#দ্বিপ্রহরের_রাত্রি
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
৩.
অদিতি বেগমের হঠাৎ আগমনে দুজনে যতটা না বেশি চমকে উঠেছিল, তারচেয়েও বেশি চমকে গিয়েছে তার কথাটি শুনে। কী করছিস রে তোরা মানে কী? কী আর করব? অদিতি বেগম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছেন। অরিত্র কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। মা এই প্রশ্ন কেন করল?
অরিত্র মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলল,’ক্লিপ খুলে দিচ্ছি মা।’
অদিতি বেগম দাঁতে দাঁত পিষে বলেন,’গাধা! তোকে আমি পেটে ধরেছি নাকি তুই আমায় পেটে ধরেছিস? ভুজংভাজাং একটা বুঝিয়ে দিলেই হলো?’
‘কী ভুজংভাজাং বুঝালাম মা? তুমি অযথাই চটে যাচ্ছ।’
‘অযথা চটে যাচ্ছি আমি? অযথা? তোরা দুটিতে নাকি বিয়ে করিসনি তাহলে এসব কী?’
‘কোন সব?’
রাগে শরীর রিরি করছে অদিতি বেগমের। তিনি মারমুখো হয়ে বলেন,’বেয়াদব ছেলে এখন আবার আমাকেই জিজ্ঞেস করছিস? তুই বের হ ঘর থেকে। এক্ষুণী বের হবি। না, আমি কোনো কথা শুনব না। বের হয়ে যা। এক্ষুণী মানে এক্ষুণী।’
‘তুমি যে মাঝে মাঝে কীসব বাচ্চাদের মতো করো আমি বুঝিনা! ওর মাথার ক্লিপগুলো খুলে দিও।’ ঘর থেকে বের হতে হতে বলল অরিত্র।
অদিতি বেগম চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলেন,’হ্যাঁ, এতকাল তোদের বান্দিগিরি করেছি। এখন তোর বউয়ের বান্দিগিরি করব। আমার কপালে কি আর সুখ আছে?’
শ্রুতি কাচুমুচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি চোখমুখ পাঁকিয়ে শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বললেন,’তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
শ্রুতি ভয়ে ভয়ে বলল,’আমিও কি ঘর থেকে বের হয়ে যাব?’
‘কেন? অরিত্রকে ছাড়া থাকতে সমস্যা হবে? এতকাল বাবার বাড়ি যখন হয়নি। আমার কাছে থাকলেও হবে না। ভয় পেও না। খুন তো করব না তোমায়। এখন এদিকে আসো তো দেখি,আমার ছেলে কোন জং ধরা ক্লিপ খুলছিল।’
শ্রুতি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে। একটা চেয়ার টেনে অদিতি বেগম শ্রুতিকে বসালেন। ক্লিপগুলো খুলে দিয়ে চুলের খোঁপাও খুলে দিলেন। মুখ বিকৃতি করে বললেন,’ইশ রে! চুলগুলোতে জট পাকিয়ে ফেলেছে একদম। কোন পার্লারে গিয়েছিলে?’
