বাসন্তী
পর্ব- ৩০
#লেখা-লিমু

—” পুষ্প সিড়িঘরে যেতেই প্রণয়ের মুখোমুখি হলো। পুষ্প পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে প্রণয় পথ আটকে দাঁড়ায়। পুষ্প অন্যদিকে যেতে নিলে, প্রণয়ও ঐদিকে গিয়ে দাঁড়ায়। কতক্ষণ কোন কথা না বলে দুজন এরকম লুকোচুরি খেললো। তারপর পুষ্পই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। প্রণয় পুষ্পর চোখে জলের উপস্থিতি টের পেলো স্পষ্ট।
প্রণয়ের বুঝতে সমস্যা হলো না অশ্রুর কারন। তবুও পুষ্পকে প্রশ্ন করলো,

—” ইজ এভরিথিং ওকে?

—” পুষ্প অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চোখ মুছে নিল। তারপর সামনে ঘুরে স্বাভাবিক ভঙ্গীতে বললো হ্যা ওকে। সব ঠিক আছে।

—” প্রণয় পুষ্পর স্বাভাবিক কন্ঠস্বর শুনে অবাক না হয়ে পারলনা। এই মেয়েটাকে এখনও অনেক বুঝার বাকী আছে। যতটুকু চিনেছে, তারচেয়ে বেশি এখনো অজানা। তুমি যে মানবী,বড়ই রহস্যময়ী। এতো সহজ কি সেই রহস্যের ভেদ করা? বুকে হাজারো যাতনা পুষেও, ঠোঁটের কোণায় প্লাস্টিক হাসিটুকু ঝুলিয়ে রাখো। খুব কম মানুষই তোমার সেই প্লাস্টিক হাসিটুকুর আড়ালের দহন বুঝতে চেষ্টা করে। কিন্তু আমি যদি তোমার মনের অলিগলির খবরই বুঝতে না পারি, তাহলে যে তোমাকে শুধুই ভালোবাসলাম। আজো তোমাকে বুঝা হয়ে উঠেনি আমার। মুখে ভালোবাসি শব্দটা বললেই যদি ভালোবাসা হয়ে যেতো,তাহলে আজকাল এতো ভালোবাসার খরা থাকতো না। আজকালের ভালোবাসা গুলো হয়ে গেছে মরুভূমির বালুর মতো। এর পরতে পরতে চূড়াবালি লুকিয়ে থাকে।

কিন্তু তুমি যে আমার হৃদকুঠিরের স্পন্দন, তাই তোমার হৃদয়ের খবর যে পেতেই হতো। ভালোবাসি, এর মানে কি জানো তুমি? জানোনা বোধহয়। ভালোবাসি মানে হলো তোমাকে ভালো রাখার,খুশি রাখার কারন হতে চাই আমি। ভালোবাসি মানে হলো তোমার দুঃখের ভাগীদার হতে চাই আমি। ভালোবাসি মানে তোমার হাতে হাত রেখে সূর্যোদয় দেখা। উহুম, ঐটা ঐ সূর্যোদয় না,ভালোবাসার সূর্যোদয়। ভালোবাসার আকাশের সূর্যটা দুজনের পাল্লা দিয়ে বাড়া ভালোবাসায় গাঢ় বর্ণ হবে দিন দিন। প্রতিনিয়ত দুজনের প্রতিযোগিতা চলবে,কার ভালোবাসা কতটুকু বাড়ছে। জানি তুমি এটা শুনলে হাসবে,যে ভালোবাসার আবার প্রতিযোগিতা আছে নাকি?
হুম আছে। কেমন প্রতিযোগিতা জানো?
আমি বলছি। দুজন দুজনকে এতটা ভালোবাসা উচিত, যেন যতদিন বেঁচে থাকি শেষ পর্যন্ত কোন আক্ষেপ না আসে মনে। শেষ মুহুর্তে এসে এটা না মনে হয়,ইস আরেকটু ভালোবাসা বোধহয় বাকীই রয়ে গেল। যতটুকু সময় পাবো, শত দুঃখের মাঝেও সুখ খুঁজে নিবো আমরা। ভালোবাসার নদীতে খরা আসতে দিবই না, বন্যা হবে। প্রবল বন্যা। যেন সেই ভালোবাসার বন্যায় দুজন ভেসে যায়,এই ব্যস্ত পৃথিবীর কৃত্তিমতা ছেড়ে।

