#ভালোবসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৮

সবকিছু হিসাব-নিকাশ করে রিহান দেখলো নিতুর ডেলিভারির সময়টা এবং পরিক্ষার সময়টা প্রায় ১ মাসের ফারাক।পরিক্ষাটা নিতুর ডেলিভারি সময়টা ঘনিয়ে আসার আগেই শেষ হবে।তবে কথা হলো নিতু কি চাপ সামলে নিতে পারবে?আবারো একদন্ড চুপ হয়ে থাকে!কি করা যায় এখন?কোনো ত উপায় দেখছে না!নাকি নিতুকে বলে পরিক্ষাটা পরের বছর দেওয়াবে?কিন্তু নিতু তো বোধহয় মানবে না!এমন সময় দরজায় নাড়ার শব্দ হয়।রিহান সেদিকে তাকায়।নিতু রিডিং রুমে ঢুকেছে।নিতু রিহানের সামনের চেয়ারটা টেনে আলতোভাবে বসে।তারপর রিহানের দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

“আমি হিসেব করে দেখেছি একমাস বা দেড়মাস সময়ের আগেই আমার পরিক্ষাটা শেষ হবে।যদি পেঁটের বাবুকে নিয়ে সুস্থতা বজায় থাকতে পারি আশা করি কোনো সমস্যা হবে না।”

রিহান নিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।নিতু আবার বলে,
“এখন থেকেই প্রিপারেশনটা নিতে হবে ভালো করে,যাতে পরে চাপ না পড়ে।”

রিহান এবার তার চেয়ারটা হালকা আওয়াজে নিতুর দিকে এগিয়ে নিয়ে নিতুর দুইহাত নিজের হাতের ভেতর টেনে নিয়ে হালকাভাবে চেপে ধরে।স্থিতি গলায় বলে,
“তুমি পারবে ত নিতু এত চাপ সামলে নিতে?”
“চেষ্টা করতে হবে।আশা করি পারবো।কি আর করার এখন বলুন!যা হবার তো হয়ে গেছে তাই না?না আমি এখন পারবো পরিক্ষা পেছাতে, না বেবীকে। কিছুই করতে পারবো না।”

তারপর রিহান নিতুর কপালে চুমু এঁকে দেয়।মেয়েটা একটু রাগী বটে।তবে,পরিস্থিতি পরে আবার নিজেই সামলে নিতে পারে।সামনের দিনগুলোতে রিহান নিতুকে খুবই সুচতুর চোখে রাখবে।মেয়েটার সামনের দিনগুলো কঠিণ।সবগুলো দিব রিহান নিজেকে ভাগ করতে হবে,যাতে মেয়েটির উপর কোনোভাবেই না চাপ পড়ে।

———————————————————
দিন যত যায় পরিস্থিতি আরো অস্বাভাবিক হয়ে আসে।নিতুর মাঝে নানারকমের অসুখ দেখা দেয়।পা জ্বলে যায়।শরীর দুর্বল আর ক্লান্তিকতার ভাব।আবার ফাঁকাফোঁকরে পেটব্যথা। রিহান প্রতিটি মুহূর্তে নিতুর সাথে।নিতুকে একটু “য়ু” শব্দ শুনলেই পাগলের মতন উদাসীন হয়ে যায়।নিতুর প্রেগন্যান্টের ছ’মাসের পর থেকে সে ত নিতুকপ তেমন একা ছাড়ছেও না।নিতুর সুবিধার কথা ভেবে সেই প্রথমই অফিসের পাশে বাসা ভাড়া নিয়ে ফেলে। ডেলিভারীটা নিরাপদে হলেই ইনশাআল্লাহ পরে নাহয় নিজেদের বাসায় ফিরবে।এখন এ বাসায় স্নেহা,নিতু এবং রিহান সবাই একসাথে থাকে।স্নেহাও ভাবীর সার্বক্ষণিক ভাবীর দেখাশুনার ভেতরে।

——————————————————–
আল্লাহর নাম নিয়ে নিতু আজকে পরিক্ষার হলে বসে।নিজের সিটে বসতেই সেই পুরনো মুখগুলো ক্লাসের!ক্লাসের সবাই নিতুকে দেখতেই হকচকিয়ে যায়।নিতু যে প্রেগন্যান্ট ওরা কেউ তা জানতো না।গত সেমিস্টার পরিক্ষাটা যে দিয়েছিল তখন বাচ্চা প্রায় পেঁটে এলো।পেট ওতটা স্পষ্ট হয়নি তাই কারো চোখে লাগে নি।এখন যেহেতু ডেলিভারীটা ঘনিয়ে এসেছে পেঁট স্বাভাবিকের তুলনায় বড় এবং প্রশস্ত ,যা ক্লাসমেটরা সহজেই ধরে ফেলতে পেরেছে “নিতু প্রেগন্যান্ট “।এখন ওদের একটাই চাওয়া তা হলো-” ট্রিট।”

নিতুকে সবগুলা ক্লাসমেট ঝোঁপের মতন ঝেঁকে ধরে ট্রিটের জন্যে।ক্লাসগুলার চেলচেলানিতে নিতু প্রায় অস্থির।পরে টাল সামলাতে না পেরে বলে,
“আচ্ছা,যা যা পাবি ট্রিট। আজকেই পাবি!”

