায়গায় থেমেছিল।’

‘আমি যে ছাত্রাবাসে আছি সেটা মেইন ষ্টেশন থেকে অনেকদূর’

‘ভাল আছিস?’

‘তোমায় ছাড়া ভাল নেই।আমার যে কিছু করার নেই আম্মু’

‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তোকে জানাবো।সেদিন চলে আসবি।তোর বাবা অফিসের কাজে বাহিরে গেলে একদিন আমি নাহিদকে নিয়ে তোকে দেখতে আসবো।কেমন?’

‘ওকে আনবেনা।সব বলে দিবে বাবাকে’

‘তাও ঠিক।কিন্তু তুই কি জানিস নাহিদ তোকে সব চাইতে বেশি মিস করে?দুবার কান্না করে তারপর ভাত খেয়েছে।কারণ ভাত খেতে বসলেই ও তোর সাথে দুই দফা ঝগড়া না করলে ওর খাবার হজম হয়না।আর আজ সে তোর শূন্যতা অনুভব করে একেবারে চুপসে আছে’

‘ইমোশনাল করোনা তো।’
—–
নতুন ফোন কিনে চন্দ্রাহাটের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে নাবিল।উদ্দেশ্য হলো আরও একবার ঐ চোরের দেখা পাওয়া।তারপর উত্তম মধ্যম দিয়ে ফিরবে সে।কিন্তু আফসোস দুটো চোরের দেখা মিললেও ঐ মেয়েটার দেখা মিললোনা।আফসোসের ঘানি টেনে ছাত্রাবাসে ফিরে যাচ্ছিল নাবিল, সেসময়ে দেখা হয়ে গেলো রামিশের সাথে।জুনায়েদের অপেক্ষা করছিল সে।তারা নাকি হাঁটতে বেরুবে।নাবিল ওদের সাথে যাবে বলে মত দিছে।
তিনজনে মিলে লিখিদের ভার্সিটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো সেসময়ে। বিকাল বলে ভীড় কম ছিল গেটের বাহিরে।ওখানে ভাল ঝালমুড়ি পাওয়া যায় বলে মধুর খোঁজে মৌমাছিরা হাজির।তিনজনে আসন পেতে অপেক্ষা করছে ঝালমুড়ি হাতে আসার।
এই ঝালমুড়ির স্পেশালিটি হলো সেদ্ধ বুট আর কাসুন্দি মিক্স করে দেয়।এটার স্বাদ মুখে লেগে থাকে বলে এই জায়গা দিয়ে যাবার পথে সেই স্বাদ দড়ি দিয়ে টেনে টেনে নিয়ে আসে এতদূর।
হাতে ঝালমুড়ি নিয়ে নাবিল পাশে তাকাতেই বাড়ি খেলো এক গুচ্ছ চুলের।
বাড়ি খেয়ে গালে হাত দিয়ে বিরক্তি নিয়ে তাকালো সেদিকে।জুনায়েদ মুচকি হেসে বললো,’শুনলাম যে মেয়ের চুলের বাড়ি খাওয়া হয় তার সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি হয় মনে মনে।তা ভাই তোমার হলো?’

‘হয়নি।বরং বিরক্ত হলাম’

সেই মেয়েটা উঠে ঝালমুড়ির অর্ডার দিয়ে আবারও বসে চুলটাকে আরও একবার ঝাড়া দিলো।এবারও নাবিল বাড়ি খেয়েছে।বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে গেছে পুরোপুরি। চুলে এক টান দিয়ে সে বললো,’কেটে দেবো ধরে’

মেয়েটা পেছনে তাকিয়ে বললো,’সাহস করে দেখান তো দেখি’

দুজনের চোখে চোখ পড়তে দুজনেই উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।

মেয়েটা জিভে কামড় দিয়ে এক দৌড় মেরেছে দেরি না করে।নাবিল ঝালমুড়ি ফেলে সেও দৌড় মেরেছে।যেতে যেতে বলে গেছে ওখানে আর যে একজন আছে তাকে যেন জুনায়েদ আর রামিশ ধরে রাখে।
——
‘ওগো রমনী,
তোমায় লাগে বড্ড চেনা
তুমি কি হাসনাহেনা?’

‘না।আমি শুধু হেনা।নাম জানলেন কি করে?’

‘কবিরা রুপ দেখে নাম বলে দিতে পারে’

‘ওহ আচ্ছ আপনি কবি?তবে আমাকে ধরে রেখে পুলিশি ভাব দেখাচ্ছেন কেন?’

