#তোমাতে_মাতোয়ারা ১২তম পর্ব
_আরশিয়া জান্নাত
পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙলো ঐন্দ্রিলার।চোখ বন্ধ রেখেই পাশে থাকা কোলবালিশটা হাতড়ে জড়িয়ে নিলো,হাসমুরগীর ডাক কানে আসতেই মনে পড়লো সে এখন ঢাকায় নেই।ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মনোয়ারা বেগম পাশেই বসে বসে ঘুমাচ্ছেন।গতকাল রাতে শরীরের ব্যথায় জ্বর এসে গেছিল তাঁর,সেই জ্বরটা এখন নেমে গেছে বোধহয়।তবে ব্যথাটা এখনো আছে।ফোন হাতড়ে দেখে 5টা বাজে।ঐন্দ্রিলা ধীরেসুস্থে উঠে ওয়াশরুমে গেল,সাবধানে উযু করে নামাযে দাঁড়ালো।মনোয়ারা বেগম নাতনীকে নামাযরত অবস্থায় দেখে প্রসন্নমনে হাসলেন,তারপর উঠে গিয়ে তিনিও নামায পড়ে নিলেন।দোআ পড়ে নাতনীর মাথায় ফুঁ দিয়ে বললেন,শরীলডা এহন কেমন বুবু?
—ব্যথা করতেছে অনেক।
—তা তো কয়দিন করবোই,রাতে যে জ্বর আইছিল!
—তুমি সারারাত এখানে বসে ছিলা দাদুন?অনেক কষ্ট দিছি তাইনা!
—তোরে ব্যারামে ফালাইয়া আমার ঘুম আইতো?ছোট বৌমা এত পথ জার্নি কইরা আইছে সারাদিন কত দখল গেছে,ও চাইছিল থাকতে,আমি জোর কইরা ঘুমাইতে পাঠাইছি।তোগোরে নিয়া হেয় যে কত টেনশন করে!
—বাবা ফোন করেছিল কিছু বলছো?
—হ।বাপেরে কওন লাগবোনা?ভিডিও কল দিছিল,তোরে এই অবস্থায় দেইখা আমার পোলা পারেনাই কাইন্দা দিতে।
—বাবা এমনিতেই নরম মনের,দেখে আরো টেনশনে পড়ে গেছে নিশ্চয়ই।
—ছেলেমেয়ের অসুখবিসুখ হইলে কোনো বাপ ই শক্ত থাকেনা বুবো!হয়তো আমাগো মতো প্রকাশ করেনা ভেতরে ভেতরে ঠিকই জ্বলে।
—হুম।দাদুন উনি ফোন করছিল?
মনোয়ারা বেগম দুষ্টুমির ছলে বললেন,উনিডা কে?
ঐন্দ্রিলা লজ্জায় লাল হয়ে বললো,কেউ না।
মনোয়ারা হেসে ঐন্দ্রিলা থুতনি ধরে বললো,এহনই এমন লাজে রাঙা হইতাছোস বুবু?হিহিহিহি
করছিল ফোন,আমি ধইরা কইছি ঘুমাইতাছোস।পরে ভালাবুরা জিগাইয়া রাইখা দিছে।
যাবি বাইরে?নাকি এখানেই নাস্তা করবি?
—না সবার সঙ্গে খাবো,চলো।
____________
ব্রেকফাস্ট সেড়ে মেয়েরা সবাই পুকুরঘাটে গিয়ে বসলো।ইতু তেঁতুল,লবণ মরচি দিয়ে কচি লাউয়ের বানানি বানালো।
চৈতি—দোস্ত তোদের এই বাগানটা অনেক সুন্দর,পুকুরঘাটটাও জোশ।আমার তো এখানে সাঁতার কাঁটতে মন চাইতেছে।
টয়া—আজ দুপুরে তাহলে সবাই পুকুরে গোসল করি? সাঁতার পারো তো সবাই?
দিয়া—আমি তো পারিনা।তোমরা মজা করবা আর আমি বসে বসে দেখবো?
