বাসন্তী
পর্ব-১৩
লিমু

—–” ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি…..
—–” আমি হলাম কলঙ্কিনী…..

——-” পাশের রুম থেকে হঠাৎ এ গানের টোন টা আসতেই পুষ্প তড়িঘড়ি করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো,মনে হচ্ছে ও বড় কোন অপরাধ করে ফেলেছে। আর প্রণয়ের নাক দিয়ে, চোখ দিয়ে একনাগাড়ে পানি পড়ছে,তারপরও মুখে একটা মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। পুষ্প মনে মনে ভাবলো,পাগল নাকি লোকটা?
নাক,চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,তারপরও বেহায়ার মতো ঠোটে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।

-” পুষ্প প্রণয়কে কোনকিছু না বলে রুমের ভিতর চলে গেল। গিয়ে দেখে কলিই বসে বসে ঐ গানটা শুনছিল,এই মেয়েকে দুটো কানমলা দিতেই হবে এখন। পুষ্প যেই কানমলা দিতে যাবে,কলি তার আগেই সোফার কুশন দুইটা দুই কানে চেপে ধরলো। কারন কলি আগেই পুষ্পর উপস্থিতি টের পেয়ে গেছিল আর পুষ্প কি করতে চাইছিল তাও কলির জানা। তাই দুর্যোগ প্রতিরোধের জন্য যেমন পূর্ব ব্যবস্থা নিতে হয়,ঠিক সেরকম কলিও ওর কান বাঁচানোর ব্যবস্থা নিল।

-“তাই পুষ্প হেসে কলিকে বললো,” যা তোর স্পেশাল গেস্টের অবস্থা চেক কর গিয়ে।

-” কলি বিড়বিড় করে বললো, গেস্ট তো তোমার কাছাকাছি থাকলেই ভালো থাকে,আমি গিয়ে কি করবো। হার্টের পেশেন্টের কাছে তো হার্টের ডাক্তারেরই যাওয়া উচিত,তাই না।

-” পুষ্প জিজ্ঞাস করলো,কি বিড়বিড় করছিস,ভূতে ধরেছে নাকি?

——” নাহ কিছুনা তো।

—–“তাহলে?

—-” তাহলে যাচ্ছি,এত প্রশ্ন করো কেন বাপু? আমি একটা নাদান বাচ্চা মেয়ে,এত প্রশ্ন করলে গলা শুকিয়ে আসে।

——–” পুষ্প অদ্ভুত ভঙ্গীতে কলির দিকে তাকিয়ে বললো,তুই যদি বাচ্চা হস,তাও আবার নাদান বাচ্চা! তাহলে না জাদুঘরের লোকেরা তোকে খুঁজবে,এমন বিচিত্র প্রজাতির নাদান বাচ্চাটাকে সাধারন মানুষকে দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

—–” কলি মুখ ভেংচি কেটে চলে গেল।

-” আর পুষ্প আবার ভাবনার জগতে পাড়ি জমালো। ওর হাতের দিকে তাকালো,একটু আগে প্রণয়কে বরফি খাওয়ানোর সময় ভুলবশত ওর আংগুলে কামড় লেগে যায়। অবশ্য এই কাজটা ভুলবশত হয়েছে, নাকি ইচ্ছাকৃত সেটা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে পুষ্পর মনে। আর সন্দেহটা দ্বিতীয় বিষয়টার প্রতিই বেশি যাচ্ছে। পুষ্প মনে মনে একশো কোটি বকা দিল প্রণয়কে,তারপর আবার নিজেই লাজুক হাসি দিল আংগুলের দিকে তাকিয়ে। ওর সাথে কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছেনা পুষ্প। মাঝে মাঝে আমাদের সাথে অদ্ভুত কিছু বিষয় ঘটে। আমরা যেটা নিয়ে ভাবতে চাইনা,মনের অজান্তেই সেই ভাবনারা ঘুরঘুর করে মনের গহীনে। কখনো তা বুঝতে পারি আমরা,আবার কখনো পারিনা। কিন্তুু সেটা বুঝতে পারলেও মনে শুরু হয় ছটফটানি। সে এক অদ্ভুত,ভারী অদ্ভুত বিষয়। আর পুষ্পর সাথে এটাই ঘটছে এখন।

-” কিন্তুু আমিতো এমনটা চাইনি,আমিতো তাকে নিয়ে একদম ভাবতে চায়না। তবে কেন সে আমার ভাবনার রাজ্যে এসে সব এলোমেলো করে দিচ্ছে,কেন!

-” এ যুগে এত সহজে কাউকে ভরসা করা যে খুব কঠিন কাজ। ক’জন পারে বিশ্বাসের মূল্য দিতে। এই যে প্রতিনিয়ত এত বিচ্ছেদ ঘটছে,তারাও তো একজন আরেকজনের কাছে নিজের বিশ্বাস টুকু সমর্পণ করেই পথচলা শুরু করেছিল। তাহলে কোথায় হারিয়ে যায় সেই বিশ্বাস?

