#তুমি_থেকে_যাও_আমার_হয়ে।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৬

অহনা ভাবল রবি কে ফোন দিয়ে কথা বলে নেওয়া দরকার। সরি বলতে হবে। অহনা ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু রবি ফোন রিসিভ করতেছে না।

শেষে বাধ্য হয়ে অহনা রবির বাসায় গেল সাথেই ইশিতা আছে। ইশিতা যেতে চাই নি অহনা একা যাবে ভেবেই তার সাথে গেল।অহনার উদ্দেশ্যে রবিকে সরি বলবে আর আপুর হাতের এক কাপ কফি খাবে। আজ দারোয়ান আটকালো না অহনাকে। কারণ আপু আগে থেকে বলে দিয়েছিল দারোয়ানকে যাতে অহনাকে না আটকায়।অহনা বাসায় ঢুকে দেখে রিফা বসে বসে টিভি দেখছে আর রবি নিজের রুমে কি যেন করছে।অহনা রিফাকে জিজ্ঞেস করলো আপু কোথায়?

রিফা জবাব দিল আপু অফিসে গেছে এবার অহনার আরো ভালো সুযোগ রবি কে সরি বলে নেবে।রিফা গিয়ে দুজনের জন্য কফি আনল।সাথে নিজের জন্য একটা আর রবির জন্য একটা। অহনা রবির কফি হাতে নিয়ে রবির রুমে গেল। দেখল রবি বই পড়ছে কোন উপন্যাসের। অহনা কোন কথা না বলে রবির কফিটা আস্তে করে রবির দিকে বাড়িয়ে দিল।

কফিটা কে দিল না চেয়ে রবি কফিটা নিয়ে এক চুমুক দিল।কারো গলার আওয়াজ শুনে রবি মাথা তুলে তাকালো। তার পাশে অহনাকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠলো। অহনাকে বলা শুরু করলো…..

–তুমি এখানে কেন?
অহনাঃএমনি তোমাকে দেখতে আসলাম।
–আমাকে নতুন করে দেখার কি আছে প্রতিদিনই তো দেখো?
অহনাঃরবি আসলে আমি তোমাকে সরি বলতে এলাম।
–সরি বলার কিছু নেই যা করেছো খুব ভালোই করেছে এখন এখান থেকে যাও।
অহনাঃসরি প্লিজ আর রাগ করে থেকো না।
–আচ্ছা ঠিক আছে রাগ করলাম না এখন বাসা থেকে যাও।

অহনা যেতে না চাইলে রবির জোরাজোরিতে চলে আসতে বাধ্য হলো।অহনা এখন নিজের থেকে অনুতপ্ত। সামান্য এই বিষয় নিয়ে রবি এতটা সিনক্রেট করবে সেটা কখনো অহনা ভাবে নি।অহনা বাসায় চলে গেল।

পরদিন সকালে রবি ভার্সিটিতে গিয়ে দেখল অহনা আসেনি কিন্তু ইশিতা এসেছে।রবি ভাবলো হয়তো মন খারাপ তাই আসে নি।পরের দিন একই অবস্থা পরের দিনও অহনা বাড়িতে আসেনি।এবার রবির মন খারাপ হয়ে গেল।গিয়ে ইশিতাকে জিজ্ঞেস করল অহনা ভার্সিটিতে আসেনা কেন?

–তোমার কথাগুলো শোনার পর এসে আর ভার্সিটিতে আসতেছে না।
রবি বুঝতে পারল তাঁর কথা অহনা খুবই কষ্ট পেয়েছে।তাই ভার্সিটিতে আসছে না।রবি নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে অহনাকে ফোন দিল।এদিকে অহনা রবির নাম্বার দেখে ফোনটা রিসিভ না করে ফেলে রাখলো।রবি পরপর পাঁচটা ফোন দিল কিন্তু অহনা একটা ফোনও ধরল না।রবি ইশিতাকে বলল…
—আচ্ছা তোমাদের বাসায় কে কে থাকে?
ইশিতাঃআমি অহনার বাবা-মা আরেকটা কাজের মেয়ে কিন্তু কেন বলতো?
—না মানে অহনা তো অনেক রেগে গেল তাই ও রাগ ভাঙ্গাতে যেতে হবে।
ইশিতাঃতাহলে বল কখন যাবে?
—তোমার বাবা তো অনেক বড় লোক একটু রাগীও হতে পারে।তাই ভাবছি যখন তোমার বাবা থাকবেনা তখন যাব।
ইশিতাঃএই যে মিষ্টার শোন প্রথমত আমার বাবা রাগী নয়।আর বড়লোক আমার বাবার মধ্যে কোন অহংকার নেই।
—তাহলে চলো আজ যায়।
ইশিতাঃকিন্তু আজ তো বাবা বাসায় থাকবে না।
—তাহলে তো আরো ভালো।
ইশিতাঃওকে তাহলে ক্লাস শেষ করে আজকের যাচ্ছি।
—হ্যাঁ আরেকটা কথা অহনাকে কিছু বলবে না।
ইশিতাঃওকে কিছু বলব না।

