মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ২
তানিয়া রহমান

ইরিন আর মনির মুখোমুখি বসে আছে। ওয়েটার এসে দুমগ কফি রখলো টেবিলের উপর। মনির বলল- ইরি!কফি নাও
– কফি খাব না, এমনিতেই রাতে ঘুম হয় না
– অল্প খাও
-কেন ডেকেছো
করুন চোখে তাকিয়ে মনির বলল- আমাকে ক্ষমা করা যায় না
– আমি তোমাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি,আর তাছাড়া এত বছর পর তুমি কেন এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছ
মনির ইরিনের হাত ধরে মিনতির স্বরে বলল – চল আমরা আবার বিয়ে করে ফেলি
হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ইরিন বলল- আমার মনে হয় তোমার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, ভাল একজন সাইক্রিয়েটিস্ট দেখাও
– আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ইরি,তোমাকে ছেড়ে থাকা সত্যিই কষ্টের
– দু’বছর পর তোমার মনে হলো আমাকে ছেড়ে থাকা কষ্টের
– অনেক আগেই মনে হয়েছে কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না তোমার মুখোমুখি হবার
– শোভা কেমন আছে
-জানিনা
– ওকেও ডিভোর্স করেছো
– বিয়ে করলেতো ডিভোর্সের প্রশ্ন
– বিয়ে করনি কেন? সে নিশ্চয় তোমাকে বাবা ডাক শোনাতে পারতো
– বাবা ডাক শোনার ইচ্ছে থাকলে প্রথম দিকেই তোমাকে ছেড়ে দিতাম। বাবা হওয়া কখনো আমার কাছে মুখ্য ছিল না
ইরিন কাঁচের দেয়াল ভেদ করে বাহিরে তাকালো,সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সোডিয়াম লাইটের আলোয় ঢাকা শহর জ্বল জ্বল করছে
ইরিন বলল- আমাকে যেতে হবে
– আমার প্রোপোজাল একসেপ্ট করেছো
– মনির তোমাকে কিছু কথা বলি মনোযোগ দিয়ে শুন
– বল শুনছি
-হিল্লা বিয়ে মানে বুঝো
– ওটা ফালতু
– মোটেই ফালতু নয়
– বুঝিয়ে বল
– তুমি যখন আমাকে থার্ড নোটিশ পাঠালে তখন থেকে সারাজীবনের মতো তোমার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছি।এখন নতুন করে তোমাকে পেতে হলে আমাকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে,কোন ডিলের মাধ্যমে নয় কখনো যদি কোনদিন ঐ ব্যক্তি মিউচুয়াল ভাবে আমাকে ডিভোর্স করে কিংবা মারা যায় তবেই তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবে।যা কখনো কোনদিন সম্ভব না কারণ আমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করবো না।
মনির অসহায় দৃষ্টি নিয়ে ইরিনের দিকে তাকিয়ে রইল। ইরিন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, হ্যান্ড ব্যাগটা টেবিল থেকে নিয়ে বলল -আশি,ভালো থেকো।

মাইগ্রেনের ব্যাথায় ইরিন আজ দুদিন যাবৎ শয্যাশায়ী। রুমের সব দরজা জানালা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে শুয়ে আছে। অসুস্থ হলে ইরিনের প্রায়ই মনে হয় “ইশ!কেউ যদি থাকতো তার মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করার কেমন ফিল করছে”
ইরিন শ্বাস ছেড়ে পাশ ফিরে শুলো।সেল ফোন ভাইব্রেট করছে অনেকক্ষন। ইরিন পাশ না ফিরে বা হাত দিয়ে হাতরে হাতরে ফোন কানের কাছে নিয়ে বলল- হ্যালো
– ইরি আমি মনির
-বল
– আজ বিকেলে দেখা করতে পারবে
– না
– প্লিজ আধঘন্টার জন্য এসো খুব ভাল নিউজ আছে
– কোথায় আসতে হবে
– সেদিন যেখানে মিট করেছিলাম

এক বুক অস্থিরতা নিয়ে মনির ওয়েট করছে ইরিনের জন্য। কিছু সময় পর ইরিন এল,মনিরের মুখোমুখি বসে বলল- বল কি বলবে
মনির ইরিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইরিনকে এলোমেলো লাগছে।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল – কি হয়েছে
– মাইগ্রেনের ব্যাথা বেরেছে,তারাতাড়ি বল বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে
– আমার ফ্রেন্ড মেহবুবের কথা মনে আছে তোমার
-কোন মেহবুব
– আর্কিটেক্ট মেহবুব, বুয়েট থেকে পাশ করেছিল, ওর ওয়াইফও আর্কিটেক্ট ছিল
– না মনে পরছে না
-ও খুব ভাল ছেলে, গতবছর ওর ওয়াইফ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যায়,তারপর আর বিয়ে করেনি
– এসব বলার জন্য আমাকে ডেকেছো
– না তা না,আমি ওর সঙ্গে আমাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি ও হেল্প করতে রাজী হয়েছে
– কিভাবে হেল্প করবে
-তুমিতো আবার সেকেন্ড বিয়ে ছাড়া আমার কাছে আসবে না তাই ও তোমাকে বিয়ে করবে তারপর ডিভোর্স
মনির কথা শেষ করতে পারলো না ইরিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মনির ঢোক গিলে আবার বলল – এছাড়া কোন উপায় নেই ইরি
– তুমি বোধহয় খেয়াল করনি আমি সেদিন কি বলেছিলাম
– এত কিছু বুঝিনা আমি চাই আবার আমরা এক হয়ে যাব
হঠাৎ ইরির মাথায় খেলে গেল এইতো সময় রিভেঞ্জ নেয়ার।
– ওকে! তোমার বন্ধুর ফোন নাম্বার দাও
– ফোন নাম্বার দিয়ে কি করবে
– যাকে বিয়ে করবো তার সঙ্গে কথা বলবো না?
– ওটা বিয়ে নয়
– যাই হোক
– কাল তোমাকে মেহবুবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব
-ঠিক আছে
চলবে
কপি করা যাবে না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here