#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 11.+12.
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
…..

তুরের দিকে তাকিয়ে লাইট নিভিয়ে দিল তীব্র। তারপর তুরের সামনেই নিজের ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেয়। বালিশ না থাকার কারনে তীব্র একহাত মাথায় দিয়ে চোখ বন্ধ করে….

বেশ কিছুক্ষন পর…..

তীব্র প্রায় ঘুমিয়ে পরেছিল এমন সময় তীব্র নিজের বুকের উপর ভারী কিছুর পরার অনুভব করে। বেশ ব্যাথা পায় তীব্র। ঘুমটাও ততক্ষনে চলে এসেছে…..

তীব্র নিজের বুকে হাত দিয়ে একগুচ্ছ চুলের ছোয়া পায়। বুঝতে পারে মেয়েটি ঘুমের ক্লান্তিতে ওর বুকের উপর পরেছে। এইটা ভেবে তীব্র তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে…..

— কি অদ্ভুত দুনিয়া। যাকে বিষের সাথে তুলনা করেছ তার বুকেই নিজের ক্লান্তির বিষ গুলো ঝরাচ্ছে……

তীব্র আবার লাইটটা জালিয়ে তুরকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর ওই চাদর দিয়ে তুরকে মুড়িয়ে দেয়। তুর গুটিয়ে শুয়ে পরে। তীব্র ওকে ঠিক করে দিতেই তুর ওর হাত টেনে ধরে ওর হাতের উপর শুয়ে পরে। তীব্র অবাক চোখে তুরকে দেখে। তুরের চুল গুলো ওর ঠোঁটের উপর পরে…. তীব্র সেই চুল গুলো তুরের ঠোঁট থেকে সরিয়ে দেয়।

তারপর ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়। নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়। তীব্র জানে তুরের অতিরিক্ত দুর্বলতার কারন হচ্ছে না খাওয়া। তুরের যেমন খাওয়া হয়নি তীব্রের ও তাই.… একটা চাপা কষ্টের মাঝে আছে তীব্র। মনের চাওয়া আর মতিষ্কের বিরোধ দুইটাই তীব্রের বিপক্ষে।

— আচ্ছা চাওয়াটা যখন অন্যের প্রাপ্তি থেকে আসে তখন তাকে কি বলে? সেটা কি নিজের প্রাপ্তি নাকি অপ্রাপ্তির দান….. দুইটাই তো অন্যায় তাই না…….

তারপর তলিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে…..

,
,
,
,
,

,

,
,
,সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে তীব্র তুরের রুমে যায়। তবে আগের দিনের মত নয়।

তীব্র রুমে ঢুকে দেখে তুর শুয়ে আছে। ও অন্যদিকে তাকিয়ে কাশির শব্দ করতেই তুর জেগে উঠে…. সকালে লোকটাকে দেখে কাল রাতের কথা মনে করে নিজেকে ঠিক করে গুটিয়ে নেয়।

তখনি তীব্র অন্যদিকে তাকিয়ে ওর দিকে একটা ব্যাগ ছুড়ে মেরে বেশ গম্ভীর গলায় তুরকে বলে ….

— এখানে তোমার জন্য কিছু ড্রেস আছে। যাও চেঞ্জ করে এসো।

এবার তুর ভালো করে লোকটির দিকে তাকায়। দেখতে বেশ লম্বা, মুখটা এতটাই ফর্সা যে ক্লিন সেভের পরেও কুড়ি কুড়ি দারি বোঝা যাচ্ছে। কালো শার্ট যার উপরের বোতাম গুলো খোলা বুকের অংশটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হাতে ব্যান্ডের ঘড়ি চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। পুরো ফ্রশ লাগছে লোকটাকে। এরকম লোক কম দেখেছে তুর। এরকম লোক যার যাই হোক কিডন্যাপার হতে পারে না। তাহলে কে লোকটা…..

তুর এসব ভাবতে ভাবতে বলে উঠল….

— আপনি কে? আর কেনই বা আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন….

তীব্র বেশ গম্ভীর ভাবেই উত্তর দিল…

— আগে চেঞ্জ করে নেও। তাহলে আমার উত্তর দিতে আর তোমার উত্তর নিতে দুজনের সুবিধা…..

তুর আর কিছু বলল না। ও উঠে দাড়ালো চাদর গায়ে দিয়ে। প্রচন্ড কাপছে শরীর। তখন তীব্র তুরের কাছে যায়। এটা দেখে তুর ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু তুরকে অবাক করে দিয়ে তীব্র ওর গায়ের চাদরটা উঠিয়ে ওর বা কাধে ভাল করে দিয়ে দেয়। ওদিক টা ফাকা ছিল তা তুর খেয়াল করেনি।

-_ বাথরুমটা ওদিকে….

তুর আর কোন কথা না বলে ওদিকে পা বাড়ায়। কালকে রাতের সাথে আজকের লোকটার কোন মিল খুজে পাচ্ছে না তুর। কালকে লোকটাকে যতটা ভয়ংকর লেগেছে আজ ততটাই শান্ত মনে হচ্ছে….. কিন্তু কি চায় লোকটা?

শপিং ব্যাগ খুলতেই দেখে কিছু সফট কাপরের থ্রি-পিজ। কয়েকটা লং টপস সাথে ওড়না। ড্রেসগুলো দেখে ভরসা পেল তুর। সবই মার্জিত ড্রেস….. তুর একটা থ্রি-পিজ পরে বেড়িয়ে এলো…..

এসে দেখে লোকটি ওর জন্য ট্রেতে কিছু ফল আর জুস নিয়ে এসেছে। এই বাড়িতে কোন মেয়ে নেই। তাই তুরের রুমে বাইরের কেউ এলাও না। এমনকি তুরের সব কাজ তীব্র নিজের হাতে করে….. এই রুমের দিকে কেউ নজর দিবে না। এখানে যাই হোক এদিকে কেউ আসবে না তীব্রের কড়া নির্দেশ….

তুরকে ফিরতে দেখে তীব্র বলে উঠল…

— যেহেতু কয়েকদিন যাবত ভারী খাবার খাওনি তাই এই ফল গুলো আর জুস খেয়ে নেও। আমি এসে যেন দেখি সবটা কমপ্লিট……

তীব্র চলে যাওয়ার সময় তুর বলে উঠল….

— আমি খাব না।

কথাটা যেন তীব্রের পছন্দ হলো না। কিন্তু কিছু বলল না। শুধু তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলল….

— আমার দেওয়া বলে…

— যদি মনে করেন তাই….