শ্রুতি কিছু বলল না। তিনি চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে চুলের জটগুলোও ছাড়িয়ে দিলেন। তারপর আলমারি থেকে একটা কালো সুতী শাড়ি বের করে দিয়ে বললেন,’এইটা নতুন শাড়ি। অরিত্রর বাবা গত মাসে কিনে দিয়েছিল। পরা হয়নি। মনে হয় তোমার ভাগ্যেই ছিল। এটা পরে নাও।’
শাড়িটা শ্রুতির হাতে দিয়ে কেবিনেট থেকে একটা কালো পেটিকোট আর ভেলভেটের ব্লাউজ বের করলেন। ব্লাউজটি দেখিয়ে বললেন,’এটা অনেক আগের ব্লাউজ আমার। অনিক হওয়ার পর হুট করেই ফুলে গেছি। তোমার গায়ে লাগবে।’
‘অনিক কে?’ জানতে চাইল শ্রুতি।
অদিতি বেগম একবার শ্রুতির দিকে তাকিয়ে আলমারি লক করতে করতে বললেন,’থাক আর নাটক করতে হবে না।’
‘নাটক তো করছি না আন্টি। আমি সত্যিই জানিনা অনিক কে।’
তিনি কিছু বলতেও গিয়ে বললেন না। শ্রুতির উত্তর দিয়েই বললেন,’আমার ছোটো ছেলে।’
‘ও।’
‘ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।’
তিনি চলে যাওয়ার আগে দরজা চাপিয়ে গেলেন। শ্রুতি দরজা লক করে এসে ভারী লেহেঙ্গাটা খুলে ফেলল। এতক্ষণে নিজেকে স্বাধীন স্বাধীন মনে হচ্ছে। শাড়ি পরতে গিয়েই বাঁধল ঝামেলা। এর আগে বেশ কয়েকবার শ্রুতি শাড়ি পরেছিল। তবে সেটা মামীরা পরিয়ে দিত। এখন কে পরিয়ে দেবে? অরিত্রর মাকে ডাকতেও ভয় লাগছে। কী ভয়ংকর মহিলা! শ্রুতি যেভাবে পারল পেঁচিয়ে-ঘুঁচিয়ে পরে নিল। হাঁটতে গেলে সমস্যা হচ্ছে। চিপা করে পরার জন্যই এমনটা হচ্ছে হয়তো। দরজা খুলে দু’কদম এগোতেই মুখ থুবড়ে পড়ে যায় শ্রুতি।
দপ করে শব্দ হয় এবং শ্রুতিও চিৎকার করে ওঠে। অরিত্র, অদিতি বেগম এবং সুলায়মান রহমানও চমকে তাকান। চেয়ার ছেড়ে দ্রুত উঠে আসে অরিত্র। শ্রুতি যেভাবে পড়েছিল, সেভাবেই রয়েছে। এগিয়ে আসেন অদিতি বেগমও। অরিত্র হাত ধরে উঠাতে উঠাতে বলল,’পড়লেন কী করে?’
ব্যথায়, রাগে, কষ্টে শ্রুতির বলতে ইচ্ছে করল,’এখন কি আরেকবার পড়ে দেখাব?’ কিন্তু বলা হলো না। অদিতি বেগম বললেন,’তুমি শাড়ি পরতে পারো না আমায় বলবে না? এভাবে শাড়ি পরলে হাঁটতে তো পারবেই না। দেখি আমার সাথে এসো।’
ঘরে নিয়ে গিয়ে তিনি সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দেন। ব্যথায় মুখ থমথমে হয়ে আছে শ্রুতির। সুলায়মান রহমানের চেষ্টা বৃথা গেল। খুব বেশি কোনো কথা ওদের পেট থেকে বের করা যায়নি। বরং অরিত্র বারবারই বলেছে ওরা বিয়ে করেনি। রাতে অদিতি বেগম এবং শ্রুতি একসাথেই ঘুমালেন। মশারি টানাতে টানাতে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,’তোমাদের পরিচয় কীভাবে হয়েছিল?’
শ্রুতি নিশ্চুপ।
‘কী হলো? শুনছো?’
তিনি উঁকি মেরে দেখেন শ্রুতি ঘুমিয়ে পড়েছে।
.
.
সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এখনও হচ্ছেই। ঘর থেকে অবশ্য বোঝার উপায় নেই। গ্রামে বৃষ্টির শব্দ বেশ ভালো উপভোগ করা যায়। টিনের চালে টাপুরটুপুর শব্দ হয়। শুনতে ভালো লাগে। তবে একটা জিনিসই ভালো লাগে না। বৃষ্টি হলেই চারদিকে কাদাপানিতে ভরে যায়। আর শ্রুতিরও পিছলে যাওয়ার বাতিক রয়েছে। কত যে আছাড় সে খেয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। খুব সকালেই শ্রুতির ঘুম ভেঙে গেছে। ঘরে এখন কেউ নেই। জানালা অল্পটুকু খুলে সে বৃষ্টি দেখে। কাল রাতে যেই রাস্তাটা একদম জনশূন্য ছিল সেই রাস্তার দোকানপাটগুলো এখন খোলা। ছাতা মাথায় লোকজন চলাফেরা করছে। বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। রিকশা চলছে। শ্রুতির খুব করে গ্রামে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। মামা-মামীরা কেমন আছে কে জানে!
