“মা-বাবা এখানে পাঠিয়েছে পড়াশুনা করার জন্যে।মন দিয়ে পড়াশুনা করবে।তা না করে এসেছো প্রেমপত্র লিখতে?এটাতো প্রেম,মজামাস্তির জায়গা না।দিস ইজ অনলি স্টাডিং প্লেস!”
নিতু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।দৃষ্টি তার নিচের দিকে। রিহান আবার বললো,
” কখনো যেন এসব আর না দেখি!বড় ভাই আমরা।বড় ভাই চোখে দেখবে।এসব উঠতি বয়সী আবেগ এবং দিবা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে পড়াশুনায় ভালোমতন মনোনিবেশ করো!কাজে আসবে।বুঝাতে পেরেছি?”
এতক্ষণে নেতিয়ে রাখা চোখজোড়া নিতু এবার রিহানের মুখপানে নিবদ্ধ করলো।অচেতন মনে হুট করে মুখ দিয়ে একটা প্রশ্ন বেরিয়ে এলো তার,
“আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে,ভাইয়া?”
নিতুর কথা শুনে রিহানের পাশে থাকা বন্ধু-বান্ধবীরা খিলখিল করে হেসে উঠলো।আর রিহানের চোখজোড়া সপ্তকাশ ছুঁই ছুঁই হলো যেন।একে তো তাকে নিয়ে লাভ লেটার লিখলো,তারউপর আবার এ কেমন প্রশ্ন মেয়েটার!দেখো সাহস!রিহান মনে মনে নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো।স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বলার চেষ্টা করলো,
“আমার গার্লফ্রেন্ড থাকুক বা না থাকুক তা তোমার জেনে বিশেষ কোনো লাভ নেই।এতক্ষণ যা বলেছি তা মনে রাখলেই হবে!”
“লাভ-লোকসান পরে ভাবা যাবে।তবে আমাকে আগে ওই উত্তরটা দিন প্লিজ ভাইয়া!”
রিহান এবার কপালের অংশ সামান্য কুঁচকালো।তার চোখমুখে এবার ঢের বিরক্তি স্পষ্ট।আর কথা বাড়ানোর ইচ্ছে নেই তার!দয়সারা ভঙ্গিতে বললো ,
“এভয়েড দ্যাট টপিক।আর এই তোমার চিঠি..।”
বলে নিতুর হাতে চিঠিটা গুঁজে দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে নিতুকে পাশ কেঁটে মুহূর্তে চলে গেলো রিহান।আর পেছন পেছন তার ফ্রেন্ডরাও।নিতু এবার তার হাতে থাকা চিঠিটির দিকে এক পলক তাকালো।লেখা,
“বিশ্বাস করেন, রিহান ভাইয়া?আমি আপনার প্রেমে পড়ে গিয়েছি।অদ্ভুত রকমের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।যখন আপনাকে দেখি তখন হৃদপিণ্ড চলার গতি বন্ধ হয়ে যায়।পা জড়িয়ে আসে।হাঁটতে পারি না। দাম নিতে পারি না।এরকম কেনো হয়ে যাই,বলুনতো?কেনো?আপনার মাঝে কি এমন নেশা আছে যা আমাকে বারবার আপনার দিকে টানে!”
পড়া শেষ হতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো নিতুর!চোখজোড়া বসে আসতে চাইলো।নিজেকে ধাতস্থতা করলো আবার!আগেই মনে মনে ভেবে নিয়েছিলো রিহান তার প্রপোজাল নাও একসেপ্ট করতে পারে!কারণ যার পেছনে তারই ক্লাসের পাঁচ-দশটা মেয়ে তার ভালোবাসা পাবার জন্যে ওৎ পেতে আছে সেখানে তার মতন একটা মফাস্বল থেকে আসা মেয়েকে ভালোবাসবে এ যেন কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না।আর চিঠিটা দিয়েছে নিজেকে নিজে মনের সাথে যুদ্ধ করে।ভাগ্যে বিশ্বাসী ছিল।যদি ভাগ্য থাকলো হলেও হতে পারে।কিন্তু না!ভাগ্য বলে কোনো কথা নেই তা আজও বরাবরই প্রমাণিত হলো!