-” এটা ভেবে পুষ্প একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আর মনে মনে বললো,নাহ পুষ্প তুই এতো সহজে দুর্বল হয়ে যাওয়ার মেয়ে না। আবেগকে এতো পাত্তা দিতে নেই,দিলে কষ্টই পেতে হয় শুধু জীবনে।

-” আর সে যদি একান্তই আমাকে চায়,তবে যেন একেবারে নিজের করে নেয়, তখন আমি কোন আপত্তি করবোনা। এরচেয়ে বেশিকিছু আমি আর এখন ভাবতে পারবোনা। সে যদি আমার জন্য হয়ে থাকে,তাহলে আমি তারই হবো। আর নয়তো শুধু শুধু কষ্ট পাওয়ার কোন মানে হয় না। আর আমি থাকেও কোন কষ্ট দিতে চায়না।

.

——-” প্রণয় চলে যাওয়ার সময় পুষ্প আর প্রণয়ের সামনে যায় নি। কেন যেন অসস্থি লাগছিলো, টেবিলের ঘটনাটার জন্য। ঐভাবে মুখে তুলে দেয়ার কি ছিল,পুষ্প এখন নিজেই নিজেকে বকা দিচ্ছে। বেহায়ার মতো এ কাজটা না করলেও পারতি পুষ্প,ব্যাটা কি ভেবে নিয়েছে কে জানে। যখন চলে যাচ্ছিল নিচে গিয়ে পুষ্পর রুমের জানালার দিকে তাকিয়ে কেমন জানি একটা হাসি দিল। চোখমুখ ভর্তি তার দুষ্টুমি উপচে পড়ছিল,উফফ যেটা দেখে পুষ্পর রাগ হচ্ছিল। তবে প্রণয়ের প্রতি নয়,নিজের আজকের কার্যকলাপের প্রতি। প্রণয় নিচে গিয়ে পুষ্পর জানালার দিকে তাকিয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল।

——” হয়তো পুষ্পকে একপলক দেখার জন্য। পুষ্পও দাঁড়িয়েছিল ঠিকই,তবে জানালার আড়ালে,তাই প্রণয় দেখতে পায়নি। পুষ্প ঠিকই প্রণয়কে দেখেছে লুকিয়ে।

——-” প্রণয় চলে যাওয়া অব্দি তাকিয়ে রইলো।
কি যেন আছে লোকটার মধ্যে,মানুষকে সহজে আকৃষ্ট করে ফেলে। কলি তো পুরো ফ্যান হয়ে গেছে এই ত্রিপলির,তা ওদের বন্ডিং দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
কিন্তুু হুট করে তো তা হয়নি,নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে এর মধ্যে। আর সেটা ঠিক কি, তা পুষ্পর জানতে হবে।

——” হঠাৎ পিছনে কারো কন্ঠ শুনে পুষ্প লাফিয়ে উঠলো। সে বললো,” এভাবে কাউকে লুকিয়ে দেখা কি ঠিক?
আর দেখলেও দেখার কারনটা কি জানতে পারি?

নাকি লুকিয়ে দেখলে ভালোবাসা বাড়ে কোনটা?

.

___তোমার ত্রিপলি—সরি—প্রণয় ভাইয়া তোমার করা স্পেশাল রান্না খেয়ে এখন বিছানায় পড়ে আছে। রুম আর বাথরুমে দৌড়াতে দৌড়াতে বেচারার অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে। গত চব্বিশ ঘন্টায় আমার সাথে কথায় বলতে পারে নি,শুধু বলেছিল, ” তোমার বোনের ভালোবাসা আমি হজম করলেও, আমার পেট হজম করতে পারেনি। আজকাল ভালোবাসায়ও ভেজাল ঢুকে গেছে।

——” এটা শুনে তো আমি আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারিনি,পরে অবশ্য বুঝেছি।
বেচারার শরীর একদম দুর্বল হয়ে গেছে,আমাদের কিন্তুু মানবতার,সামাজিকতার খাতিরে হলেও উনাকে দেখতে যাওয়া উচিত।
একদমে কথাগুলো বলে কলি থামলো।

——” পুষ্পর মুখের দিকে তাকালো,একটু গম্ভীর মনে হচ্ছে। তার মানে রাজি হতে পারে যাওয়ার জন্য,কলি মনে মনে বললো ইয়েস। কিন্তুু কলিকে হতাশ করে দিয়ে পুষ্প বললো,” কে বলেছিল তাকে ঝাল ভর্তা খেতে? যে জিনিস খেতে পারে না,সেটাই বেশি করে খেয়ে কি প্রমাণ করতে চাইলো?
এসব করে কোন লাভ নেই,বলে দিস তোর ত্রি–প–লি ভাইয়াকে।

——” কলির মুখটা মুহুর্তে গ্রীষ্মের মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো অন্ধকার হয়ে গেল।
কোন কাজে নিজেকে সফল মনে করার,ঠিক পরমুহুর্তে ব্যর্থ হলে যেমন লাগে, কলির ঠিক তেমন লাগছে। কলি অসহায়ের মতো পুষ্পর দিকে তাকিয়ে রইলো।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here