#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-১৮
“নীরাদের সাথে খুব সুখে আছো জান।সুখ কি বেশিদিন সইবে?
চোখ কান খোলা রেখো জান,তোমার নীরাদকে আবার আমি নিয়ে না যাই।তুমিতো আমার খুব প্রিয়,তাই তোমার প্রিয় মানুষগুলাও আমার খুব প্রিয় “জান”।”
ব্যাস এতটুকুই লেখা মেসেজটায়।মেসেজেটা অপরিচিত নাম্বার থেকে এসেছে।তবে এটা যে ফারহান পাঠিয়েছে সেটা বুঝতে একদমই কষ্ট হয়নি নীরাদের।
মেসেজটা দেখে যতটানা রাগ হচ্ছে নীরাদের তার থেকে বেশি রাগ হচ্ছে ফারহানের রোদ্রিকে “জান”
বলে সম্বোধন করায়।রাগে মাথায় রক্ত উঠে গেছে নীরাদের।চোখগুলো লাল হয়ে গেছে।সহজে রাগে না সে।
তবে যে তার রাগী রূপ দেখেছে সে আর দিতীয়বার রাগানোর সাহস করবেনা।
রোদ্রির অবস্থা কাঁদো কাঁদো।চোখ ছলছল করছে তার।অল্পতেই ভয় পেয়ে যায় সে।ফারহানের ব্যাপারে সে এমনেই ভীতু,তার উপর সে থ্রেট দিয়েছে তার ভালবাসার মানুষকে নিয়ে।
নীরাদ ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারে।রাগ কমানোর চেষ্টায় অব্যাহত সে।অন্তত রোদ্রির সামনে তার রাগী রুপটা প্রকাশ হতে দিতে চায় না নীরাদ।সে চায়না তার রোদ্রি তাকে ভয় পাক।
গেনজির হাতায় টান পরতেই রোদ্রির দিকে তাকায় সে।একহাত দিয়ে তার হাতের বাহু খামছে ধরেছে রোদ্রি।
রোদ্রির চোখের দিকে তাকিয়ে থমকায় সে।রোদ্রির চোখে জল।কাঁদছে রোদ্রি।নীরাদ দ্রুত ঝুকে যায়।এক হাঁটু বিছানায় ভর দিয়ে একহাত রোদ্রির চুলের ভাজে দিয়ে রোদ্রির মাথাটা তার বুকে চেপে ধরে।আরেক হাতে দিয়ে পিঠে হাতবুলিয়ে দেয়। স্নেহের কন্ঠে ধীরে ধীরে বলে,
-রোদ্রি,কাঁদেনা।কান্না থামাও।
কান্নার মাঝেই থেমে থেমে রোদ্রি বলে,
-আপ..আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি..আমি..
-আরে আমার কি হবে পাগলি?ও কিছুই করতে পারবেনা আমার।তুমি শুধু শুধু কাঁদছো।ও শুধুই আমাদের ভয় দেখাতে চাইছে।তোমার নীরাদ কি এতটাই ভীতু বলো?
কিছুটা শান্ত হয় রোদ্রি।নীরাদ মাথা কিছুটা নামিয়ে রোদ্রির মাথা কপালের দিকে চুমু দেয়।এবার কান্না থেমে যায় রোদ্রির।নীরাদকে শক্তহাতে জড়িয়ে ধরে।নীরাদও কিছু বলেনা।কিছুক্ষণ পর রোদ্রি কাঁপা গলায় বলে,
-উনি যদি..
-হুসস,ওকে নিয়ে আর কোনো কথা নয়।ওকে?
-হুম।
রোদ্রিকে আলতো করে ছাড়িয়ে নেয় নীরাদ।সামনে বসে একহাত গালে রাখে আর একহাত দিয়ে মুখের চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিয়ে চোখ মুছে দেয়।
-কখনো কাঁদবেনা।তোমার কান্না যে আমার সহ্য হয়না।
রোদ্রির প্রতিউওর না পেয়ে আবার বলে,
-এখন ঘুমাবে।সারাদিনে একটু রেস্ট করতে পারোনি।বলে উঠে যায় নীরাদ।যেয়ে লাইট বন্ধ করে দেয়।
একপাশে শুয়ে রোদ্রিকে কাছে টেনে নেয়।নীরাদের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায় রোদ্রি।এই মুহুর্তে এই জায়গাটায় তার সবচেয়ে নিরাপদ মনে হচ্ছে।যেখানে নিশ্চিন্তে ভরসা করা যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে নীরাদের বাহুডোরে আবদ্ধ অবস্থায় পায় রোদ্রি।লাল আভা চলে আসে তার গালে।নীরাদের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন।ঠোঁটের কোঁণে হাসি ফুটিয়ে আলতো করে কোমড় থেকে নীরাদের হাতটা সরাতে চায় সে।তবে ব্যর্থ হয়।হাতটা একটু নাড়াতেই নড়েচড়ে উঠে নীরাদ।
ঘুমঘুম কন্ঠে বলে,
-কি হয়েছে?
-আ..আমি উঠবো।ছাড়ুন।
নীরাদ ছাড়েনা।বরং আরো শক্ত করে ধরে ঘুমায়।রোদ্রিও আর কি করবে?লোকটার ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করছেনা।তাই অগত্যা সেও শুয়ে থাকে।
দশটা বাজলেই এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় নীরাদের।হাত বাড়িয়ে সেটা বন্ধ করে নীরাদ।রোদ্রির দিকে তাকিয়ে দেখে সে আগে থেকেই জেগে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
নীরাদ হেসে দেয়।সদ্য ঘুম থেকে উঠা মুখে সে হাসি অদ্ভুত সুন্দর লাগে।
_________
সারাদিন বেশ ভালোই কেটেছে রোদ্রির।মায়ের সাথে গল্পে মেতে ছিলো সে এতক্ষন।বিকেলের দিকে নীরাদ বেরিয়েছে অফিসের কাজে।অনেক গুরুত্বপূর্ণ মিটিং তাই জরুরীভাবে যেতে হয়েছে তাকে।আজ যেতে পারেনি তাই বলেছে কাল ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যাবে।রোদ্রিও আপত্তি করেনি।
টেবিলে খাবার সাজিয়ে নীরাদের জন্য অপেক্ষা করে সে।মনিরাও খায়নি,বলেছে নীরাদ আসলে তাকে ডেকে দিতে।
দশটা বেজে গেলেও নীরাদ ফেরে না।রুমে যেয়ে নীরাদের নাম্বারে ফোন করে সে।কালকে রাতের অজানা সংশয়টা আবারও মাথায় জেঁকে বসে যখনি ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসে,
“দিস্ নাম্বার ইজ্ কারেন্টলি নট রিজেবল,প্লিজ ট্রাই এগেইন লেটার”
চলবে…