‘ধূম্রজাল’
সপ্তদশ পর্ব

তাবিনা মাহনূর

__________

আসসালামু আলাইকুম,

ইতিমধ্যে আপনার জানেন আমি কে। আমি সাদি হাসরাত, যাকে তোহা স্যারের খু-নি হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছিল কয়েকটা তথ্যের ভিত্তিতে। শুরুতে আমি একটা গল্প বলবো। তারপর সেই তথ্যগুলোর বিশ্লেষণ, এরপর জানাবো কে আসল অপরাধী।

দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের অন্যতম একজন রণজিৎ ব্যানার্জি, যিনি বিখ্যাত কোম্পানি বি-অ্যারোমার মালিক এবং তার আরো ছোট ছোট কয়েকটা বিজনেস আছে যা মোটামুটি ধনী পর্যায়ের মাঝেই পড়ে। তার যমজ পুত্র, হিমাংশু ও প্রিয়ংশু। আর তার একমাত্র কন্যা সুনীতি ব্যানার্জি। প্রিয়ংশু ব্যানার্জি হলাম আমি যে পরবর্তীতে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে নাম বদলে রেখেছে সাদি হাসরাত। সাদি, অর্থাৎ আমি খুব সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত ছিলাম। তোহা স্যার আমাকে অনেক বিশ্বাস করতেন কারণ আমি ছিলাম সবার দৃষ্টিতে ভদ্র ও আমানত রক্ষাকারী। অবশ্যই সকল প্রশংসা আল্লাহর।

স্যারের হত্যায় আমাকে অপরাধী ভাবার পেছনে যেই যুক্তিগুলো রয়েছে…

১. সেন্টারে ঢোকার সময় চেকইন করতে গিয়ে আমার চেহারা দেখানো হয়েছে।
২. পিস্তল দিয়ে স্যারকে মেরে ফেলা হয়েছে। যেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর সাথে আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলে যায়।
৩. স্যারের গোপন কক্ষের খবর আমি জানতাম।
৪. স্যারের ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সিসিটিভি ক্যামেরায় আমাকে বের হতে দেখা গিয়েছে।

এবার যুক্তিখন্ডন করছি…

১. আমার যমজ ভাই হিমাংশু আমার মতোই দেখতে। সে সেন্টারে বিকেল বেলায় গিয়েছিল। তাই চেকইন করার সময় সে গেলেও আমাকে ভেবে নেয়া হয়েছে।

২. আমি সাধারণ একজন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার। আমার সাথে প্রশাসনিক কাজকর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই আমার কোনো পিস্তল নেই। হিমাংশু আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছে। এবং তার পিস্তলের লাইসেন্স আছে। সে যেই পিস্তল ব্যবহার করেছে তার নম্বর মিলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, ওটা বিদেশ থেকে ইমপোর্ট করা বা সে নিজেই বিদেশে গিয়ে ওটা ব্যবহারের স্বীকৃতি পেয়েছে। সে এখন লন্ডনে থাকে।

৩. স্যারের গোপন কক্ষের খবর ডক্টর স্টেরি, তাহমিদ স্যার এবং আমি জানতাম। হিমাংশুকে গোপন কক্ষ সম্পর্কে আমি বাদে বাকি দুজন জানাতে পারে।

৪. সিসিটিভি ক্যামেরায় যাকে দেখা যাচ্ছে সে হিমাংশু।

এখন আসি, হিমাংশু কেন স্যারকে মেরে ফেলবে? এটা জানতে হলে আমাদের পেছনের ইতিহাস জানতে হবে।

তোহা স্যার বান্দরবানের রুমা অঞ্চলে এক প্রত্যন্ত গ্রামে নতুন অণুজীবের সন্ধান পান। সেটা সম্পর্কে তিনি কাউকে জানাননি কারণ ওই অণুজীব দ্বারা একজন মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল স্কিন ক্যান্সারে এবং তার মেলানিন হরমোন হ্রাস পাচ্ছিলো। স্যার তাই এ কথা কোথাও ফাঁস না করে অণুজীব সম্পর্কে গবেষণা করেন এবং মেলান স্প্রে নামক এক ধরণের সুগন্ধি যুক্ত স্প্রে তৈরির কৌশল বের করেন যা মানুষের শরীরের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে। এতে স্কিন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে আসলেও শূন্য হয়ে যায়নি। কেউ কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারতো। তাই স্যার এ সম্পর্কে আরো গবেষণা করতে চেয়েছিলেন। বিপত্তি বাঁধালেন স্টেরি।

