বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 49
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
…..

🖤…
তীব্র তুরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, ” সো মিসেস. তুর আপনি আরেকবার আমাকে বিয়ে করে Sr. মানে ড. সৌহার্দ্য রায়হানের স্ত্রী, তাইয়্যান শুভ্রতুর রায়হানের মা আর ( তুরের কানের কাছে গিয়ে ) তীব্রের #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤 হবেন? ”

ওর কথা শুনে বিস্ফোরিত চোখে তাকায় তুর। কী বলছে ও? সৌহার্দ্য রায়হান। এখানের সবাই অবাক কারন এই নামটা এই প্রথম জানল সবাই এতদিন শুধু ড. রায়হান নাহলে Sr. বলে চিনেছে সবাই।

তুর কাঁপাকাঁপা গলায় বলল, ” আপনি…?”

” হুমম… আমি আমার #বন্ধ_দরজায়_তুমির🖤 তীব্র… মানে ড. সৌহার্দ্য রায়হান.. “

তুর অবাক হয়ে চেয়ে আছে তীব্রের দিকে । কারন টা খুবই সিমপাল । একজন স্ত্রী হয়েও সে তার হাজবেন্ডের আসল নাম জানে না। তবে সৌহার্দ্য নাম শুনে অবাক হলেও এরজন্য একটুও অবাক নয় যে ও তীব্রের আসল নাম জানে না। আসল নাম জানার জন্য যে পরিস্থিতি থাকে তা হয়ত কোনদিন ছিল না। তখনি তায়ান এসে তীব্রের সামনে দাঁড়াল,

” শেষ পর্যন্ত নিজের নামটা দুনিয়ার সামনে আনলি। ”

” কী করব? বিয়ের সময় তো আর নিক নেইম দিয়ে বিয়ে করতে পারব না। তাই এখনি বললাম। নাহলে পরে দেখা যেত সৌহার্দ্য নামটা কার এটা ভেবে বিয়েটাই হত না।

” তা ঠিক বলেছেন স্যার। তবে আমি আমার বউকে এখনো দেখলাম না। বিয়ের সময় বউ দেখে আবার আমি না বেঁকে বসি। ” মজা করে। তীব্র কিছু বলল না। শুধু হাসল।

তখনি তুষা এসে তীব্র আর তুরকে ধরে। এটা দেখে তীব্র ওর কানে কানে বলে, ” ধরেছিস তাতে সমস্যা নেই। আমার বউ তেমন কিছু বলবে না। কিন্তু তোর বর? ”

অরুনের দিকে তাকাতেই ও মুখটা ফিরিয়ে নেয়। তা দেখে তুষা মুখ বাকিয়ে বলে, ” বিয়ে হয়ে গেল অথচ হিংসা কাঁটল না। অরুন… তোমার বউয়ের চেয়ে সৌহার্দ্যের বউ বেশি সুন্দর। ( বলেই জিহবা কাঁটে ) সরি তোকে সৌহার্দ্য ডাকা তো তোর পছন্দ নয়। ”

তীব্র হালকা হেসে বলে, ” সমস্যা নেই। আমি তো বলেছি। ডাকতে পারিস। হেসে উঠে দুজনেই। তুর অবাক হয়ে ওদের দেখছে। নতুন কাউকে আজ আবিষ্কার করছে ও। তীব্রকে এভাবে দেখতে দেখে তুষা হালকা ধাক্কা দিয়ে ওকে বলে, ” এভাবে দেখ না। আমার ফ্রেন্ডের নজর লাগবে। এমনি তোমার জন্য বেচারা ৫ বছর বনোবাসে ছিল।”

হুশ ফেরে তুরের। সামনে থেকে সবাই ছবি তুলছে। সবাই বিয়ে হওয়ার অপেক্ষা।

তুষা তীব্র আর তুরকে নিয়ে যেতেই সামনে আরেকজনের আবির্ভাব ঘটে।

” আমাকে চিন্তে পারছ? ”

তুর আর তীব্র দুজনেই সচকিত হয়! একটা মেয়ে। বয়স আনুমানিক ১৭/১৮ হবে। তুষা মেয়েটাকে দেখে হাসছে। তীব্র চেনার চেষ্টা করছে মেয়েটা কে হতে পারে? চেহারা ঠিক ধরতে পারছে না। কিন্তু হাসি, চোখ গুলো যেন চেনা চেনা মনে হচ্ছে। তীব্র জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই মেয়েটি বলল, ” আমাকে ভুলে গেলে? ”

” কে তুমি? ” তুরের প্রশ্ন। মেয়েটি হালকা হেসে তীব্রকে বলে দেয়, ” আমাকে ভুলে গেলে বয়ফ্রেন্ড। বলেছিলে না কাউকে না পেলে আমাকে বিয়ে করবে? কিন্তু দেখ না। আমি বড় হলাম কিন্তু তুমি… ( মুখ ফুলিয়ে) আরেকজনকে বিয়ে করতে চলেছ… ”

” মেয়েটির কথায় হেসে উঠে তীব্র, ” সরি তখন তোমার বাবা বলেছিল তোমার চেয়ে তোমার আম্মুকে আমার সাথে ভালো মানাবে। তাই আমি বলছি আমার চেয়ে আমার ছেলেকে তোমার সাথে ভালো মানাবে? ”

কথা শুনে রেগে যায় মেয়েটি, ” বলেছিলাম তখন তাড়াতাড়ি বিয়ে করে একটা বউ নিয়ে আসো। নাইলে আমি বড় হয়ে তোমাকে বিয়ে করব। আর তুমি কী করলে? আমি বড় হওয়ার পর এখন বিয়ে করছ? নট ফেয়ার…”

” তুইনা… তুমি সত্যি আমাকে বিয়ে করতে চাও? ভেবে দেখ? আমার কিন্তু এখনো বিয়ে হয়নি? ”

তুইনা বেশ খুশি হল। ও তুষাকে ছাড়িয়ে তীব্রের হাত ধরল। ” আমি তোমাকে বিয়ে করব বয়ফ্রেন্ড। ”

” তুষা তুই ওকে কোথায় পেলি? তাও আমার বিয়েতে… ”

” বিগত ৬ মাস ধরে তোর সাথে দেখা করবে বলে পাগল হয়ে গেছে। কতবার বলেছি তোর খবর জানিনা? কিন্তু… ”

