#বসন্তের_এক_সন্ধ্যায়
#পর্ব_৭
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)
“সূর্য ডুবে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। মসজিদের মাইকে আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। রোদেলা বেলকনিতে বসে ছিল উদাস হয়ে। আজান শেষ হলে নামাজের জন্য চলে যায় রোদেলা। নামাজ শেষ করে বিছানায় বসতেই ফোনে ইশানের কল। রোদেলা মুচকি হেসে কল রিসিভ করে”।
‘আসসালামু আলাইকুম মশাই’
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। রোদ পাখি একটু বাসার নিচে আসো না’।
‘ওমা কেন’?
‘আরে আসোই না’।
“রোদেলা আর কথা না বাড়িয়ে বাসার নিচে চলে গেল।
রাস্তার এক পাশে ইশান দাড়িয়ে আছে,
হাতে একটা বক্স।
রোদেলা কে দেখে এক গাল হাসি দিয়ে এগিয়ে এলো তার কাছে। রোদেলার হাতে বক্সটি ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘এখানে একটা লাল টুক টুকে শাড়ি আছে। কাল যেনো তোমাকে এই শাড়িতেই দেখি। আমি অপেক্ষায় থাকবো। আর তোমার জন্য কালকে একটা সারপ্রাইজ আছে’।
‘কি সারপ্রাইজ’?
‘বলে দিলে কি আর সেটা সারপ্রাইজ থাকে নাকি’?
‘হু তাও ঠিক’।
‘আচ্ছা এখন বাসায় যাও। কালকে দেখা হবে। ভালোবাসি রোদু রানী’।
‘আমিও ভালোবাসি’
“আর কোনো কথা না বলে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে বক্স থেকে শাড়ি’টা বের করে দেখতে লাগলাম। গোল্ডেন আর লালের কম্বিনেশন একটা শাড়ি তার উপর স্টোনের কাজ করা। শাড়িটা সত্যি খুব সুন্দর। ইশানের পছন্দ আছে বলতে হবে। আমি শাড়ি’টা বুকে জড়িয়ে ধরে ভাবতে লাগলাম, কালকে ইশান কি সারপ্রাইজ দিতে পারে? এসব আকাশ-পাতাল ভাবছিলাম এমন সময় হঠাৎ আমার ফোন’টা বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখি স্ক্রিনে ‘ইশান’ নামটা জ্বলজ্বল করছে। মুচকি হেসে ফোন’টা তুললাম”।
‘আসসালামু আলাইকুম’।
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কি ব্যাপার, আমার কথা ভাবা হচ্ছিল বুঝি’?
‘তুমি কি করে বুঝলে’?
‘আমার প্রিয়তমার মনের কথা আমি না বুঝলে আর কে বুঝবে শুনি’?
‘কি ব্যাপার মশাই, আজকে হঠাৎ এতো রোমান্টিক মুডে’?
‘তোমার সাথে কথা বলার সময় আমি সবসময়’ই রোমান্টিক মুডে থাকি হিহিহি’।
‘হুহ্ ঢং’
আচ্ছা শাড়ীটা দেখছো? পছন্দ হয়েছে’?
‘খুব পছন্দ হয়েছে’।
“এভাবে কথা বলতে বলতে দু’জন ঘুমিয়ে পড়লাম। বসার ঘরের হ’ই’চ’ই এর আওয়াজে আমার ঘুম ভে’ঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯ টা বেজে গেছে। ইসসস আজকে কলেজ’টা মিস হয়ে গেলো কিন্তু আজকে আম্মু আমাকে ডাকলো না কেন? ব্যাপার কি! এসব ভাবতে ভাবতে বসার ঘরের দিকে গেলাম। গিয়ে দেখি আম্মু রান্নাবান্না নিয়ে অনেক ব্যস্ত। ঘরও অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে, আম্মুর কাছে গেলাম”।
‘আম্মু আজকে কি বাসায় কেউ আসবে’?
