মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ১৫
তানিয়া রহমান

অপু অবাক বিস্ময়ে ইরিনের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুসময়, ইরিনের দুগালে কালশিটে দাগ পরেছে, চোখ মুখোও লাল হয়ে গিয়েছে, ঘড়ে ঢুকে অপু বলল- কি হয়েছে আন্টি
– কিছু না, আমি রুমে যাচ্ছি
অপু দেখতে পেল সোফায় মনির বসে আছে, বুঝতে পারলো এই লোকটাই কোন অসভ্যতা করেছে ইরিনের সঙ্গে। ঝাঝালো গলায় বলল – আপনি! বাবাতো এই সময় বাসায় থাকে না
– আমি জানতাম না,মেহবুব এলে বলো আমি এসেছিলাম

কাজ নেই নেই বলেও লাঞ্চের পর ঝামেলা বেড়ে গেল। সবকিছু গুছিয়ে মেহবুব বাসায় ফিরলো সন্ধ্যার পর।রুমে ঢুকে দেখলো ইরিন অসময়ে শুয়ে আছে, ফ্রেশ হয়ে এসে ইরিনের পাশে শুয়ে কপালে হাত রাখলো, ইরিনের গায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকায় নিশ্চন্ত হয়ে গায়ে চাদর টেনে দিল ইরিনের তারপর অপুর রুমে চলে এল মেহবুব।
– কি করছো
অপু শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিল বাবাকে দেখে উঠে বসে বলল- এস,বই পড়ছিলাম
মেহবুব মেয়ের মাথায় হাত রাখলো, আদর করে বলল – পড়াশোনার কি অবস্থা
– ভাল,একটা কথা বলার ছিল তোমাকে
– বলো
– তোমার বন্ধু মনির আজ এসেছিল
– কখন
– সেটা বলতে পারছি না, ইতস্তত করে বলল ” ওনি মনে হয় আন্টির সঙ্গে বাজে বিহেভ করেছে ”
মেহবুব ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল- মানে কি
– আন্টিকে দেখে সেরকমই মনে হয়েছে আমার
– তোমারা কোথায় ছিলে
– আমিতো ভার্সিটিতে ছিলাম আর আম্বিয়া আপা কি সব কিনতে গিয়েছিল
মেহবুবের ইচ্ছে করছে চরিয়ে মনিরের সবগুলো দাঁত ফেলে দিতে।
অপু অনুরোধের সুরে বলল- ঐ লোককে বাসায় আসতে মানা করে দিও

মেহবুব ইরিনের রুমে ফিরে এল,আলো জ্বেলে ইরিনের পাশে বসলো, ক্রোধ সংবরণ করে বলল – মনির কখন এসেছিল
ইরিন চুপ করে রইল
– আমি জানি তুমি জেগে আছ, কথার জবাব দাও
দেয়ালের দিকে মুখ ফিরেই ইরিন বলল- তিনটের দিকে
– বলেছিলাম তোমাকে আমি না থাকলে মনিরকে দরজা খুলবে না
ইরিন এবারো চুপ করে রইল
ইরিনকে নিজের দিকে ফেরালো মেহবুব, দুগালে কালশিটে দাগ পরে নখও বসে গিয়েছে, ইরিনের জলভরা চোখে চোখ রেখে বলল- আমি জানতাম এরকম কিছু হবে সেজন্যই বারবার বলেছি কথা বলে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে
ইরিন চোখ বন্ধ করে নিল, দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে, মেহবুব চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে জরিয়ে ধরে বলল- কেঁদো না,প্লিজ! আমার কষ্ট হয়
ইরিন এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো, কান্না থামার বদলে দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়ে গেল। ইরিনকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে মেহবুব চুলে নাক ডুবিয়ে বলল- বৃষ্টিতে ভিজবে
না সূচক মাথা নাড়ালো ইরিন
– ব্যালকনিতে বসে কফি খাবে
ইরিন এবারো না করলো
– এরকম রোমান্টিক ওয়েদারে আমার যে খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে কি করি বলতো
ইরিন নাকের পানি চোখের পানি মেহবুবের টিশার্টে মুছে নিল
মেহবুব ইরিনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হেসে বলল – আমি বোধহয় টিস্যু পেপার হয়ে গিয়েছি
মনিরের কথার জবাব না দিয়ে ইরিন বলল-
– আমি জানতাম না দরজার ওপাশে মনির ছিল
– ইটস ওকে
– আমার উপর রাগ করেছেন
– তোমার উপর নয় রাগ করেছি মনিরের উপর, কিভাবে পারলো তোমার গায়ে হাত তুলতে, ইচ্ছে করছে ওর হাত দুটো গুড়িয়ে দিই।আমিতো ভাবতেই পারছি না, আমার কাছে নারী মানে শ্রদ্ধা, স্নেহ আর ভালবাসার জায়গা।
– আমাকে ঘেন্না করছেন
– কেন? পাগল নাকি!
ইরিন মেহবুবের বুকের কাছের টিশার্টে আবার নাক মুছলো
– গান শুনবে ইরা
– হুম
– পে করতে হবে
– কি পে করব
– ভালবাসা, গাঢ় স্বরে বলল মেহবুব
– আমি নিঃস্ব,এত মূল্য দিয়ে গান শুনার সৌভাগ্য আমার নেই
– বেশতো দাম কমিয়ে দিচ্ছি, আমাকে ভালবাসতে দিতে হবে
– বাকীতে শুনা যাবে
– আপাতত দিচ্ছি কিন্তু খুব বেশিদিন পারব বলে মনে হচ্ছে না।
মেহবুব ইরিনকে আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে গাইতে শুরু করলো —
আজ সারাটাদিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি ——