” বয়ফ্রেন্ড নট ফেয়ার। আজ সকালে জানতে পারি তোমার কথা। আমি চট্টগ্রাম থেকে কিভাবে এসেছি জান আর তুমি? ”

” আচ্ছা। ঠিক আছে… বিয়ে করবে তাহলে আমার বউয়ের থেকে পার্রমিশন নেও। তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি তো…. ”

তুইনা তুরের দিকে তাকায়। ” এই যে সুন্দরী। আমি কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি সুন্দরী। আর আমি তোমার আগে থেকে আমার বয়ফ্রেন্ডের পিছে আছি। আজ ঠিক সময় এসেছি। প্লিজ আমাকে বিয়েটা করতে দেওনা। ” অনুরোধ করে।

তুর কী বলবে বুঝতে পারছে না। বিয়ে করতে চায় মানে? তীব্র হাসছে। এই সেই ১১ বছরের ছোট্ট তুইনা। যে তীব্রকে বয়ফ্রেন্ড বলত।

” ও বয়ফ্রেন্ড। চল না বিয়ে করি… ”

তখনি তাইয়্যান সামনে আসে… ” এই তুমি কে? আমার পাপাইকে বিয়ে করতে চাইছ… পাপাই শুধু তাল পাতার সিপাহিকে বিয়ে করবে? ”

” আরি বাস… বয়ফ্রেন্ড তোমার ছেলে তো তোমার চেয়ে কিউট। ” তাইয়্যানের গাল টানতেই, তাইয়্যান বিরক্ত হয়ে হাত সরিয়ে দেয়।

” আমাকে ছাড়। তুমি বরং আমার ছেলেকে বিয়ে করো। ”

” প্রস্তাব খারাপ না। ” তুইনা হাঁটু গেড়ে তাইয়্যানের সামনে বসে বলে, ” এই পিচ্চি বিয়ে করবি? ”

” নাহহ… তুমি অনেক বড়। ”

” তাই নাকি রে… তা কাকে বিয়ে করবি? ”

তাইয়্যান কিছুক্ষন ভেবে বলল, ” তীরকে। ”

এটা শুনে ওখানের সবাই হেসে দেয়। তোয়া রেগে যায়। ও তাইয়্যানের সামনে এসে বলে, ” সালমান শেষ পর্যন্ত আমার কপাল পোঁড়াতে চাইছেন… আমি আপনার সাথে নিজের মেয়ে বিয়ে দিব? ”

” তোমাকে দিতে হবে না তোয়া আন্টি। আমি ওকে বিয়ে করব। আমাকে খাঁমচি দিলে আদর করে দিব। ”

তখনি তুষা বলে, ” অনেক হয়েছে এবার বিয়ে শুরু করতে হবে। চল… ”

তুষা তুরকে নিয়ে যায়। আর তাইয়্যান আর তুইনা তীব্রকে।

বিয়ের আয়োজন শুরু করে। রিদ্ধের বিয়ের পর ওদের বিয়ে। হুজুর এসে রিদ্ধকে কবুল বলাতে নেয়। কিন্তু তখনি বাঁধে বিপত্তি । মেয়ের নাম শুনে রিদ্ধ বিয়ের স্টেজ ছেড়ে উঠে যায়। কারন মেয়ের নাম রিদিতিয়া। আর সে অন্য কেউ নয় রিদ্ধের সেই জাঁতাকল।

রিদ্ধ অগ্নিমুখ করে ওর বাবা মায়ের দিকে তাকায়। ” তোমরা… ”

” দেখ রিদ্ধ। মেয়েটার বিয়ে ৩ বার ভেঙেছে । তো… ”

” তো… তো আমি আমি কী করব? ওই মেয়েকে বিয়ে করার চেয়ে সন্ন্যাস নেওয়া ভালো। ”

তীব্র এসে বলল, ” ছেলেমানুষী করো না রিদ্ধ। ”

” স্যার.. আপনি আমার এত বড় ক্ষতি করবেন ভাবতেও পারিনি। ”

” বিয়ে না করলে কিন্তু… ”

” কী করবেন? চাকরি থেকে বের করে দিবেন, পুলিশে দিবেন ওকে। বেকার থাকব, না খেয়ে মরব কিন্তু ওইটাকে বিয়ে… ”

” রিদ্ধ… ”

” কোন লাভ নেই। বিয়ে আমি করতাম ন… ”

পুরো কথা বলার আগেই ঠাসস… রিদ্ধের শার্টের কলার ধরে রিদিতিয়া বলল, ” আমার সাথে এতগুলো বছর প্রেম করে এখন অন্য কাউকে বিয়ে করবি? ”

রিদ্ধ রিদিতিয়াকে ছাড়িয়ে বলে, ” স্যার আপনি সত্যি একে বিয়ে করতে বলছেন? ”

তীব্র নির্বাক… রিদিতিয়া বলে উঠল, ” ওনি কী বলবে? প্রেম করার সময় জিজ্ঞেস করেছিলি? আর ভাইয়া আপনি তো আমাকে ওকে বিয়ে করার জন্য বলেছেন। নাহলে এই প্রতারকটাকে… ”

” স্যার… ! ”

তীব্র এবার বুঝল কতবড় ভুল করেছ। রিদিতিয়া রিদ্ধের কলেজ লাইফের গার্লফ্রেন্ড। রিদিতিয়াকে চিনলেও আগে জানত না ও রিদ্ধের গার্লফ্রেন্ড। যথেষ্ট সন্মান করে তীব্রকে।

” সরি… ” রিদ্ধকে ইশারা করে তীব্র।

” আমি এই বিয়ে করব না। ”

তুষা রেগে যায়। এই তোর বিয়ে করতে হবে না। আগে তুর আর তীব্রের বিয়ে হবে। এটা শুনে তুর এবার বেঁকে বসে… ওর কথা রিদ্ধের বিয়ে আগে না হলে ও বিয়ে করবেনা । এবার তীব্রের মাথা গরম হয়ে যায়। সবার দশা এক। হুজুর কী করবে বুঝতে পারছে না। এক জুটির বর রাজি না তো আরেক জনের বউ…

সবার মাঝেই নিরবতা। তুর আর রিদ্ধ দুজনেই বেঁকে বসে আছে। বেশ কিছুক্ষন চিন্তা করে কোন স্যালুয়েশন পায় না। তখন অরুন এসে বলে, ” যেহেতু তুর আর রিদ্ধের মাঝে সমস্যা। তাহলে একটা কাজ করি। রিদ্ধ তোমার সাথে তুরকে বিয়ে দিয়ে দেই। রিদিতিয়ার জন্য অন্য কাউকে খুঁজে নেব। আর সৌহার্দ্যের জন্য…”

তুইনা বলে উঠল, ” আমি এক পায়ে রাজি..”