তীব্র এবার তুরের দিকে তাকায়… তারপর বলে…

— আমার দেওয়া কাপর শরীরে জড়াতে পারলে কিন্তু আমার দেওয়া খাবার খেতে পাচ্ছ না।

তুর চুপ করে রইল এর কোন উত্তর নেই ওর কাছে…. ওর নিরবতায় তীব্র বলে উঠল…

— তুমি আমার কাছে যখন আছ তোমাকে খাবার দেওয়া আমার দায়িত্ব। কারন আমি কাউকে না খাইয়ে মারতে চাই না। এখন খাওয়া না খাওয়া তোমার ব্যাপার। আমি শুধু আমার কর্তব্য করেছি।

তীব্রের এমন কথায় তুর বেশ অবাক হয়। তুরকে অবাক হতে দেখে তীব্র বলে উঠে…

— অবাক হওয়ার কিছু নেই। তুমি বাচলেও আমার কিছু আসে যাবে না। আর মরলেও না। তাই খাবে কি খাবে না তোমার ব্যাপার…..

তীব্র চলে যেতে ধরলে আবার থমকে যায়। তুর চিতকার করে বলে উঠে….

— কে আপনি আর কেন আমাকে এখানে আটকে রেখেছেন?

তীব্র চুপ করে আছে…

— আপনি কি সেই লোক যে আমাকে সেই জঘন্য জায়গা থেকে টাকার বিনিময়ে কিনে এনেছেন? আমি পুরোপুরি হুশে না থাকলেও আবছাতে দেখেছি। আর আমার মনে হচ্ছে সেই লোকটা আপনি। কেন এনেছেন এখানে.……

কথাটা শুনে তীব্র একটা জোর করে হাসি দেয়। যা তুরের বোকামির ইঙ্গিত দিল। তারপর খুব শান্ত গলায় উত্তর দেয়….

— তুমি তো বলে দিলে কেন এনেছি তোমায়। ওখানে সবচেয়ে বেশি দাম দিয়ে তোমায় কিনেছি আমি। তাই তুমি আমার কাছে অনেক দামী কিছু। যা আমি হেলায় হারাতে চাই না। তাই খেয়ে নেও…..

— তারমানে কেন এনেছেন আমাকে….??

— ওরকম একটা জায়গা থেকে কেন তোমাকে এনেছি তা বোঝার জন্য তুমি যথেষ্ট বড়।

তীব্র আর কিছু না বলে বেড়িয়ে যায়। আর তুর ওখানেই বসে পরে। কি বলে গেল লোকটা। তাহলে…. সত্যি তো তুরের যতটা মনে পরছে রাস্তা থেকে যারা ওকে কিডনাপ করেছে তারাই হয়ত এই লোকটার কাছে ওকে বিক্রি করে দিছে। কিন্তু এই লোকটা ওর সাথে কি করতে চাইছি। যদি সত্যি ওমন কিছু করে কি করবে ও… কিছু ভেবে পায় না। শুধু একটাই কথা মনে পরে ওর পক্ষে এভাবে বেচে থাকা সম্ভব না। এর চেয়ে মৃত্যু ভালো। তাই তুর আশ পাশ দেখতে থাকে। কিন্তু তেমন কিছুই খুজে পায় না। তখন তীব্রের করা মনে পরে…. না খেয়ে মরে গেলে..…। হ্যা ও না খেয়েই দরকার হলে মরবে। কিন্তু কখনোই নিজেকে বস্তু হতে দেবে না।
,
,
,
,
,

,,

,
,
ওদিকে তীব্র হাসপাতালে গিয়ে তার সবচেয়ে কাছের মানুষের হাত ধরে বসে আছে। তখনি তীব্রের কাধে হাত দেয়…. তীব্র তাকিয়ে দেখে ওর ফ্রেন্ড তুষা…. তুষাই একমাত্র মেয়ে যে ওদের লাইফে আছে। তবে তুষা ছেলেদের মত থাকতেই বেশি পছন্দ করে। মেয়ের কোনো লক্ষন ওর মাঝে নেই। ওকে দেখে তীব্র নিজের চোখ মুছে নেয়।

— এত ভেঙে পরিস না। দেখবি ও একদম ঠিক হয়ে যাবে।

তীব্র উঠেই ওকে জড়িয়ে ধরে।

— কবে ঠিক হবে রে ও। দেখ এমন হাসি খুশি ছেলেটার কি হতে কি হয়ে গেল।

— ভেঙে পরিস না। দেখবি ঠিক হয়ে যাবে।

— কি ঠিক হবে এতদিন তো তাও আশা ছিল কিন্তু কাল রাতে ও কোমায় চলে গেছে কবে জ্ঞান ফিরবে তার কোনো ঠিক নেই। এমনকি ও বাচবে কিনা?

তুষা চুপ করে রয়েছে। উত্তরটা ওর অজানা নয়।

— ও কেন সব কথা লুকালো আমার থেকে? ও যদি একবার বলত ওই মেয়েটাকে ওর চাই ওর পায়ের কাছে এনে ফেলে দিতাম কিন্তু….

— তুই জানিস তো ও কত চাপা স্বভাবের ছেলে। কখনো নিজের কিছু চেয়েছে বল। ও খুব ভালো করেই জানত তোকে বললে তুই কিছু করবি তাই কিছু বলেনি যার জন্য…

— না তুষা আমি তখন করিনি তো কি হয়েছে? এখন করব…

— আচ্ছা সত্যি কি তায়্যিরাত মানে ওই মেয়েটার কোনো দোষ আছে। আমি ওই মেয়েটাকে দেখেছি ওকে দেখে তো এমন মনে হয় না।

— চেহারায় মানুষের আসল রুপ লুকিয়ে থাকে না তুষা। মানুষের মনেই সব। আর ওই মেয়েটা যেমন দোষী ওর বাবা ততটাই। তবে ওই মেয়েটার দোষ বেশি। কারন ওর কথায় ওর বাবা……

[ আর বলতে পারল না তীব্র। তুষা ও আর কিছু বলতে পারল না। কারন তীব্র ঠিক বলছে। যা হয়েছে সবটা তায়্যিরাতের কথায় ওর বাবা করেছে ]

— আর ওই মেয়েটার চেয়েও বড় দোষ ওর বাবার। আর তাই ওনার থেকে ওনার মেয়েটাকেই আমি কেড়ে নিতে চাই। কোনোদিন যাতে সে তার মেয়ের মুখটা দেখতে না পায় তার ব্যাবস্থা করব আমি
ওনার কাছে জিবনের চেয়েও সন্মান বড়। তাই ওনার মেয়েই হলো ওনার সন্মান নষ্টের কারন।

— মানে….

— কিছুনা। তুই ওর কাছে থাক। আমি আসছি..