লাঞ্চের পর মেহবুব ইরিনকে অফিস থেকে কল করে বলল – আসতে দেরি হবে
– কেন
– বন্ধুরা মিলে গেট টুগেদার হচ্ছে ওখানে যাব
ইরিন কাঁপা গলায় বলল – মনির থাকবে
– না,ওরা আমার বুয়েটের ফ্রেন্ড
ইরিন স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলল – কত রাত হবে
– বারটা
– এত রাত
– একদিনইতো, প্লিজ!
– আমি একা বাসায়
– একা কোথায় অপু আছেতো
– তবে আর কি সারারাত কাটিয়ে আসুন
– রাগ করোনা প্লিজ!
ইরিন ফোন কেটে দিল।

সকাল থেকে ইরিনের পিছন পিছন ঘুর ঘুর করছে মেহবুব, বারবার বোঝাতে চেষ্টা করছে সে স্যরি,কিন্তু ইরিন দক্ষতার সঙ্গে এভয়েড করছে মেহবুবকে।
অফ ডে হওয়ায় বাসায় বসে কাজ করছিল মেহবুব। ইরিন এক গ্লাস জুস নিয়ে স্টাডি রুমে এল, জুসের গ্লাস টেবিলের উপর রেখে দরজার দিকে এগিয়ে গেলে মেহবুব দ্রুত উঠে এসে দরজা লক করে ইরিনকে কোলে নিয়ে ডিভানের উপর শুইয়ে দিল,দুহাত দুই পাশে ভর দিয়ে ইরিনের মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল – সকাল থেকে স্যরি বলছি পাত্তা দিচ্ছ না কেন
ইরিন মুখ ঘুরিয়ে বলল- কাল ড্রিংক করেছিলেন
– বন্ধুদের আড্ডায় এরকম একটু আধটু হতেই পারে
– ড্রাংক ছিলেন
– ধুর,দু পেগে নেশা হয় নাকি
– আমি ওসব পছন্দ করি না
– আর হবে না, প্রমিজ!
– ছাড়ুন, রান্না চাপিয়েছি
– ওটা সামলানোর জন্য আম্বিয়া খালা আছে আপাতত তুমি আমাকে সামলাও
– নেশা দেখছি এখনো কাটেনি
– এমন সুন্দরী বৌ থাকলে নেশাতো হবেই,কানের কাছে ফিসফিস করে আবার বলল ” সাঁতার কাটা মানে বুঝো ”
ইরিন লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল
মেহবুব আরও কাছে এসে বলল- আমি সাঁতার কেটে ডুবে মরতে চাই ইরিন নামের নদীতে ইরিনের গালে গাল ঘসতে লাগলো মেহবুব
ইরিন আস্তে করে বলল – অপু দেখছে
মেহবুব অপ্রস্তত হয়ে পিছনে তাকালো,ছাড়া পেয়ে ইরিন দরজার দিকে যেতে যেতে ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বলল – আপাতত মরার কথা ভুলে কাজে মন দিন।
চলবে
কপি করা যাবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here