তারিন—আরে সমস্যা নাই তুমি শেষ সিড়িতে পা ডুবিয়ে বসে থাকবা,নামতে বেশি ইচ্ছে হলে আমরা সবাই ধরে নামাবো।
চৈতি—আজ কিন্তু প্রতিযোগিতা হবে।কে আগে ওপার গিয়ে পৌঁছাতে পারে।
ইতু—পুকুরটা অতো বড় ও না,আমাদের বাড়ির পুকুরটা এরচেয়ে বড় ঐটাতে দুই তিনবার রাউন্ড দেওয়ার রেকর্ড আছে আমার।
টয়া– হ জানিতো একদিন গাছের শেকড়ে আটকে কেমন মরা কান্না কেঁদেছিলি,”ও আল্লাহগো আমারে কুমির টান দিলো” হাহাহা
ইতু—ঐরকম পরিস্থিতিতে থাকলে তুইও এভাবেই কান্না করতি।
তারিন–তুই ওরে খোঁচাচ্ছস তুই নিজে কি করছিলি একদিন বিকেলে খালি পুকুরে একা একা ঢং দেখাই মুখ ধুইতে গেছিলো,পেছন থেইকা ভাও করে চিৎকারর করতেই ভয়ে পুকুরে উল্টাই পড়ছে।হাহাহা
ঐন্দ্রিলা—তোরা সবাই ফাজিলের ফাজিল।এসব ফাজলামি করা ঠিক না।সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে কোনো ক্ষতি হতো যদি!
দিয়া পুকুর ঘাটের ছবি তুললো,সবাই একসঙ্গে বসে বানানী খাওয়ার মূহুর্তটাও ক্যামেরাবন্দি করলো।এতো সুন্দর মুহূর্ত ওর জীবনে খুব কম এসেছে।
তাইয়্যেবা কল করতেই দিয়া বললো,আপু ভিডিও কলে আসো।দেখো ঐন্দ্রিলা ভাবীদের বাড়িটা কত সুন্দর।ভিডিও কলে ক্যামেরা অন করে পুকুরঘাট,বাগান সব ঘুরে ঘুরে দেখালো,এক পর্যায়ে ঐন্দ্রিলা আর তাঁর কাজিনদের ও দেখালো।
তাইয়্যেবা তখন চেঁচিয়ে বললো,ঐন্দ্রিলার কি হয়েচে দিয়া?ওর মাথায় ব্যান্ডেজ কেন?
পাশে থেকে নিরব উঠে এসে বললো,কই দেখি?
দিয়া জিভ কেটে ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করে বললো,আপু তুমিও না কি দেখতে কি দেখেছো।
তাইয়্যেবা— একদম মিথ্যে বলবিনা,আমি স্পষ্ট দেখেছি ঐন্দ্রিলার কপালে ব্যান্ডেজ করা।ও ব্যথা পেল কিভাবে?
নিরব রেগে বললো– তুই কি লুকাচ্ছিস?ঐন্দ্রিলার কাছে ফোনটা দে।
দিয়া কাচুমাচু হয়ে ঐন্দ্রিলার হাতে ফোন ধরিয়ে দিলো।
ঐন্দ্রিলা— আস্সালামু আলাইকুম আপু।ভালো আছেন?
তাইয়্যেবা—ইয়া আল্লাহ ঐন্দ্রিলা তোমার এই হাল কেন?কি হয়েছে তোমার?
ঐন্দ্রিলা– আপু এমনি পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছি।একটুখানি কেটে গেছে।
নিরব–এটা একটুখানি ?
নিরবকে দেখে ঐন্দ্রিলা ভয় পেয়ে গেল,যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।দিয়ার দিকে তাকাতেই দিয়া ইশারায় স্যরি বললো।উফফ সে কি জানতো নাকি তাঁর ভাইয়াও ওখানে আছে,আপুকে ভিডিও কল দেওয়াই ভুল হয়েছে।
মনে মনে নিজেকে হাজারটা গালি দিলো।
নিরব—কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন?
ঐন্দ্রিলা—আপনিও না কেমন,মানুষের ছোটোখাটো এক্সিডেন্ট হতেই পারে।
তাইয়্যেবা– You should be more careful Oindrila!সামনেই তোমাদের বিয়ে,একটু দেখেশুনে চলবেনা?আমার ভাই তো পারছেনা এখুনি তোমাকে নিয়ে আসতে।ওর জন্য অন্তত নিজের খেয়াল রেখো।কেমন?