অরুন বলল, ” দ্যাটস গুড… সো রিদ্ধ। কী চাও? বিয়ে আজকে দিয়েই ছাড়ব আমি। অনেক ঝামেলা সহ্য করেছি আর না… ”

তীব্র সম্মতি দিল। ” আমি রাজি… ” তুর অবাক হয়ে দেখছে… তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিদ্ধ বলল, ” স্যার মাফ করেন। জাঁতাকল সহ্য হবে। এই বুল্ড ডোজারকে বিয়ে করলে পিষে ফেলবে। আমার বাঁচার আশা থাকবেই না। ”

তীব্র তুরের দিকে তাকায়। ওর মুখে রাগের ভাব স্পষ্ট। মানুষজন না থাকলে হয়ত এখানেই তীব্রকে কিছু একটা করে ফেলত।

এটা দেখে তুইনা বলল, ” কী হলো? ”

তুর রাগী কণ্ঠে বলল, ” ওনি অলরেডি বিবাহিত। সো… ”

” আমি না চেয়েছি তোমরাই… ”

রেগে যায় অরুন, ” এখানে আরেকট কথা বললে। ”

আর কেউ কোন কথা বলল না। বিয়ের কাজ শুরু হলো। হাফ ছেড়ে বাঁচল সবাই। শেষমেষ বিয়েটা হচ্ছে।

তোয়া একট দীর্ঘশ্বাস নেয়, ” এটা বিয়ে নাকি সার্কাস… ” হেসে জবাব দেয় তায়ান, ” তোমার বোনের বিয়ে তো… কিছু তো হবেই। ”

” তায়ান… ”

” সত্যি বলেছি বলে রাগ করো না।”

তোয়া আর কিছু না বলে চলে গেল। তায়ান নিরহ ব্যাক্তি। সে তার মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

.
.
.
.
.
.
.
.
🖤
তুরকে তীব্রের ঘরে নিয়ে গেছে সবাই। তখন তাইয়্যানও ওদের সাথে যায়। তুরকে বিছানায় বসাতেই তাইয়্যান ওর গা ঘেঁষে বসে। তারপর বিছানার দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা দেখে নীমি বলে, ” কিরে সালমান ওইখানে বসলি কেন? ”

তাইয়্যান ওর কথা না শুনে বিছানা দেখতে থাকে। ননী নীমিকে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলে, ” কী ব্যাপার বলত? আজকে কী বাসর ঘরে তাইয়্যান ও থাকবে? ”

নীমি বিরক্ত হয়ে জোর গলায় বলে, ” বাচ্চা হওয়ার পর বাসর করতে চাইলে এই রকমই হয়। ” ওর এমন কথায় সবাই ওর দিকে তাকায়। তোয়ার সহ আরো বেশ কিছু মানুষ ছিল। নিজের এই বোকামিতে জিহবা কাঁটে নীমি। সবার দিকে তাকিয়ে ক্যাবলা হাসি দেয়। তোয়া রাগী চোখে তাকিয়ে বলে, ” আর ক দিন পর যেই মেয়ের বিয়ে । কথা শোন তার। তাইয়্যান আছে দেখছিস? আর ননী তোর বর ফোন করেছিল। ”

ননী নাক ছিটকিয়ে বলে, ” ফোন তো করছিল । বিয়ের দাওয়াত তো দেই নাই। ”

” এমন কেন বলছিস? ধুলাভাই কত্ত আদর করে তোরে? ” নীমি বলল। ভ্রু কুঁচকায় ননী, ” কেন রে? তোর খাইতে মন চায়? ”

ভেংচি কাঁটে নীমি, ” তোর টার আদর খেয়ে লাভ কী? এর চেয়ে ভালো নিজের বরের পুরো আদর খাব। ”

” পাপাই তো তাল পাতার সিপাহির বর। তাহলে ও কী পাপাইয়ের আদর খাবে? ” ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তাইয়্যান।

নীমি আর ননী একসাথে বলে উঠল, ” হয়ে গেল। ” ননী বলতে গেল, ” হ্যাঁ বাবা। তোমার পাপাই তো তুরকে আদর… ”

আর বলতে পারল না তার আগেই ঠাসস… করে একটা চড় বসিয়ে দিল তোয়া। ” আপু তুমি.. ”

আরেকটা কথা বললে আবার দিব। বাচ্চাদের সামনে কী বলতে হয় জানিস না? তোর বাচ্চা হলে কী বলবি কীভাবে তোর বর তোকে আদর করত? ” রেগে যায় তোয়া।

” আপু..”

” যাহহ এখান থেকে। ”

তুর আর তাইয়্যান শুধু ওদের কথা শুনছে।।কিন্তু নীমি আর ননী যেতে গিয়েও ফিরে দাঁড়াল কারন তোয়া তাইয়্যানকে তুরের কাছ থেকে নিয়ে যেতে চাইলে তাইয়্যান যাবে না বলল।

” কেন যাবে না। ”

” আমি মাম্মা পাপাইয়ের কাছে থাকব। মাম্মা এখানে পাপাই ওখানে। আর আমি মাঝে। ”

এটা শুনে সবাই হেসে কুটিকুটি। তখনি প্রবেশ করে তীব্র। ওকে দেখে সবাই বেড়িয়ে যায়। তোয়া তাইয়্যানকে নিয়ে যেতে চাইলে তাইয়্যান যাবে না বলে চেঁচানো শুরু করে। তোয়া ওকে জোর করতে গেলে তীব্র বাঁধা দেয়। তখনি তাইয়্যান গিয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” পাপা তুমি কী তাল পাতার সিপাহিকে আদর করবে? তুমি তো আমার পাপাই তাই না। ”

ছেলের প্রশ্নের কী উত্তর ভেবে পায় না? কিছুটা মাথা চুলকায়।

” পাপাই মাম্মাম তো আমাকে আদর করবে তুমি কেন মাম্মামকে আদর করবে? ”

