#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_৭
#Sanchita(Writer)

“তোমাকে বাচঁবে হবে তিথি!জীবনের মাঝ পথে এসে এভাবে ভেংগে পড়োনা।জীবন অনেক কঠিন,অদ্ভুদ এখানে নিজের মতো করে টিকে থাকতে হবে।আমার মায়া তোমাকে ছাড়তে হবে তিথি,আমাকে তোমার কল্পনার ভ্রম থেকে মুছতে হবে নয়তো তুমি জীবনে এগিয়ে যেতে পারবেনা।ভালো থেকো আজ আসি তবে(একগাল হেসে)

অন্তিক প্রতিদিনের ন্যায় আজও হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। তিথি নির্বাক হয়ে অন্তিকের কথা শুনে দাড়িয়ে আছে, অন্তিককে তার কল্পনার ভ্রম থেকে মুছতে হবে চিরতরের জন্য। যদি তিথি তাই করে তাহলে বাচঁবে কিভাবে সে।অন্তিকের স্মৃতি গুলো তো তাকে বাচঁতে দিবেনা প্রতিনিয়ত দহনের আগুনে পুুড়িয়ে মারবে।
অবশ্য গত একবছর ধরে সেতো অন্তিক নামক অধ্যায়ের দহনে পুড়েই আসছে।
তিথির নির্বাক নয়নের থেকে অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।তিথি ব্যালকনির রেলিং ঘেদে নিচে বসে পড়লো।
আর কত সে এভাবে বাচঁবে এতিমের‌ মতো,ভালোবাসার অপূর্ণ প্রেমী হয়ে।
তিথি কাদঁছে নিশ্চুপে কাদঁছে। প্রতিদিনের মতো এটাই তো তিথির নিত্যদিনের কাজ।
নিত্যদিনের সঙ্গী ” অশ্রুজল”।
হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলো তিথি।কান্না ছাড়া তার জীবনে আর কোন শব্দ নেউ।খুশি নামক পাখিটাকে তার প্রিয় ভাই আর বাবা মেরে ফেলেছে। ভালোবাসা পূর্ণ করেও অপূর্ণ করে দিয়েছে।
আচ্ছা বাবা,ভাইকে বলে কি সে অনেক বড় পাপ করেছে।আজকাল কার দিনে তো ছেলে মেয়েরা বাবা-মাকে না জানিয়ে পালিয়ে যায়। নিজের জীবনটাকে নস্ট করে ফেলে।তবে সেকি বাবা-মাকে বলে অনেক বড় ভুল করেছে।তিথি প্রতিনিয়ত মনে করে তার জন্য অন্তিক আর এই পৃথিবীতে নেই সে অন্তিকের মৃত্যুর প্রধান কারণ।

“তুমি কোন ভুল করোনি তিথি।তুমি তোমার মা-বাবাকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলে সম্পর্কটাকে সত্য করেছো।তুমি ভাবছো যদি বাবা-মাকে নিজের প্রেমের সম্পর্কের কথা না বলে যদি আমার সাথে পালিয়ে যেতে তাহলে খুশি থাকতে।তবে তুমি ভুল ভাবছো তিথি যদি আমার সাথে পালিয়ে যেতে তাহলে সমাজের লোকজন তোমাকে নানান কথার জালে ফেলে মেরে ফেলতো,দম বন্ধ করে দিতো।প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাবা এরপর নিজের জীবনটাকে নিজের হাতে নস্ট করবে এটা ঠিক না ।আর ভাবো পালিয়ে যাওয়া অবস্থায় আমার যদি কিছু হতো তাহলো তুমি কোথায় যেতে বাড়িতে গেলে তুমি বেচেঁ থাকতে পারতেনা চিরজীবন তোমাকে কু-কথা,বিশ্রী বিশ্রী ভাষা উপাধি পেতে হতো।আমার সাথে যা হয়েছে তা নিয়তির খেলা এতে তোমার কোন দোষ নেই!পরিশেষে বলবো প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়াটাই সুখের নয়।বরং আমার মতে তোমার মানহানি হবে,লোকের নানান কথা শুনতে হবে,গাল-মন্দ শুনতে হবে সাথে অজস্র মার তো আছেই।তুমি আমাদের ভালোবাসাটাকে তোমার মা-বাবা সবাইকে বলে আমাদের ভালোবাসাটাকে পবিত্র করেছো।(গভীর শ্বাস নিয়ে বলল অন্তিক)