পুষ্পর ডাকে প্রণয় ওর ভাবনার রাজ্য থেকে বের হয়ে আসলো। ইসস কথাগুলো মনে মনে কেন আওড়ালাম,কেন ওকে বললাম না!”
আচ্ছা যাক,কথা বলার সময় তো ফুরিয়ে যায় নি,শুরু হবে মাত্র। আগে তো উনাকে ম্যানেজ করি। নাক মুখের যে অবস্থা করেছে ম্যাম,নিজের সাথে যুদ্ধ করে মনে হয় স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। উফফ এতো মারাত্মক জেদ মেয়েটার, সেটাই আরো বেশি ভালো লাগার কারন।
পুষ্প চলে যেতে নিলো,প্রণয় পিছন থেকে খপ করে হাতটা ধরে ফেললো। তারপর চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,কোথায় যাও?”
পুষ্প কিছু না বলে করুণভাবে তাকিয়ে রইলো,যেটার মানে প্রণয়ের বোধগম্য নয়। তাই প্রণয় আর কোন কথা না বলে, পুষ্পকে টেনে আবার ছাদে নিয়ে গেল। পুষ্প ওর হাত মুচড়াতে থাকলো কিন্তু বিশেষ লাভ হলো না। অগত্যা চুপচাপ প্রণয়ের সাথে আসতে হলো। এসে একদম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো,যদিও পাপড়ি একদম ছাদের কর্ণারে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। ওদের দিকে না তাকিয়েই বললেন,

—” আমার ছেলেকে কানপড়া দিয়ে নিয়ে এসেছো নাকি?” মার বিরুদ্ধে ছেলেকে উস্কানি দিয়েছো নিশ্চয়ই?

আবার অপমানিত হওয়ার কোন শখই পুষ্পর নেই,তাই কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ও চারশো চল্লিশ ভোল্টেজের শক খেল!”
নিজেকে ওর জোকার মনে হচ্ছে এইমুহূর্তে। মা ছেলের এরূপ আচরণের কোন হেতু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এদের মাথায় কি কোন প্রবলেম আছে নাকি,এমন পাগলের মতো হাসছে কেন!”
পুষ্প অসহায় চোখে প্রণয়ের দিকে তাকালো। কিন্তু প্রণয় ওর মতো হেসেই যাচ্ছে। যেন পুষ্প কোন জোকার ওদের কাছে। পুষ্প কিছু বুঝতে না পেরে কেঁদে দিল। এবার দুজন হাসি থামালো। তারপর পাপড়িই প্রথম কথা বললেন।
—” উফফ জানিস প্রণয়, একটিং করতে করতে আমি হাফিয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমি হেসে দিব। কত কষ্ট করে যে হাসি চেপে রেখেছি। তবে মনে হচ্ছে চেষ্টা করলে আমি ভালোই একটিং করতে পারতাম। নিজেই নিজেকে অস্কার দিতে মন চাইছে। এটা বলে উনি আরো একচুট হেসে নিলেন,যেন বিরাট মজাদার কিছু ঘটেছে। যদিও পুষ্প এমুহূর্তে ভাবনাশূন্য হয়ে গেল। কি ঘটছে,বা কি ঘটেছে ওর সাথে তার কিছুই ও ঠাহর করতে পারছেনা। সবকিছু কেমন ঝাপসা,ঘোলাটে লাগছে। এমন উদ্ভট পরিস্থিতিতে পুষ্পর মাথা কাজ করছেনা। উনি একটিং করেছে মানে?