স্টেরি ম্যাম স্যারের অনুমতি না নিয়েই রণজিৎ ব্যানার্জির সাথে চুক্তি করে ফেলেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে তিনি এই স্প্রে বাজারজাত করবেন। এছাড়াও তাদের ভেতরে চলছিল নোংরা এক খেলা যা আমি প্রকাশ করছি না। তোহা স্যার চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি আমার কাছে পরামর্শ চাইলেন, আমি এ কাজ করতে অনুৎসাহিত করলাম।

স্যার আমার কথা শুনলেন। তিনি অণুজীব ও কাগজ লুকিয়ে ডক্টর স্টেরিকে জানালেন তিনি এ কাজ করবেন না। স্টেরির মাঝে মনুষ্যত্ব বোধ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। স্টেরি রণজিৎ এর সাথে স্যারকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করলেন এবং আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে চাইলেন যেন আমি আর কোনো বাধা হিসেবে না থাকি। হিমাংশু শুধু তার বাবার কথা মতো কাজ করেছে। তাকেও অর্থ স্বচ্ছলতার লোভ দেখানো হয়েছে। আফসোস! এতো বিত্তশালী হয়েও সকলের আরো চাই, আরো চাই!

প্রশ্ন হলো, ফাঁসিয়ে দেয়ার পরও কেন আমার মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে? কারণ হলো, মেলান স্প্রে তৈরি করতে যা যা প্রয়োজন তা একমাত্র আমিই জানি। এ দেশে এই স্প্রে তৈরি সম্ভব নয়। কারণ এখানে পর্যাপ্ত যন্ত্র নেই, সুবিধা নেই। আমাকে স্কটল্যান্ডে যেতে হবে। মামলায় জড়ানো পুরুষ হিসেবে আমি বিদেশ যেতে পারতাম না। তাই আমি একটু বুদ্ধি খাটিয়েছি। তাদেরকে বলেছি আমার মামলা প্রত্যাহার করতে, এরপর আমি স্প্রে তৈরি করবো।

এবার আসি হিমাংশুই অপরাধী তার প্রমাণ নিয়ে। নিচের ছবিতে কয়েকটা তথ্য দিয়েছি। সেগুলো পড়ে দেখুন। তোহা স্যারের নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন আগে হিম দেশে আসে। এরপর স্যারের নিখোঁজ হওয়ার দিন রাত সাতটার ফ্লাইটে সে লন্ডন চলে যায়। আমি এয়ারপোর্টে এবং বিমান সংশ্লিষ্ট লোকদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাকে হিমের তথ্য দিয়েছে। অবশ্য এখানেও কিছু রাজনীতি আছে। যেমন, হিম বলেছে সে তিন বছর ধরে দেশে আসে না। তাই এয়ারপোর্ট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পদের মানুষ আমাকে বারবার বলছিল হিম আসেনি। ভিসা অফিসেও একই কথা বলেছে। সব বুঝে গিয়েছিলাম আমি। তাই তথ্য বের করতে নিজের পরিচিত মানুষের সহায়তা নিয়েছি। তার কথা বলবো না, তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য। আরো একটা বিষয় আগেই বলেছি, হিমের পিস্তল সে ইচ্ছে করে কক্ষে রেখে গিয়েছিল যেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেয়ে মনে হয় আমি অপরাধী। কিন্তু বোকামি করেছে সে এখানেই। আমার মতো সাধারণ লোকের কেন পিস্তল থাকবে?