[ তোকে আমি সবটা বলতে পারব না তুষা। ওই সবাই জানে মেয়েটা ওর বয়ফেন্ডের সাথে পালিয়েছে। আর তার জন্য ওর বাবাকে কতটা হেনস্তা করব আমি তা কল্পনার বাইরে। আর তায়্যিরাতকে তো আমি তিলে তিলে মারব। ওর জন্য আমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষকে হারাতে বসেছি। আমি ওর থেকে ওর দুনিয়াই কেড়ে নেব। নিঃস্ব করে ছাড়ব আমি ওকে…… ]

নিজের হসপিটালের সমস্ত কাজ শেষ করে দিকে বাড়ি ফেরে তীব্র। ও ফ্রেশ হয়ে তুরের রুমের দিকে যায়। রুমের দিকে গিয়েই দেখে ক্ষুদায় তৃষ্ণায় মাটিতে পরে আছে তুর। এতটাই জেদ ওর মরে যাবে অথচ কিছু খাবে না ও…. তীব্র দ্রুত ওর কাছে যায়। ওকে নিজের হাতের উপর নিতেই আধো আধো চোখ খোলে তুর… তীব্র ওর পালস চেক করে। তারপর ওকে রেখে ফাস্টেয়েইড বক্স নিয়ে আসে। তারপর ওর শরীরে একটা ইনজেকশন পুশ করতেই পালস স্বাভাবিক হয়ে আসে….

তুর অজ্ঞান নয় তবে পুরোপুরি সজ্ঞানে নেই। তীব্র দ্রুত ওর হাত পা ঘসতে থাকে। তারপর ওর গালে আলত করে থাপরাতে থাপরাতে পাগলের মত ওকে ডাকতে ডাকতে বলে…..

— তোমার এত সহজে কিছু হতে দেব না আমি তোমার। এখনো অনেকটা সময় বাচতে হবে তোমাকে…. তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য হলেও তোমাকে বাচতে হবে।

তারপর তীব্র ওর জন্য গরম স্যুপ আর কিছু ফল আর জুস নিয়ে আসে। যেহেতু কিছু পায় না তাই ওকে নিজের বুকের উপর শোয়ায়…. তারপর নিজের হাতে খাওয়াতে থাকে। ক্ষুদার্ত তুর আধো জ্ঞানে থাকা অবস্থায় সবটা খাবার খায় তীব্রের হাত থেকে। তীব্র ওকে প্রয়োজন মত খাইয়ে বাকিটা রেখে দেয়। বেশি খাওয়ালে পেটে সইবে না তাই। কারন তুর কয়েকদিন যাবত তেমন কিছুই খায়নি। ওকে খাইয়ে তীব্র উঠে পরতেই তুর ওকে আকড়ে ধরে। তীব্র চেয়েও ওকে ছাড়াতে পারে না। তুর একদম ওর বুকের ভিতর ঢুকে পরে……

তীব্র কিছু ভেবে না পেয়ে ওভাবেই বসে থাকে……
,
,
,
,

,
,
,

,
,
,
তীব্র বার বার নিজের ঘড়ি দেখছে চেয়ারে বসে। বিছানায় শুয়ে আছে তুর। দুপুর গড়িয়ে রাত। তুরকে যে ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে তাতে এতক্ষনে ওর ঘুম ভাঙার কথা। এসব ভাবতে ভাবতেই তুরের ঘুম ভেঙে যায়। ও আধো আধো চোখ খুলে তাকায়। আগের চেয়ে অনেকটা ভালো লাগছে ওর। ও পাশ ফিরতেই দেখে তখনকার লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তুর দ্রুত ওকে দেখে উঠে বসে….

— আমি তোমাকে খাবার খেতে বলেছিলাম তুমি খাওনি কেন?

তুর তীব্রের এমন কথায় বেশ কড়া গলায় উত্তর দেয়….

— আপনার দেওয়া খাবার খেয়ে আপনার ভোগের বস্তু হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।।এর চেয়ে না খেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।

এবার তীব্রের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে…..

— মৃত্যু টা কি খুব সহজ মনে হয় তোমার কাছে।

— কিছু যন্ত্রণা মৃত্যুর চেয়েও খারাপ। যা আমি চাইনা।

— তাই নাকি।

— ঠিক তাই……

— আমার উল্টো কথা একদম ভালো লাগে না। তাই যা বলছি তা চুপচাপ শোনো।

— আমি আপনার দাসী নই।

তীব্রের রাগটা যেন আরো বেড়ে যায়।

— এইটুকু মেয়ে আর তেজ এতটা। ছুট করল না।

— দেখুন আমি…

তুর কিছু বলার আগেই তীব্র ওর পিঠে ধরে ওকদম নিজের কাছে নিয়ে আসে…

— প্লিজ আমাকে ছোবেন না।

— মৃত্যু শুধু শুনেছ কখনো দেখনি আজ তা আমি তোমাকে দেখাব। তারপর ডিসিশন তুমি করবে বাচবে নাকি মরবে….

তারপর তুরের হাত ধরে বেড়িয়ে যায় তীব্র। বাড়িতে কেউ নেই আজ। তীব্র তুরকে ডায়নিকে নিয়ে মেঝেতে ছুড়ে মারে। তারপর একটা শিশি হাতে নিয়ে সোফায় বসে….

— মিস. তায়্যিরাত এইটা ধরুন।

[ শিশিটা তুরের দিকে ডিল মারল যা ওর কোলে গিয়ে পরল। ও শিশিটা তুলরেই দেখে সেটা বিষের শিশি। ও অবাক হয়ে তীব্রের দিকে তাকায় ]

— নিন খেয়ে নিন। তবে মনে রাখবেন এটা সত্যি কারের বিষ। মরার ইচ্ছে থাকলে খেয়ে নেও। নাহলে এসব বাচ্চামি ছাড়ও। অনেকটা বড় হয়ে গেছে তুমি।

তীব্রের কথায় তুরের কান্না চলে এলো। ও আর কোনো কথা না বলেই বিষের শিশিটা হাতে নিয়ে খেয়ে ফেলল। তবে তীব্র কোনো রিয়েক্ট করল না। বিশটা খেয়ে তুরের নিশ্বাস বেড়ে গেল।

— চিন্তা করো না এটা স্লো পয়েজন। একটু টাইম লাগবে তোমাকে গ্রাস করতে। তবে কথা দিচ্ছি মৃত্যু নিশ্চিত।

এদিকে তুরের কাশি উঠে গেল। এটা দেখে তীব্র বেশ বিরক্তি নিয়েই উঠে টেবিলে থাকা প্লাস্টিকের বোতলে অনেকটা পরিমান লবন ভরে নিল। সেটা ঝাকিয়ে তুরের কাছে গিয়ে ওকে ধাক্কা মেরে সোফায় ফেলে দিল। তারপর ওকে শক্ত করে ধরে বোতলের মুখটা চেপে ধরল….. পুরো পানিটা তুরকে খাইয়ে তবেই ছাড়ল। লবন পানি খেয়ে মুহুর্তেই তুর বমি করে পুরোটা উগড়ে দিল।

— মৃত্যু এতটা সহজলভ্য নয়। যে চাইলেই পাবে।

তুরের চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো। ও মাটিতে পরে যাবার আগেই তীব্র ওকে ধরে কোলে তুলে নিজের রুমের পথে পা বাড়ালো। ওকে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বাকা ঠোঁটে হেসে উঠল….

