#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_38

আগুন জ্বালানো হয়ছে। সবাই ঘেরাও করে বসেছে। যেহেতু আজ সুন্দর বনের শেষ দিন তাই একটু ভিন্ন আয়োজন। স্টবে করে চা বসানো হয়েছে। যে সে চা নয় মালাই চা। আগুনের উত্তাপে সকলের মুখ মোহনীয় লাগছে। আজ সবাই এক সাথে সূর্যাস্ত উপভোগ করবে। সৈকতে আঁচড়ে পরা ঢেউ গুলো এখন শান্ত। সূর্য প্রায় নিভু নিভু হয়ে আকাশে লাল আভা ছড়িয়েছে । তাঁর ই মাঝে প্রেম ময় অনুভূতি নিয়ে সময় কাটাচ্ছে অভিনব ঝিল । দুজনের মাঝে সামান্য দূরত্ব থাকলে ও হৃদয় রয়েছে খুব কাছাকাছি। প্রেমের তৃষ্ণা নিবারন করছে চোখে চোখে। অভিনবর দুষ্টুমি ভরা চাহনি তে ঝিল কুকরে যাচ্ছে।
তবু ওহ বেহায়া মন বার বার ফিরে তাকাচ্ছে। আর তাঁর ই মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অভিনব।

শাকীল উঠে দাঁড়ালো। একটা বোতল নিয়ে মাইক স্টাইলে মাঝে চলে আসলো । সবাই হাত তালি দিলো কেউ বা শিস বাজালো। ভাব নিয়ে শাকীল হাত নাড়ালো। ঠিক যেন কোনো দেশের সেলিব্রেটি।

খ্যাক করে কেশে বলল
_ গোপন সূত্রে জানা গেছে আমাদের মাঝে আরো এক জোড়া কাপল রয়েছে। কিছু পার্সোনাল কারনে বিষয় টা আড়ালে রেখেছিলো। তবে যেহেতু আজ আমাদের সুন্দরবনে শেষ দিন তাই তাঁরা চাচ্ছে বিষয় টা জানাতে।
আর ইউ এক্সাইটেড গাইস ?

সবাই চিৎকার করে বললো ইয়েস। ঝিলের চোখ কপালে উঠে গেছে। অভিনবর দিকে তাকাতেই অভিনব রহস্য হাসলো। সকলে আনন্দিত হলে ও মাহেরা আনন্দিত নয়। সব কিছু বিষাক্ত মনে হচ্ছে। এই মুহুর্তে অভিনব কে ও বিরক্ত লাগছে। পুরো বিষয় টাকে ন্যাকামো আর ভাব বলে মনে হচ্ছে।
সবার জন্য নিজেকে কন্ট্রোল রেখেছে। না হলে অনেক আগেই এখান থেকে উঠে যেত।

সবাই এক যোগে করতালি দিয়ে সুর তুললো। উদ্দেশ্যে নব দম্পতি কে দেখা।
শাকীল অভিনব কে ইশারা করলো। অভিনব ই তাঁকে বলেছিলো এ আয়োজন করতে।
ঝিলের ভীষন অস্বস্তি হতে লাগলো। অভিনব উঠে দাঁড়াতেই সবাই ওহহহ বলে চিৎকার করলো। বিষয় টা মোটামুটি বুঝে গেছে সবাই। তবু ও খুব আকর্ষিত হচ্ছে।
অভিনব ঝিলের দিকে আগালো। যত আগাচ্ছে ঝিলের মনে তত লজ্জা বেড়ে চলেছে। বুকের ভেতর ধিম ধিম আওয়াজ হচ্ছে। এই মুহুর্তে মৃত্যু ই যেন পারে তাকে বাঁচাতে।
অভিনব তাঁর সামনে এসে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইশারা করলো।
হাজারো অস্বস্তি নিয়ে হাতে হাত রাখলো ঝিল। গোলের মাঝে এসে অভিনব হাঁটু গেড়ে বসলো।
সবাই চিৎকার করে উঠলো। মাহের নিজ হাতে ভিডিও করছে। তা দেখে মাহেরার ভীষন রাগ হলো।
হঠাৎ করে গোলের ভেতর আগুন জ্বলে উঠলো। ঝিল ভয় পেয়ে ব্যস্ত হলো। অভিনব চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করতেই ঝিল দমে গিয়ে সামনে তাকালো। লজ্জায় তাঁর গাল কমলা রঙে পরিনত হয়েছে। অভিনব তাঁর পেছনে গুটিয়ে রাখা হাত টা সামনে নিয়ে আসলো। ঝিলের দিকে এক গুচ্ছ পদ্মফুল এগিয়ে দিলো। তারপর ই বললো অন্তকর্নে থেকে ভেসে আসা সেই বানী।
_শোনো মেয়ে তুমি ই আমার হৃদস্পন্দন, তুমি আমার ভুবন , তুমি ই আমার বুক ধুকপুকানি, তুমি ই আমার রঙিন আকাশের ধূসর রঙের প্রজাপতি প্রজাপতি ।