১.
রিহান এবং তার ফ্রেন্ডস সহ সবাই ভার্সিটির ক্যাফেশপে এসে বসলো।রাধীব বললো,
“কে কি খাবি বল এবার!”
খুশিতা বললো,
“কি খাওয়া যায়…?স্যান্চউইচ খাই চল সবাই!”
রিহান এবার বলে উঠলো,
“গাধা নাকি?এই সান্ধ্যকালের হীম পরিবেশে শুধুমাত্র কয়েক কাপ কফিই মানাবে।”
“ইয়েস,দোস!রাইট বলেছিস!চলে সবাই কফি খাই।”
ওয়েটারকে মোট আট কাপ কফির অর্ডার দিলো রিহান।কারণ তারা মোট মিলিয়ে এখন আটজন আছে।পাঁচ মিনিটের মাথায় ওয়েটার কফি দিয়ে গেলে।সবাই যে যারটা হাতিয়ে নিয়ে তৃপ্তিতে খাওয়া আরম্ভ করলো।খাওয়ার মাঝেই মিহিতা রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“আর কত মেয়ের এভাবে প্রপোজাল রিজেক্ট করবি?”
সাবা দায়সারা ভঙ্গি করে বলে,
“তবে যাই বলিস!আজকের মেয়েটার প্রপোজ করার সিস্টেমটা হেব্বি ছিল!আগেরকার দিনের মতন চিঠিতে ভালোবাসার নিবেদন!জাস্ট ওসাম!হা হা হা হা হা।আর মফস্বলের হবে সম্ভবত!”
মিহিতা বলে,
“গেটআপে তো তাই বলে ।কেমন নর্মাল ড্রেস পড়েছে।পায়ে বোধহয় একশো-দুশো দামের চামড়া জুতো!”
“হায় রে হিরো? শেষপর্যন্ত তোর কপালে এটাও ছিল?”
অর্নব সাবার মাথায় চাটি মেরে বলে উঠলো,
“আমাদের কপালে তো তাও জুটে না।আমাদের ব্যাপারটা ভেবেছিস একবারও?ভার্সিটিতে আজ তিন বছর পার করতেছি।একটা মেয়েও একদিন এসে বললো না-” আপনাকে ভালোবাসি।”কেমন কপাল নিয়ে ঘুরি!হায়রে!তোর ভাগ্য এত ভালো ক্যান,দোস?তোর কপাল আল্লাহ কি দিয়ে বানাইছে?ক তো?”
অর্নবের কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠে।হাসির মাঝে রাহুল বলে,
“রিহানের কপালের সাথে তোর কপালটা ঢলে নে।দেখবি আগামীকাল থেকে তোর সামনেও হাড়ি হাড়ি প্রেমের প্রপোজাল এসে জমা হবে!”
রাহুলের কথা শুনে সবার আরো হাসি।রিহান সবাইকে ধমক দিলো!ওমনি সবাই চুপ হয়ে গেলো।রিহান এবার চেয়ারে আলতো হেলান দিয়ে বসলো।বললো,
“তোরা কি শুরু করেছিস, বলতো?প্রেমটেম ছাড়া আর কোনো টপিক নেই?প্রেমের টপিক বাদ দিয়ে অন্য টপিক নিয়ে কথা বল!”
রাহুল বলে,
“তুই শালা? বেইমান!এত মেয়ের প্রপোজাল পেয়ে পেয়ে আমাদের কথাই ভুলে গেছিস!ওদের মধ্য থেকে আমাদেরকে দে না?”
রিহান হাসলো!বললো,
“নিয়ে যা!কেউ বারণ করেছে নাকি।তাছাড়া,আমিতো ওসব মেয়েদের মধ্যে অনেককে ভালোমতন চিনিও না!”
“হইছে রাখ!দেওন লাগবো না।আচ্ছা,আজ আমরা চল সবাই মিলে একজায়গায় একটু ঘুরে আসি।এমনিতে কয়দিন পড়ার চাপাতলে জাস্ট বোরিং।হালকা ফিল ফ্রি হয়ে আসি।”
রিহান ওমনিই ঘড়িতে তাকাতে তাকাতে বললো,
“সরি তোরা গেলে যা।আমার যাওয়ার একদম ইচ্ছে নেই।আর মাত্র কয়দিন পর সেমিস্টার এক্সাম।আমার এখনো অনেক পড়া বাকি।সেমিস্টার শেষ হোক।তারপর মনখুলে ঘুরবো!”
