#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৯

বিহানের ছয়মাস চলতেছে।টবটব করে বসে থাকতে থাকতে পারে।আর বসে বসে ওর যত যা আছে খেলনার জিনিসপত্র আছে সবগুলা মুঁচিয়ে মুঁচিয়ে ভাঙ্গে।ডেইলি বিশ-পঁচিশটাও ভেঙ্গে উচ্ছেদ করে ফেলে।কিন্তু ওর দয়ালু বাবা ছেলে বিশটা াাশেষ করলে পরেরদিন হাতে করে আবার চল্লিশটা নিয়ে হাজির।এই ব্যাপারগুলোয় মাঝে মাঝে রিহানের উপর নিতুর রাগ চলে আসে।কেনো খামোখা টাকা নষ্ট করে?নাহ, রিহানের কথা ,”আমার ছেলে যে ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে মুটমুট করে সব ভেঙ্গে ফেলে আমার তা দেখতেই ভালো লাগে!”

বলেই ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে নিতুর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসেে।নিতু অবলা।বাপ-ছেলের ভাবভঙ্গির দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে।পরে আর কিছু বলতে পারে না।বিহান আসার পর থেকে নিতুর মা-বাবার প্রতি কষ্টটা আরো বেড়ে যায়।তার, রিহানের বিহানের প্রতি যেই পৃথিবীর সর্বগ্রাসী ভালোবাসার টানটা অনুভব হয় নিতুর মা-বাবারওতো তাই হচ্ছে।রাগে-অভিমানে কথা বলছে না তবে ঠিকই ভীষণ চাপা কষ্ট নিয়ে আছে।এসব কিছুইতেগার্লফ্রেন্ড নিতুর তার নিজের কারণে হয়েছে।যা সে নিতু নিজেকে নিজে এখনো ক্ষমা করতে পারছে না। কবে ক্ষমা পাবে?কবে মুক্তি পাবে?ছন্নছড়া বন্দিময় জীবনটা আর ভালো লাগছে না।

——————————————————
রাতে রিহান অফিস থেকে বাসায় ফিরামাত্রই নিতু বলে উঠে,
“চাকরির প্রিপারেশনটা আর দেরী করতে চাচ্ছি না।ভাবছি এখন থেকেই শুরু করবো।

রিহান হ্যান্ড ব্যাগটা টি-টেবিলের উপর রাখলো।বাম হাতে চশমাটা খুলে নিতুর দিকে ফিরলো এবার।শান্ত দৃষ্টিতে বলে,

“বিহান আরেকটু বড় হোক?”
“সমস্যা নেই।প্রিপারেশন তো আমি বাসায় থেকে নিব।কোথাও কোচিং এ ভর্তি হচ্ছি নাতো।বিহান ঘুমালো তখন নাহয় পড়বো।আবার রাতেও অনেকসময়!”
“যেভাবে তোমার ভালো লাগে মনে হয়।তবে আমার যেটূুকু মনে হচ্ছে প্রিপারেশন এবং বিহানের দেখাশুনা দুটা একসাথে চালিয়ে নিতে কষ্টকর হয়ে যাবে!”

নিতু এবার খুব চেঁচিয়ে ওঠে।রাগী গলায় রিহানকে বলে উঠে,
“দেরী করে প্রিপারেশন নিলে তখন পড়াতে আর মন বসবে না।প্রয়োজনে সারারাত জেগে জেগে পড়াশুনা করবো।আর আপনি সারারাত জেগে জেগে বিহানকে দেখবেন।নাকি এখন এটাও বলবেন রাতে আপনার অফিস আছে?”

রিহান নিতুর কথায় হেসে ফেলে।হাসি থামিয়ে বলে,
“যাও আমি মনে কিছু বলবো না।তোমার যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে করো।”
বলেই কাবাব থেকে গেন্জি,ট্রাউজার এবং তাওয়াল বের করে বাথরুমে ঢুকে যায় যায়।নিতু নিজের জায়গা কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে।তারপর ঘুমন্ত বিহানের মুখের দিকে তাঁকায়!টকটকে লাল ঠোঁট এবং ঘন চোখের পাঁপড়িগুলো জানলা দিয়ে বাইরে থেকে আসা হাওয়ায় বারবার নড়ে উঠে।এত সুন্দরস্নিগ্ধ মায়াময় মুখের নিষ্পাপ শিশুটি সত্যিই যদি ভালোবাসার কমতি পেয়ে যায়?বা দুর্ঘনা ঘটে যায় মায়ের অবলোকনের অভাবে?তখন?ভেতরটা টলমল করে উঠে নিতুর।সমর্থন করে নেয় রিহানের দেওয়া মতামতকে।বিহান যখন হাঁটতে শিখবে তখন চাকরির প্রিপারেশন নেবে।

