বাদামী সংসার
পর্ব ১৮
মিশু মনি
দোয়েলের মাঝেমাঝে খুব অভিমান চাপে। নীলাক্ষীকে দেখলেই ওর হিংসে হয়। চার চারটা দিন ওরা রাঙামাটির এক গহীন লেকের মাঝখানে রাজবাড়ীর মতো রিসোর্টে হানিমুন সেরে ফিরেছে। বাসায় ফিরেও যখন তখন প্রেমের বানে দুজনে ভেসে যায়। হয়তো নীলাক্ষী ছাদে কাপড় শুকাতে দিতে গেছে ,অম্লান দৌড়ে ছাদে গিয়ে বউকে সহায়তা করে। মাঝেমাঝে শাড়ির প্যাঁচে নিজেদেরকে আবৃত করতে করতে দুজনে শাড়ির ভেতর লুকিয়ে দুষ্টুমি করে। দরজা খোলা থাকলে হাসাহাসির শব্দ ভেসে আসে দোতলার সিঁড়ি পর্যন্ত। দোয়েল কৌতুহল চেপে রাখতে পারে না। পরপর দুদিন এই দৃশ্য দেখে ওর বুকের ভেতর কেমন উচাটন করে। কি সাংঘাতিক ভাবেই না ওরা প্রেম করছে! কে বলবে অম্লান এর আগে কাউকে পাগলের মতো ভালো বাসতো! পুরনো স্মৃতি গুলো ভুলেও কত আদর মাখিয়ে ভালোবাসাবাসি করে ওরা, একসাথে বসে চা খায়, সূর্যাস্ত দেখে। মাঝেমাঝে অম্লান নীলাক্ষীকে নিয়ে বারান্দায় বসে গানও গায়। বউয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে গল্প করে। সুযোগ পেলে আলিঙ্গন, খুচরো চুম্বন কিংবা বাতাসী প্রেমের আলাপন। এসব চোখ এড়ায় না দোয়েলের। কেন যেন ওদেরকে একসাথে দেখলেই দোয়েলের চোখ আনচান করে। ওদের গভীর প্রণয় দেখার জন্য মনে অধীরতা জাগে। খুব ছটফট লাগে ওর।
দোয়েলের শরীর জুরে দুঃখ, মনের প্রতিটা কোণায় কোণায় দুঃখ। দুঃখেরা ওকে একদণ্ড একলা হতে দেয় না। ওর স্বামী কেন এমন রোমান্টিক নয়? সে কেন বাসায় ঢুকেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়, কেন মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটায়। ওকে সে কখনো কোনোকিছুরই অভাবে ফেলে নি। কিন্তু কই কোনোদিনো তো বারান্দায় গিয়ে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো না, কখনো বসে ঝুম বৃষ্টি দেখতে চাইলো না, কোনোদিনও একসাথে হাতে হাত রেখে হাসাহাসি করতে করতে রিকশায় চড়েও ঘুরতে নিয়ে গেলো না। এসব কি কেবলই আবেগ? একজন মেয়ে হয়ে স্বামীর থেকে একটু আদর, একটু আবেগ চাওয়াটা নিশ্চয় অন্যায় আবদার নয়। তবে কেন ওর স্বামী অমন হলো না? অম্লান ও নীলাক্ষীর খুনসুটি ভরা প্রেম দেখলেই ওর মনে আগুন ধরে, চোখ জ্বালা করে, শরীর উচাটন করে। কিইবা করার আছে দু একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া?