সবাই এক সাথে উঠে দাঁড়ালো । অভিনবর নামে বাহবা দিতে লাগলো। সবাই বলছে ফুল গুলো নিতে। ঝিল ছলছল নয়নে তাকিয়ে। অভিনবর চোখ দুটো যেন হাসছে ।ঝিল ফুল গুলো নিতেই অভিনব উঠে দাঁড়ালো।
কোনো আড়ষ্ঠতা ছাড়াই সবাই কে উপেক্ষা করে ঝিল কে বুকে জড়িয়ে ধরলো। ঝিলের মাঝে ও লজ্জার ছিটে ফোঁটা দেখা গেল না। দু হাতে খামচে ধরলো অভিনব কে। যেন ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে।

*

সূর্যাস্ত হচ্ছে সবাই সৈকতের দিকে ছুটে গেল। ঢেউ গুলো একটু একটু করে উথাল হচ্ছে। তাঁর ই মাঝে পা মেলাচ্ছে অভিনব ঝিল । জিন্স এর কিছু অংশ ভিজে গেছে। তবু ও দারুন এক অনুভূতি। অভিনব ঝিল কে সামন্য চেপে ধরলো।
_ কি হচ্ছে কি এসব ?

_ প্রেম চলছে।

_ আজব। এগুলো কে প্রেম বলে ? এটা তো রিতি মতো ছ্যছরামি , যাকে তুমি প্রেম বলে আখ্যায়িত করলে।

_ উহুহহ এটাই প্রেম। স্বামী স্ত্রীর হালাল প্রেম। বুঝেছো?

_ ধ্যাত। ছাড়ো তো আমার অস্বস্তি হচ্ছে।

অভিনব ভ্রু কুঁচকালো। অবিশ্বাসের স্বরে বলল
_ সত্যি ই অস্বস্তি হচ্ছে ?

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব যেন গভীর ভাবনায় পরে গেল। কিছুক্ষণ পর ড্রেভিল স্মাইল দিলো। যে হাসির মানে বোঝার আগেই ঝিল কে কোলে তুলে নিলো। বাচ্চাদের মতো হা পা ছুঁড়তে লাগলো। অভিনব লম্বা হাসি ফুটিয়ে বলল
_ যত ই করো হেলা ছাড়বো না তোমায় শেষ বেলা।

_ কি ভয়ঙ্কর কবিতা।

_ সত্যি ?

_ হ্যাঁ। তোমকে তো অস্কার দেওয়া উচিত। বাই দ্যা রাস্তা নবেল দিলে ও মন্দ হয় না।

ঝিলের রসিকতায় অভিনব হাবুলের মতো তাকালো। ঝিল খিল খিল করে হাসলো। অভিনব চোখ টিপে বললো
_ আজ তোমার রক্ষা নেই । ফিজিক্স , ম্যাথ , কেমিস্ট্রি সব শেখাবো আজ।

_ নো।

অভিনব ডেভিল স্মাইল দিয়ে হাঁটা লাগালো।

লঞ্চে ফিরে এসেই সবাই যে যার কেবিনে চলে গেল। রাতে সবার আড্ডা হবে। তাই রেস্ট করার জন্য দু ঘন্টা সময় দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার নাস্তা সবার কেবিনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঝিল ফ্রেস হতে গেছে। প্রায় আধ ঘন্টা পর বের হলো সে। অভিনব ফোঁস করে দম ফেললো।
_ এতো লেট করে কেউ ?