তিথি অশ্রুশিক্ত চোখ মাথা উঠিয়ে অন্তিকের দিকে তাকালো।অন্তিক আবার এসেছে,তবে এখন অন্তিকের চোখ-মুখ থেকে উজ্জল আলো বের হচ্ছেনা যা কিছুক্ষণ আগে বের হয়েছিলো।
অন্তিক শেষবারের মতো তিথির মুখশ্রীর দিকে তাকালো।নাকের ডগা লাল হয়ে আছে,শুকনো মুখশ্রী,চোখের কাজল লেপ্টে গেছে,চুল-গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
অন্তিক শেষবারের মতো বলে উঠলো।

নিয়মিত গল্প পেতে আমাদের লিংকে দেওয়া গ্রুপে জয়েন হয়ে সাথে থাকুন।🥰

https://www.facebook.com/groups/999645603764557/?ref=share

” আমাকে তোমার ভুলতে হবে তিথি,তোমায় বুঝতে হবে আমি তোমার ভ্রম আর এই ভ্রমের কারণেই তুমি সুখ খুজে পাচ্ছোনা?আমাকে ভুলে যাও আমি আর তোমার কল্পনা,ভ্রমে দেখা দিবোনা।তোমাকে শেষবারের মতো দেখতে এসেছি আবার দেখা শেষ এখন আমি আসি।আমার এই যাওয়াটাই শেষ যাওয়া তিথু আমি আর আসবোনা।জীবনে ভালো থেকো তিথু,নিজের সুখ পাখিটাকে খুজে নাও।(নিচু স্বরে)

তিথি বরফের মতো জমে গেলো অন্তিকের কথা শুনে।কথাগুলো যেই তিথুর অঙ্গ-প্রতঙ্গে ছড়িয়ে পড়লো তখনি তিথু শব্দ করে কেদেঁ উঠলো।

“অন্তিক যেও না আমাকে একা করে আমি বাচঁতে পারবোনা।তোমার স্মৃতি,হাসি-মশকরা,ভালোবাসা সব আমার নিশ্বাস ভারি করে দিবে।তোমার ভালোবাসার প্রণয় আমাকে বাচঁতে দিবেনা দহনে পোড়াঁবে।আমাকে একা করে যেওনা অন্তিক আমি বাচঁতে পারবোনা আমার সুখের প্রয়োজন নেই আমি শুধু তোমাকে একনজর দেখার মাঝেই নিজের সুখ পাখিটাকে খুজে নিবো!আমাকে একা করে যেওনা অন্তিক তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি!(শব্দ করে কাদঁতে কাদঁতে)

তিথির কথাতে অন্তিক গভীর তপ্ত নিশ্বাস নিলো।

” ভালো থেকো তিথু আমি আর তোমার কক্পনা-ভ্রমে আসবোনা।আমাকে ক্ষমা করে দ!আমিও তোমাকে ভালোবাসি।এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসি।আমি হলাম সেই আকাশের মেঘ আর তুমি হলে পাখি।ভালো থেকো!(মুচকি হেসে)

বলতে বলতে অন্তিক চিরতরের জন্য তিথির কল্পনা-ভ্রমকে ছাড়িয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। তিথি আগের তুলনায় আরও জোরে কাদঁতে লাগলো। নিয়তি তার সাথে এতটা নিষ্ঠুর আচরণ করেছে যে সে জীবন যুদ্ধে একটু একটু করে হেরে যাচ্ছে।

ব্যালকনির দরজার সামনর দাড়িয়ে আছে পূর্ণি। এতক্ষণ সে তিথির সব গুলো কথা,কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়েছে।হয়তো অন্তিকের সাথে কথা বলছিলো,অন্তিক তার ভ্রমে আর‌ আসবেনা দেখে তিথি আজ অনেক কান্না করছে।
পূর্ণির অনেক খারাপ লাগছে তিথির এমন কান্না দেখেভালোবাসা যে ভুল আর নির্ভুল তা পূর্ণি আর তিথিকে দেখলেই বোঝা যায়।
পূর্ণির ক্ষেত্রে ভালোবাসাটা ঠিক তবে
ভালোবাসার মানুষটা ভুল।
তিথির ক্ষেত্রে ভালোবাসার মানুষটা ঠিক তবে ভালোবাসাটাই ভুল।
ভালোবাসা গুলো পূর্ণ হয়েও অপূর্ণ থেকে যায়।হয়তো নতুন এক ইতিহাস নেওয়ার জন্য।