সবাই “ইয়োয়ো” বলে লাফিয়ে উঠে খুশিতে।আর দলের মধ্য থেকে একজন টাসটাস গলায় বলো উঠে,
“আজকে রিহান ভাইয়ার পকেট খালি করে দেব একদম.।”

সবাই হেসে উঠে ওর কথা শুনে।সাথে নিতুও।এরমাঝে এক্সাম পেপারস হাতে ক্লাসে প্রবেশ করে।তরতর করে যে যার সিটে গিয়ে বসে।পরিক্ষা শুরু হয়।সবাই পরিক্ষা দেয়।পরিক্ষা শেষ হলে স্যার হলরুম থেকে বেরুতেই সবাই ধপাধপ নিতুর সামনে এসে আবার হাজির-”এই ট্রিট ট্রিট”।

———————————————–
পুরো রেস্টুরেন্টটা নিতুর ফ্রেন্ডদের দখলে।রিহান সবাইকে মন ভরে ট্রিট খাইয়ে বিদেয় করে।নিতুর এবং রিহানের ফিরতে রাত হয়ে যায়।রিহান বাসার সামনে গাড়ি থামিয়ে নিতুকে দুইহাতে কোলে তুলে নেয়।নিতু লজ্জায় কাচুমাচু।মুখটা রিহানের বুকের ভেতর লুকাতে চেষ্টা করে।তা আর পারে নি।রিহান তার নাকের ঢগা দিয়ে বাঁধার আস্তরণ ফেলে দেয়।নাকটা নিতুর নাকের সাথে ঢলতে থাকে আদুরে ভঙ্গিতে।আর উষ্ণ জড়ানো গলায় বলে,

“পরিক্ষা কেমন হয়েছে?”

নিতু কিছু বলতে পারে নি।সে বাকরুদ্ধ!বলবেই বা কীভাবে।এভাবে নির্লজ্জের মতন আদর করলে মুখে কিছু বলার ভাষা থাকে?

সবগুলো পরিক্ষা নিতুর মোটামুটি ভালোভাবে শেষ হয়।রিহান আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া যে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই নিতু পরিক্ষাগুলো শেষ করতে পেরেছে।এখন আরেকটা কঠিন যাত্রা তা হলো নিতুর ডেলিভারি।

——————————————————————-
একদিন দুপুরে নিতু বসে বসে কিছু অগোছালো জামাকাপড় গোছগাছ করতেছিল।এমন সময় তার ফোনে রিং বেঁজে উঠে।স্ক্রিনে তাঁকিয়ে দেখে একটা অপরিচিত নাম্বার।নিতু কলটা রিসিভ করে।রিসিভ করতেই,

“হ্যালো?নিতু?”

ধপাধপ করে ফোনের ওপাশের কিন্নর গলার স্বরটা সবথেকে পরিচিত কূলে ঠায় পেয়ে যায়।তোহার কন্ঠস্বর!নিতু বলে উঠে,
“তোহা তুই?কিরে কেমন আছিস?”

তোহার গলার স্বর খুব ভাঙ্গা ভাঙ্গা।নিতু বুঝতে পারছে তোহার বোধহয় মন খারাপ।বলে,
“কিছু হয়েছে তোর?”
“নিতু?তুই জানিস?আমি যে করিম ভাইকে নিয়ে পালিয়ে এসেছি ঢাকায়?”
“নাহ তো।জানবো কীভাবে?কল করিস নি।তোর নাম্বার ও ছিল না।তা কবে এসেছিস?বিয়ে করেছিস দুইজন?”
“এসেছি মাস ছয়েক হবে।বিয়েতো হলো যেদিন আমরা পালিয়ে এসেছি সেইদিনই করে ফেলেছি।”
“আচ্ছা। তা সবতো গ্রামে জানাজানি হয়ে গেছে,না? ”
“তা’তো হয়েছে।গ্রামে ত আর কোনেদিনই ঢুকতে দিবে না।”
“তা মন খারাপ কেন?”
“নিতু?”
“একটা কথা..!”
“বল?”
“আসার সময় আমার কিছু জোগানো সম্বল ছিল আর করিমের বিকাশের ব্যবসাটি বেচে দিয়ে যা হয় সব নিয়ে দুইজন চলে আসি।এই ছয় মাসে সব ফুরিয়ে গেছে রে।ঢাকার শহরে যা খরচ।জিনিসপত্রের চড়া চড়া দাম।
এখন করিম কাজ খুজতেছে কোনো কাজ পাইতেছে না।সংসারের অবস্থা নাজেহাল!”

বলতে বলতে তোহার গলার স্বর আরো গাঢ় হয়ে আসে।নিতু শুধায়,
“আহা মন খারাপ করিস না!থাকিস কোথায় তোরা?আমাকে এড্রেস দে!”
“তুই আসবি?”
“আমি যেতে পারবো না রে।রিহান যাবে।”
“তুই আসলে সমস্যা কোথায়?ওহ আমিতো ভুলেই গেলাম আমার বান্ধবী যে বড়লোক মানুষ। তো এখন আর গরীব বান্ধুবীদের দেখার কি প্রয়োজন।”
“এক লাইন বেশি বুঝিস ক্যান?একদম থাপড়ামু।আরেহ তুই খালা হইবি ক’দিন পর।এখন কি চাস জার্নি করে তোর ভাইপো/বোনজি এর কোনো সমস্যা হোক?”
“তুই প্রেগন্যান্ট রে নিতু?”
“হ্যাঁ।”
“এটা তুই আমারে কি শুনাইলি!এতবড় খুশির সংবাদ!আমি তোরে দেখমু।খুব দেখমু।”
“এইজন্যেই তো বলছি ঠিকানা দিতিস।”

তারপর দুই বান্ধবীর অনেকক্ষণ ধরে আলাপণ চলতে থাকে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here