#ভালবাসা_রং_পাল্টায়_না(৪)
রুমকি কখনো ঐ চোখ জোড়া ভুলতে পারেনি। কি এক ভীষন আকুতি ছিল সেই চোখ জোড়ায় যা তাকে এতোটা বছর তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ভবিষ্যতে কখনও ভুলতে পারবে বলেও মনে হয় না। ওর চিনতে ভুল হবার কথা নয়। তাই নাম ধরেই সম্বোধন করল।
তানজীদ ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। সে যেন এমনটা আশা করেনি। ভীষণ অবাক হয়েছে রুমকিকে দেখে। একটু সময় নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল
– রুমকি! কেমন আছ? আমাকে চিনলে কি করে?
তানজীদের এমন সাবলীলতা রুমকিকে ভীষণ অবাক করল। ভাববাচ্যে কথা বলা ছেলেটি আজ এতো বছর পর দেখা হওয়া মাত্র সরাসরি তুমি বলে সম্বোধন করছে। বিস্ময় না ঢেকেই জবাব দিল
-ভালো আছি। না চেনার কোনো কারন তো দেখছি না।
তানজীদও ভীষণ অবাক হয় রুমকির এমন সাবলীলতা দেখে। এ রুমকি আর আগের রুমকির মাঝে যোজন যোজন ফারাক। তার দিকে কখনো ভালো করে তাকিয়ে না দেখা মেয়েটি আজ কি সুন্দর করে কথা বলছে! এটা কি সময়ের জন্য নাকি অন্য কিছু?
দুজন দুজনের আচরনে এতটাই অবাক হয়েছে যে আর কোন কথা কেউ বলতে পারেনি। এতো বছর পর এভাবে দুজনের দেখা হয় যাবে দুজনের কেউ বুঝতে পারেনি। সেই ছোটবেলায় কখন কে কাকে দেখেছে কিংবা ভালবেসেছে এতদিন এসব কিছুই মনে থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ন বিপরীত। ভুলেও গিয়েও যেন ভুলে থাকা যায় না। পলকেই সব স্মৃতি যেন জেগে উঠেছে।
তানজীদের মনে হচ্ছিল এইতো সেদিন। মাত্র সেদিন রুমকি ওকে চড় দিয়েছে। আর রুমকির মনে হচ্ছিল কালই যেন তানজীদ ওর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। এ কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি। আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যপার হলো পূর্বের তিক্ততাটুকু দুজনের কারোই মনে উঁকি দিল না।
অদ্ভুত দোলাচলে কে কি করছে বা কোথায় থাকছে কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারল না। ফলাফল সরূপ আবার হারিয়ে ফেলা। রুমকি বাসায় ফিরে ইতস্তত ভাবে রুবানাকে তানজীদের কথা জিজ্ঞেস করতে রুবানা মুখ উল্টিয়ে বলে
– আমার সাথে তো যোগাযোগ নেই। তবে শুনেছি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি হয়েছে।
রুমকি চলে যেতে নিলেই রুবানা জিজ্ঞেস করে
-কিরে ব্যাপার কি? আজ এতো বছর পর হঠাৎ তানজীদের কথা জিজ্ঞেস করছিস?
-ওর সাথে আজ রেস্টুরেন্টে দেখা হয়েছে। আমার শাড়ির যে অবস্থা দেখছিস তা তোমার গুণধর তানজীদের কাজ।
-ওহ ওহ এতোদিন পর দেখা তাও একেবারে সিনেমাটিক স্টাইলে। ওরা আছে কোথায়?