যাই হোক, সব প্রমাণ আমি নিচের ছবিতে যুক্ত করে দিয়েছি। অপেক্ষায় থাকুন, দেখা যাক কি হয়। এখন বাকিটা পুলিশের হাতে। তোহা স্যারের মতো দেশের একজন নক্ষত্র যার হাতে ঝরে পড়ে গেল, তাকে ধরতে আশা করি পুলিশ বাহিনী এবং সরকার কোনো উদাসীনতা দেখাবে না।

_________

বিয়ের পর নিজের নতুন ঘরে প্রথম মুহূর্তে বাহার ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্ট পড়ছে। তার মাঝে বিয়ে নিয়ে যতটা আগ্রহ, তার চেয়েও বেশি আকর্ষণ কাজ করছে সাদির বিচক্ষণ মানসিকতার প্রতি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে গুলশানে শ্বশুরবাড়িতে আনা হয়েছে। দুদিন পর বৌভাত হবে। এসব নিয়েই বাড়ির মানুষগুলো খুব ব্যস্ত।

বাড়ি পৌঁছানোর পর সিয়ামের কোলে চড়ে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দরজা পর্যন্ত গিয়েছিল বাহার। এটা সিয়ামেরই দুষ্টু কাজ। সবাই হেসে উঠেছিল উচ্চস্বরে। বাহার অবশ্য লজ্জা পেয়েছিল। সে ফিসফিসিয়ে বলেছিল, ‘সিয়াম, আমাকে নামিয়ে দাও।’ সিয়ামের উত্তর ছিল, ‘এখন তুমি আমার। আমার ইচ্ছেকেও প্রাধান্য দিতে শেখো বাহারজান।’

হেসে উঠেছিল বাহার। সিয়াম খুব দুষ্টু স্বভাবের ছেলে। আড্ডা জমিয়ে তুলতে পারে, মন খারাপ থাকলে চট করে খুশি করে দিতে পারে। বাহার অবশ্য বিয়ের আগে গম্ভীর মুচকি হাসির ব্যক্তিত্ব আছে এমন পুরুষ চাইতো। কিন্তু আল্লাহ যা রেখেছেন, তাই মেনে নিয়েছে সে। সিয়ামকে মানতে তার কোনো সমস্যা হয়নি। কারণ সিয়াম এখন পর্যন্ত তাকে কোনো ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করেনি। মানসিক অশান্তিতে রাখেনি। বাকিটা সংসার করতে গেলে বোঝা যাবে।

সিয়ামকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। সাদা আর লালের মিশ্রণে কিছু অজানা ফুল ও রজনীগন্ধায় সাজানো ঘরে ঢুকতে সিয়ামের মনসায়রে ঢেউ খেলে যাচ্ছে, অথচ বাঁধ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে তার ভাই বোনেরা। ভেতরে মুচকি হাসছে বাহার। বিয়ের কাপড় ছেড়ে লাল রঙের জামদানি শাড়ি নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল সে। গোসল সেরে বের হয়ে সিয়ামকে না পেয়ে বুঝতে পারলো, এখনো তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বেশিক্ষণ হয়ে যাওয়ায় বাহার দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিয়ে বললো, ‘সিয়াম কোথায়?’

এক ননদ হাসতে হাসতে বললেন, ‘সিয়াম ছাদে নাচ দেখাতে গিয়েছে। নাচ না দেখালে তোমার কাছে আসতে দেয়া হবে না।’

বাহার কিছুটা বিব্রত বোধ করে মেকি হাসি হেসে ভেতরে চলে গেল। ছেলে মানুষ নাচবে, এ কথা ভাবলেই কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি ঘিরে ধরে বাহারকে। নাচ করা ছেলেদের ব্যক্তিত্বহীন মনে হয় তার। কিন্তু সে এটা প্রকাশ করতে পারতো না। কিছু মানুষ তেড়ে আসতো এই বলে, ‘নৃত্যশিল্পীদের সম্মান করতে শেখো!’