নীমি দুর থেকেই বলল, ” এই জন্যই তো তুই হয়েছিস? ” বলেই দৌড়। তীব্র মাথা নাড়িয়ে ফ্রি হয়ে নেয়। বুঝতেই পারছে সালিরা মজা করতে চায়। কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। তোয়া তাইয়্যানকে নিতে আসলে ও চোখের ইশারায় ওকে চলে যেতে বলে।

” কিন্তু ভাইয়া… ” আলত হাসে তীব্র।

” যাও তুমি। তুমি কিন্তু আমার সালি নও। এক হিসেবে ভাবী আরেক হিসেবে বউয়ের বড় বোন। তোমার সাথে মজা কিন্তু খাটে না। তাই…. ”

” ভাইয়া আমি আসছি… ” একপ্রকার পালিয়ে বাঁচে তোয়া। তীব্র তাইয়্যানকে কোলে নিয়ে বিছানায় যায়। ওকে বিছানায় নামিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। তাইয়্যান তুরের কাছে গিয়ে বলে, ” এখন ত মাম্মাম হয়েছ তাহলে তুমি আমাকে ঘুম পাড়াও তোয়া আন্টির মত।”

তুর এবার বিপত্তিতে পরে।

” আচ্ছা পাপাই তোমাকে কেন আদর করবে? ”

তাইয়্যান একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। যার উত্তর তুরের কাছে নেই। নীমি আর ননীর উপর রাগ লাগছে। এই মেয়ে গুলোই যত নষ্টের গোড়া। ওর সামনে কীসব বলেছে? এখন ভুগছে ও। তখনি তীব্র ছাই কালার টি-শার্ট আর ব্লাক টাওজার পরে রুমে আসে।

” কীহল তাইয়্যান ঘুমাবে না? ”

” মাম্মা ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে না। ডলের মত বসে আছে। তীব্র গিয়ে ওর পাশে শুয়ে তাইয়্যানকে কোলের মাঝে টেনে নিয়ে বলে, ” মাম্মা তো নতুন তাই জানে না কীভাবে ঘুম পাড়াতে হয়। আমি আজ শিখিয়ে দেব কেমন? আমি আজ ঘুম পাড়িয়ে দেই। ”

তুরকে ফ্রেশ হতে যাওয়ার ইশারা করে তাইয়্যানকে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আরেকহাতে পিঠে হালকা চাপড় দিতে থাকে। তাইয়্যান ওর বুকে মিশে গেছে। অপলক ভাবে দেখছে বাবা-ছেলেকে। ওকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তীব্র কী হয়েছে ইশারা করে? তুর কিছু হয়নি এমন মাথা নাড়িয়ে বাথরুমে যায়। হালকা শাওয়ার নিয়ে সুতির থ্রি-পিছ পরে নেয়।

বাইরে এসে বেশ অবাক হয়। তাইয়্যান বেঘোরে ঘুমোচ্ছে আর তীব্র জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বিয়ার খাচ্ছে। তুরের বের হওয়ার আওয়াজে ওর দিকে তাকায় তারপর আবার চোখ সরিয়ে নেয়। তুর কিছু বলবে তার আগেই তীব্র বলে, ” তাইয়্যানকে নিয়ে শুয়ে পরো। ওকে জড়িয়ে ধরো। নাহলে ঘুম ভেঙে যাবে। আর মাঝখানে তুমি শোও। আমি বিয়ার খেয়েছি। ওর কষ্ট হবে। ”

ওর কথার আগা মাথা পেল না তুর। তাই যা বলল তাই শুনল।

বেশ কিছুক্ষন ধরে শুয়ে থাকলেও ঘুম আসছে না। রুমের লাইট অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছে তীব্র। কিন্তু কী করছে ও বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষন পর ফিল করে তীব্র ওর পাশে নরম কিছু রাখছে। বুঝতে বাকি নেই কোলবালিশ। আর এটাও স্পষ্ট তীব্র বালিশের ওপাশে শুয়ে পড়েছে। তুরের কিছু বলতে পারে এরকম আভাস পেয়ে তীব্র গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ” ঘুমিয়ে পরো। সকালে কাজ আছে। ” মানেটা বুঝতে পারছেনা তুর। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করতেও যেন বাঁধছে।এদিকে তাইয়্যান ওকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। ওকে ভাবতে ভাবতে তুর কখন ঘুমিয়ে গেছে জানে না……

.
.
.
.
.
.
.
.
🖤
তুরের মা তাহমিনা তীব্রের সামনে নাস্তা এনে রাখলেন।

” তুমি একটু বস ওনি এখনি আসবেন। দুপুরের দিকে ঘুমিয়েছিলেন তো। ”

” শরীর ঠিক আছে ওনার? ”

তাহমিনা স্মিথ হেসে জবাব দিলেন, ” হ্যাঁ। আগের চেয়ে সুস্থ আছে। ”

তীব্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তখনি সাদা পাঞ্জাবিতে সেখানে আগমন ঘটে তুরের বাবা তাহনাফ রহমানের। ওনাকে দেখে সন্মানার্থে দাঁড়িয়ে যায় তীব্র। সালাম দেয় তাকে। তাহনাফ রহমান ওর সালামের উত্তর দিয়ে তীব্রকে বসতে বলে। তীব্র বসলে ওকে চা খেতে বলে। তীব্র ওনার কথার সন্মান রক্ষার্থে চা নেয়। তাহমিনা স্বামীকেও চা দেয়। তীব্র চায়ে চুমুক দিলেও তাহনাফ রহমান দিতে পারেন না। ওনাকে দেখে চিন্তিত মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা যে তীব্রের কাছে ক্লিয়ার নয়। তা না। তবুও ও জিজ্ঞেস করে, ” আপনাকে টেন্স লাগছে কিছু হয়েছে? ”

তীব্রের কথায় যেন প্রান ফিরে পায়। তীব্রের কথার ধরন শুনে কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো তুর কিছু করেনি। মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই ওনাদের। তীব্রের কথায় স্বস্তি পেলেও ভরসা পেলেন না যে, তুর কিছুই করেনি। তিনি তীব্রকে যতটুকু চিনেছে তাতে তো বুঝতেই পারছে সৌহার্দ্য অন্যের দোষ লুকাতে জানে। আর নিজের ওয়াইফের দোষ শ্বশুরবাড়িতে বলার মন মানসিকতা ওর নেই। তাই চিন্তা থেকে বের হতে পারছে না। আর নিজের মেয়ের ছেলেমানুষীর কথা জিজ্ঞেস করতেও রুচিতে বাঁধছে। তাই ওনি ইঙ্গিত দিয়ে বললেন, ” ওদিকে সব ঠিক আছে তো? তুর, তাইয়্যান ওরা? ”