তারপর ক্লাস শেষ করে রবি ইশিতার সাথে ইশিতার বাসায় গেল।বাসাটা অনেক বড় দুই তলা হলেও চারপাশ টা অনেক বড় আর বাসার এক পাশে ছোট্ট একটা পুকুর যার জল এত পরিষ্কার যে ভেতরে মাছ গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রবি এসব দেখে তো অবাক।পুকুরের চারপাশে ছোট ছোট ফুল গাছ।তার পাশে বসার বেঞ্চ। দেখি যে কারোই হৃদয় জুড়ে যাবে।রবির ও কিন্তু এর ব্যতিক্রম হয়নি। রবি চারপাশে তাকিয়ে আছে…

ইশিতা বুঝতে পারল রবি এগুলো দেখে অবাক হয়ে গেছে তাই চারপাশে দেখছে। ইশিতা রবি কে বলল শুধু কি তাকিয়ে থাকবে নাকি ভেতরে যাবে…
রবি আমতা আমতা করে জবাব দিল হ্যাঁ চল বাসাটা খুব সুন্দর।
ইশিতাঃভেতরে আরো সুন্দর।

রবি আর ইশিতা ভেতরে গেল।দেখল সত্যি বাইরের থেকে ভেতরে আরো কয়েক গুন বেশি সুন্দর। রবি এবার ভেতরের অবস্থা দেখতে লাগলো।একটা মেয়ে এসে ইশিতার কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে নিলো।ইশিতা মেয়েটাকে বললো যা নাস্তা নিয়ে আয়।রবির বুঝতে বাকি রইল না এটা কাজের মেয়ে।ইশিতা রবিকে বসতে বলল।রবি বসে পড়ল।বাসাটা খুবই সুন্দর। একটু পর ইশিতার মা আসলো।ইশিতা রবিকে ইশারায় বুঝালো এটাই তার মা।রবি দাঁড়িয়ে সালাম দিল।অহনার মা সালামের জবাব দিল আর রবিকে বসতে বলল।অহনাকে জিজ্ঞেস করল…
–এটাই কি তাহলে সেই রবি?
রবিঃজ্বি আন্টি আমি রবি, কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
–অহনা, ইশিতা সবাই তো তোমার গুণ গায়।

কথাটা শুনে রবি ইশিতার দিকে তাকালো।ইশিতা মুচকি হাসি দিলো কিছু বলল না।ইশিতার মা আবারো বলে ওঠল…
–তা রবি তুমি নাকি অহনার সাথে রাগ করছো?
রবিঃনা আন্টি আসলে একটু বারাবারি হয়ে গেছে। আচ্ছা অহনা কোথায় একটু ওর সাথে কথা বলতে আসলাম।
–ও নিজের রুমে আছে।
রবিঃযদি একটু ডেকে দিতেন তাহলে কথা বলতাম। (অনুরোধের সুরে)

আন্টি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই ইশিতা বলে ওঠল..
ইশিতাঃএক কাজ করো চল, অহনার রুমে যায়।

