#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২১

“কান্না থামাও নিতু,প্লিজ!কিছুই হবে না।আমি আছি না সাথে?”

নিতুর কান্নার গতি শ্লথ হয়ে এলো কিছুটা।রিহান বললো,

“ছোট্ট বাচ্চাদের মতন কান্না করলে হবে?যা ঘটেছে,অথবা ঘটবে সব তো কাঁটিয়ে যেতে হবে তাই না?”

নিতু চুপ করে রইলো।রিহান aআবার বললো,
“সো সব আমার উপর ছেড়ে দাও।”

বলে রিহান খানিকটা থেমে,
“খাওয়াদাওয়া করেছো?”
“হু।”
“আচ্ছা।বাসার সবাই কেমন আছে?”
“জ্বী,ভালো।”

কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতা। পরে আবার,
“নিতু?”
“হু…!
“কি করো?”

নিতু নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।এতক্ষণে মনখারাপে থাকলেও রিহানের এই কথাগুলোর উত্তর দিতে এখন খুব অসংযত লাাগছে।সাথে অস্থিরতাটাও বাড়ছে খুব!রিহান আবার,

“নিতু?”

নিতু চমকানোর মতন নড়ে উঠলো।বলে উঠলো,
“আচ্ছা পরে কথা বলবো,হ্যাঁ?”

রিহান হেসে উঠলো।সে নিতুর মনবস্থা বুঝে ফেললো।লজ্জায়,আর অস্বস্তিতে আছে মেয়েটা। আর এটা স্বাভাবিক। রিহান বললো,

“ইট’স ওকে।ইট’স ওকে।”

নিতু কল কেঁটে দিলো।তারপর বুকে হাত রাখলো।মানে কথা না বলে বেঁচে গেলো।

———————————–
ওপাশের মানুষটি,মানে রিহান মনে মনে হেসে দিলো।হাসিজ্জ্বল মুখটা মুহূর্তে আবার মলীনতায় ছুঁয়ে। রুমের চরপাশে একনজর চোখ বুলালো।চোখের সামনে ভেসে উঠলো ফুলে ফুলে ভরা সদ্য বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর কথারা প্রতিচ্ছবি।এই রাতটা তো তারও ছিল।কিন্তু তার সারা রুম অন্ধকার ঢাকা।মনের ভেতরে প্রিয় মানুষটি থাকলে সে তার ধরাছোঁয়ার বাইরে।কাছে নেই।খুব দূরে।

———————————-
ভোর হতেই নিতুর মা নিতুকে ডাকতে থাকেন।নিতুর তখনো ঘুমের ঘোর ভাঙ্গে নি।ভাঙ্গবেই বা কীভাবে, অবসাদ শরীরের কষ্টে মাখা মনটা নিয়ে রাতের শেষের দিকে ঘুমিয়েছে।১১টা থেকে ঘুমতে চেয়েছিলো,কিন্তু চেষ্টা সফল হয়নি মেয়েটির।কেনজানি ঘুম আসতে চায়নি।

“এই?নিতু!শুনতে পারছিস!”

নিতু ভারী চোখের পাতা ছোট্ট করে মেললো।
“ঘুম থেকে উঠ।আবরাহাম আসছে।”

নিতুর ছোট্ট চোখের সাথে কপাল,গাল কিঞ্চিৎ কুঁচকে আসলো।নিতুর মা একথা বলেই চলেই গেলো।”

নিতুর শোয়া থেকে উঠে বসতে মিনিট দুয়েকের মতন সময় লাগলো।বসতেই দরজায় টোকা!

“আসতে পারি?”