‘হুম তোকে দেখতে আসবে। তুই তাড়াতাড়ি গোসল করে রেডি হয়ে যা’।
‘কিহ্! এসব কি বলছো আম্মু? আমি এখন বিয়ে করবো না। তুমি আব্বুকে একটু বুঝাও প্লিজ’।
‘তোর আব্বুর নাকি ছেলে পছন্দ হয়েছে। ভালো পরিবার, ভালো ছেলে। এখন তোর আব্বুকে কিছু বললে রাজী হবে না’।
‘ধুররর’।
“রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে ফোনটা নিয়ে ইশানকে কল দিলাম কিন্তু ওর ফোন বন্ধ। রাগে-দুঃখে কেঁদে ফেললাম। এতোকিছুর থেকে ম’রে গেলেই ভালো হতো। এই জীবনে ইশানের জায়গায় অন্য কাউকে গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। এসব আকাশ-পাতাল ভাবছিলাম এর মাঝে আম্মু এসে আবার তাড়া দিলো। তাই আর কি করার, গোসল করে ইশানের দেওয়া শাড়ি’টা পড়লাম। কেনো যেনো এটাই পড়তে মন চাইলো তাই আর মনকে বাঁধা দিলাম না। রেডি হয়ে চুপ করে বসে আছি তারমধ্যে বসার ঘর থেকে হইচই এর আওয়াজ ভেসে এলো, বুঝলাম উনারা হয়তো চলে এসেছে। হঠাৎ আমার বুকটা মুচড়ে উঠলো, তাহলে কি আমি ইশানকে সত্যি হারিয়ে ফেলবো? মাথা কাজ করছে না আমার। আবার ইশানকে কল দিলাম কিন্তু এবারও ফলাফল শূন্য, ইশানের ফোন বন্ধ। কিছু ভালো লাগছে না তাই বসা থেকে উঠে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রইলাম”। হঠাৎ পিছন থেকে আম্মু এসে বললো…
‘কিরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? রেডি হয়েছিস? দেখি তো’।
‘আমি কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম’।
‘বাহ্ আমার মেয়েটাকে তো খুব সুন্দর লাগছে আজকে। কিন্তু এভাবে মুখ ভার করে আছিস কেন মা? উনারা কি ভাববে বল তো? উনাদের সামনে একটু হাসি হাসি মুখে থাকিস। এখন চল, উনারা চলে এসেছে’।
“আম্মু আমাকে তাদের সামনে নিয়ে এলো। আমি তাদের সালাম দিয়ে আস্তে করে বসলাম। কারো দিকে তাকালাম না। হঠাৎ তাদের মধ্যে কেউ একজন বলে উঠলো ‘মেয়ে তো আমাদের পছন্দ করাই। এই মেয়েকেই আমার বাড়ির বউ করে নিয়ে যাবো। আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকলে আমরা আজকে’ই আকদ পড়িয়ে ফেলতে চাচ্ছি’। এমন কথা শুনে আমি চমকে উঠে আঁড়চোখে সবার দিকে তাকালাম। হঠাৎ একজনের দিকে আমার চোখ আটকে গেলো। আমার সামনে তো আর কেউ না, আমার ভালোবাসার মানুষ ইশান বসে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। আমার চোখের কোনে অশ্রু’রা ভিড় করতে শুরু হলো। না, এটা কোনো দুঃখের অশ্রু নয়, এটা হচ্ছে সুখের অশ্রু। তাহলে কি আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে চলেছি। এসব আকাশ-পাতাল ভাবছিলাম এর মধ্যে আমার বাবা বলে উঠলেন ‘না, না। আমাদের কোনো আপত্তি নেই’। দুই পরিবারের সম্মতিতে আমার আর ইশানের আকদ হয়ে গেলো। সবার সাথে আলোচনা করে কথা হলো আমাদের দূজনের পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর অনুষ্ঠান হবে। বর্তমানে আমাদের সম্পর্ক’টা হালাল করে দিলো। ইশানের পড়ালেখা শেষ হলে ওর বাবার বিজনেস দেখাশুনা করবে। উনারও তো বসয় হয়েছে আর কত! সারাদিন অনেক হৈ-হুল্লোড় এর মধ্যে দিয়ে গেলো। আমার বাবা-মা সবাইকে আজকে আমাদের বাসায় থাকতে বলেছিলো কিন্তু ইশানের বাবা-মা রাজী হয় নি। তারা শুধু ইশানকে রেখে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। আমার কাজিন’রা আমাকে নিয়ে গিয়ে রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছে। আমি এখনো যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছি। আমার বিশ্বাস’ই হচ্ছে না, আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়ে গেলাম। আমার ভালোবাসাও পূর্ণতা পেলো। এসব ভাবছিলাম এমন সময়….
#চলবে…