‘আমাদের বন্ধুর অর্ডার,ও এমনি এমনি তো আপনাকে পাকড়াও করতে বলে যায়নি, এর পেছনে নিশ্চয় কারণ আছে’

‘কিসের কারণ?আমি ওনাকে চিনিনা।আপনাদের ও চিনিনা’

‘যে ছুট লাগালো সে নির্ঘাত চেনে।তা নাহলে অপরিচিত মানুষ দেখে এরকম দৌড় শোভা পায়না।চুপচাপ বসে থাকেন।নাবিল আসলে আপনার কথা বলার শক্তি তখন কাজে লাগাবেন বরং।
আমায় একটি কবিতা লিখতে দেন আপাতত ‘
—-
লিখি অনেকদূর পর্যন্ত দৌড়ে এসে হাঁপিয়ে গেছে।হাঁপাতে হাঁপাতে পেছনে তাকালো।
নাবিলকে দেখা যায়না বলে মুখে হাসি ফুটলো তার।হাঁপাতে হাঁপাতে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছে এবার।কপালের ঘাম মুছে ব্যাগে হাত দিয়ে পানির বোতলটা নেওয়া ধরতেই নাবিল ওর হাত থেকে ছোঁ মেরে ব্যাগটা নিয়ে সব উপুড় করে নিচে ঢেলে দিলো।পানির বোতল আর কিছু কাগজপত্র ছাড়া আর কিছুই পড়েনি।

লিখি ভয় পেয়ে আবারও পালানো ধরতেই নাবিল ওড়না টান দিয়ে ধরে ফেললো।

‘আমার ফোন দাও।নাহলে আজ তোমার রেহায় নেই’

‘আমার কাছে ফোন নেই’

‘যেখানে আছে সেখান থেকে নিয়ে আসবে নাহলে টানতে টানতে পুলিশ স্টেশন নিয়ে যাবো’

‘বললাম তো নেই।কি করবেন করেন।তাছাড়া কিসের প্রমাণ আছে যে আমি চুরি করেছি?’

‘প্রমাণ মহিলা পুলিশ বের করে দেবে,আমি শুধু আমার বাবার নাম নিবো’

লিখি ওড়না টানতে টানতে বললো,’ফোন বিক্রি করে দিছি।এতক্ষণো পাচার ও হয়ে গেছে।নতুন একটা কিনে নেন আপনার যদি বাপের এত নাম থাকে’

‘ফোনে আমার পরিবারের সবার ছবি আছে।সেটা মূল্যবান।এরকম শিক্ষিত হয়ে চুরি করতে মন বাঁধা দেয়না??’

‘মন ভাল কাজে বাঁধা কেন দিবে?’

‘এটা ভাল কাজ?’

‘পতিতালয় যাওয়া ভাল কাজ?’

নাবিল ওড়না ছেড়ে দিলো।লিখি নিচে বসে ব্যাগে কাগজগুলো ঢুকিয়ে পানির বোতলটা নিতে নিতে বললো,’খুশিতে কেউ চুরি করেনা,চুরি করতে হয় বলে করে।চুরি যে গরীবরাই করবে তা কে বললো?গরীবদের মানুষ দান করে পেট চালায় ওদের।
পরিবার থাকার সত্ত্বেও পরিস্থিতিতে পড়ে হওয়া নিঃস্ব মেয়ের পেট চালায় কে?ওরা হাত পাতলেও তো দেয়না।বরং!!’

‘আমাকে ইমোশনাল করতে চাওয়াটা বোকামি।এখন আমার সাথে পুলিশ স্টেশন যেতে হবে তোমায়’

লিখি উঠে দাঁড়াতেই নাবিল আবারও ওর ওড়না খিঁচিয়ে ধরে ফেলেছে।লিখি স্বাভাবিক গলায় বললো,’ইমোশনাল করতে চাইনি,আপনি আমার কিছু করার আগেই ইমোশনাল হয়ে গেছেন।চোখে পানি এসে জমে আছে আপনার।
মধুতেই যে মরে তাকে বিষ দিতে যাব কেন?’

‘এই মামা যাবেন?দাঁড়ান’

‘আমাকে পুলিশ ষ্টেশন নিবেন তাও রিকশা করে?’

‘কেন?ক্যাব বুক করবো?’

‘আমি আপনার সাথে রিকশায় উঠবোনা’

‘তবে তোমার ওড়না ধরে রাখি।রিকশা চলবে, আমি বসে থাকবো আর তুমি দৌড়াবে’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here