নীলাক্ষীকে রোজ অফিস যেতে হচ্ছে। সকাল সকাল উঠে রান্নাবান্নায় টুকটাক সহায়তা করার মন নিয়েই নীলাক্ষী রান্নাঘরে ঢোকে, কিন্তু রান্না শেষ হবার আগেই ওকে অফিসে দৌড় লাগাতে হয়। কখনো নাস্তা খাওয়া হয় আবার কখনো হয় না। দ্রুত তৈরি হয়ে অম্লানকে ডেকে দিয়েই ছুটে বেরিয়ে যায়। অম্লান চোখ ডলতে ডলতে উঠে দেখে নীলাক্ষী অফিসে চলে গেছে। বেচারা হা হুতাশ করতে করতে নীলাক্ষীকে একটা টেক্সট পাঠায়, ‘সাবধানে থেকো।’ এরপর নিজেও নাস্তা সেরে অফিসে চলে যায়। অফিসে গিয়ে আর ভালো লাগতে চায় না। নীলাক্ষীর কথা বারবার মনে পড়ে, পাশাপাশি বসে গল্প করতে ইচ্ছে করে। কাজের ফাঁকে দু একটা এসএমএস চালাচালি হয় এই যা। তাও যেন মন ভরতে চাইছে না। কোথায় একটা না পাওয়া না পাওয়া ভাব সর্বদা তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
আজ অম্লানই আগে বাসায় ফিরলো। নীলাক্ষী অফিস থেকে ফিরে ব্যাগ রেখে গোসলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, অম্লান এসে খপ করে নীলাক্ষীর হাত ধরে ফেললো। দুহাত চেপে নীলাক্ষীকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে ধরে অম্লান বললো, ‘তোমাকে ক’দিন ধরে একেবারেই কাছে পাচ্ছি না। ভালো লাগছে না আমার।’
‘ওমা, সারা রাত তো তোমার পাশেই থাকি। কত কথা বলি। তাও ভালো লাগছে না?’
‘না। তুমি এক কাজ করো, বাসায় থাকো। চাকরি ছেড়ে দাও।’
‘তাহলেও কি ভালো লাগবে নাকি? আমি বাসায় থাকলেও তো তোমাকে পাবো না। তোমাকে তো অফিসে যেতেই হবে তাই নয় কি?’
অম্লান নীলাক্ষীর এক গালে চুম্বনের আদর মাখিয়ে দিয়ে বললো, ‘চলো এক কাজ করি। তুমি আমি দুজনেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাসায় বসে থাকি। আর প্রেম করি।’
নীলাক্ষী হাসতে হাসতে বললো, ‘তাই না? পেট চলবে কি করে?’
‘ভালোবাসা খেয়ে।’
‘সরো তো। আমি গোসল করতে যাবো।’
নীলাক্ষী অম্লানের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বারান্দায় কাপড় আনতে যায়। অম্লান বারান্দায় গিয়ে নীলাক্ষীকে পেছন দিক থেকে জাপটে ধরে আদুরে গলায় আবদার করে বলে, ‘আরেকটু পরে দুজনে একসাথে গোসল করি?’
নীলাক্ষী ঘাড় বাঁকিয়ে দুষ্টুমি হাসি হাসে। ওরা জড়াজড়ি করে ঘরে ঢোকে। ঘরের দরজা আটকে দেয় শব্দ করে। করিডোরে দাঁড়িয়ে ওদের সেই দরজা আটকানোর দৃশ্য দেখে দোয়েল। ওর এবার আর সহ্য হচ্ছে না। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে গায়। তার স্বামীও তো তাকে সোহাগে ভরিয়ে দেয়, অথচ নীলাক্ষীর কি সৌভাগ্য, ওকে কত আবদার করে কাছে টেনে নেয় অম্লান। অথচ তার স্বামী কেবল মাঝরাতে নিজের খোড়াকটুকুই মেটায়। স্ত্রীর সুখ, চাওয়া পাওয়ায় কোনো খেয়ালই নেই তার। দোয়েলের ভালো লাগছে না। মেজাজ চড়চড় করে বেড়ে যাচ্ছে আজকে। নব বর বধূর এমনতর প্রণয়লীলা দেখে ভাবে, ‘এরা দেখি বাড়িটাকে প্রেমের বাজার বানিয়ে ফেলেছে।’ ভেতরে ভেতরে কেমন ফুঁসতে থাকে। ঘরে এসে খাটের একটা খুঁটি ধরে ঝিম মেরে বসে থাকে। কয়েক মুহুর্ত পর দাদীর ঘরে গিয়ে বলে, ‘দাদী, এসব কিন্তু আমার একদমই ভালো লাগছে না।’
দাদী চোখ তুলে তাকান দোয়েলের দিকে। অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, ‘কি ভালো লাগছে না রে?’