পুষ্প ফ্যালফ্যাল করে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো,নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে এমুহূর্তে। কখনো কখনো এমন সিচুয়েশনে পড়তে হয় যে,সবকিছু নিজের আয়ত্তের বাইরে থাকে। পুষ্পর মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করতে লাগলো। মাথাটা দু’হাতে চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো সে।
প্রণয় আর পাপড়ি দুজন এবার একটু ঘাবড়ে গেল। প্রণয় পুষ্পকে ধরে তুলতে নিলে, পাপড়ি বাঁধা দেয়। প্রণয় বোকার মত তাকিয়ে থাকে ওর মায়ের দিকে,পাপড়ি চোখের ইশারায় প্রণয়কে পুষ্পর সামনে থেকে সরতে বললেন। প্রণয় সরে দাঁড়ালো।

পাপড়ি পুষ্পকে বাহুতে ধরে সোজা দাঁড় করালেন। তারপর ছাদের এক কর্ণারে যে বেঞ্চ টা রাখা আছে সেখানে গিয়ে বসলেন। পুষ্পর তখনো সবকিছু এলোমেলো। তাই সে ভাবনা শূন্যহীন এর মত বসে আছে। পাপড়িই কথা বলা শুরু করলেন।

—” জানো মেয়ে তোমার নামটা প্রথম যেদিন শুনেছিলাম,সেদিনই তোমাকে না দেখেই ভালো লেগে গিয়েছিল। যদিও ছেলের কাছে কিছু বর্ণনা শুনেছি। বিশেষত তোমার চুল,লম্বা চুলের প্রতি আমার একটা উইকনেস ছিল বরাবরই। কারন আমার চুল ছোট। তাই বলে এটা ভেবো না,চুল লম্বা তাই পছন্দ করেছি। ঐটা জাস্ট একটা বিশেষ ভালো লাগা। তারপর প্রতিনিয়তই তোমাকে নিয়ে মা ছেলের কথোপকথন চলছিল। এমনকি তুমি যে প্রণয়কে পাত্তা দিচ্ছিলে না,সেটাও জানি। আমি অবশ্য এতে খুশিই হয়েছিলাম। আরে আমাদের মেয়েদের একটা ওয়েট আছে না,এতো সহজে পাত্তা দেয়া একদম উচিত না। তাহলে দেখবে আবার ফালতু ভাববে। এরকম অনেক ছেলে আছে,যারা মেয়েদের পিছনে ঘুরে ঠিকই বাট পটে গেলেই আর ভালো লাগে না। অবশ্য এরকম মেয়েও আছে আজকাল।
তবে আমার ছেলেকে তো আমি চিনি। কোন মেয়ের পিছনে ঘুরবে তো দূরে থাক,মেয়েদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতো। যেন মেয়েরা ওর কাছে এলার্জি। সারাদিন ঐ গিটার,গান এসব নিয়েই পড়ে থাকে। সেই ছেলেটা হঠাৎ কাউকে দেখে থমকে গেল। আমারতো প্রথমে বিশ্বাসই হয় নি। ভেবেছি হয়তো মজা করছে। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম,না ছেলেতো আমার সিরিয়াস হয়ে গেছে। বিশ্বাস করো,তখন থেকে মেয়েটাকে দেখতে খুব মন চাইছিলো। কিন্তু আমার পুত্র মহাশয়ের কাছে কোন ছবিও ছিল না তোমার। তারপর যখন তুমি আর তোমার বোন আমাদের বাসায় এসেছিলে,তখন তোমাকে দেখলাম। উহুম শুধু ছবি দেখিনি,ভিডিও কলে সরাসরিই দেখেছিলাম। প্রণয় লুকিয়ে দেখিয়েছিল,তুমি কিচেনে দাঁড়িয়েছিলে। এটা শুনে পুষ্প বেশ অবাক হলো। কারন তার মানে উনি উনার মাকে সব ঘটনা বলেছেন। তার মানে কি উনি সব জানেন!”