জানালা লাগিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হয় সে। দাঁত ব্রাশ করতে হবে। কিন্তু ব্রাশ তো তার নেই। ডাইনিং-এ বসে একটা মোটাসোটা বাচ্চা ছেলে খাচ্ছে। সম্ভবত এটাই অনিক। শ্রুতিকে দেখে ওর খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পলকহীনভাবে তাকিয়ে থাকে। প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসে শ্রুতি। অদিতি বেগম তখন রান্নাঘর থেকে বের হন। শ্রুতিকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করেন,’এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়লে যে? কাল তো অনেক রাত করে ঘুমিয়েছিলে।’
‘ঘুম ভেঙে গেল।’
‘আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নাও। কী খাবে?’
‘আমার তো ব্রাশ নাই।’
তিনি চায়ের কাপটা সুলায়মান রহমানকে ঘরে দিয়ে এসে বললেন,’এক্সট্রা ব্রাশ তো ঘরে নেই। আপাতত পাউডার দিয়ে দাঁত মাজো।’
শ্রুতি মাথা নাড়াল। ঘরে ফিরে গিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে ভাবছে, একটু পরই হয়তো শ্রুতিকে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু কোথায় যাবে সে? এই মস্ত বড়ো শহরে যে কেউ নেই তার। কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই। এমনকি কিছু চেনেও না। এই বাড়ির মানুষগুলো ভীষণ ভালো। ভাবনার চেয়েও বেশি ভালো। আল্লাহ্ একটা আশ্রয় পাইয়ে দিয়েছে। শ্রুতির উচিত এখন এই আশ্রয়টুকু আঁকড়ে ধরা। এবং এর জন্য তাকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,’স্যরি মিস্টার অরিত্র।’
সকাল ১০টা।
বেশ হৈচৈ-য়ের শব্দে ঘুম ভাঙে অরিত্রর। ঘর থেকে বের হয়ে দেখে এলাকার পাড়া-প্রতিবেশীরা এবং কয়েকজন আত্মীয় এসেছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হঠাৎ তাদের বাড়ি আসার কারণ কী? নিশ্চয়ই এটা মায়ের কাজ। কান্নাকাটি করে দুঃখের কথা বলার জন্য ওদেরকে ডেকে নিয়ে এসেছে। অরিত্র আর মাথা না ঘামিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। এত মানুষের ভিড়ে শ্রুতিকে দেখা যাচ্ছে না। উপস্থিত কেউ এখনও অরিত্রকে দেখেনি। দেখলেই জোকের মতো ধরে বলবে,তুই এই কাজটা কীভাবে করলি? একটাবারও পরিবারের কথা ভাবলি না? অযথাই সময় নষ্ট!
অনিককে দেখতে পেয়ে বলল,’এই মোটকা শোন।’
অনিক চকোলেট খেতে খেতে বলল,’মোটকা বলবা না ভাইয়া।’
‘ইশ! মোটকা বলব না তো কী বলব? আচ্ছা মটু শোন, বাড়িতে একটা নতুন মেয়ে এসেছে না? দেখেছিস?’
‘কে? ভাবি? ভাবি তো মায়ের ঘরে।’
অরিত্রর ভ্রুযুগল বেঁকে যায়। উল্টাপাল্টা কথা অনিকের মাথায়ও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। অরিত্র ঐ ঘরে গিয়ে দেখল শ্রুতি বিছানায় বসে আছে। ওকে ঘিরে অনেকগুলো ছোটো ছোটো বাচ্চা বসে আছে। ওদের সাথে গল্প করছে সে। অরিত্রকে দেখে বাচ্চাগুলো ঘর থেকে বের হয়ে যায়। শ্রুতিও এগিয়ে আসে। অরিত্র বলে,’কেউ কিছু বলেনি তো আপনায়?’
‘কে কী বলবে?’
‘আরে দেখছেন না, মা যে কী কাণ্ড শুরু করেছে! যাই হোক, এই নিন।’ টাকার নোট এগিয়ে দিল অরিত্র।
‘কীসের টাকা?’