আচ্ছা তোমরা কথা বল আমি টুকুনকে খাবার খাইয়ে আসছি।
ঐন্দ্রিলার পাশ থেকেও সবাই উঠে চলে গেল।
নিরব থমথমে গলায় বললো,আর কোথায় লেগেছে?মেডিসিন নিয়েছিলে?
–হুম।
—কাল রাতে এজন্যই আর্লি ঘুমিয়েছ তাইনা?জ্বর এসেছিল নিশ্চয়ই?
–আরেহ না।জার্নি করেছি তো তাই আর কি,,,
— তুমি যে জার্নিতে অভ্যস্ত আমি ভালো করেই জানি ঐন্দ্রিলা।লুকোতে হবেনা আমার কাছে।
—হুহ সবজান্তা !
—গালও ছিলে গেছে দেখছি!সত্য করে বলোতো কোথায় পড়ে গেছ?আমাকে পুরো ঘটনা না বললে আমি দাদাইকে ফোন করবো কিন্তু,,,
—আপনিও না সবকিছুতে বাড়াবাড়ি।
—আচ্ছা ভালো,রাখছি বায়।
“”এতো রাগ এই লোকটার,হুহ!””
।।
দেখতে দেখতে কেঁটে গেল ছয়দিন,ঐন্দ্রিলা এখন যথেষ্ট সুস্থ,কপালের ঘা এখনো পুরোপুরি শুকায়নি।
পাঁচ মেয়ে জমিয়ে প্র্যাকটিস করছে,পুরো বাড়ি সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।সবাই মহাব্যস্ত।
গ্রামের মহিলারা এসে নানারকম পিঠাপুলি বানাচ্ছে,কেউ কেউ গীত গাইছে।ঐন্দ্রিলা দাদীর পাশে বসে সেসব দেখছে।
পাশের বাড়ির বড় দাদু বললো,হ্যাঁ গো নওয়াবী তোমার নাতনীর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আইবো কবে।
মনোয়ারা— আল্লাহ বাঁচাই রাখলে কালকেই আইবো।
–পরশুদিন হলুদ?
–হ
–আল্লাহ আল্লাহ করি উদ্ধার হইতে পারলেই শান্তি।হ্যাঁ গো বুবু তুমি খুশিতো?
মনোয়ারা বেগম হেসে বললেন,কারে জিগাও ভাবী হে তো এহন ঘরে দৌড় দিবো।নাতনী আমার এতো শরমিন্দা!
–হাহা।পুরুষ সুন্দর কাজে,নারী সুন্দর লাজে।আমগো ঐন্দ্রিলা স্বামীসোহাগী হইবো দেখিস,লাজুক মাইয়াগোরে জামাই আদর করে বেশি।
ঐন্দ্রিলা উঠে দৌড়ে চলে গেল।সবাই ওর যাওয়া দেখে হাসতে লাগলো।
ঐন্দ্রিলার দুই ফুফু-ফুপা আর ফুফাতো ভাইয়েরা একটু আগেই এসেছেন।গ্রামের আত্মীয়স্বজন সবাই একে একে চলে আসছে।পুরো বাড়িতে এখন মানুষের সমাগম।ঐন্দ্রিলার ছোট ফুপীর ছেলে কারিয়ান চৈতিকে দেখে অবাক হয়ে বললো,এই ইতু মেয়েটা কে রে?
ইতু টিপ্পনি কেটে বললো,ক্র্যাশ খেলে নাকি ভাইয়া?
কারিয়ান–বেশি পেকে গেছিস না?
–হুহ সত্যি বললেই দোষ।এ হচ্ছে ঐন্দ্রিলার ফ্রেন্ড,চৈতি।
–ওহ।
–কি ওহ লাইন ক্লিয়ার আছে।চাইলে ট্রাই করতে পারো?
–তুই যা তো এখন,বেশি বুঝোস।
–এখন বিদেয় করছো সমস্যা নাই,ভাবী বানাইলে ট্রিট দিও।
দিয়া মেরুন কালারের থ্রিপিস পড়ে সুন্দর করে চুল বেঁধে হালকা সেজেগুজে তৈরি হয়ে রইলো।একটু পর ইশতিয়াক আসবে,তার সামনে যেন তেন রুপে তো যাওয়া যায় না।
তারিন–ওহো বেয়াই আপনার রুপের ঝলকে তো চোখ ঝলসে যাচ্ছে।
দিয়া– ঐ তারিন দেখে বলোতো বেশি বেশি লাগছে নাকি ঠিকঠাক আছে?