এটা ভেবেই পুষ্পর মুখটা ঘোর অন্ধকারে ঢেকে গেল। পাপড়ি বোধহয় কিছুটা অনুমান করতে পারলেন। তাই আবার বলতে লাগলেন,

তারপর আমি বুঝতে পারলাম,আমার ছেলের খুশি থাকার,সুখে থাকার কারনটা তুমিই হবে। কিন্তু তুমি তো থাকে ভালোবাসো না। ছেলে আমার কেমন জানি মনমরা হয়ে থাকে। তারপর ওকে বললাম,তোমাকে আবার সরাসরি বিয়ের প্রপোজাল দিতে। কিন্তু যেদিন ও তোমাদের বাসায় যায়,সেদিনই ঐ কালো দিনটা!
পাপড়ি থেমে গেলেন,পুষ্পর চোখ বেয়েও জলের ফোটা গড়িয়ে পড়তে লাগলো বাঁধাহীনভাবে। পাপড়িও চোখ মুছলেন। তারপর পুষ্পর চোখ মুছে দিয়ে বললেন,শোন ঐ দিনটা আমরা আমাদের জীবনের ক্যালেন্ডার থেকে একদম মুছে দিবো। একটা বাজে অতীত ভেবে ভুলে যাবো,বুঝেছ মেয়ে?

সব মানুষের জীবনেই কোন না কোন বাজে অতীত থাকে,সেগুলো ছাঁইয়ের মতো ফু দিয়ে উড়িয়ে দিতে শিখতে হয়। না হলে যে সে ছাঁইয়ের মতো,নিজের জীবনের সুন্দর হাওয়াটাকে ঘোলা করে দেয়।
আমরা একটা নির্দিষ্ট সময় নিয়ে পৃথিবীতে আসি। সে সময়টা যদি দুঃখ, কষ্ট ভেবে ভেবেই কাটিয়ে দেয়,কিছু কি লাভ হবে তাতে?
তারচেয়ে বরং সব কষ্ট একপাশে রেখে,জীবনটাকে উপভোগ করতে হয় ভালোবেসে। দেখ যে অতীত আমাদের পীড়া দেয়,সেটা অতীতেই একদম চাপ্টার বন্ধ করে আসা উচিত। আমি জানি একটা মেয়ের জন্য এটা কতটা যন্ত্রনার,আমিও তো একটা মেয়ে। কিন্তু তাই বলে,তোমাকে আঘাত করবো কেন?

তোমার তো কোন ত্রুটি ছিল না। হ্যা রাতে একা বের হয়েছো, এটাই তোমার ত্রুটি ছিল। কিন্তু তুমি তো শখ করে ঘুরতে বের হওনি,বের হয়েছিলে জীবিকার তাগিদে। যারা এমন কথা বলে,রাতে টিউশনি করার কি দরকার,তারা কি তোমাকে দুটো টাকা দিয়ে সাহায্য করতে এসেছিল কোনদিন?
আসেনি। কিন্তু কথা শুনাতে ঠিকই চলে আসে। এটাই আমাদের সমস্যা। এদেশে হাজার হাজার মধ্যবিত্ত মেয়ে টিউশনি করে নিজের খরচ চালায়,পরিবারকেও সাহায্য করে। সবার পরিবারে ইনকাম করার জন্য বাবা,ভাই থাকে না। কিন্তু সেটা বুঝে কজন,আর খুজে কজন। যাক সেসব কথা বলে কোন লাভ নেই। সমাজ আমরা বদলাতে পারবনা। তবে নিজে বদলাতে,নিজের চিন্তা ধারা বদলাতে তো কোন অসুবিধা নেই।
পুষ্প মন্ত্রমুগ্ধের মত পাপড়ির কথা শুনছিল। এতোদিনে বুঝতে পারলো,প্রণয় কি করে এতো চমৎকার করে কথা বলে। পুষ্পর বলা একটু আগের কথাটা মনে হতেই লজ্জায় ওর মাটিতে মিশে যেতে মন চাইছিলো। কি করে ও বলেছিল যে মা আর ছেলের চিন্তায় কত তফাৎ। আসলে তো মায়ের থেকেই এতো সুন্দর চিন্তাভাবনা পেয়েছে সে। পুষ্পর এখন একটু আনইজি ফিল হচ্ছে। পাপড়ি সেটা বুঝতে পারলেন। তাই প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললেন,আচ্ছা একটা জিনিস খেয়াল করেছো তোমার আর আমার নামটার মধ্যে কেমন একটা মিল আছে না। পুষ্প মানে ফুল,আর ফুলের পাপড়ি থাকে। দারুণ না ব্যাপারটা। আমাদের বউ-শ্বাশুড়ী জুটি একেবারে হিট খাবে,কি বলো?