— কি অদ্ভুত আমার কাছে তুমি হুশের চেয়েও বেহুশ ই বেশি থাক। কবে না আমি আমার হুশ হারিয়ে ফেলি। যাই হোক বিশ ছিল তবে মরার মত এতটা মারাত্মক না। তবুও লবন পানি খাওয়ালাম।
,
,
,
,
#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 12…….

— কি অদ্ভুত আমার কাছে তুমি হুশের চেয়েও বেহুশ ই বেশি থাক। কবে না আমি আমার হুশ হারিয়ে ফেলি। যাই হোক বিষ ছিল তবে মরার মত এতটা মারাত্মক না। তবুও লবন পানি খাওয়ালাম।
,
,

,
,
,
,

,,
,

,
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তুর দেখে তার পাশে কিছু খাবার আর চিড়কুট রাখা। তুর চিড়কুটটা হাতে নিতেই দেখে তাতে লেখা……

,,,,,,,,,,,, সবকিছু রেডি করা আছে। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে মেডিসিনটা নিয়ে রেস্ট নেও। নাইলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। কালকের রাতের কথা যদি ভুলে না যাও তাহলে খেয়ে নেও।

চিড়কুট টা দেখে তুরের রাগটা বেড়ে গেল। অসভ্য একটা লোক মরার জন্য বিষ দিয়ে আবার লবন পানি খাওয়াচ্ছে। ভেবেই চিড়কুট ছিড়ে কুটি কুটি করে ফেলে। আর রাগে উঠে সব খাবার ফেলে দেয়।

—- ” কি ভেবেছে লোকটা যা বলবে তাই করতে হবে নাকি। ”

তারপর সেখানেই চুপচাপ বসে পরে। আজ আর তীব্র সারাদিনে বাসায় ফেরে না। ও একদম রাতে বাসায় ফেরে। বাড়িতে ফিরে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে তুরের কাছে যায়। কিন্তু গিয়ে যা দেখে তাতে ওর মাথা পুরোটাই গরম হয়ে যায়। খাবার নষ্ট করা তীব্রের একদম পছন্দ না কিন্তু তুর সেই কাজটাই করেছে। ও তুরকে বিছানা থেকে তুলেই খুব জোরে একটা থাপ্পড় মারে। হকচকিয়ে উঠে তুর….

— খাবার পেয়েছিস বলে মুখে রুচ্ছে না তাই না। জানিস দুনিয়ার কত মানুষ এক মুঠো খবারের জন্য কি কি করে? মানুষ খাবার পায় না বলে মরে যায় আর তুই….

— মরতেই তো চাই। তাই তো খাই না। কারন আমি মরতে চাই। থাকতে পারছি না এভাবে…

কালকের সেই এক কথা শুনে তীব্রের রাগটা আরো বেড়ে গেল।

— তুই খাবি না তোর ঘাড় খাবে। তোর চাকর আমি তোর কথা মত চলব। আর ফ্রেশ খাবার না যেগুলো নষ্ট করেছিস সেগুলোই খাবি তুই….

বলেই তীব্র মেঝে থেকে খাবার তুলে জোর করে গাল চিপে ধরে খাইয়ে দিল। তুর তা গিলতে বাধ্য হলো। তারপর তীব্রকে ধাক্কা মেরে বাইরে বের হতে চাইল। কিন্তু তার আগেই তীব্র ওকে ধরে ফেলল….

-_ অনেক বেশি তেজ। ভাঙবে কিন্তু মচকাবেনা। 😡 মরা এত সহজ নয় বুঝলি। অনেক কষ্ট হয় তাতে।

— মরার চাইতে বেশি কষ্ট দিচ্ছেন আর বলছেন মরতে অনেক কষ্ট।

— কালকের পরেও শিক্ষা হয়নি না।

— বাচতে তো চাইনি তাহলে বাচালেন কেন?এভাবে তিলে তিলে মারবেন বলে…..

-_ ও বাচিয়েছিলাম বলে আমার দোষ হয়েছে। ঠিক আছে আজ আর তা চাইব না।আজকে তুই যদি বাচতে না চাস তাহলে আর তোকে বাচাব না।

তীব্র বাইরে বেড়িয়ে একটা ধারালো ছুরি নিয়ে আসে। ছুরিটা তুরের হাতে না দিয়ে তীব্র নিজেই তুরের হাতটা ধরে। তুর কিছু বুঝতে পারে না।

— কি করছেন ছা…..

তুরের কথা শেষ করতে না দিয়েই তুরের হাতের উপরের চামড়া কেটে দেয়। তুর তখনি চিতকার করে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। অঝোরে রক্ত পরছে…… এটা দেখে তীব্র বলে…..

— এইবার ঠিক মৃত্যুর স্বাদ পুরন হবে তোমার। এবার বলো বাচতে চাও নাকি মরতে?

কিন্তু তুর কোনো কথাই বলতে পারল না। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে তীব্র আরো রেগে গেল। এতটাই রেগে যে তুর যে কথা বলতে পারছে না সেটা খেয়ালে এলো না
।তীব্র ওকে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে গেলো। ছাদের একবারে কিনারায় নিয়ে দাড় করিয়ে দেয় তুরকে…

— কাটা হাত থেকে রক্ত বের হয়ে মরতে গেলে অনেক সময় লাগবে। তারচেয়ে সবচেয়ে কম সময়ে তুমি এইখান থেকে মরতে পারবে। So ready for die…..

বলেই ছাদের থেকে তুরকে ধাক্কা দেয় তুরকে। তুর ভয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে নিতেই তীব্র ওর হাত ধরে নেয়। তারপর ওকে টেনে আবার নিজের দিকে নিয়ে নিতেই তুর গিয়ে তীব্রের বুকের মধ্যে পরে….. ভয়ে ও তীব্রকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়….

— মৃত্যুর ইচ্ছে কি এখনো আছে নাকি বাচতে চাও?

তুর কিছু বলতে পারছে না। আর তীব্রের একটাই কথা ওর মুখ থেকে স্বীকার করিয়েই ছাডবে ও বাচতে চায়। যা বলার অবস্থা তুরের নেই।

— এখনো বলবে না যে তুমি বাচতে চাও নাকি মরতে….. ঠিক আছে…..