‘তোমরা কিছু দেখো না নাকি? অম্লান একেবারে সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’
‘অম্লান? কি করলো ও আবার? কিছু বলেছে তোকে?’
‘বলতে হবে কেন? একটু চোখ কান খোলা রাখো দাদী। নাকি সবকিছু দেখেও না দেখার ভান ধরে থাকো?’
দাদী মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দোয়েলকে কাছে ডেকে বললেন, ‘আয় দাদুভাই এখানে আয়। তুই কি নিয়ে রাগ করছিস বল তো আমাকে?’
‘ওরা যে এভাবে ঘরে বাইরে সবখানে ঢলাঢলি করে বেড়াচ্ছে তোমরা দেখো না? রুমের বাইরে কিসের এত রোমান্স বলোতো দাদী? সবসময় এসব দেখলে গা টা কেমন রিনরিন করে না?’
দাদী অট্টহাসি হেসে বললেন, ‘নতুন নতুন বিয়ে হলে অমন হয় রে দাদুভাই। এসব তো অস্বাভাবিক কিছু না। রাগ করলে তো হবে না। স্বামী স্ত্রীকে তাদের মতো একে অপরকে ভালোবাসার সুযোগটা দিতে হবে না? আর তোর যদি বেশি খারাপ লাগে তাহলে কথা বল। তুই ওর বড় জা। বান্ধবীরই মতো। ওকে বলে দিবি যেন একটু সামলে থাকে।’
দোয়েলের রাগ খানিকটা পড়ে যায়। ও ঘনঘন নিশ্বাস নিতে নিতে বললো, ‘অস্বাভাবিক কিছু না সেটা তো আমিও বুঝি। আমি তো ওদেরকে প্রেম করতে বারণ করছি না দাদী। শুধু যদি মুরুব্বিদেরকে মান্য করে চলে আরকি। তোমার ছেলে আর ছেলে বউয়েরা বা বাইরের কেউ ওদেরকে এমন ঢলাঢলি করতে দেখলে কি বলবে বলোতো? মান সম্মান বলেও তো কিছু থাকে নাকি? আমি পারবো না। তুমি ওকে বলে দিও যেন ঘরের বাইরে ঢলাঢলি কম করে।’
দোয়েল যেমন পাখির মতো ফুড়ুৎ করে এসেছিলো তেমন ফুড়ুৎ করেই চলে গেলো। দাদী বেশ কিছুক্ষণ চোখ ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলেন। মনেমনে বললেন, বড় জা হয়ে ছোট জা’কে নিয়ে নালিশ দিচ্ছে। এ আবার কি লজ্জার কথা! অবশ্য অম্লানও হয়েছে কেমন জানি। মুরুব্বি টুরুব্বি মানে না। বিয়ের দিন জেদ ধরে বসলো, সে একাই গাড়িতে থাকবে তার বউকে নিয়ে। আবার মায়ের সাথে রীতিমতো ঝগড়া করে বউকে নিয়ে হানিমুনে গেলো। ছেলেটা কি লাজ লজ্জা সব ধুয়ে খেলো নাকি? ছি ছি, বাইরের লোকে শুনলে কি বলবে?’ কথাগুলো ভেবে দাদী ভ্রুয়ের মাঝে ভাঁজ ফেলে মুখ বাঁকা করে বসে রইলেন। ওনার অনেক বছর আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। অম্লানের দাদাও অম্লানের মতোই ছিলো, লাজ লজ্জার বালাই ছিলো না।
প্রফুল্ল টানা এক ঘন্টা ব্যায়াম করে ঘাম ঝড়িয়ে হাঁফাচ্ছে। তার বড্ড পানির তেষ্টা পেয়েছে। পানি খেতে হলে আবার বাড়িতে যেতে হবে। ব্যায়ামের সঠিক জায়গা পাচ্ছে না বলে বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে এসে ব্যায়াম করছিলো সে। ছাদে লাফালাফি করলে দ্রিম দ্রিম আওয়াজ হয়, আবার লোকজন কেমন করে যেন তাকায়। বিশেষ করে পাড়া প্রতিবেশীরা। যদিও প্রফুল্ল তাদেরকে একেবারেই পাত্তা দেয় না। বাসায় জগিংয়ের জায়গা নেই। বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে একটা পার্কের মতো জায়গা, সেটাই অবলম্বন। জিমে গেলে আলাদা টাকা খরচা করতে হয়, তাছাড়া জিমে যাওয়ার মতো অতটাও প্রয়োজন নেই তার। শরীরটা বেশ ভালোই, শুধু নিজেকে চাঙা রাখতে ব্যায়াম করা।