—” পুষ্প বউ-শ্বাশুড়ী কথাটা শুনে একটু লজ্জা পেলো,আবার উনার কথা বলার ভঙ্গীটা দেখেও মুচকি হাসলো।

—” পাপড়ি দু’হাত বাড়িয়ে দিলেন পুষ্পর দিকে। পুষ্প প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে পাপড়িকে জড়িয়ে ধরলেন। পাপড়ি পুষ্পর মাথায় হাত রেখে বললেন,ঐদিন এয়ারপোর্টে তোকে সালাম করতে দেইনি কেন জানিস?

পুষ্প একটু মাথা তুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
পাপড়ি বললেন,কারন তোকে প্রথমে বুকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন ধরলে তো আজকের এই ড্রামাটা করতে পারতাম না। আর তোকে আন্টি ডাকতে বারণ করেছিলাম,কারন চেয়েছি তুই আমাকে মা ডাকবি। কি ডাকবি না?
না হলে কিন্তু সিরিয়ালের দজ্জাল শ্বাশুড়ির রূপ আবার দেখাবো। পুষ্পর চোখে জল,মুখ হাসি। মানুষটাকে বুঝতে এতো বড় ভুল করে ফেলেছিল সে! অবশ্য এমন বিহেভ করলে,যে কেউ ভুল বুঝবে। এটা বলে পুষ্প একটা ছোট্র করে নিঃশ্বাস ফেললো।

প্রণয় বউ-শ্বাশুড়ীর কথোপকথনের মাঝে না থেকে ছাদের অন্য কর্ণারে দাঁড়িয়েছিল। এসে দেখে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। তাই সে কপাল চাপড়ে বললো,

—” হায়রে আমার সব আদর নিয়ে নিচ্ছে।

প্রণয়ের কথা শুনে দুজনি হেসে উঠলো। পাপড়ি প্রণয়কে কাছে ডেকে ওর কান মলে দিয়ে বললেন,
এতো হিংসুটে হলি কবে থেকে?

—” হবো না,হবু বউ এখনি মায়ের আদরে ভাগ বসাচ্ছে।

—” পাপড়ি বললেন,কি হিংসে হয় আমাদের জুটি দেখে?

—” এবার প্রণয় হো হো করে হেসে দিল।

তারপর পাপড়ি পুষ্পকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

—” তখন কি যেন বলেছিলাম তোমাকে?”

—” পুষ্প বললো,কি?”