“তা এখন যাবি না?”
“কি বললাম!”
“আচ্ছা যাওন লাগবো না!যা!”
রিহান বুঝলো রাহুল রাগ করে ফেলেছে!রিহান শুধালো,
“আরেকদিন ঘুরবো।দূরে কোথাও।এই পুরনো ঢাকা শহরে ঘুরতে ভাল্লাগে না আর।বেরুলেই বিষাক্ত ধোঁয়া ছাড়া কিছুরই স্বাদ নিতে পারবি না!”
অর্ণবও রিহানের কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠলো,
“একদম ঠিক বলেছিস,দোস!এই হাঁদারাম এতবার শহর দেখলো তাও মন ভরলো না!আমারও ভাল্লাগে না।আমিও ঘুরবো না।আমিও এখন বাসায় চলে যাবো!”
অর্ণবের পর পর সব বন্ধুরাও একই কথা বলে উঠলো শুধু রাহুল ছাড়া।বেচারি রাহুলের মুখটা নিরস হয়ে গেলো!
২.
ফোন বাজছে নিতুর।নিতু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে তুলে নেয়।স্ক্রিনে তাকিয়ে বান্ধবী তোহা কল করেছে।নিতু কল রিসিভ করে।
“হ্যালো,নিতু?তোর হিরো তোর প্রপোজাল একসেপ্ট করেছে রে?”
নিতু নিশ্চুপ।এই একটা বান্ধবী যে নিতুর সব জানে।
তোহার সাথে স্কুল,কলেজ পেরিয়ে শহরে এসেও নিতুর ফোনালাপে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ চলছে।তোহা ঢাকায় এডমিশন নিতে পার নি। তার ফ্যামিলি চেয়েছে সে ন্যাশনালে পড়তে।এখন সে তাদের জেলার কলেজেই পড়লেখা করছে।আর নিতু ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে।কারণ ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়া নিতুর আগ থেকেই ড্রিম ছিল!নিতু যে আজ রিহানকে প্রপোজ করবে তা তোহা জানে।তাই কল করেছে।কিন্তু এই মুহূর্তে তোহাকে দেওয়ার মতন নিতুর কথার ভান্ডারে কোনো উত্তর নেই।নিতু কল কেঁটে দিলো। আবার তোহার কল বেজে উঠলো।নিতু রিসিভ করলো না।কল বাঁজা শেষ হলে তোহা একটা মেসেজ পাঠালো,
“কি হয়েছে,নিতু?কল রিসিভ করছিস না কেনো?”
মেসেজেরও উত্তর দিলো না নিতু।নিতুর কথা বলতে ইচ্ছে করছে কারো সাথে এখন।শুধু একটু কাঁদতে ইচ্ছে করছে।কাঁদতে পারলে যেনো বুকটা একটু হালকা হত!বুকটা প্রচন্ড ভারী!প্রচন্ড!এমন সময় দরজা ঠেলে কারো রুমে ঢোকার শব্দ কানে আসে নিতুর!নিতু বুঝতে পেরেছে প্রিয়া এসেছে।প্রিয়া নিতুর রুমমেট!একসাথেই দুজনে থাকে।নিতু তরহর করে চোখের কোণের পানি মুছে নিয়ে হাতের ফোনটা টেবিলের উপর রাখে।তারপর ঘুরে বেলকনির দিকে যেতে পা বাড়ায় ওমনি প্রিয়া বলে উঠে,
“শুনলাম, তুমি নাকি আজ রিহান ভাইয়াকে প্রপোজ করেছো?!”
#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
সূচনা পর্ব
চলবে….
(গল্পটা বড় হবে না তেমন!৩-৪ পর্বে শেষ করে দেব, ইনশাআল্লাহ।আর কেমন হয়েছে একটু জানাবেন!হ্যাপী রিডিং।)