‘এখানে পাঁচ হাজার টাকা আছে। আপনার কাছে তো কিছু নেই। আমার কাছেও এই টাকাটাই ছিল শুধু। আপাতত চলতে পারবেন। কোথায় যাবেন বলুন আপনাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসি।’
শ্রুতি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে অরিত্রর দিকে। কান্না পাচ্ছে তার। কী নিষ্ঠুর এই লোকটা! খুব ভালো করেই জানে এই শহরে মেয়েটার পরিচিত কেউ নেই। তবুও কী সুন্দর চলে যেতে বলছে! সুলায়মান রহমান ঘরের দরজায় এসে বলেন,’তোরা দুটিতে এখানে কী করছিস? বাইরে আয়। বৌমা মাথায় কাপড় দিয়ে আসো।’
‘তার আর কোনো প্রয়োজন হবে না আব্বু। আমি চলে যাচ্ছি।’
বাবা আর শ্রুতির কথোপকথন শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে অরিত্র। বাবা না হয় মায়ের মতো ভুল বুঝেছে। কিন্তু এই মেয়ে! এই মেয়ে কেন আব্বু ডাকছে? অরিত্রর মাথা ঘুরছে। সুলায়মান রহমান কপট রেগে বলেন,’চলে যাচ্ছ মানে? কোথায় চলে যাচ্ছ? নিশ্চয়ই এই অপদার্থটা তোমায় চলে যেতে বলেছে? হ্যাঁ গো, অরিত্রর মা শুনছো? একটু এদিকে আসো তো।’
অদিতি বেগম ঘরে এসে বলেন,’কী হলো?’ তাকে খুব ব্যস্ত দেখাচ্ছে। সকলের জন্য রান্নাবান্না তিনি একা হাতেই করছেন। ‘তোমার ছেলে নাকি শ্রুতিকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছে।’ রাগীসুরে বললেন সুলায়মান রহমান। অদিতি বেগম চোখগুলো বড়ো বড়ো করে বলেন,’হতচ্ছাড়া বিয়ে বাড়ি থেকে মেয়েটাকে নিয়ে পালানোর আগে এসব মনে ছিল না? এখন তুই কোন মুখে ওকে বাড়ি থেকে বের হতে বলছিস?’
‘শোনো, তোমার বাবা এখনও বুড়ো হয়ে যায়নি বুঝেছ। হয়তো মাথায় কয়েকটা চুলে পাক ধরেছে এই যা! তাই বলে এখনও তার কাজ করবার মতো সামর্থ্য আছে। এতদিন তোমাদের তিনজনের ভরণপোষণ যখন যোগাতে পেরেছি তখন এই মেয়েটাও পারব। ঘরে বউ এসেছে কোনো রাক্ষস তো নয়।’ বললেন সুলায়মান রহমান।
অরিত্র অবুঝের মতো বলল,’তোমরা কি পাগল হয়ে গেছ নাকি? কী যা তা বলছ? বিয়ে করিনি আমি।’
অদিতি বেগম বললেন,’থাক, থাক আর মিথ্যে বলতে হবে না। বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন আর কী করার? ছেলে, বউ তো আর জলে ভাসিয়ে দেওয়া যায় না। মেনে তো নিতেই হবে।’
‘এসব আজগুবি কথাগুলো কে বলেছে তোমাদের?’
‘আমি বলেছি। তবে আজগুবি কথা নয়। সত্যি কথাই। তবে, তুমি যদি না চাও তাহলে আমি এই বাড়িতে থাকব না।’
‘তুমি’! হকচকিয়ে যায় অরিত্র। শ্রুতি ওকে তুমি বলো সম্বোধন করছে। সুলায়মান রহমান মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বললেন,’ছাড়ো তো! ও চাওয়ার, না চাওয়ার কে? তুমি থাকবে আমার বাসায়। খাবে আমার টাকায়। যখন ওর চাকরী হবে তখন ভেবে দেখবে ওর কথা শুনবে কী-না।
অদিতি তুমি বৌমাকে নিয়ে আসো।’
তিনি চলে যাওয়ার পর অদিতি বেগম শ্রুতির মাথায় ঘোমটা টেনে দেনে। যাওয়ার পথে শ্রুতি পেছনে তাকিয়ে কানে ধরে শব্দহীন ঠোঁটে উচ্চারণ করে,’স্যরি।’
অরিত্র মনে মনে ভাবে,’মেয়েটাকে যতটা না সহজ-সরল ভেবেছিলাম তারচেয়েও এক কাঠি বেশি হলো সেয়ানা। বাবা-মাকে পর্যন্ত হাত করে ফেলল! শালা প্রেম না করে,বিয়ে না করেও বউ এসে পড়ল আমার। সন্ন্যাসী জীবন তোর গেল রে অরিত্র।’
চলবে…