তীব্রের বাড়ির ছাদের সুইমিং পুলে নিয়ে যায়। তারপর ওপাশ থেকে টান দিয়ে কারেন্টের তারটা ছিড়ে তা পুলের পানিতে ছুড়ে মারে…. ওদিকে তুরের হাত থেকে রক্ত পরছে। তারপর তুরকে সুইমিং পুলের কাছে নিয়ে যায়। তুর দেখে পানিতে বিদ্যুতের আলোক রশ্মি চক চক করে উঠছে…..

— এবার আর তোমাকে আমি কোনো কষ্টই দিব না। দেখ এই পানিতে পরা মাত্র মুহুর্তের মধ্যে মৃত্যুর স্বাদ নেবে। তোমাকে আর তার জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না।

টেনে হিচড়ে তুরকে পানিতে ফেলতে চায়। এবার তুর নিজের পিছিয়ে যায়।

— প্লিজ এমনটা করবেন না। ছাড়ুন আমাকে…

_- মরার অনেক শখ না তোমার তাহলে ছাড়তে কেন বলছ….

তীব্র ওকে পুকুরের পানিতে ফেলে দিতে নেয়। কিন্তু তখনি তুর চিতকার করে বলে উঠে….

— মরতে চাই না আমি বাচতে চাই। প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে। মুক্ত ভাবে বাচতে চাই আমি। প্লিজ এই পানিতে ফেলবেন না আমাকে……

তখনি তীব্র ওকে জোরে টান দিয়ে নিজের বুকের ভিতর টেনে নেয়। আর তুর প্রচন্ড ভয় পেয়ে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে চিতকার করে কাদতে কাদতে বলতে থাকে….

— বাচতে চাই আমি। মরতে চাই না। খুব ভয় হয় আমার। প্লিজ…..

তুরের শরীর নিস্তেজ হয়ে ওকে ছেড়ে পরে যেতে নেয়। তীব্র এতক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলেও তুরের পরে যাওয়াতে খুব শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে ওকে….. দেখে তুর হালকা গলায় বুলি আওরাসছে…..

— বাচতে চাই আমি মারবেন না আমাকে…..

তীব্র ওকে কোলে তুলে নিজের রুমে যায়। ওকে বিছানায় শুইয়ে রিদ্ধকে ফোন দিয়ে আসতে বলে……

ফোন কেটে ও তুরের কাছে যায়। তুর তখনো সেই বুলি আওরাসছে…. ” আমি বাচতে চাই। আমাকে মারবেন না। ”

— তোমাকে আমি এমনি মরতে দেব না। তবে তমি যেভাবে বাচতে চাও সেভাবেও দেব না। মুক্ত ভাবে নয় বন্ধ হয়ে বাচতে হবে তোমাকে।

তীব্র ওর কাটা হাতের দিকে তাকায়। মেয়েটা আঘাতের চেয়ে ভয়টা বেশি পেয়েছে। রক্ত পরাটা বন্ধ হয়ে গেছে। কারন তীব্র খুব সুক্ষ্ম ভাবে তুরের হাতের চামড়া কেটেছে। কিন্তু তুরের পক্ষে তা জানাটা একবারেই অসম্ভব। তীব্র হালকা মেডিসিন দিয়ে তুরের হাতে একটা কোনো রকম একটা ব্যান্ডেজ করে যাতে তুর ভয় পায়। কারন তীব্র এটাই চায় যে তুর ওকে ভয় পাক। তবে তুরের সাহসটা ওকে খুব বেশি অবাক করেছে। ৩ বার মৃত্যুর মুখে গিয়ে শেষ বার ও বাচতে চেয়েছে।

তখনি রুমে রিদ্ধ আর ম্যানেজার প্রবেশ করে। ওদের দেখে তীব্র উঠে দাড়ায়।

— কি হয়েছে মেয়েটার.. [ ম্যানেজার ]

— তেমন কিছুই না শুধু একটু ভয় পেয়েছে। আর কেন সেটা আপনাদের না জানলেও চলবে? [ অন্যদিকে তাকিয়ে মুড নিয়ে ]

— তা স্যার এবার মেয়েটাকে নিয়ে আমাদের প্লান কি?

তীব্র ভ্রু কুচকে রিদ্ধর দিকে তাকাতেই ও জিহবায় কামর দেয়।

— না মানে মেয়েটাকে নিয়ে কি করবেন। ওর জন্য ডেকেছেন মনে হলো।

— হুমম ওর জন্যই ডেকেছি। ওকে আমার বাড়ি থেকে I mean… এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।

— স্যার তারমানে আমরা কি আবার সেই লোকগুলোকে ডাকব। 🤔

— shut up রিদ্ধ…. 😡

— না তাহলে স্যার…. 🙄

— আমি ওকে এখানে রাখতে চাচ্ছি না। এখানে রাখা ওর জন্য সেইভ না। ওকে আমি আমার সাথে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে চাই….

— স্যার তারমানে আপনি এই মেয়েটাকে আপনি দেশের বাইরের সেই বাড়িতে নিয়ে যাবেন। [ বেশ অবাক হয়ে ]

— কেন তোমার তাতে কোনো সমস্যা।

— না কিন্তু আপনি একটা মেয়েকে নিয়ে করবেন টা কি?

রিদ্ধের এই কথায় তীব্র অবাক চোখে ওর দিকে তাকায়। রিদ্ধ এমন একটা প্রশ্ন করবে তা প্রত্যাশা ছিল না তীব্রের…..

— মানে? কি বলতে চাইছ তুমি?

— না মানে স্যার। আপনি তো মেয়েটিকে ওই লোক গুলোর হাতে তুলে যেতে চেয়েছিলেন যাতে….

রিদ্ধের কথায় প্রচন্ড রাগ উঠে তীব্রের….

— চুপ করো রিদ্ধ। এমনটা চেয়েছিলাম ঠিকি। [ তারপর তুরের দিকে তাকায় ] ও যখন দোষ করেছে একজনের সাথে ওকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার একজনের হওয়া উচিত। আর সেটা আমি…..

— স্যার আরেকটা প্রশ্ম ছিল।

এবার তীব্রের চরম রাগ উঠে। এ কাকে কাজের জন্য রেখেছে। তীব্র প্রচন্ড রাগলেও রিদ্ধর তার উত্তর চাই। এটা দেখে ম্যানেজার হাসছে। কারন কয়েক বছর ধরেই এসব কাহিনী দেখে আসছে তিনি। তীব্রকে এমনি কিছু বলে দমাতে পারেনা কেউ একমাত্র রিদ্ধের এসব বোকা বোকা কথা ছাড়া। কারন ও তীব্রের কাজে অনেক বেশি কনফিউজড। আর সেই কনফিউশানে এমন প্রশ্ন করে যার উত্তর তীব্রের কাছে নেই……

— স্যার ওই লোকগুলো তো মেয়েটার সাথে খারাপ কিছুই করত। কিন্তু আমার প্রশ্ন আপনি কিভাবে একটা মেয়ের সাথে এমন করবেন? 🤔 আর ওই মেয়ে কেন আপনি তো কোনো মেয়ের সাথেই.…..