তাকিয়ে দেখলো আবরাহাম।নিতু ঠিক হয়ে বসলো।তবে আবরাহামকে কিছু বললো না।আবরাহাম নিতুরও অনুমতি নেওয়ার অপেক্ষা না করে ভেতরে এলো।বললো,

“বেশ ভালো ঘুমাতে পারো।”

বলে হাসলো।নিতু তাকালো না আবরাহামের দিকে।আাবরাহাম হাসি থামিয়ে বললো,

“তোমার সাথে পার্সোনালি কিছু কথা বলতে এসেছি।যদি অনুমতি দাও তাহলে বলতে পারি।”

“বলুন।”

আবরাহাম শান্ত চোখে ওদিক তাকালো।মানে বসার জায়গা খুঁজলো।একটা চেয়ার পেলো।ওখানটায় এগিয়ে গিয়ে বসলো।বসতে বসতে বললো,

“আসলে দাঁড়িয়ে কথা বলতে আরামদায়ক লাগছে না তো তাই আর কি…!”
“সমস্যা নেই বসুন।”

আবরাহাম হাসলো।চোখের চশমা টা চোখ থেকে নামিয়ে হাতে নিল।এবার নিতুর দিকে স্বাভাবিক চোখে তাকালো,

“একটা সত্য কথা বলবে?আমাকে তোমার কি পছন্দ হয়েছে?”

নিতু সামনে তাকালো।আবরাহাম বললো,
“জানার খুব ইচ্ছে ছিল।দয়া করে উত্তরটা দিবে।”

নিতু চুপ করে রইলো।আবরাহাম চুপ করে আবার অন্য কথা টানার চেষ্টা করতে,নিতু এবার বলে উঠলো,

“আপনাকে আমার পছন্দ নয়।আমাকে আপনা পছন্দ কি না।আমাকে নিয়ে যা শুনতেছেন সবার মুখে। প্রশ্নটা তো আমার ছিল,তাই না?”
“আমি লোকের কথা কম বিশ্বাস করি।”
“তাহলে আমি আপনাকে কতটা সত্যটা বলবো তার নিশ্চয়তা?”
“আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।তোমাকে সেই ছোট্রবেলা থেকে দেখে এসেছি।তুমি আমার ছোট্ট বেলায় খেলার সাথী ছিলে।একসময় তোমার সাথে খেলা করতাম,ঘুরতাম। ”

“আমার কিছুই মনে না। ”
“মনে থাকবে না।স্বাভাবিক।তুমি আমার ছোট ছিলে।”

বলে খানিকটা থেমে,
“নিতু?আমি জানি তুমি ওরকম কিছুই করো নি।”

“আর যদি করে থাকি?”কথাটা মনেই চেপে থাকলো নিতুর।আবরাহামকে এই কথাটা কেনজানি বলতে খুব ইচ্ছে করছে।সাহস পাচ্ছে না নিতু।নিতুর ভাবনার মাঝে আবরাহাম বললো,

” আমি গ্রামের সবার সামনে,আমার আত্মীয়-স্বজনকে সামনে আজ সন্ধের মধ্যেই পাঁচ কালাম পড়ে তোমাকে বিয়ে করে সবার কুৎসিত কথাগুলোর মুখ বন্ধ করতে চাই নিতু!আমি জানি তুমি ভালো নেই।সবার মুখে এসব শুনার পর।তোমাকে কারো কথা কানে নিতে হবে না।প্রমিজ করছি এই আবরাহাম হাসিখুশিতে রাখার চেষ্টা করবে তার সর্বস্ব দিয়ে হলেও।এটুকুই বলার ছিল আমাকে তোমার।তোমার কোনো কিছু বলার আছে?বলতে পারো নিতু।”

নিতুর ঠোঁট কাপছে। সাথে উপরের পাটীর দাঁতের সাথে নিচের পাটীর দাঁত সাথে শক্ত করে খিঁচে রাাখছে।বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, অনেক কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। পারছে না!পারছে না!

আবরাহাম নিতুর নিশ্চুপতা দেখে মনে মনে ভারী খুশি হলো।নিশ্চুপতা সম্মতির লক্ষণ!ভেবে নিল নিতু রাজি।উঠে দাঁড়ালো সে।বললো,

“দেখা হচ্ছে আমাদের শীঘ্রই। আসি নিতু!”

আবরাহাম বেরুতে নিতু কেঁদে দিলো এবার!মুখে ওড়না চেপে কেঁদে দিলো।আর ফোনটা হাতে নিল।কান্নামুখরে রিহানকে কল।রিহান কল রিসিভ করলো সাথে সাথে।নিতু বললো,

“আপনি ঢাকায়!আর আজ সন্ধের আগেই আবরাহাম আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে!এখন কি হবে?”

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here