হেঁটে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে একজন মুরুব্বির সাথে দেখা। তিনি বেশ আগ্রহ ভরেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘ব্যায়াম করে ফিরছো?’
প্রফুল্ল দাঁড়ালো। মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলো, ‘জি আংকেল। ব্যায়াম করে ফিরছি।’
‘কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি মা?’
‘জি বলুন।’
‘আমাকে ব্যায়াম করা শেখাবে?’
প্রফুল্ল ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখা দিলো। বললো, ‘আপনি তো সকালে এমনিই দৌড়াতে পারেন।’
‘আসলে কি জানো? তোমার আন্টি ইদানীং আমাকে রাতে খাবার দেয় না। বলে তুমি দিনদিন মোটা হয়ে যাচ্ছো। সারাজীবন ধরে নিজের মনের মতো খেয়েছি। শেষ বয়সে এসে যদি এমন করে খাওয়া বন্ধ করতে হয় তাহলে কেমন লাগে বলোতো?’
প্রফুল্ল’র সত্যিই কেমন যেন লাগলো। মুহুর্তেই মনে পড়ে গেলো বাবার কথা। অসুখ বিসুখ আর নানান বাহানায় আম্মুও তাকে ভালোমতো খেতেও দেন না। সারাক্ষণ এটা বারণ, সেটা বারণ। আর চায়ে তো চিনি একেবারেই দেবেন না। কিন্তু একজন মানুষের তো খাওয়ার সাধ জাগতেই পারে। তাকে খাবার থেকে বঞ্চিত করলে নিশ্চয় মনটা উতলা হয়ে থাকে।
প্রফুল্ল হেসে বললো, ‘আংকেল আপনি কাল সকালে এখানে আসবেন। আমরা একসাথে জগিং করবো। আর আমি আপনাকে দু একটা ব্যায়ামও শিখিয়ে দিবো। ওজন একদম কণ্ট্রোলে এসে যাবে।’
লোকটা হাসিমুখে চলে গেলেন। প্রফুল্ল আনমনা হয়ে ওনার কথা আর বাবার কথা ভাবতে ভাবতেই বাসায় ফিরলো। বাসায় ঢুকে দেখলো মা নিজের ঘরে আর বাবা বারান্দায়, পত্রিকা পড়ছেন। প্রফুল্ল চুপিচুপি বাবার পাশে গিয়ে দেখলো মা এক কাপ গ্রিন টি দিয়ে গেছেন। ও নিঃশব্দে রান্নাঘরে ঢুকে এক কাপ গরম গরম দুধ চা কাপে ঢেলে নিয়ে এসে বাবাকে বললো, ‘এই নাও তোমার চা।’
প্রবীর মিত্র চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন। ওনার চোখের পলক পড়ছে না মনে হচ্ছে। প্রফুল্ল পাশে বসতে বসতে বললো, ‘আব্বু খেয়ে নাও তো। আম্মু কাজে ব্যস্ত। আম্মুকে দেখলে কাপটা আমাকে দিয়ে দিবা। নাও খাও।’
প্রবীর মিত্র বেশ ভয়ে ভয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিলেন। ওনার চোখেমুখে একইসাথে উদ্বেগ ও বিস্ময়। বেশ বড় একটা চুমুক খেয়ে তৃপ্তির সাথে বললেন, ‘আহ! কি স্বাদ, চা নয় যেন অমৃত। কতদিন দুধ চা খাই না।’
বাবার মুখে এমন তৃপ্তির কথা শুনে প্রফুল্ল’র ভীষণ ভালো লাগে। ও বললো, ‘তোমার নিশ্চয় প্রতিদিন আম্মুর হাতের মালাই চা খেতে ইচ্ছে করে তাইনা আব্বু?’