রিদ্ধ আর কিছু বলার আগেই তীব্র ওর গানটা রিদ্ধর মাথায় তাক করে…..

— আমাকে দেখে তোমার লেসবিয়ান মনে হচ্ছে নাকি? 😡

_- এই না না স্যার ছি ছি… আমি বলতে চাইছি আপনি তো নারী বিদ্বেষী। বরাবরই মেয়েদের সহ্য করতে পারেন না। তাই আরকি বলছি। কারন আপনি কখনোই কোনো মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করবেন না তাই…. তাই ওই লোকগুলোর মত কিছুই করবেন না।
স্যার প্রশংসা করছি এবার তো বন্দুকটা সরান। 😬

এবার আর তীব্র রাগ করে থাকতে পারল না
কোন মতে নিজের হাসি চেপে রাখল।

— স্যার আমি জানতাম আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন তাই আমাকে মারবেন মা। [ হাফ ছেড়ে ]

— মানে….

— আরে ভালোবাসা মানে। ভাই বন্ধুদের মত ভালোবাসা। 😁 তাই আপনি চাইলেও কিছু করবেন না।

— বাজে বকা বন্ধ করে আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করো। Now get lost…😡

ম্যানেজার আর রিদ্ধ বেড়িয়ে আসে। ওরা বেড়িয়ে যেতেই তীব্র নিজের মনে হেসে উঠে। সত্যি কয়েকটা মানুশের জন্যই ও বেচে আছে। তার মধ্যে রিদ্ধ ও একটা। ছেলেটা ওর হাসির খোড়াক ইচ্ছে করেই এমন কথা বলে যে রাগ ও উঠে আর আবার হাসিও পাও…….

ওরা বাইরে বেড়িয়ে রিদ্ধ বলে উঠল.. …

— জোর বাচা বেচে গেছি….

— আচ্ছা তুই শুধু স্যারের পিছনে কেন লাগিস। যদি রাগ করে সত্যি সত্যি….

— আরে ম্যানেজার কাকু। আমি ওনাকে সেই ক্ললেজ লাইফ থেকে চিনি। ওনি উপরে যতই রাগী হোক না কেন ভিতরে ততটাই মিষ্টি। । যাই হোক চলুন।

— আচ্ছা স্যার মেয়েটাকে ওখানে কেন নিয়ে যাচ্ছেন?

— আমারো একই প্রশ্ন? আজ পর্যন্ত আমিও সেই বাড়িতে যাইনি অথচ ওই মেয়েটাকে কেন নিতে চাইবে?
,
,
,
,
,
,
,

,
,তীব্র তুরের পাশে বসে আছে….

খুব শীঘ্রই তোমাকে এই দেশ থেকে নিয়ে চলে যাব। যেখানে কেউ তোমাকে দেখতে পাওয়া তো দুরে থাক খোজার চেষ্টাও করবে ন। তোমাকে আমি পুরো দুনিয়া থেকে আড়াল করে রাখব। কেউ চাইলেও তোমাকে কোনোদিন খুজে পাবে না।

তার ৩ দিন পর তীব্র তুরকে নিয়ে দেশ ত্যাগ করে। তীব্র ছাড়া কেউ জানেনা যে ও তুরকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে। তুরকে নিজের ওয়াইফ হিসেবে পরিচয় করিয়েছে তীব্র। আর ওকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একজন পেসেন্ট হিসেবে। যে কিনা বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য যাচ্ছে। আর তার জন্য সবকিছুর ব্যবস্থা করেছে তীব্র……

৪ দিনের মাথায় তীব্র পৌঁছে যায় তার কাঙ্ক্ষিত জায়গায়। তবে সেখানে গাড়িতে নয় হেলিকপ্টারে গিয়েছে তীব্র। সেখানে হেলিকপ্টার থামতেই কিছু কালো পোশাক ধারী বডি গার্ড তীব্রকে নিতে এগিয়ে আসে।

তীব্রের হেলিকপ্টার থেকে নেমেই বুক ভরে একটা নিশ্বাস নেয়৷ তারপর নিজের কোর্টটা ঠিক করে….. সানগ্লাসটা চোখে পরে।

কালো শার্ট, ব্লাক ডেনিম প্যান্ট, কালো সু, হাতে ব্যান্ডের ঘড়ি আর চোখে সানগ্লাস…. যার সাথে ফর্সা বুকের অংশটা একদম উন্মুক্ত। হেলিকপ্টারের বাতাসে ওর চুলগুলো উড়ছে। আর তার পাশে ফরমাল ব্লাক ড্রেসআপের বডিগার্ড। যাতে পুরাই ব্লাক পিন্স লাগছে তীব্রকে। তীব্রেকে দেখেই একটা লোক এগিয়ে এসে বলল….

— welcome to back your home sir….

তীব্র কিছু বলল না শুধু চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করল। লোকটা মাথা নেড়ে চলে গেল…..

তারপর তীব্র হেলিকপ্টারে ঘুমন্ত তুরের দিকে তাকাল। কয়েকটা লোক তুরকে হেলিকপ্টার থেকে নিচে নামাতে যায় তখনি তীব্র বলে উঠে……

— Don’t touch her… Everyone stay away from her…..

তিব্রের কথায় সবাই Ok বলে সরে গেল।

তীব্র নিজেই তুরকে কোলে তুলে নিল তারপর ওর লোকদের নিয়ে আসা গাড়িতে উঠে বসল….আর তুরকে শুইয়ে ল্যাপটপে কিছু দেখতে লাগল।

কিছুক্ষনের মধ্যেই তীব্র তুরকে নিয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত বাড়িতে পৌঁছে যায়। যার খবর কেউ জানে না। তীব্র যদি না আসে তবে এই বাড়ি থেকে তুরকে খুজে বের করা কারো পক্ষে সম্ভব না। আর এখানেই তুরকে নিয়ে এসেছে ওর বন্দীনী করার জন্য…..