ওনার কথার ইতিবাচক হাসি দেয়। যাতে বোঝা যায় সবকিছু ঠিক আছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তাহনাফ রহমান। গলায় জোর নিয়ে বলেন, ” তা তুমি একা আসলে যে? তুর আর তাইয়্যানকে নিয়ে আসতে। ”

কথাটা শুনে তীব্র চায়ের কাপ নিচে রেখে একটু চুপ করে বলে, ” আসলে আমি এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম দেখা করে যাই। আর… ”

” আর কী? ” কিছুটা চিন্তিত হয়ে।

তীব্র কিছুক্ষন চুপ থেকে তাহনাফ রহমানের দিকে তাকায়। ” আসলে আপনারা তো জানেন আমি এতদিন দেশের বাইরে ছিলাম। মেডিকেল, বিজনেস সবটা সেখানে বসেই পরিচালনা করেছি। আর সত্যি বলতে আমার বর্তমান সবকিছুই ওখানে। এক রকম তাড়াহুড়োয় আমি সবকিছু এখানে শিফট করতে পারব না। তাই… ”

তীব্রের বাক্যের অপেক্ষায় ওনি।

” তাই আমাকে আবার সেখানে ব্যাক করতে হবে। নাহলে লস হয়ে যাবে। আর এবার আর আমি একা যেতে চাই না। তুরকেও নিজের সাথে নিয়ে যেতে চাই।তাছাড়া, তাইয়্যান আমাকে ছাড়া থাকবে না। আর আমি তুরকে তাইয়্যানের থেকে দূরে রাখতে চাই না। আর তুরকে একাও রেখে যেতে চাই না। [ তাহনাফ কিছু বলবে তার আগেই তীব্র বলল ] যদি আপনারা চান তবেই। নাহলে না। একবার যেটা করেছি তা আর করতে চাই না। ”

এটা শুনে তাহনাফ বিস্মিত হন। ওনি তীব্রের দু’হাত ধরেন। চমকে উঠে তীব্র! ” এসব কী আপনি? আপনি… ”

” আমাদের আর অপরাধী করে দিও না। তুর যা যা করেছে, যেসব পাগলামী সহ্য করতে হয়েছে তার পরেও তুমি ওকে ফিরিয়ে নিয়েছ। ওকে বিপথ থেকে ফিরিয়ে এনেছ। এই ঋণ আমরা শোধ করতে পারব না। তাছাড়া আমরাও তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করিনি। অন্যায় করেছি তোমার সাথে। আর তুরকে পুরোপুরি সত্যিটা না বলে আমাদের উপর যে… ”

তখনি তীব্র নিজের হাতের ভাজে ওনার হাত নেয়। ” ছিহ.. আংকেল এসব কী বলছেন? এসব বলে আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না। আপনাদের কোন দোষ নেই। আপনাদের জায়গায় আমি হলে আমিও এটাই করতাম। আর তুরের ব্যাপারটা… সত্যি বলতে আমি এই ভয়েই… যদি আমি চলে যাই তাহলে আবার যদি ও তেমন কিছু করে। ”

” তুর তোমার ওয়াইফ। তুমি ওকে নিয়ে যাবে এতে আমাদের পার্রমিশনের কী আছে? ”

” ওনি ঠিকি বলছে। তুরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের পার্রমিশন কেন নিবে তুমি। তুর এখন যতটা শান্ত হয়েছে তা শুধু তোমার জন্য। তুমি ওকে রেখে গেল হয়ত আমাদের চিন্তা হত। ” তুরের মা এক নাগাড়ে বলল। তাতে ওর বাবাও তাল মিলালো। সত্যি তীব্র চলে গেলে যদি তুর পাগলামী শুরু করে।

এটা শুনে তীব্র মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি ফুটিয়ে তুলল। ” ধন্যবাদ। ব্যাপারটা বোঝার জন্য।

” তুর তোমার সাথে থাকলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকব। তুমি আমাদের চেয়েও ওর ভালো খেয়াল রাখতে পারবে। ” তুরের বাবা বললেন।

” এইজন্য আপনাদের কাছে আসা। যাই হোক। আজ তাহলে আসি। ”

সচকিত হয় তুরের মা। ” সেকি! এখনি চলে যাবে! ”

” আসলে আন্টি। হাঁটা পথে এসেছি তো তাই। যেতে হবে। আরেকদিন ওদের নিয়ে আসব বরং। ”

” কিন্তু… ” ওর মাকে থামিয়ে দিয়ে তাহনাফ বলে, ” ঠিক আছে বাবা। তবে ভুলে যেওনা। ”

তীব্র হালকা হেসে জবাব দেয়,” আপনারা গিয়ে ওর সাথে দেখা করে আসুন। ওর ভালো লাগবে। আজ তাহলে আসি…”

তীব্র চলে যেতে ধরলে আবার ডাক পরে,” কবে যাবে? ”

” এখনো ডেট ফিক্স হয়নি। এখানের কাজ মিটে গেলেই। আজ তাহলে আসি। ”

তারপর তীব্র চলে যায়। তীব্র চলে গেলেই প্রশান্তির নিশ্বাস নিয়ে তাহনাফ রহমান বলে, ” শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে নিয়ে স্বস্তি পাওয়া গেল। ছেলেটা বুঝদার, দায়িত্ববান। তুর ওর কাছে থাকলে আর কোন চিন্তা নেই। ঠিক সামলে নিতে পারবে। ও আসার পর সবটা ঠিক হয়ে গেছে। ”

তুরের মাও সায় মেলায় তাতে। ” সত্যি বলেছ। নাহলে তুর যে পর্যায়ে গিয়েছিল। যা করেছে তুরের জন্য। অন্য কেউ হলে। ”