————————————————-
অনেকগুলো দিন!দিনের পর কয়েকটা মাস কেঁটে যায়।বসন্তের রং-তামাশায় উত্যক্ত হয় নগরী।সারি সারি বটবৃক্ষ,ঝিঁউড়িবৃক্ষ,কড়াই বৃক্ষ থেকে কোকিলের মধুর কন্ঠস্বর ভেসে আসে।কৃষ্ণচূড়ারা লালে টকটকা হয়ে নগরকে সাজিয়ে তোলে।মৃদু শীতল হাওয়া বয়ে যায় চারপাশে।নিতু কাঁচের জানলার পাশে দাঁড়িয়ে বিহানকে সূজি খাইয়ে দিচ্ছে আর বাসন্তীর গান গাচ্ছে-
বসন্ত তুমি মোরে দিলে অনেককিছু,কেড়ে নিয়েছো তার থেকে বেশি কিছু।আমি ভুলবো না।নাহ নাহ ভুলবো না।”

মাকে গাত গাইতে দেখে ছোট্ট দুষ্ট বিহান খিলখিল করে হাসে।নিতু বিহানের হাসিতে খুশি হয়ে হয় আরো হাবিজাবি মুখে যা আসে বাসন্তীকে নিয়ে তাই গাইতে থাকে।বিহানও আনন্দের সাথে সাথে সব সূজি শেষ করে।নিতু লম্বা একটা দম ফালায়!যাক খাওয়াটা শেষ করলো।ছেলেটা একটা বদ।খেতে চায় না সহজে।নিতু একটা ভেঁজা তোয়ালে দিয়ে বিহানের মুখ মুছে দিয়ে বলে,

“এখানে বসে থাকো,আব্বুটা।মাম্মি প্লেটটা কিচেনে রেখেই আসতেছি।”

নিতু প্লেট হাতে দরজা বরাবর এগোয়।ঠিক পায়ের গতি শ্লথ হয়ে যায় টিংটিং ফোনের আওয়াজে।নিতুর দরজার সাথে লম্বা একটা টি-টেবিল।টে-টেবিলর উপরই ফোন রাখা ছিল নিতুর।তাই কল রিসিভ করতে সময় বেগ পেতে হলো না।

“হ্যালো,হ্যাঁ বল তোহা!”
“নিতু সংবাদ পেয়েছিস?”
“কি সংবাদ?”

তোহা একদন্ড চুপ হয়ে,
“চাচার তো শরীরটা ভালো না।করিমকে কল করে ইব্রাহিম ভাই বললো।শহরে নাকি চাচাকে আনতে হবে।বুকে প্রচন্ড ব্যথা নাকি শুনলাম!”
“কার কথা বলতেছিস?বাবার?”

নিতু আবারো একদন্ড চুপ থেকে তারপর ওপাশ থেকে জবাব দেয়,
“হ্যাঁ।”
“কোন হাসপাতালে আনবে?কারকাছে আনবে?কোথায় আনবে?”
“তা জানি না।ইব্রাহিম ভাই তো কিছু বললো না।আচ্ছা আমি করিমকে দিয়ে আবার ইব্রাহিম ভাইয়ের কাছে কল দিতেছি।”
“নাহ!কল দেওয়া লাগবে না।উনার নাম্বারটা আমাকে এসএমএস করে পাঠিয়ে দে তাড়াতাড়ি!”
“দিচ্ছি..।”

তোহা কলটা কাটতেই নিতু খুব চিৎকার করে কেঁদে উঠে।চোখ বেয়ে নেমে আসে পানিার স্রোত।বুকের সাথে ফোনটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠে,

“বাবা?কি হয়েছে তোমার?কি হয়েছে!?”

চলবে….
(দুঃখিত।শেষ করতে যেয়েও হলো না শেষ!দেখি কাহিনীা কোনদিকে যায়।তবে আর বড় হবে না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here