#দুঃখগাথার_রাজকন‍্যা
#কলমে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
#পর্ব_৫

আরাভ ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটার সারা মুখে বিরক্তির চিহ্ন ফুটে উঠেছে। বইগুলো সে খুব যত্ন করে ঝেড়ে মুছে ওড়না সমেতো বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিলো।। পাশ থেকে তামল ওকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
> ভাই আগুন সুন্দরী।
> তুই থাম,সবাইকে তোর একই লাগে। রুবিনা জানলে পিটাবে তখন বুঝবি।
আরাভের কথা শুনে তমাল মন খারাপ করলো। বহুপূর্বে কপালে একখানা গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছিল যার অত‍্যারে এখন ও সব ভুলতে বসেছে। এর মধ্যেই মেয়েটা হাটা ধরেছে। আরাভ আর সময় নষ্ট করলো না মেয়েটার পিছে দৌড়ে আসলো কিন্তু আচর্যের বিষয় হলো মেয়েটা একটুর জন‍্যও থামলো না। মনে হলো মেয়েটা পেছনে কারো উপস্থিতি অনুভব করেই পালিয়ে যাচ্ছে। ওরা দৌড়ে গেটের কাছাকাছি আসতেই দেখলো কালো রঙের একটা প্রাইভেট কারে মেয়েটা উঠে গেলো আর গাড়িটা শহরের দক্ষিণ দিকে চলে গেলো। আরাভ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের উপরেই রাগ ঝারলো। ওভাবে হাবার মতো দাঁড়িয়ে থাকার জন‍্যই মেয়েটা চলে গেলো। এমন চেনা চেনা কেনো লাগলো জানতে পারলে ভালো হতো। ওকে এমন করতে দেখে তমাল মুখ গম্ভীর করেই বলল,

> আবারও আসবে তাই এমন হতাশ হবার কারণ দেখছি না। বুঝতেই পারছি নজর লেগেছে।

> আজেবাজে বকবি না। আমি মানুষের চেহারা দেখে মুগ্ধ হয়না। ওকে খুব পরিচিত লাগলো তাই। আর ওর চোখদুটো দেখেছিস?

> প্রেমে পড়লে মানুষ এমনিই বলে। ওচোখে জাদু আছে আমি আর ঘায়েল হতে চাইছি না ক্ষমা চাই। বিপদে পড়লে রক্ষা পাবোনা।

আরাভ ওর কথায় কর্ণপাত করলো না। আবারও ক্লাসে ফিরে আসলো। ক্লাস শেষ করে আরাভ ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে ফিরলো। বিভিন্ন ঝামেলায় আজ দুপুরে খাওয়া হয়নি।তাছাড়া বাইরে খাবার ওর পছন্দ না। আরাভ রুমে বইগুলো রেখে বাইরে উঁকি দিয়ে চিৎকার করে বলল খাবার রেডি করতে। তারপর ফ্রেস হতে চলে গেলো। সোনিয়া মির্জা এতক্ষণ সিরিয়াল নিয়ে বসেছিলেন হঠাৎ আরাভের চিৎকার শুনে রাত্রিকে খাবার তৈরী করতে বলল। রাত্রি রুমের দরজা বন্ধ করে বসেছিল সময়টা কাটতেই চাইছে না। বাইরে থেকে চিৎকার আসার জন্য ও এলোমেলো শাড়িটা সুন্দর করে পরে নিলো। ওর গায়ের কালো রঙটা আরও কুচকুচে লাগছে। সামান্য তেল নিয়েছিল এতেই অবস্থা আরও ভয়ানক। নিজেকে কালির পুতুল লাগছে। রুমে ছোট একটা আয়না কিছুই তেমন ভালো করে দেখা যায় না। ও মোটামুটি গুছিয়ে বাইরে গেলো। লোকটা সকালবেলায় রুটি খেয়ে গিয়েছিল ভেবে ও চুলায় ভাত বসিয়ে দিলো। রান্নাঘরে সবজি আছে অনেক। রাত্রি নিজের মতো করে অল্প কিছু রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে দিলো। লোকটা যদি আবারও হাত দেখতে চাই তাই ও আচলে রঙের কৌটা বেধে রেখেছে। যখনই দরকার হবে লাগিয়ে নিবে। আরাভ হেলতে দুলতে চেয়ারে এসে বসলো। পাশে রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে।ওর দিকে একবার তাকিয়ে ও নিজের খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। মেয়েটার রান্নার হাত মোটামুটি ভালো। খারাপ না আবার খুব একটা ভালোও না। ভালো ট্রেনিং পেলে আরও ভালো পারবে। কথাগুলো ভেবে ও বলল,

> তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায়?

> জ্বী?

> বলছি তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায়? বাড়িতে তোমার কে কে আছে? তুমি এখানে এসেছো বাড়িতে বলেছো?