” এসব না বলাই ভালো। ভাবছি তুরের সাথে দেখা করে আসব। ” সম্মতি জানায় তাহমিনা।

তীব্র বাইরে এসে মোবাইলের স্ক্রিনে থাকা তুর আর তাইয়্যানের ছবি দেখে নেয়। আলত করে তুরের ছবিতে হাত বুলিয়ে আনমনে হেসে বলে, ” ৬ বছর আগে যারা আমাকে তোমার জন্য ক্ষতিকর মনে করত। আজ তারাই তোমার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান আমাকে মনে করছে। তবে কী জানো বোকা পাখি। সব কিছুই এবার রিপিট হবে। পার্থক্য এতটুকুই। তখন সেটা আড়ালে এখন তা জানিয়ে। ”

বলেই গাড়ি স্টার্ট দেয়। সেদিন তুরকে সবকিছু এইজন্যই কিছু বলেনি। তখন যদি তুরকে ওর আত্মীয়দের নিয়ে সবটা সত্যি বলে দিত, তাহলে তীব্রকে নিয়ে ওনাদের মনে বিরুপ ধারণা জন্ম নিত। তীব্র আদো ওকে ভালো রাখতে পারবে কিনা? ওকে নিয়ে বিদেশে গেলে তুরের সত্যি ভালো হবে কিনা? কিন্তু এখন তা ওনাদের মনে আসা তো দূর তুরের মুখে শুনলেও বিশ্বাস করবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান তীব্র? আর তুরের ভুল বোঝার ব্যপারটা সাগরের মাঝে লবন ফেলার মত। কারন তীব্রের প্রতি তুরের মনে এত বিদ্বেষ তাতে নতুন করে আরেকটু যোগ হলে বেশি ক্ষতি হবে না। তীব্র এটাও খুব ভালো করে জানে তুর রাগ, অভিমান যাই করুক তীব্রকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। তাই সত্যিটা তুরকে জানিয়ে সবার চোখে নিজেকে ছোট করা নিহাত বোকামি। তাতে লাভ তো কিছুই হত না বরং তীব্রের ভাবনা চিন্তা নিয়ে ওনারা সন্দিহান থাকত। সো বুদ্ধিমানের কাজ সবটা তুরকে না জানানোই।

তারপর গাড়ি স্টার্ট দেয় তীব্র।

.
.
.
.
.
.
.
🖤
পুরো রুম অন্ধকার। লাইট নেভানো। রাত ১২টার ঘড়ির টংটং আওয়াজে তুর চোখ মেলে তাকায়। তাইয়্যান মা’কে জড়িয়ে বুকের মাঝে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। ১০টা নাগাত তুর ওকে নিয়ে শুয়ে পড়েছিল। তাইয়্যান ঘুমিয়ে পড়লেও তুর ঘুমাতে পারেনি। তবুও চোখ বন্ধ করে ছিল। ঘড়ির তীক্ষ্ণ আওয়াজে শুয়ে থাকাতে যেন বিরক্ত হচ্ছে। ও শোয়া থেকে উঠে তাইয়্যানের কোলের মাঝে বালিশ আর গায়ে কম্বল দিয়ে বিছানা ছাড়ল। জানালা দিয়ে আসা আলোতে পুরো রুম আবছা আলোকিত ৷ ও বিছানা থেকে উঠে মোবাইলটা নিয়ে তীব্রের নাম্বারে কল দেয় । কিন্তু নাম্বারটা বন্ধ বলছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুর তাইয়্যানের মাথার কাছে বসে ওর কপালে হাত দেয়। আলত করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তাইয়্যানের। নিজেকে একটু একটু করে স্বাভাবিক জীবনে নিচ্ছে তুর।

কিছুক্ষনবাদে তাইয়্যানের মাথায় মাথা ঠেকায়। দু’চোখ গড়িয়ে পানি পরছে ওর।

তীব্রের সাথে নতুন জীবনের পথচলা আজ এক মাস হতে চলল। অথচ তীব্র…? তীব্রকে যেন চিন্তে পারছে না। ও যেন একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তুরের কাছে। এই এক মাসে একবারো তুরের কাছে আসার চেষ্টা তো দূর তুরকে ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে কিনা তাই জানে না তুর।ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলেনি। কিছুই বুঝতে পারছে না। এ তীব্রকে ও চেনে না। দিন দিন যেন অন্য কাউকে আবিষ্কার করছে ৷ কেন এমন করছে তীব্র?

এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতেই পারেনি। হঠাৎ দমকা হাওয়ায় কেঁপে উঠে তুর । ঘুমটা ভেঙে যায়। জানালার পর্দাগুলো উড়াউড়ি করছে। প্রচন্ড গতিতে হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে। আচমকা মেঘ ডেকে উঠে। বৃষ্টি নামবে বোধহয়। তুর মোবাইলটা অন করে টাইমটা দেখে নিল। ২: ৪৫ বাজে। এখনো এলো না তীব্র। প্রতিদিন দেরি করলেও এত দেরি করে না। চিন্তা হচ্ছে তীব্রের জন্য। হঠাৎ করেই ঝুম বৃষ্টি নামে। তুর জানালা বন্ধ করতে যায়। তখনি মনে পরে সেদিন রাতের কথা। তীব্র এখানে দাঁড়িয়ে ছিল। সেদিন ওর চোখে যে ভালোবাসা ছিল। তুরকে কাছে পাওয়ার নেশা ছিল। এই ১ মাসে তা দেখেনি তুর। কেন করেছে তাহলে বিয়ে? কেন তুরের এটা মনে হচ্ছে, ওকে এখানে আনার কারন, ওকে বিয়ে করার কারন, ওর সাথে থাকার কারন শুধুমাত্র তাইয়্যান। তাইয়্যানকে সময় দিতে পারবে না বলে মা দিয়েছে। তুর তখনি জানালা বন্ধ করে দেয় । জোরে জোরে হাঁপাতে থাকে। কী ভাবছে ও এসব? এগুলো কখনো হতে পারে না। তুরকে ছাড়া তীব্র ভালো থাকবে না। এটা বিশ্বাস করাও যেন তুরের জন্য পাপ। ও মানতে পারবে না। কিন্তু এটাই সত্যি হতে যাচ্ছে। বিগত এক মাসে তীব্রের আচরনে এটাই প্রকাশ পেয়েছে।