—” ঐ যে ছেলেটাকে কতটুকু ফাঁসিয়েছো। এবার আমি অনুমতি দিচ্ছি,যতরকম ভাবে ফাঁসানো যায় ফাঁসাও। একেবারে সুপারগ্লুর মত আটকে ফাঁসাও। যেন আর নড়াচড়া করতে না পারে তোমার অনুমতি ছাড়া। একদম বেঁধে রাখবে আঁচলে। আমিতো পারিনি,তাই সেই দায়িত্ব এখন তোমার।
একেবারে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধো। আর খুব শীঘ্রই আমি বিয়ের ডেট ফিক্সড করছি,তেমন প্রোগ্রাম করবো না। তার আগে এনগেজমেন্ট এর ডেট করতে হবে। তোমার পরীক্ষাটা শেষ হোক,তারপর। পুষ্প লজ্জায় কোন কথা বলতে পারছেনা,আর প্রণয় দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছে।

পাপড়ি কথা বলা শেষ করে দাঁড়িয়ে পুষ্পর কপালে আদর করলেন। তখন প্রণয় হতাশ গলায় বললো,আজ ছেলে বলে কেউ আদর করে না।
পাপড়ি প্রণয়ের পিঠ চাপড়ে বললেন,ছেলেদের জন্য এটাই আদর। প্রণয় কান্নার ভাব করে রাখলো মুখটা। আর এটা দেখে পুষ্প লুকিয়ে মুখ টিপে হাসলো। যদিও প্রণয় ঠিকই সেটা বুঝতে পারলো।
পাপড়ি পুষ্পকে আবার জড়িয়ে ধরে চলে গেলেন। আর বললেন,তোরা কথা বল,আমি যাই।

পাপড়ি চলে যেতেই প্রণয় চোখেমুখে দুষ্টমির ভঙ্গী করে পুষ্পর দিকে তাকালো। পুষ্প সেটা দেখে চলে যেতে নিলেই, প্রণয় পেছন থেকে দু’বাহুতে আবদ্ধ করে পুষ্পকে। পুষ্প সর্বাঙ্গে শিউড়ে উঠলো। ওর শরীরের শিরায়-উপশিরায় একটা অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতি ঢেউ খেলে গেল। আবেশে দু’চোখ বুজে ফেললো। ঠিক তখনি ঘটলো অঘটন।
পাপড়ি আবার কেন জানি এসেছিলেন।

এসেই এ দৃশ্য দেখে, গলা খাঁকারী দিয়ে বললেন,
—” আষ্টেপৃষ্টে বাঁধতে বলেছি ফুল কে,তোকে নয়।
পাপড়ি পুষ্পকে ফুলই ডাকবেন বলেছেন।

প্রণয়কে বললেন,”আর তোর লাইসেন্স পাবি বিয়ের পর,তাই এখন সংযত থাকাই বেটার। পাপড়ির গলার স্বর শুনে পুষ্প চ্যাত করে দূরে সরে যেতে নিয়েছিলো,কিন্তু বেহায়া প্রণয় ছাড়লে তো!
অগত্যা এমন লজ্জাজনক অবস্থা পুষ্পকে হজম করতে হলো। কিন্তু পাপড়ি চলে যাওয়ার সাথে সাথে প্রণয়ের পেটে কনুই দিয়ে দিলো এক গুঁতা। প্রণয় পুষ্পকে ছেড়ে পেটে হাত দিয়ে ব্যাথা পেয়েছে এমন ভাব করতে লাগলো।

পুষ্প দূরে সরে এসে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বললো,
—” মা কি বলেছে শুনেন নাই?”
আপনার এখন লাইসেন্স নেই,আগে লাইসেন্স অর্জন করুন,তারপর। পুষ্প প্রণয়কে চোখ টিপে দিল,আর বেচারা প্রণয় হ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো। আর মনে মনে বললো,মা জননী আসারও আর টাইম পেলেন না,আর এই কথাটা এখনই বলতে হলো!” এমনিতেই এই মেয়ে আমাকে চুম্বকের মতো টানে ঠিকই,কিন্তু কাছে আসতে চায় না। হায় পোড়া কপাল!” এখন বিয়ে করেই লাইসেন্স অর্জন করতে হবে। এখানে তো আর কোন দুই নাম্বারির সিস্টেম নাই। সবই আমার কপাল।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here