তারপর তীব্র গাড়ি থেকে নেমে তুরকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে যায়। বাড়িতে ঢোকার অনুমতি নেই কারো। তাই সমস্ত গার্ডরা নিজেদের কাজে চলে যায়। তীব্র তুরকে সেই রুমে নিয়ে শুইয়ে দেয় যেখানে তুরকে নিজের বন্দীনী করে রাখার জন্য নিয়ে এসেছে। তীব্র আগে থেকেই রুমটাকে তুরের থাকার জন্য রেডি করে রেখেছে। তুরের প্রয়োজনীয় সবকিছু সহ ক্যামেরা পর্যন্ত লাগানো হয়েছে। এটা একটা সিক্রেট রুম তীব্র না চাইলে কেউ এটা খুজে বের করতে পারবে না।

তুরকে ওখানে শুইয়ে দিয়ে তীব্র নিজের রুমে চলে যায়। তারপর ক্লান্তিতে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পরে।

এই বাড়িতে তেমন আসে না তীব্র। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া। বলতে গেলে বছরে দু একবার। আর এখানেই তুরকে নিয়ে এসেছে #বন্ধ_দরজার_বন্দীনী করতে যেটা না চাইতেও তীব্রের #বন্দ_দরজার_তুমি🖤 হয়ে যায়….

,
,
,
,
,
,
,

,,
বেশ খানিকটা সময় পর তুর জেগে উঠে ও নিজেকে সম্পুর্ন নতুন একটা পরিবেশে আবিষ্কার করে। সবকিছুই অদ্ভুত……

ঠিক তখনি রুমে প্রবেশ করে তীব্র।

— আপনি….?

— কেন অন্যকাউকে আশা করেছিলে নাকি?

এসে তুরের পাশে বসে ওর গালে নিজের আঙুল ছোয়ায়…. তুরের বেশ ইতস্তত লাগে..

— না তেমন কিছু না। [ গাল থেকে তীব্রের হাত সরিয়ে দিতে চেয়ে ]

তীব্র সেটা খুব ভালোই বুঝতে পারল যে তুর চায়না ওকে রাগাতে। কারন তার পরিনাম তুর জানে…. তাই তীব্র এবার তীব্র ওর ঠোঁট স্পর্শ করে। তুর কিছু বলতেও পারছে না। আর সহ্য করতেও পারছে না। এটা দেখে তীব্র বলে উঠে…..

—- তাহলে কেমন..??

— আসলে এই রুমটা….

— তুমি আগে যে রুমে ছিলে এটা তার পাশের একটা রুম। আসলে সেই রুমটা একটু ছোট ছিল। তাই তোমাকে এই রুমে শিফট করা হয়েছে।

— ওওওও….

তুরের কথায় তীব্র হাসে। কারন জানে তুর পালানোর জন্য বোঝার চেষ্টা করছে। তাই ও নিজের মনেই বলল…

[ আপনি নিজেও জানেন না আপনি সেই বাড়ি কেন সেই দেশেও নেই। আর এখান থেকে যাওয়া আপনার জন্য সম্ভব না। ]

— তা তোমার এখানে থাকতে সমস্যা হবে? তাহলে আমি আগের রুমে…

— না না তার দরকার নেই?

এইটা শুনে তীব্র তুরের দিকে আরেকটু এগিয়ে গেল। ওর খুব কাছে গিয়ে তুরের গাল দুটো ধরে বলল…

— এখানে থাকতে সমস্যা হবে না বুঝলাম কিন্তু আমার সাথে…..

তীব্রের কথায় তুরের কলিজা শুকিয়ে এলো। চোখের কোনে পানি জমে গেল। কিছু বলতে চাইল কিন্তু পারল না। কান্নার বেগ আটকে রাখতে চাইল যার কারনে ঠোঁট জোরা প্রচন্ড কাপছে তুরের…..

তুরের কাপা ঠোঁট জোরা বড্ড টানতে লাগল তীব্রকে। তীব্র ওর একহাতে ওর গাল ধরে তুরের দিকে এগোলো। তীব্রের গরম নিশ্বাস তুরের উপর পরতেই ও চোখ বন্ধ করে নিয়ে দুচোখের পানি ছেড়ে দিল। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে তীব্র ওর মুখে আলত করে ফু দিয়ে ওর অশ্রুসিক্ত বন্ধ চোখ জোরায় চুমো একে দেয়। তীব্রের এমন বিহেভে তুর চোখ খুলে অবাক চোখে তাকায় তীব্রের দিকে…

— জানো তো খোলা চোখের চেয়ে বন্ধ চোখের নেশা বেশি হয়। আর যদি তা অশ্রু সিক্ত ভেজা হয় তবে তার স্বাদ হয় অমৃত…. আর তুমি সেই অমৃতের ধারা দু চোখ দিয়ে বর্ষন করে আমার সামনে নষ্ট করছ এতে আমার দোষ কই?

তুর কি বলবে ভেব পায় না। তখনি তীব্র শুয়ে পরে তুরের পাশে। তুরকেও নিজের পাশে শুইয়ে দেয়। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে আরেকটু কাছে যায় তীব্র। ওর গালে নিজের নাক দিয়ে আলত করে স্লাইড করতে করতে বলে…..

—- কিহল চুপ আছো যে? আমার সাথে কথা বলতে চাইছ না নাকি ইচ্ছে নেই এখন?

তুর কি বলবে ভেবে পায় না। তীব্র ওর আরো কাছে আসতে থাকে। তুরের একহাত তীব্র নিজের হাতের ভাজে আটকে নেয়। তারপর তুরের গলায় মুখ ডুবাতেই তুর পাথর হয়ে যায়। তুরকে কোনো পাথরের মূর্তি লাগছে। তুর বুঝতে পারে হয়তো এই লোকের হাত থেকে আজ ওর নিস্তার নেই। তাই নিজেকে ভাগ্যের উপর ছাড়া কোনো উপায় নেই তুরের…..

বেশ কিছুক্ষন পর তুরের কোনো রেসপন্স পায় না তীব্র। ও তুরের দিকে তাকাতেই দেখে বন্ধ চোখের পানি নিরবে ঝরছে। তীব্র দ্রুত উঠে বসে। ও ভেবেছিল তুর ভয় পেয়ে ওকে বাধা দেবার চেষ্টা করবে কিন্তু তুর এমন কিছু করল না। কারন ওর আসল উদ্দেশ্য তুরকে ভয় দেখানো। কিন্তু বুঝতে পারল তুর ওকে নিয়তি ভেবে মেনে নিয়েছে। এটা ভেবে রাগ উঠল তীব্রের…. ইচ্ছে করছে তুরকে ঠাটিয়ে দুইটা চড় মারতে। কিন্তু তা চেয়েও পারল না। মেয়েটাকে আর কোনো আঘাত দিতে ইচ্ছে করে না তীব্রের। যখন নিজের রাগটাকে সইতে পারে না তখনি ওমন করে…..