তখনি রুমে ঢোকে তীব্র। আলোর সুক্ষ কিরণ পরছে তীব্রের মুখে। বৃষ্টিতে ভিজে চিপচিপে হয়ে আছে। তা দেখে অবাক হয় তুর। গাড়ির মাঝে থাকা মানুষ কীভাবে ভিজতে পারে। নিজের মাথা মুছতে তোয়ালে নিতে যায় কিন্তু খেয়াল করে না তুর জেগে আছে। ও ভিতরে ঢুকতে ধরলেই লাইট জ্বালায় তুর। সচকিত হয় তীব্র। বিস্ময় কন্ঠে প্রশ্ন করে,

“ তুমি এখনো জেগে আছ? “

তুর একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে, “ হুমম। কিন্তু আপনি এত রাত করে কোথা থেকে আসলেন তাও আবার ভিজে? গাড়ি ছিল না? প্রতুত্তরে তীব্র কোন কথা বলে না। তীব্র তোয়ালটা নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে যায়। এহেন আচরনে কান্না পায় তুরের। তবুও নিজেকে সামলে নেয়।

১৫ মিনিট পর তীব্র বাইরে আসে। তোয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে। তুর বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছে। তা দেখে তীব্র কোন রিয়েক্ট না করে নরম সুরে বলে উঠল, “ অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পরো।”

তুরের মনে হলো কথাটা যেন সৌজন্য রক্ষার্থে বলল তীব্র। প্রচন্ড রেগে যায় ও। “ তীব্র আপনি… “ কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তীব্র ওর দিকে। থেমে যায় তুর।

বিছানার দিকে তাকাতে দেখে তাইয়্যান মোচড় দিয়ে উঠল। তা দেখে তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীব্র ওকে টেনে পাশের রুমে নিয়ে দরজা আটকে দেয়। তারপর বেশ ঝাঝাল গলায় বলে, ” কী করতে যাচ্ছিলে তুমি? যদি তাইয়্যানের ঘুম ভেঙে যেত। ”

” আপনি ভুলে যাবেন না তীব্র আমিও ওর মা। এই একমাস আমিই ওকে আগলে রাখছি। ” গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে তুর।

তীব্র বিছানায় বসে মাথাটা মুছে নিতে নিতে বলে, ” তুমি এক মাস ধরে যে কাজটা করছ তা আমি ৫ বছর ধরে করেছি। বাট দেখে আমি কিন্তু কারও কাছে বলিনি। ”

” আমার কথার মানে এইটা ছিল না। আমি তো জাস্ট বলেছি এই ১মাসে আপনি তাইয়্যানকে তেমন কোন সময় দেননি। ওর ঘুমোনোর পর বাড়ি ফেরেন। আর সকালে দু’একটা কথা বলেই চলে যান। ”

” ভিডিও কলে কথা হয়। আর এ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। ”

” কিন্তু… ”

এবার তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলে, ” আমাকেই যদি ওকে আগের মত খেয়াল রাখতে হয় তাহলে তুমি কেন আছ তুর? আমার চেয়ে তো মা হিসেবে তোমাকে আপন করে নেবার কথা? ”

“ তীব্র আপনি কিন্তু ব্যাপারটা অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি কিন্তু… ”

” তাইয়্যান আমার কাছে ওর মা চেয়েছিল। আর তুমি নিজের সন্তানকে। তাই দিয়েছি। এবার ওকে সামলাও। ”

রেগে জবাব দেয় তুর, ” আমাকে কী শুধু তাইয়্যানের জন্য বিয়ে করেছেন আপনি? ”

তীব্র চুপ করে আছে।

” কী হল তীব্র? আমার কেন এটা মনে হচ্ছে আপনি শুধুমাত্র তাইয়্যানের জন্যই আমাকে বিয়ে করে এনেছেন? ”

ওর কথায় কিছুটা থমকে গেল তীব্র। ফের ভাবলেশহীন হয়ে বলল, ” তুমি তো বলেছিলে আমাকে শুধু তাইয়্যানের জন্য বিয়ে করেছ তাহলে… আর এমনিতেও কী আসে যায়? তোমার প্রয়োজনীয় যা দরকার সব আছে এই বাড়িতে। তোমার কোন ইচ্ছেই অপূর্ন রাখা হয়নি। এমনকি ড্রিংক… ”

” থামুন তীব্র… আমি কোন শোপিচ নই যে ধুয়েমুছে চকচক করে যত্নে আলমারীতে তুলে রাখবেন। আ…”

” তাহলে কী ইউজ করতে বলছ? ”

তীব্রের এমন কথায় বিস্মিত হয়ে তাকায় তুর। ওর এমন চাহনিতে তীব্র বলে, ” তোমার কথার মোতাবেক তো এই মানে দাঁড়ায়। সে বাদ দেও। আমি এতে কী করতে পারি? তোমার একা বোর লাগলে তুমি তোমার ফ্যামিলির কাছে যেতেই পারো। কিন্তু মনে রেখ তাইয়্যান যাবে না। ”

তুর আর কিছু না বলে পিছনে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে নিল। তারপর আবার সামনে তাকাতেই তীব্রের বুকে বারি খায়। দেখে তীব্র ওর খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

” আপনি…. ” বলার সাথে সাথে তীব্র তুরের দিকে এগোতে থাকে । তুর কিছু বুঝতে না পেরে পিছতে থাকে। একসময় দেয়ালে ধাক্কা লেগে মিশে যায় তুর। তীব্র ওর কাছে আসাতে তুর চলে যেতে চাইলে দু’হাত দিয়ে দেয়ালে আটকায় তুরকে। তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীব্র মুখটা নিচু করে তুরের কাছে গিয়ে বলে, ” আমি না বোর হয়ে গিয়েছি এই ১মাসে। ”

অবুঝের মত তাকিয়ে তীব্রের কথা বুঝতে চাইল। বোর হয়ে গেছে মানে? তীব্র হালকা বিরক্তির ভাব মুখে তুলে বলল, ” গন্তব্যের চেয়ে তার রাস্তা বেশি উপভোগ্য। গন্তব্যে পৌঁছে গেলে শুধু একটা সুখের অনুভুতি হয়। আর রাস্তায় হাজারটা। আর তুমি তো কোনদিন আমার উদ্দেশ্য ছিলেই না। উদ্দেশ্য পূরনের রাস্তা ছিলে কেবল। ”