> সে আনেক কথা সাহেব। আমার দুঃখের কথা শুনে আপনার সময় নষ্ট হবে। আরেকদিন বলবো। আপনি খেয়ে নিন।

আরাব ওকে আর বিশেষ জোর করলো না। নিজের মতো খাওয়া শেষ করে চলে আসলো। মিরা কলেজ থেকে ফিরে সারাক্ষণ নিজের রুমেই বসে থাকে। নিয়ম করে দুজন গৃহ শিক্ষক ওকে বাড়িতে এসে পড়িয়ে যায়। রবি সারাক্ষণ ওর হুকুম শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ। ছেলেটা বসতে পারেনা আবারও নতুন আবদার এসে হাজির হয়। রাত্রিকে মিরা খুব একটা পছন্দ করে না তাই ওকে তেমন ডাকেনা। রাত্রি বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারেনি। সজিবের নাম্বারে ফোন করতে চেয়েছিল কিন্তু বন্ধ আসছে। বিছানায় ওপাশ ওপাশ করেও রাত্রির ঘুম আসে না। চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে থাকে। সেদিন গভীর রাতে আজহার মির্জা বিছানায় শুয়ে ছিল হঠাৎ জানালার ওপাশে ফিসফিস শব্দ শুনে উনার ঘুম ভেবে গেলো। উনি তাড়াতাড়ি উঠে বসলেন।। মাথার কাছে রাখা চশমাটা হাতড়ে চোখে পড়ে নিয়ে একটু একটু করে বেলকনির দরজা খুলে উঁকি দিলেন বাগানের দিকে। আকাশে চাঁদ আছে আর বাইরের লাইট অন থাকার জন্য বাগানের দিকটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। জবা গাছের গোড়ায় কেউ একজন বসেআছে। একজন বললে ভুল হবে দুজন আছে। একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে। উনি এবার হাক ছেড়ে ডাকলেন,

> ওই তোমরা এখানে কি করছো?

আজহার মির্জার চিৎকার নির্জন বাগানে কেমন প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসলো। ছেলেমেয়ে দুটো জবা গাছের নিচ থেকে বাইরে বেরিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে হনহন করে বাইরে গেটের দিকে চলে গেলো। এদিক থেকে গেটের ওদিকে নজর রাখা যায় না। তবে ওরা কারা বিষয়টা বুঝতে উনার সময় লাগলো না। উনার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। উনি একটা ভালো মতলব বের করেছেন এতে পকেটের সঙ্গে নিজের স্থানটাও এ বাড়িতে পাকা হবে। কথাগুলো ভেবে উনি নিজের রুমে এসে লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন। রাত্রি প্রতিদিনের মতো সকালবেলায় রান্না করতে উঠেছে। ও ঢুলতে ঢুলতে রান্নাঘরে আসতেই দেখলো আরাভ চায়ের পানি গরম করছে। রাত্রিকে এভাবে ঢুলতে দেখে ও গম্ভীর মুখে বলল,

> সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠার অভ‍্যাস নেই তাইনা?

> হুম। আপনি বসেন আমি বাকিটা করে দিবো।

> তুমি চোখেমুখে পানি দাও আমি নিজের চা নিজেই করে নিবো। আর বসে বসে ঘুমালে কিন্তু খালামনি তোমাকে উত্তম মাধ্যম দিবেন।

চোখেমুখে পানি ছিটানোর কথা শুনে রাত্রির ঘুমঘুম ভাবটা পুরোপুরি কেটে গেলো। ও চোখ মুছে দ্রুত বলল,

> এই না.. না..আমি ঠিক আছি। কিসের ঘুম আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর কেউ দেরিতে ঘুম থেকে উঠেনি আর আমি তো সামান্য এইটুকু একটা মেয়ে।।

রাত্রির এমন কথায় আরাভ সামান্য হাসলো। মেয়েটা সব সময় নিজেকে এডাল্ট প্রমাণ করার চেষ্টা করে কিন্তু কেনো? বয়সটা আর কতোই বা হবে মিরার সমবয়সী,নয়তো দু এক বছরের বড়ছোট। আরাভের ধ‍্যান ভাঙলো বাইরে মিরার চিৎকার শুনে। ও তাড়াতাড়ি ডাইনিং রুমে যেতেই মিরা ওকে ঝাপটে ধরে বলল
> ওখানে অনেক রক্ত, আমার ভয় করছে।
ওর কথা শুনে আরাভ তাড়াতাড়ি ওকে ধরে চিন্তিত হয়ে জিঙ্গাসা করলো,

> কোথায় রক্ত? এখানে কোথাও রক্ত নেই।
মেয়েটা ওর কথার কর্ণপাত না করে বিড়বিড় করতে করতে জ্ঞান হারালো। রাত্রি রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এসে আরাভের পাশে দাঁড়িয়েছে। ওর সারা মুখে আতঙ্ক। প্রশ্ন জাগলো,কিসের এবং কার রক্তের কথা বলছে মিরা?

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন

আসুন নামাজ ও কোরআন পড়ি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here