-আমায় জিজ্ঞেস করছিস কেন? তোর বন্ধু, তুই ভালো জানবি সেটা।
-ইশ! কোথাও কি যেন পুড়ে যাচ্ছে। এখান পর্যন্ত গন্ধ পাচ্ছি।
-কই আমি তো পাচ্ছি না।
রুবানা ফিক করে হেসে দিতেই রুমকি বুঝল রুবানা তাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেছে। কপট রাগ দেখিয়ে রুমকি চলে যেতেই রুবানা অট্টহাসিতে ঘর মাতিয়ে তুলল।
……………
এদিকে তানজীদ বুঝে উঠতে পারছে না এমন একটা বোকামী সে কি করে করল। এতগুলো বছর রুমকির ব্যাপারটা ছাই চাপা আগুনের মতো চাপা পরে থাকলেও আজ যেন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো হয়ে গেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় রুমকির ব্যাপারে কোন কিছু আর জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠেনি।
বাসায় এসে মনে হতেই একে একে পুরোনো সকল বন্ধু বান্ধবদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করল। সেই ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় ওর বাবা ট্রান্সফার হয়ে যান। বন্ধু বান্ধব কারো সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। এইদিকে ছুটিও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
দুইদিন পাগলের মতো ছুটোছুটি করে দু’একজন বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে রুবানার সম্পর্কে যতটুকু তথ্য যোগাড় করতে পেরেছে তা এক প্রকার কোনকিছু না পাওয়ার মতোই। তারপরেও সেসবের উপর নির্ভর করে আর কিছুটা আন্দাজের উপর শেষমেশ রুবানাকে খুঁজে বের করতে সফল হয়।
রুবানার তানজিদকে দেখে বুঝতে কষ্ট হয় না এতোগুলো বছর পর তানজীদ কেন আজ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাই কথা না বাড়িয়ে তানজীদকে সরাসরি বাসায় নিয়ে আসে। উদ্দ্যেশ্য ওদের দুজনের মাঝে কিছুটা হলেও সখ্যতা গড়ে তোলা।
রুবানা বারবার রুমকিকে ওদের সাথে গল্প করার জন্য আসতে বললেও রুমকি এড়িয়ে গেল। কেবল সৌজন্য সাক্ষাতটুকু করে চলে গেল। তানজীদের কাছে রুমকির এমন আচরন নতুন কিছু নয়। একথা ওকথার পর নিজেই বলল
-তোর বোনটা সেই খারুসই রয়ে গেল। পাল্টায়নি স্বভাবে একটু। তবে আগের চেয়ে অনেক বেশী সুন্দর হয়েছে দেখতে।
রুবানা ভ্রুকুটি করতেই তানজীদ আবার বলে
-দেখ আমার কিন্তু সামনের সপ্তাহে শীপে জয়েন করতে হবে। হাতে সময় নেই। এবার গেলে কখন আসব তাও জানি না। তোর বোনের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করে দে, না হলে কিন্তু এক পাও নড়ছি না আমি। কত কষ্ট করে এই দুইদিন মাথার ঘাম পায়ে ঝরিয়ে তোকে খুঁজে পেয়েছি। এখন আমার এই উপকারটুকু কর।
-মা বাসায় আছে। আর রুমকিকেতো চিনিস। তোরে ধরে আবার দুইটা চড় লাগালেও অবাক হব না।
-যা খুশী করুক। তোর বোনেরে এবার ছাড়াছাড়ি নাই। দরকার হলে তুলে নিয়ে যাব।
-এবার কিন্তু বেশী বেশী হচ্ছে। ওর তো অন্য পছন্দ থাকতে পারে।
-না নেই।
-এতো শিউর হচ্ছিস কি করে?
-ওর চোখ দেখে। ওর চোখে কোনদিন এমনটা দেখিনি। কিন্তু সেদিন কি যেন একটা উচ্ছ্বাস দেখেছি এবং সেটা আমার জন্য ছিল। না হলে এমন পাগলের মতো খুঁজে বের করি?
-হুম, একটু বেশী বুঝে ফেলেছিস। পরে এমন ছ্যাকা খাবি তখন বুঝবি।
-ছ্যাকা খাওয়ার কিছু নেই। এখন পেচাল না পেরে প্রেমে সাহায্য কর।
-জো হুকুম জাহাপনা।
রুমকির রুমে যেতেই দেখতে পেল, রুমকি কি যেন একটা বই পড়ছে। গলা খাঁকারি দিতেই রুমকি ফিরে চাইল। তানজীদকে দেখে অবাক হলো না। যেন সে এই মুহূর্তে তানজীদকেই প্রত্যাশা করছিল।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here