_ না মানে আমি আসলে

_ আসলে কি ?

_ জিপ ছাড়া জামা নিয়ে গেছি। কুর্তির জিপ টা কেঁটে গেছে। সেটার জন্য ই এতো লেট।

_ তাহলে এখন কি করে আসলে ?

_ ট্রাওয়াল পেঁচিয়ে।

_ আগে ও তো আসতে পারতে ?

_ ইয়ে মাথায় আসে নি।

অভিনব ঝরা হাসলো। ঝিলের কাছে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটার শ্বাস ঘন হয়ে যাচ্ছে। অভিনব সে শ্বাস উপেক্ষা করে ঝিলের দু পাশে হাত দিয়ে আটকে ফেললো।
_ কি হচ্ছে কি অভিনব ?

_ ম্যাথ।

_ হোয়াট !

_ বলেছিলাম না ক্লাস নিবো আজ।

_ দেখো তুমি কিন্তু

অভিনব একটু ঝুঁকলো। আচমকাই ঝিলের পিঠ থেকে ট্রাওয়াল টা সরিয়ে নিলো। ঝিল চোখ বন্ধ করে নিলো । অভিনব ফিস ফিস করে বলল
_ দ্যাটস ফিজিক্স।

_ আমি

_ হ্যাঁ তুমি ?

_ দূরে সরো প্লিজ ।

_ কেমিস্ট্রি বাকি আছে তো ? অভিনব অর্ধেক ক্লাস পছন্দ করে না।

ঝিল চোখ মেলে তাকালো। চোখে মুখে অস্বস্তি। অভিনবর ঠোঁটের কোনে মৃদু হাঁসি । এক হাতে ঝিলের অর্ধ উন্মুক্ত পিঠে হাত ছোঁয়ালো। মুহুর্তেই ঝিলের শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। রক্তে শীতল বাতাস অনুভব হলো। আকাশে মেঘের গর্জনের মতো করে বুকের ভেতর গর্জন হতে লাগলো। ঘোর লাগা চোখে অভিনব আরেকটু ঝুঁকে নিলো। ভেজা চুলে নাক ডুবাতেই ঝিল অভিনব কে খামচে ধরলো। অভিনব যেন নিজের মাঝেই নেই। ঝিলের গলাতে তাঁর উষ্ণ ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। এবার ঝিল নিজে ও অভিনব তে হারিয়ে গেল। অস্বস্তির সাথে ভালো লাগায় মত্ত হয়ে গেল।
অভিনব তাঁর মাদক মেশানো কন্ঠে বলল
_ দ্যাটস কেমিস্ট্রি।

ঝিল চোখ মেলে তাকালো। অভিনব তাঁর এতো টা কাছে ভাবতেই লজ্জা লাগছে। তবু ও অভিনব কে খামচে ধরলো। অভিনব ঝিল কে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। ভেজা চুল গুলো ঘাড়ের এক সাইটে সরিয়ে ডিপলি কিস করলো। একটা ছোট করে লাভ বাইট দিয়ে বলল
_ বায়োলজি টা প্রাক্টিক্যাল ই

ঠিক তখনি কেবিনের দরজায় নক পরলো। অভিনবর প্রেম ময় রোমান্টিক মুহুর্তে ব্যাঘাত ঘটলো। ফুটুস করে ভেঙে গেল তাঁর হৃদয় ।
দরজার অপর পাশের ব্যক্তি টি কে ভয়ঙ্কর এক গালি দিলো সে।
ঝিল মুখ চেপে হাসছে। অভিনব রাগে কটমট করে তাকিয়ে বলল
_ শালার বউ এর সাথে প্রেম করবো তাঁর ও উপায় নেই। বি ডি তে রোম্যান্স এর সেফটি অব্দি নেই। ধ্যাত

ঝিলের ভাব ভঙ্গি দেখে বিরক্তি প্রকাশ করলো অভিনব। মেয়েটার মাঝে কি কোনো রোমান্টিকতা নেই ?