বাহারকে আর বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। সিয়াম এসেই দরজা আটকে এক লাফে বিছানায় উঠে বাহারের কোলে মাথা রাখলো। বাহার মুচকি হাসতেই সে বললো, ‘এভাবে হেসো না, বুকে লাগে।’

আরো হেসে উঠলো বাহার। যদিও এসব ভালোবাসাময় বাক্যগুলো শুনতে বাহারের কোনোদিন ভালো লাগেনি। এর আগেও কত শত প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে সে। সবই ছিল প্রেমিক ধরণের। সবার কথাতেই তার জন্য স্তুতি বাক্য ঝরে পড়তো। বাহার এসব পছন্দ করে না। তার বরাবরই গম্ভীর স্বভাবের ছেলে পছন্দ ছিল। এজন্য এসএসসি কোচিং করার সময় এক স্যারের প্রতি তথাকথিত ক্রাশ খেয়েছিল সে। স্যার সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকতেন। মাঝে মাঝে মুচকি হাসতেন। তবে বাহারকে একবার খুব বকা দিয়েছিলেন একটা পরীক্ষা না দেয়ায়, সেদিন থেকে বাহারের মোহ কেটে গিয়েছিল।

আজ নিজের স্বামীকে মেনে নিতে কোনো কষ্টই হচ্ছে না। বরং এটাই ভালো লাগছে। কারণ সে বারবার নিজেকে বোঝাচ্ছে, তার স্বামীর সাথে হালাল বন্ধন জুড়ে গিয়েছে। বাহারকে একভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিয়াম বলে উঠলো, ‘কি ভাবছো বাহারজান?’

বাহার ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘বাহারজান কি হুম? আমি গুলবাহার।’

সিয়াম বাহার চুল নিয়ে খেলা করছে, ‘আজ থেকে আমার বাহারজান তুমি। রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করেই তোমায় আমার সিলমোহর মেরে দিয়েছি।’

বাহার হেসে বললো, ‘জি না। কবুল বলে আমরা বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।’

সিয়াম দায়সারা কণ্ঠে বললো, ‘একই ব্যাপার। কবুল না বললেই কি! ভালোবাসা মানে না কোনো বাঁধা।’

বাহার কোল থেকে সিয়ামের মাথা নামিয়ে বললো, ‘এই উঠো দেখি। কবুল কোনো ব্যাপার না?’

সিয়াম উঠে বসে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো, ‘তুমি বিয়ের আগে কি যেন বলেছিলে? হিজাব পরতে চাও নাকি…’

বাহার মনে মনে ভাবছে, সে পরিপূর্ণ পর্দা করতে চায়। কিন্তু শুরুটা হিজাব দিয়েই হোক। যেহেতু সিয়ামকে মানিয়ে নেয়ার সময় দিতে হবে। সে বললো, ‘হ্যাঁ। আমার পর্দা করার ইচ্ছা আছে।’

– দেখো, তুমি যা ইচ্ছে মেনে চলো। আমার সমস্যা নেই। আমি মনে করি এটা যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা।
– স্বাধীনতা? তুমি ধর্ম মানো না সিয়াম?
– একটা কথা এখনই পরিষ্কার বলে দিই। আমি কোনো ধর্মই বিশ্বাস করি না।

আকাশ ভেঙে পড়লো বাহারের উপর। সিয়ামের ধ্যান ধারণা অবিশ্বাসীদের মতো। তারমানে তাদের বিয়েটা শুদ্ধ হয়নি, বলতে গেলে বিয়েই হয়নি তাদের।

বাহারের চোখ দেখে সিয়াম বলে উঠলো, ‘আরে ঘাবড়ে যেও না। তোমাকে আমি কখনোই কোনো বিষয়ে চাপ দিব না। তোমার ইচ্ছেকে সম্মান জানাই আমি। আমার বাবা মা হজ করে এসেছেন, আবার আমার বড় ভাবি কিন্তু হিন্দু ছিলেন। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। পরে অবশ্য ভাইয়ার প্রেমে পড়ে ধর্মান্তরিত হয়েছেন, কিন্তু মনের দিক থেকে হিন্দুই আছেন। আমাদের পরিবারে কেউ এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। সবাই নিজেদের নিয়মে চলতে পারে।’

বাহার নিজেকে শান্ত করলো, চেষ্টা করলো তার ভেতরের ঝড় যেন সিয়াম টের না পায়। কারণ সিয়াম তাহলে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জোর করতে পারে। আর সেটা হবে ভয়াবহ যিনা। সে বললো, ‘সিয়াম, এখন এসব কথা থাক। আমার শরীর খারাপ লাগছে। আমি এশার সালাত পড়বো।’