কিন্তু এবার সত্যি তীব্রের রাগ উঠে গেল। তীব্র ওর ঘাড়ের নিচে হাত দিয়ে টান মেরে শোয়া থেকে বসিয়ে ওর মুখটা একেবারে নিজের কাছে নিয়ে এলো। এবার তুর ব্যাথায় নিজেকে ছাড়াতে চাইল। কিন্তু তীব্র ওর দুহাত নিজের একহাতে তুরের পিছনে মুড়ে ধরল…

_- কিহল আজকে বুঝি আমার ছোয়ায় খারাপ লাগছে না। বাধা দিচ্ছ না যে?

তুর কাপা কাপা কান্না মিশ্রিত কন্ঠে অনেকটা অভিমানী সুরে বলে উঠল…..

— যদি বাধা দেই শুনবেন। আর যদি নিজেকে রক্ষা করতে চাই তাহলে ভেবে বলুন… আমি কি তা পারব।

— নিজেকে কি আমার মর্জির মালিক করে আমার উপর ছাড়ছ….

— নাহহহ…. ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি। আমার কিছু করার নেই ভাগ্য যা বলবে তাই। এতটুকু তো বুঝেই গেছি।

কথাগুলো খুব গায়ে লাগল তীব্রের…..

— ঠিক আছে। তাহলে বলতে পারি আমার সব কাজেই তোমার সন্মতি আছে?

তুর চুপ…..

তীব্র তুরের সারা মুখে নিজের ঠোঁটের পরশ আকে। তুর তখনো স্থীর। তীব্র তখনি তুরকে ধাক্কা মেরে উঠে দাড়ায়। মেয়েটা ওর সব ভাবনায় পানি ফেলে দিয়েছে। আর তীব্র চাইলেও এমনটা করতে পারবে না। রাগ থেকে তুরের সাথে এমন করে যাতে ও ভয় পায়। এখন ও যদি ভয়টাই না পায় তাহলে তীব্র কি করবে। এখন কোনো মেয়ের সাথে জঘন্য কিছু করে আর যাই হোক নিজেকে কোন নর্দমার কিট বানাতে পারবে না তীব্র। একজনের চোখে নিজেকে খারাপ প্রুভ করে নিজেকে নিচে নামাতে পারবে না। কিন্তু এমনি এমনি মেয়েটাকে এখন ছাডতেও পারছে না। নিজের রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে….

তখনি তীব্র মুখ ফোসকে বলে উঠল ,‘‘তোমার জন্মতারিখ কত?‘‘

তীব্রের মুখে এই কথা শুনে অবাক হয় তুর
লোকটা ওর জন্মতারিখ কেন জানতে চাইছে….

— কিহলো বলো জন্মতারিখ কত? [ ধমক দিয়ে ]

— জি ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৩….

কথাটা শুনেই তীব্র হাফ ছেড়ে বাচে। আর এখন ২০১৯….. এটা ভেবে তীব্র নিজের মনে বলে উঠে…

— তারমানে ১৮ বছর এখনো হয়নি। ৩ মাস এখনো বাকি। ওর সাথে এমন করাটা আমার উচিত হচ্ছে না। ও আগে বড় হোক তারপর যা করার করব আমি।

এখন এই কথাগুলো দ্বারা তীব্র ওকে বড় হয়ে উঠতে বলল। নাকি নিজেকে ওর থেকে দুরে রাখার উপায় খুজল তা হয়ত ও নিজেও জানে না। কিন্তু ব্যাপারটা ভেবে বেশ খুশি লাগল তীব্র। তুরের থেকে নিজেকে দুরে রাখার, তুরকে শাস্তি না দেবার এক অন্যান্য উপায় এটা। যাতে তীব্র তুরকে কিছু বলবেও না। আর তুরকে কিছু বলতে পারবে না বলে নিজের উপর রাগ ও হবে না……

— তায়্যিরাত তুমি এখনো ছোট তাই বলছি এসব বড় বড় কথা আরেকদিন বলবে না।

এটা শুনে তুর চমকে গেল। তীব্রের কাছে ওকে ছোট লাগছে। হ্যা মা বললে মানা যেত।

— আরেকটা কথা তোমার নামটা এতটা বড় কেন? আর কোনো নাম নাই নাকি? কোনো শর্ট নাম বলো। [ ধমক দিয়ে ]

— তু…তু.. তুর….

— এখন থেকে এখানেই থাকবে তুমি… কয়েক মাসের জন্য তোমার যা যা দরকার সব এখানে আছে। সো কাউকে তোমার লাগবে বলে মনে হচ্ছে না।
,
তুর কিছু বলার আগেই তীব্র বেড়িয়ে দরজা আটকে দেয়। সে এখানেই তার বন্দীনী কে রেখে গেল। তার #বন্ধ_দরজার_তুমি করে…..

আর তখন থেকেই শুরু হয় তুরের বন্দী জীবন। তীব্র ৩ মাসে কয়েকবার এখানে এসেছে। প্রথম মাসে শুধু মাত্র একবার এসেছিল। পরের মাসে তীব্র আসেনাই। আর আসলে বা কি ২ বা ১ দিন থাকে। যাতে তুরের কোনই লাভ হয় না। বরং লোকটা থাকলে কয়েকঘন্টায় ও ধম বন্ধ হয়ে আসে। প্রথম প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও পরে সেটা অভ্যাস হয়ে গেছে।

তবে পরিবর্তন টা হয় শেষ মাসে। তীব্র তেমন ভাবে তুরের সাথে কথা বলত না। আর না এখানে এসে বেশিক্ষন তুরের কাছে থাকত ওকে দেখেই চলে যেত। কিন্তু শেষ মাসে অদ্ভুত ভাবে তীব্র বেশ কয়েকবার এসেছে। তুরের সাথে দেখা না করলেও এসেছে।

তবে তুরকে সামনা সামনি দেখুক বা না দেখুক। ল্যাপটপে তুরের অববয় সবটা সময় তুরের সামনে ছিল। যেখানে তুর ও বাধ্য মেয়েই হয়ে ছিল…..

এভাবেই কেটে গেছে তুরের ৩ মাসের বন্দী জিবন।

.
.
..

.
.
.
.
.
.
বর্তমান……………..

.
.
.
.
.
তীব্র এতক্ষন গাড়িতে বসে বসে পুরানো কথাগুলো ভাবছিল। আসলেই মেয়েটা আসার পর ওর লাইফের অন্যরকম একটা লক্ষ্য হয়ে গেছে। আগে বাচার কারন না থাকলেও এখন ওই মেয়েটাকে বাচিয়ে রাখার জন্য বাচতে ইচ্ছে করে। নিজের সমস্ত কাজ শেষ করার পর দু একদিন অবসর পেলেই হাজার মাইল পারি দিয়ে ওর কাছে আসতে ইচ্ছে করে। এখন আর কোনো সময় এমনি কাটে না সবটাই ব্যস্ততায় কাটে। হয়তো ওকে দেখার ব্যস্তটা নয়তো ওর কাছে আসার ব্যস্ততা…….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here