দরজা খুলে দিতে একজন স্টাফ লম্বা করে হাসলো। হাতে সন্ধ্যার নাস্তা। অভিনব বির বির করতে লাগলো । এই নাস্তার জন্য তাঁর রোম্যান্স এর বারো টা বাজলো ।
প্রচন্ড বিরক্তির মাঝে ও অভিনব হাসলো। নম্র ব্যবহার করে বিদায় জানালো । স্টাফ চলে যেতেই ঝিল আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো। অভিনব দাঁত কিরমির করতে করতে টেবিলে খাবার টা রাখলো। ঝিলের অবস্থা তখন যায় যায় । হাসি থামিয়ে রাখতে পারছে না সে। অভিনব রগচটা স্বরে বলল
_ খাবার টা খেয়ে উদ্ধার করুন আমায়। তুমি একটু ওহ রোমান্টিক নও ঝিল ।

_ আমি আনরোমান্টিক ?

_ তাহলে আমি আনরোমান্টিক?

ঝিল নাক কুঁচকালো। অভিনব তাকে আনরোমান্টিক বললো। আজ রোমান্টিকতা কাকে বলে বুঝিয়ে দিবে। হঠাৎ করেই অভিনবর উপর হুমড়ি খেয়ে পরলো। অভিনব এটার জন্য একটু ওহ প্রস্তুত ছিলো না। ঝিলের নিজের প্রতি খেয়াল নেই।
জামা কাপড় এলোমেলো। অভিনব ঝিলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। যে মেয়ে একটু আগে কাঁপা কাঁপি শুরু করেছিলো সে মেয়ের অবস্থা এখন পুরোই আকাশ পাতাল।
অভিনবর নাগাল না পাওয়াতে ঝিল নিজের উপর বিরক্ত হলো। 5’3 লম্বা হয়ে ও কোনো লাভ নেই। 6 ফিট বরের কাছে সে নিতান্তই পিচ্ছি। ঝিল বুদ্ধি খাটিয়ে অভিনবর পায়ের উপর দাঁড়ালো। লক্ষ্য করলো অভিনব ব্যথা পাচ্ছে কি না। অভিনবর মুখের ভঙ্গিমা স্বাভাবিক। অর্থাৎ ঝিলের ভর তাঁর কাছে তেমন কিছু ই না। সাহস সঞ্চয় করে ঝিল অভিনবর গালে চুমু খেল। অভিনব বেশ অবাক হলো। হঠাৎ ঝিল অভিনবর ঠোঁটের দিকে আগালো অভিনবর চোখ রসগোল্লা হয়ে গেছে।
হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে বলল
_ ছিই ঝিল রোমান্টিকতার নাম করে তুমি অশ্লীল হয়ে গেছো।

_ আমি অশ্লীল হয়ে গেছি ?

ভদ্র বাচ্চা দের মতো দু দিকে মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। ঝিল ছিটকে দূরে সরে গেল। অভিনব নিজের চাঁপা হাসি টা রাখতে পারলো না। হো হো করে হেসে উঠলো।

মেয়েটা কে কিছু বুঝতে না দিয়ে কোলে তুলে নিলো। বেডে শুইয়ে দিয়ে তার দিকে ঝুঁকে নিলো। ঝিল ভয়ার্ত চোখে তাকালো। অভিনবর ঠোঁটে স্মিত হাসি। অভিনব তাঁর শীতল হাতে ঝিলের গাল শুইয়ে দিলো । অবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো মেয়েটা। ধীরে ধীরে সে ঝিলের ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হলো। অভিনবর অনভূতি তে ঝিল ওহ সায় দিলো।
তাঁদের ভালোবাসার গভীরতার প্রথম ধাপ। সোজা বাংলায় যাকে বলে ঠোঁটে চুমু খাওয়া। অভিনব ফিস ফিস করে বলল
_ আমার কাছে সব থেকে সুন্দর তুমি ঝিল। চাঁদ ওহ তোমার কাছে ম্লান।

ঝিল একটু হাসলো। অভিনব কে আঁকড়ে ধরে বলল
_ তুমি আমার সেই সুখের প্রথম অনুভূতি। ভালোবাসি খুব , খুব ভালোবাসি।

অভিনব লম্বা হাসলো। মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে যে শান্তি অনুভব হচ্ছে তার ছিটে ফোঁটা ও ছিলো না গত দেড় বছরে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here