#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব-১৯
বিকেলের দিকে নিতুর ঘুম ভাঙ্গে।ভারী চোখমুখে বিস্তর ভাবনা।ঘুমা ঘোরেও টপ করে শোয়া থেকে উঠে বসে।কিছুক্ষণ সময় লাগে নিজেকে স্বাভাবিকে আনতে।টেবিলের দিকে চোখ পড়ে।সেখানে পড়ে আছে রিহানের দেওয়া ডায়েরীটা।ডায়েরীটা দেওয়ার আগে রিহানের কথাগুলো ভাবে নিতু।কি বলেছিলো যেনো?মনে পড়তে খাট থেকে নেমে ডায়েরীটা হাতে নেয়।ঘরের জানালাগুলো খুলে দেয় আলো আসতে।ভরা আলোয় পড়তে বসে যায় ডায়েরীটা নিতু।কভার পেইজটা উল্টায়।তারপরের পেইজে লিখা,
“ভালোবাটা কি” তাতো জানো তাই না?তবে তোমাকে আমি আজ অদ্ভুত ভালোবাসার গল্প শুনাবো।পরের পৃষ্ঠাগুলোতে যাও?”
নিতু পরের পেইজ উল্টালো।সেখানে লিখা,
“তবে কি জানো?তোমার এই অদ্ভুতভাবে প্রপোজাল করার নিয়মটা আমার বড্ড ভালো লেগেছিল।ঠিক আগেরকার দিনের মতন এই যে চিঠিতে প্রেম পত্রে নিবেদন করলে তোমার মনের সকল শব্দভান্ডার দিয়ে?আমি রাগ হয়েছিলাম না?তোমাকে অনেক কথাও বলে ফেলেছি।তুমি এর কারণে কষ্ট পেয়েছো খুব।বিষয়টা স্বাভাবিক ছিল হয়তো,কিন্তু যেইদিন সেই মেয়ে তুমি আমাদের বিদায়ী উপলক্ষে অভ্যর্থনা দিলে।গাঁয়ে লাল শাড়ী,চুলে সাদা গাজরা,কপালে ছিল লাল টিপ সেইদিনের সেই নজরকাড়া মুখে ফুঁটফুঁটে স্পষ্ট বক্তব্যে আমার মনের অতলে অতলে প্রেমানুভূতি দখল করেছিল।বিষাক্ত অনুভূতির সেইমুহূর্তে ভালো লেগে যায়।মনের কোণে খুব ক্ষু্দ্র ভালোবাসা জমা হয়।হয়তো কেউ তা বুঝতে পারে নি।তুমিতো মোটেও না।তোমার প্রতি ভালোবাসার টানটা সিমির পাগলা প্রেমের হাওয়াটাও আমার মনকোণে প্রবেশ করতে পারে নি।আর দ্বিতীয়বার যেইদিন তুমি আমাদের বাসায় এসেছিলে স্নেহার জন্মদিনে।সেদিনও তোমার প্রতি ভালোবাসাটা–এতটা বছর পর দেখা,সেই চাপা ভালোবাসাটা আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে।াতবে আরেকটা দিক আমি দেখেছি,আমি তোমাকে এতকিছুর পরও তুমি আমাকে ভুলো নি।আর তা সবটা জানতে পেরেছি প্রিয়ার মাধ্যমে।প্রিয়া ছিল আমার প্রধান বার্তাবাহক যে তোমার সব আমাকে জানাতো।ভেবে রেখেছি আমার ভালোবাসাটা সারপ্রাইজ রেখেছি তোমার জন্যে।আজ তুমি আমার স্ত্রী!আর আমাকে ক্ষমা করো আগের সেইদিন গুলোর মিসবিহেভের জন্যে।ভালোবাসা নিও।
তারপর ডায়েরীটার সবগুলো পেইজ উল্টায় একে একে।প্রতিটি পৃষ্ঠাতে একটা না একটা কথা লিখা তাকে নিয়ে।ডায়েরীটার পৃষ্ঠা শেষ হয়ে গেলে নিতু চুপচাপ বসে থাকে কিছুক্ষণ। চারদিকে মাগরিবের আযান পড়ে।সবাই মসজিদের দিকে ছুটে।
——————-
সন্ধে পরে মাওলানা আসে।নিতুদের রোয়াকে এসে লম্বা করে একটা হাঁক তোলে,
“কই লুৎফর?আছো বাড়ি?”
লুৎফর কোনোরকমে খালি গাঁয়ে গামছা প্যাঁচিয়ে ঘর থেকে বের হয়।সালাম করে মাওলানাকে।মাওলানা বলে,
“ওই বাইরের মাচাংটায় গিয়ে বসি আসো।”
“জ্বী, আচ্ছা। ”
দুজনে মাচাং এ বসে।নিতু ওর ঘরের জানলা দিয়ে সবকিছু স্পষ্ট না দেখতে পেলেও তারাদের আলোয়ে অবয়ব ছায়া মূর্তি দেখা যাচ্ছে।কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে না প্যাঁচপ্যাঁচ শব্দ ছাড়া।তারপরও নিতু জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে আছে।একঘন্টার মতন মাওলানা নিতুর বাবার সাথে কি নিয়ে যেনো কথা বলে।কথা শেষ হতে নিতু শুধু শেষে এটুকু কথা শুনে তার বাবার,
“আবার আসবেন ভাই।আসসালামু আলাইকুম।”
নিতুর বাবা ঘরে এসেই নিতুর মাকে উঁচু গলার আওয়াজে ডাাকতে থাকে,
“কই তুমি?কই?”
“কি হয়েছে?”
“আরেহ শুনো…শুনো..!”
নিতুর বাবারা গলার স্বরে আমোদী ভাব ফুঁটে উঠেছে।নিতুর ভেতরটা শঙ্কায় কেঁপে উঠে।সে দরজার দিকে ছুঁটে কান পেতে দেয় বাবা মাকে কি বলছে।
“শুনো না?মাওলানা সাহেবের ছেলে আবরাহাম আমাদের নিতুকে সেইদিন এক দেখাতেই নাকি খুব পছন্দ করে ফেলেছে।নিতুকে নিয়ে যত যা হয়েছে,যত যা বলতোছে মানুষ ও নাকি এসবের কিছুই শুনছে না।বিশ্বাসও করছে না।ওর নাকি সাঁফ কথা ও নিতুকেই বিয়ে করবে।”
“কি!আলহামদুলিল্লাহ! অনেক খুশির খবর শুনালে।অন্তত গ্রামের মানুষগুলোর মুখ বন্ধ হবে।মাওলানা সাহেবের পরিবার আসলেই খুব ভালো।”
“হ্যাঁ।”
“আমি ওর(নিতু) সাথে যেয়ে কথা বলি।থাকো।”
চলবে….