তারিন শিস বাজিয়ে বললো,কেইসটা কি ?কারজন্য এতো ফিটফাট?
দিয়া মুচকি হেসে বললো,আছে একজন।
তারিন কিছুক্ষণ ভেবে চিৎকার করে বলল,ইশতিয়াক ভাইয়া??
দিয়া মাথা নীচু করে ফেললো।
তারিন চিন্তিত গলায় বললো,ভাইয়ার না গার্লফ্রেন্ড আছে?শিলা আপুর সঙ্গে অনেক বছরের রিলেশন।
দিয়া চমকে উঠে বললো,শিলা?
–হ্যাঁ! সেই ভার্সিটি থেকেই তো।
দিয়ার চোখে পানি চলে এলো।তারিন আমতা আমতা করে বললো,দিয়া স্যরি আমি জানতাম না তুমি উনাকে পছন্দ করো।তাহলে আগেই বলে দিতাম।আমরা বোনেরা সবাই জানি এই বিষয়ে,তোমাকে তাই বলে দিলাম।কেঁদো না প্লিজ।
দিয়া চোখ মুছে বললো,ইটস ওকে সমস্যা নাই।
তারপর ভেতরে চলে গেল।
তারিন গোমড়া মুখে বসে রইলো,ইশ মেয়েটার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল!
একটু পর ইশতিয়াকদের গাড়ি এলো,ইমরান,ইশতিয়াক ,রাকিব,বাঁধন সবাই গাড়ি থেকে বের হলো।ইমরান সাহেব বের হয়েই ঐন্দ্রিলাকে জড়িয়ে ধরলেন।
–ভালো আছিস মামণি?শরীর এখন কেমন?
–ভালো আছি ।তুমি ভালো আছো তো?
— এতোক্ষণ ভালো ছিলাম না তোকে দেখেই ভালো হয়ে গেছি।
ইশতিয়াক বললো,এ কয়দিন আব্বু কি যে করেছে !তোর জন্য রাতে একটুও ঘুমাতে পারেনি।ইমপরট্যান্ট কাজ না থাকলে সেদিনই চলে আসতো।
–এটা কিন্তু ঠিক না।তোমার এমনিতেই হাইপ্রেশারে ঠিকঠাক ঘুম হয়না আবার টেনশন করছো!
মনোয়ারা বেগম,সব গপ ছোট মায়ের লগে কর আমিতো নাই এহানে?
ইমরান সালাম দিয়ে মনোয়ারা বেগমকে জড়িয়ে ধরলেন।ইশতিয়াক সবাইকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে ভেতরে ঢুকলো।
ঐন্দ্রিলা– পুষ্পি আসেনি তোদের সাথে?
রাকিব–পুষ্পি নাকি বরপক্ষের,সে কাল ওদের সাথে আসবে।
চৈতি– বরপক্ষের লোক আমাদের দলে চলে আসে আর পুষ্পি কিনা ঐ দলে চলে গেল??
বাঁধন– কি জানি ভাই বিয়ের পর তোরা সব বদলে যাস।
চৈতি– হ তোদের বলছে!
রাকিব– চৈতি তুই এখানে এসে আরো ফুলছোস মনে হচ্ছে
চৈতি– কুত্তা।তুই মানুষ হবিনা।
ঐন্দ্রিলা–অনেক হয়েছে ভেতরে চল ফ্রেশ হয়ে নে।
ইশতিয়াক আসার পর থেকেই গোপনে দিয়াকে খুঁজে চলেছে,অদ্ভুত ব্যাপার পুরো বাড়ির মানুষ এখানে দিয়া গেল কই?
