#পরিশেষে_ভালোবাসি
#পর্ব_০৫
#সামিয়া_মেহেরিন

আহিয়ান নিজের ঘরে এসে দেখে সেখানে ঈশা মাহিয়ার সাথে খেলছে। আজ প্রথমবারের মতো আহিয়ান ঈশার দিকে ভালোভাবে তাকালো। দুধেআলতা গায়ের রং ঈশার। হালকা গোলাপি ঠোঁটের এক কোণে ছোট্ট একটা তিল। মায়াবী চোখ আর ডান চোখের পাশে একটু নিচের দিকে কালো কুচকুচে তিল। কোমড় অবধি ঘন কালো চুল ঈশার। অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ধ্যান ভাঙে আহিয়ানের। সে ভাবছে এটা সে ঠিক করছে না। সেতো কুহুকে ভালোবাসে। তার হৃদয়ে ঈশার কোনো জায়গা নেই। তার আর কুহুর মাঝখানে ঈশাকে সে কখনোই আসতে দিবে না। দ্রুতপায়ে ঘরে ঢুকে নিজের ল্যাপটপ আর কিছু ফাইল নিয়ে ড্রইংরুমে চলে গেল আহিয়ান। এদিকে ঈশা আহিয়ানের ব্যবহারের কিছুই বুঝতে পারে না। মানুষটা এই ভালো তো এই খারাপ। তবুও কেন যেন তার আহিয়ানের প্রতি কোনো রাগ জন্মায় না।

বিকেলবেলা মাহিয়ার জন্য এক গ্লাস দুধ গরম করে ওকে খাওয়াতে যাচ্ছি। মাহিয়া আহিয়ানের পাশে ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে। আহিয়ান ল্যাপটপে তার কাজের পাশাপাশি মাহিয়ার সাথে এটা ওটা নিয়ে কথা বলছে। অনেকটা বেখেয়ালি ভাবেই হাঁটছিলাম আমি। তাইতো ঢুপ করে টেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে টুপ করে গ্লাসে থাকা সমস্ত দুধ আহিয়ানের ল্যাপটপ আর কাগজপত্রের ওপর পরে গেলো।

ভয়ে শুকনো ঢোক গিললাম। না জানি খাটাশটা এখন আমার কি হাল করে। ভাবতেই আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। ওনার দিকে তাকাতে দেখলাম ওনি গম্ভীর মুখ থেকে হঠাৎ করেই হো হো করে হেসে উঠলেন আর আমি ওনার এমন হঠাৎ হাবভাবের পরিবর্তনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।

মানুষটাকে হাসলে অসম্ভব সুন্দর লাগে। হাসলে ডান গালে হালকা টোল পরে। তবুও কেন তিনি গম্ভীর মুখেম করে থাকে বুঝি না। আমি একধ্যানে তার সুন্দর হাসিটার দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি কেন হাসছেন জানি নি তবুও জানার প্রতি তেমন আগ্রহ জন্মাচ্ছে না। শুধু ওনার হাসিটাই দেখতে ইচ্ছে করছে।

আহিয়ান যথাসম্ভব নিজের হাসিটা থামানোর চেষ্টা চালিয়ে সোফায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে আমার একটা ছবি তুললেন। তখনই আমার ধ্যান ভাঙলো। ফোনের স্ক্রিন আমার দিকে ঘুরিয়ে ছবিটা দেখিয়ে বললেন

-চেহারার অবস্থা কী করে রেখেছো? ( হাসতে হাসতে)

-এমা!আমার চেহারার একি অবস্থা। এটা আমার চেহারা নাকি আফ্রিকার জঙ্গল? আমার মুখে কালো মার্কার পেন দিয়ে ছোট ছোট করে গরু, জিরাফ, হাতি, কুমির আরো না জানি কত কিছু আঁকিয়ে রাখা। এটা নির্ঘাত মাহিয়ার কাজ। দুপুর বেলা যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তখন আঁকিয়েছে। দু হাতে মুখ ঢেকে ঘরের দিকে দিলাম এক ভোঁ দৌঁড়। ওদিকে আহিয়ান আর মাহিয়া হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

আহিয়ান আর মাহাদী বিজন্যাস পার্টনার। ব্যবসার নানা কাজে মাহাদীর প্রায়ই এ বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে হয়। আজও সেই কারণেই আহিয়ানের সাথে দেখা করতে এসেছিলো। কাজ শেষ হলে মাহাদী যাওয়ার জন্য উদ্যোত হয়।

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে যাবে তখনই কিছু একটা আওয়াজ পায় সে। আওয়াজটাকে অনুসরণ করে ছাদের দিকে যায়। যা দেখে তাতে তার হৃদয় বেরিয়ে আসার উপক্রম।

সাদা শাড়ি পরে বৃষ্টিতে ভিজছে নিশা। হাতে সাদা চুড়ি, কানে একজোড়া সাদা কানের দুল আর পায়ে নুপুর। সেই নুপুরের রিনিঝিনি আওয়াজটাই পেয়েছিল মাহাদী। মাহাদী স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নিশার দিকে। তার ঠোঁটে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি।

মাহাদী নিঃশব্দে হেসে সেখান থেকে বিদায় নেয়। এদিকে নিশা বৃষ্টিবিলাশে এতটাই মত্ত ছিল যে, কেউ তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল, সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই।

আবছা আলোয় আলোকিত একটা ঘরে মধ্যবয়স্ক লোকটি কিছু কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করছে। ক্যারক্যার আওয়াজে ঘরের দরজা খুলে একটা ছেলে ঘরে প্রবেশ করল।

-স্যার, খবর নিয়েছি ছেলেটার ব্যাপারে। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়ে নি। তবে ছেলেটিকে যতবারি ফলো করতে গিয়েছি, ততবারই চোখের আড়াল হয়ে যায়।

মধ্যবয়স্ক লোকটি কিছুটা রেগে বলে উঠল

-ছেলেটা প্রায়ই চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছে আর তুমি বলছ সন্দেহজনক কিছু নেই!
-তেমন কোনো রেকর্ড পাই নি তা..( বলতে না দিয়ে)

-তাহলে আমাদের লোকের ওপর অ্যাটাক কে করল সেদিন রাতে? আমি নিশ্চিত সেদিনের ঘটনার সাথে ছেলেটার কোথাও না কোথাও যোগসূত্র আছে।
-তাহলে কী করব, স্যার?
-ছেলেটার ব্যাপারে আরও খোঁজখবর নাও। আমাদের গুপ্তচর কাজে লাগাও। যেভাবেই হোক ছেলেটার সব খবর আমি চাই।

চলবে

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here