বাহার নেমে গেল। বাথরুমে গিয়ে দরজা আটকে কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কেমন ভয়াবহ রাত তাকে দেখতে হলো! এতদিন যাবৎ কথা হয়ে আসছে দুজনের, অথচ সিয়াম একবারও বুঝতে দেয়নি সে ধর্মে বিশ্বাস করে না। বাহার অবশ্য ধর্মীয় কোনো আলোচনা করতো না। সিয়ামই মাঝে মাঝে গল্পের ছলে বলতো, ‘জানো এবার ঈদে কি হয়েছে? গত ঈদে আমরা থাইল্যান্ড ছিলাম…’ ঈদের গল্প করায় বাহার বুঝতেই পারেনি সিয়াম নাস্তি-ক।

ওযু সেরে বের হয়ে সিয়ামকে মুসাল্লা হাতে দাঁড়িয়ে থাকে দেখলো বাহার। তার প্রশ্নবিদ্ধ মুখখানি দেখে সিয়াম বললো, ‘আমি নামাজ পড়ি না। তাই জায়নামাজ রাখি না। তুমি পড়বে বলে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে এলাম।’

বাহার সেটা নিয়ে সালাত আদায় করলো। অনেকক্ষণ মোনাজাতে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলো সে। কাল এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। সিয়াম ফিরিয়ে নিতে চাইলে বিভিন্ন হুমকি দিবে সে। আইনি সাহায্য নিয়ে ডিভোর্সের কাজটা দ্রুত সারতে হবে তাকে।

বাহারের সালাত আদায় শেষে সে সিয়ামকে প্রশ্ন করলো, ‘তোমরা ঈদ কেন পালন করো সিয়াম?’

সিয়াম হাসিমুখে উত্তর জানালো, ‘এটা তো একটা ট্রেডিশন। ঈদ, পূজো, ক্রিসমাস সবই পালন করি আমি। আমার উৎসব অনুষ্ঠান খুব ভালো লাগে।’

বাহারের পানসে মুখ দেখে সিয়াম বুঝে গিয়েছে বাহার খুবই চিন্তিত এবং বিস্মিত তার কথায়। সে বললো, ‘তুমি বেশি চিন্তা করো না বাহার। আমি তোমার কাজে কখনোই বাধা হয়ে থাকবো না। শুধু তুমি থাকলেই চলবে।’

বাহার কিছু না বলে বালিশ ঠিক করে শুয়ে পড়লো। সিয়াম বলে উঠলো, ‘এমন করছো কেন বাহার? আমার কথা শোনো…’

সিয়াম তার কাঁধে হাত রেখেছে। বাহারের মনে হলো কোনো গরম লোহা তার চামড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে। এতোটা ঘৃণা নিয়ে সে নিজের ক্রোধ যথাসম্ভব দমন করে বললো, ‘আমার খুবই ঘুম ধরেছে সিয়াম। আজকে কথা বলার শক্তিই নেই। দশ কেজি ওজনের জামা পরে হেঁটেছি। ভারী গয়নাও ছিল। বুঝতেই পারছো।’

এই বলে বাহার আবার ঘুরে গেল। সিয়াম লাইট বন্ধ করে হঠাৎ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘আর আমার অপেক্ষার কি হবে?’

চমকে উঠে বসলো বাহার, ‘অপেক্ষার অবসান ঘটালে সেটা ম্যারিটাল রেপ হবে। তোমাদের ভাষায়।’

বাহার বালিশ নিয়ে নীচে নেমে পড়লো। সিয়ামের মুখ শক্ত হয়ে এসেছে। তাদের বানানো নিয়ম দিয়েই বাহার তাকে ঘায়েল করেছে। কিন্তু সে যথেষ্ট চালাক ছেলে। সে স্ত্রীর মন গলাতে বলে উঠলো, ‘আচ্ছা ঠিকাছে, রাগ করো না। উপরে উঠে ঘুমাও বাহারজান।’

বাহার চুপ করে শুয়ে আছে। সিয়ামও তার পাশে শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। বাহার চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করলো। আপাতত এভাবেই থাকুক, নাহলে হীতে বিপরীত হতে পারে। সকাল হলেই সে কোনো এক অজুহাতে এ বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আর কোনোদিন আসবে না।

মাঝরাতে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল বাহারের…

__________

(চলবে ইন শা আল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here