পূর্ণি তার পেটে হাত রাখলো এখানে তার ভবিষ্যৎ আছে।সে ভবিষ্যৎ এ ছোট ছোট হা,পায়ের সাথে খেলবে।মজা করবে,মা ডাকটা শুনবে আর নিজের ভেতরটাকে ঠান্ডা করবে। পূর্ণির ঘৃণা হচ্ছে এই‌মুহুর্তে নির্ঝরের প্রতি।

ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে উঠার সাথে সাথে পূর্ণির বিয়ে দেওয়ার জন্য তার মা উঠে পড়ে লেগে যায়।পূর্ণিদের পরিবারের অবস্থাও অনেক ভালো পূর্ণির সরকারী অফিসার সেক্ষেত্রে পরিবারের অবস্থা স্বচ্ছল। অবশেষে তার পূর্ণির বিয়ের হয় বেশ নাম-ডাক ছড়ানো এক বাড়িতে।”রায়চৌধুরি” বাড়িতে। পূর্ণির জানা মতে রায় চৌধুরি বাড়ির প্রতিটা লোকজন অনেক সৎ ও মহৎ,সহৃদয় বান মানুষ।
অবশেষে নির্ঝরের সাথে পূর্ণির বিয়ে হয়।পূর্ণি আর নির্ঝর বিয়ের আগে দু,এক বার দেখাও করেছিলো। দুই পরিবার যেহেতু রাজি সেহেতু দ্রুতই বিয়েটা ঠিক করে ফেলা হয় ও হয়েও যায়। নির্ঝরের প্রতি পূর্ণি অনেকটাই দূর্বল হয়ে যায়। এভাবে বিয়ের কয়েকমাস চলতে থাকে সব ভালোই ভালোই।তবে বিয়ের পাচঁমাসের মাথাতেই প্রথম পূর্ণির গায়ে হাত তোলে নির্ঝর।কারনটা হলো পূর্ণি নির্ঝরের কথা মতো ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়েনি।
পূর্ণি উপহারে নির্ঝরের দেওয়া ড্রেস গুলো দেখে অনেক অবাক হয় কারন ড্রেস গুলো এতোই ছোট যে নগ্নতায় পরিপূর্ণ।
সেগুলো পূর্ণি পড়েনি এর জন্যই নির্ঝর প্রথম তাকে মেরেছিলো। আস্তে আস্তে যত দিন যায় ততদিনই সবাই পূর্ণির‌ উপর অত্যাচার করতে লাগলো।পূর্ণি লজ্জায়-ভয়ে তার বাবার বাড়িতে কিছুই বলার সাহস পায়না।পূর্ণি তখনো এবাড়ির লোকজন আর নির্ঝরের কাজ সম্পর্কের জানতোনা।
এরা যে পশুর চেয়েও অধম তাও তার জানা ছিলোনা।
সময়টা এখন পূর্ণি আর নির্ঝরের বিয়ের এক বছর আটমাস।এতদিনে পূর্ণি আর নির্ঝরের মাঝে অনেকবার স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক হয়েছে।এরই মাঝে নির্ঝরের মা মিসেস কণা তাকে তার ুূত্রবধূ হিসেবে অস্বীকার করে। মিসেস কণা পূর্ণিে মুখে লাখ খানেক টাকা ছুড়ে মেরেও বলে নির্ঝরের জীবন থেকে চলে যেতে তার সাথে কোন সম্পর্কে জড়াতে না।
তবে পূর্ণি তখনো ওবাড়িতেও পড়ে ছিলো কি করবে সে।সেতো নির্ঝরের স্ত্রী আর নির্ঝরকে সে ভালোবাসে,কিভাবে সে ওখান থেকে চলে আসবে যদিও চলে আসে তাহলে সমাজে মুখ দেখাবে কি করে।বিয়ের পর স্বামীর বাড়িই তাদের একমাত্র স্থান।আর যদি ওই স্থান থেকেই সে বঞ্চিত হয় তাহলে সমাজের লোক কটুক্তি করতে ছাড়েনা।

বিয়ের এই বছর,মাসের মধ্যে পূর্ণি নির্ঝরকে শ”য়েক মেয়েকে বাড়ি আনতে দেখেছে।তার প্রতি নির্ঝরের অমানুষি অত্যাচার,গালাগাল সবই দসে সহ্য করেছে।কারন এইসব সহ্য করা ছাড়া করা ছাড়া তার আর কোন উপায় নেই সে নিরুপায় হয়েই সব সহ্য করে।
তবে নির্ঝর যে তাকে ডিভোর্স দিয়ে আরেক মেয়েকে বিয়ে করবে তা কখনো কল্পনা করেনি পূর্ণি।

#চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here