প্রবীর মিত্র অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। বললেন, ‘না না। আমার তো বয়স হচ্ছে, সুগার নেয়াটা একদম ঠিক হবে না। গ্রিন টি শরীরের জন্য খুব উপকারী।’
‘আমি জানি সেটা। কিন্তু তোমার খেতে একদমই ভালো লাগে না। তাও জোর করে খাও। কেন আব্বু? তোমার যা খেতে ইচ্ছে করবে তুমি তাই খাবে। শুধু খাবারে ব্যালেন্স রাখলেই হলো। আম্মু তোমাকে একেবারেই চিনি, দুধ, কলিজা এসব খেতে দেয় না। কিন্তু সত্যি হচ্ছে তোমার এগুলোই খেতে বেশি ভালো লাগে। আম্মুর কথা না শুনে মাঝেমাঝে একটু করে খাবে। তাহলে মনটা আর মরে যাবে না। বুঝেছো?’
প্রফুল্ল কেমন শাসনের সুরে কথাগুলো বললো। যেন ছোট্ট বাচ্চা ছেলেকে একজন মা সুন্দর করে বলছেন। প্রবীর মিত্রের ভীষণ ভালো লাগলো। চায়ের কাপটা প্রফুল্ল’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘রেখে আয়। তোর আম্মু দেখলে ঝাড়ি দেবে।’
‘একদমই না। আম্মু কিচ্ছু বলবে না। বললে আমি সাপোর্ট করবো। তুমি যা খেতে ইচ্ছে করবে আমাকে বলবে। কিন্তু হ্যাঁ, রোজ আমার সাথে এক্সারসাইজ করতে হবে।’
‘ওরে বাপরে, এক্সারসাইজ! আমি নাই ওসবে।’
‘তাহলে চুপিচুপি খেতেও দিবো না। ব্যায়াম করলে তুমি ফিট থাকবা আব্বু। আমি তো চাই আমার আব্বুটা ইয়াং থাকুক।’
‘অত ইয়াং থাকলে নাতনী আমাকে দাদু বলে ডাকতে লজ্জা পাবে তো।’
‘আব্বু, আমার বিয়ের ব্যাপারে একটাও কথা বলবা না। আমি অনেক ভালো আছি।’
প্রফুল্ল বাবার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে উঠে ঘরের ভেতর চলে গেলো। প্রবীর মিত্র বেশ হকচকিয়ে যাওয়া চেহারা নিয়ে বসে রইলেন। গত দুদিনে মেয়ের সাথে ওনার সম্পর্কটা আবার ভালো হতে শুরু করেছে। একটা বছর বাবা মেয়ের মাঝে একেবারেই সম্পর্কটা ভয়াবহ খারাপ ছিলো। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারতেন না। সব আবার স্বাভাবিক হয়ে যাক তিনি তো সেটাই চান।
প্রবীর মিত্র একটা বড় নিশ্বাস ফেললেন।
চলবে..