ওদিকে দিয়া কেঁদেকেটে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।এজন্যই ইশতিয়াক তাঁকে এতো ইগ্নোর করতো।আর ও কিনা বোকার মতো সবসময় ওর আশেপাশে ঘুরেছে,কল করে বিরক্ত করেছে।নিজেকে অনেক বড় বোকা মনে হচ্ছে।
ইতু এসে দরজা নক করতেই দিয়া চোখেমুখে পানি দিয়ে দরজা খুলে দিলো।
ইতু— দিয়া তুমি রুমে একা কি করছো?জানো ঐন্দ্রিলার বিয়ের পালকি চলে এসেছে,সবাই সেটা দেখতে গেছে।চলো তুমিও দেখবে।যা সুন্দর করে পালকি বানিয়েছে আমিতো খুব এক্সাইটেড।
দিয়া হাসিমুখে ইতুর সাথে পালকি দেখতে গেল।
উঠোনে পালকিকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
ঐন্দ্রিলার খুশিতে চোখে পানি এসে গেছে।
—দাদাই তুমি ছোটবেলার কথাটা মনে রেখেছিলে,এতো সুন্দর পালকি!!
ইরফাজ সাহেব হেসে বললেন,আরে দেখো মেয়ের কান্ড।এখানে কান্নার কি আছে?তুই চেয়েছিস আর আমি দেবোনা এমন হয় কখনো?
নাহার–অনেক সুন্দর হয়েছে পালকি টা।
ঐন্দ্রিলার ছোট ফুপী ইসমা বললো,এখন তো আমার হিংসে হচ্ছে বাবা,তুমি নাতনিকে বেশি ভালোবাসো!
ইরফাজ– মেয়েরা হইছে গিয়া বাপের কলিজার টুকরা।তোদের জায়গা কেউ নিতে পারবোনা।ঐন্দ্রিলা হইছে আমাগো চান্নিপহর,ওর জায়গা আলাদা।তোরা কেউ কারো জায়গা দখল করতে পারবিনা।সবার আলাদা আলাদা জায়গা আছে।
ঠিক কইছি না মনুরাণী?
মনোয়ারা– হ একদম ঠিক।পোলামাইয়া একদিকে আর নাতিনাতনি আরেকদিকে।দুইদিকেই সাগরসমান ভালোবাসা।
দিয়া ঐন্দ্রিলাকে বললো,ভাবী তুমি সত্যি খুব লাকি।এতো সুন্দর একটা পরিবার পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।
ইশতিয়াক দিয়াকে দেখে কিছুটা শান্তিবোধ করলো।কিন্তু দিয়ার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা কান্না করেছে।কি এমন ঘটলো যে এই ভরা বাড়িতে কান্না করতে হলো?কেউ কিছু বলেছে নাকি?
ইশতিয়াক সুযোগ পেয়ে বললো,কেমন আছ দিয়া?
দিয়া–ভালো আছি ভাইয়া।আপনি ভালো আছেন?
ইশতিয়াক অবাক হলেও মুখে কিছু বললো না।কারণ দিয়া কখনওই ওকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করেনি।আজ হঠাৎ!
–তোমার কি শরীর খারাপ?চোখমুখ ফুলে গেছে দেখছি?
দিয়া তাচ্ছিল্যভরা হাসি দিয়ে বললো,ও কিছুনা,মাথাব্যথা করছিল তাই বোধহয় এমন লাগছে।তা শিলা আপু কেমন আছে?বিয়েতে ইনভাইট করেননি?
শিলার নাম শুনে ইশতিয়াকের বুকটা কেঁপে উঠলো,কতদিন পর শিলার নাম শুনলো কারো মুখে!এতোদিনে নিশ্চয়ই শিলার সাথে ওর বিয়েটা হয়ে যেত,আজ সে এ বাড়ির বৌয়ের মতো ঐন্দ্রিলার বিয়ের দায়িত্ব সামলাতো!
ইশতিয়াক অপ্রস্তুত গলায় বললো,ভালোই আছে।আচ্ছা পরে কথা হবে যাই আমার কাজ আছে।
দিয়ার চোখ ভরে এলো,তারমানে শিলার সাথে সত্যিই ইশতিয়াক রিলেশনে আছে!মন ভাঙার যন্ত্রণায় কাতরে উঠলো দিয়া।এতো কষ্ট কেন হচ্ছে তাঁর??ইশতিয়াককে যে ও পাগলের মতো ভালোবেসেছে,আজ সব মূল্যহীন হয়ে গেল?সে অন্য কারোর” এই যন্ত্রণা সইবার ক্ষমতা কি তাঁর আছে???
চলবে,,,