মানে? ” ওর কথায় বিস্মিত হয় তুর। তীব্র আরেকটু কাছে যায় তুরের। তুরের চোখে চোখ রাখতেই তীব্রের হাসিহীন মুখে অদ্ভুত খুশির ঝলক দেখতে পায় তুর। তীব্র দেয়ালে একহাতের ভর রেখে আরেকহাতে তুরের চুল গুলো গুঁজে দেয় কানে। তুর পাথর হয়ে নিচে তাকিয়ে আছে৷ তীব্র ওর চুল গুঁজতে গুঁজতে বলে,

” সত্যি বলছি তুর। তুমি আমার লক্ষ্যের রাস্তা ছিলে। আর রাস্তা পথিকের জন্য ততসময় এক্সসাইটিং যত সময় পথের সামনে কী আছে জানা না যায়। গন্তব্যে পৌঁছালে রাস্তায় চলার মজা কী? ”

” তীব্র আপনি… ” তীব্রের চোখের দিকে তাকিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে। তীব্র বুড়ো আঙুল দিয়ে তা মুছিয়ে দেয়।

” কাঁদছ কেন? তোমার তো খুশি হওয়ার কথা। ”

নির্বাক তুর। এই কথায় কেউ কীভাবে খুশি হয় ভেবে পায় না তুর।

তুরকে নির্বাক দেখে শব্দ করেই হেসে উঠে তীব্র।

“ কিহল ? কী ভাবছ? তীব্র কীসব বলছে?” তুরকে কাছে টেনে পিছনে ফিরিয়ে ওর কাঁধে থুঁতনি রেখে জড়িয়ে ধরে আবার বলে,
“ আরে পাগলী অনেক দিন পর দেশে ফিরেছি তো । তাই এখানের কাজ গুলো করে, শেষ করতে হবে। যেখানে ছিলাম সেখানে যেতে হবে তো। নাহলে কী করে? “

তুর কিছুটা সন্দিহান হয়ে জিঙ্গেস করে, “ যেখানে ছিলাম মানে? “

“ আরে তুমি না আমার। আর এবার তুমিও যাবে। আবার… “

“ মানে? “

“ মানে কিছু না। [ তুরকে ছেড়ে দেয় ] আমার কাজ আছে তাড়াতাড়ি শুয়ে পরো। “ কথা ঘুড়িয়ে নেয়। তুর কিছু জিঙ্গেস যাবে তার আগেই তীব্র ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। “ প্লিজ তুর । আমার ঘুম পাচ্ছে।”

তুর আর কিছু বলল না। ওকে ছাড়িয়ে চলে গেল তাইয়্যানের কাছে। তা দেখে আলত হাসল তীব্র।

” জানোত তুর যে রাস্তা যত বেশি দূর্গম, তা জয় করার নেশা তত বেশি। তাতে চলতে তত বেশি কিউরিওসিটি, আনন্দ, উত্তেজনা ফিল হয়। আর তোমার চেয়ে কঠিন পথ আমি আমার জীবনে পাইনি। কী না করেছি সেই পথে চলার জন্য। তুমি যত বেশি আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছ তত বেশি তোমার মাঝে চলার জন্য পাগল হয়েছি। আমি তীব্র তুর সহজলভ্য কোন জিনিস আমাকে তৃপ্তি দেয় না। আমার তৃপ্তির সবচেয়ে কঠিন প্রয়োজন তুমি ছিলে। যাকে পাওয়ার জন্য আমি জেলে গিয়েছি, নিজেকে ভুলেছি, নিজের অস্তিত্ব ভুলেছি, এমন কী দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। তবুও তোমার মাঝে চলার ইচ্ছে ছাড়তে পারিনি।

কারন তুমি আমার লক্ষ্যের এমন একটা রাস্তা যার মাঝে চলার সময় কী হতে পারে ? তা আমি জানতাম না। তাই সেই রাস্তার শেষটা আমি দেখতে চেয়েছিলাম। লক্ষ্য তো আমি মাঝ রাস্তায় পূরন করে ফেলেছিলাম। তবুও পথের শেষটা দেখার লোভ থেকে নিজেকে সামলাতে পারিনি। পারবই বা কী করে রাস্তার প্রতিটি মোড়েই রাস্তা নিজের পরিবেশ, গতিপথ আবহাওয়া পরিবর্তন করে। ”

কথাগুলো ভেবে নিজের মনে হাসে তীব্র। তারপর নিজের কিছু কাজ করে । প্রায় ৩:৩০ মানে সাড়ে তিনটায় রুমে যায়। গিয়ে দেখে তুর তাইয়্যানকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেছে। ও গিয়ে তুরের পাশে বসে। এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ঘুমন্ত তুরের দিকে। তুরের পরনে সাদা টি-শার্ট আর কালো প্লাজু। ঝুটি করা চুল গুলো থেকে চুল বেড়িয়ে পরছে। তীব্র ওর কাছে গিয়ে মুখে ফুঁ দেয়। চুল গুলো কানে গুঁজতে গুঁজতে বলে, ” এখন আর সেই জানার আগ্রহ নেই আমার। কারন আমি জানি তুমি সবটা দিয়ে আমার। আর আমার হয়েই থাকবে। ব্যাপারটা অনেকটা একগুঁয়ে। এত সহজ কিছু চাই না আমার। তাই হয় আমাকে তোমার জন্য পাগল করতে হবে না হয় আমার #বন্ধ_দরজার_তুমি🖤 হতে হবে। আমার সারাংশ নয়, সম্প্রসারনের রুপটা তুমি ছিলে। লক্ষ্য নয় তার রাস্তা তুমি ছিলে। সেই লক্ষ্য যা পূরন হলেও সেই রাস্তার শেষটা দেখার লোভ আমি সামলাতে পারিনি। আর না শেষটা দেখে আমি সন্তুষ্ট। কারন আমি এর চেয়েও বেশি পাগল হতে চাই তোমাতে……🖤

,
,
,
,
,

,

[ বাকিটা পরের পর্বে মানে কাল জানবেন🖤]

আসলে পার্ট এতটা বড় হয়েছে যে না চাইতেও এই পর্বে শেষ করতে পারলাম না।🍂🙄

কাল যারা সৌহার্দ্য নামে রহস্য খুঁজছিলেন । তার জন্য সমবেদনা।

সে যাই হোক আজ অনেক কিছুই ক্লিয়ার হয়েছে। এবার বাকিটা বুঝেন….😀😀

Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here