ইশিতার কথা শুনে রবি আন্টির দিকে তাকালো। আন্টি কিছু বলছে না তবে মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে আন্টিও চাই রবি অহনার রুমে গিয়ে একটা সারপ্রাইজ দিক।তাও রবি আন্টির থেকে পারমিশন চেয়ে বসল।আন্টি যেতে বলল তাই রবি ইশিতার পেছনে পেছনে গেল।দ্বিতীয় তলায় ডান পাশে অহনার রুম। ইশিতা রুমের সামনে গিয়ে আস্তে করে রবিকে বলল এটাই অহনার রুম।রবিও আস্তে করে বলল চল ভেতরে যায়।কিন্তু ইশিতা ভেতরে যাবে না রবিকে একা ভেতরে যেতে হবে। অনেক জোরাজোরির পরেও যখন ইশিতা অহনার রুমে যাচ্ছে না তখন বাধ্য হয়ে রবি একাই অহনার রুমে ঢুকে গেল।

অহনা আয়নার সামনে বসে মাথা আঁচড়াচ্ছ রবি গিয়ে তার পেছনে বসল।অহনা আয়নায় কোনো ছেলেকে দেখে হালকা ভয় পেল রবির চেহারাটা ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।অহনা ভয়ে তাড়াতাড়ি পেছনে তাকালো রবিকে দেখে সে ভয় কেটে গেল।
রবিকে দেখেও আবার মাথা আঁচড়াতে লাগলো।রবি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না।অহনা মাথা আঁচড়ানো শেষ করে রবির সামনাসামনি করে বসল।তাও রবি কিছু বলছে না।এবার অহনা ভাবল তাঁকেই আগে কিছু বলতে হবে নয়তো রবি এভাবে বসে থাকবে।তাই অহনা রবিকে বলল….

অহনাঃকিছু বলছ না কেন,আর কেন আসছ এখানে?
–তুমি ভার্সিটিতে যাচ্ছ না কেন?
অহনাঃভালো লাগে না ভার্সিটিতে যেতে তাই।
–আমি জানি তুমি রাগ করে ভার্সিটিতে যাচ্ছ না।কাল থেকে ভার্সিটিতে যাবে।
অহনাঃতুমি অধিকার দেখাচ্ছ মনে হচ্ছে!
—অহনা সরি, তুমি যে কাজটা করছ তা আসলে আমি আশা করি নি তাই খুব রাগ হয়েছিল।
অহনাঃতার জন সরি তো বললাম।

হঠাৎ রবির ফোনটা বেজে ওঠল, বের করে দেখে আপু ফোন দিছে।রবি ফোনটা ধরে কানে দিল ওপাশ থেকে আপু বলা শুরু করল…
আপুঃতুই কোথায় এখনো বাসায় আসছিস না কেন?
—আমি একটা ফ্রেন্ডের বাসায় আসছি।একটু পর চলে আসব।
আপুঃএখনতো বিকাল হয়ে গেল।আচ্ছা যাইহোক আসার সময় অহনাকে নিয়ে আসিস।

আপুর কথা শুনে রবি যেন আকাশ থেকে পড়ল।আপু কিভাবে জানে সে এখন অহনার বাসায়।

–আপু তুমি কিভাবে জান আমি যে ইশিতার বাসায়?
আপুঃতুই চললে ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায়। হু..
–আচ্ছা বাদ দাও, এখন অহনাকে নেওয়া যাবে না কাল ভার্সিটি ছুটি হলে নিয়ে আসব।
আপুঃওকে তাড়াতাড়ি চলে আসিস।
রবি ফোনটা কেটে দিল।আর অহনার দিকে তাকিয়ে বলল…
–কাল ভার্সিটিতে যাব তো?
অহনাঃনা।আর যাব না ভার্সিটিতে।
–পাগলামি করো না তো।কাল আপু তোমাকে আমাদের বাসায় যেতে বলেছে।
অহনাঃতো আমি কি করব?
–তুমি যাবে আমার সাথে।
অহনাঃকোন অধিকারের উপর ভিত্তি করে যেতে বলছ?
–আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড অহনা।

অহনাঃকিন্তু আমি এই টুকুর উপর ভিত্তি করে আমি তোমার সাথে যেতে পারব না।

রবি বুঝতে পারল যতক্ষণ অহনাকে ভালোবাসি বলবে না ততক্ষণ সে রবির কথা শুনবে না।তাও আরেকটু বুঝানোর চেষ্টা করল অহনাকে….
–দেখ অহনা তুমি শুধু পড়ে আছ সেই ভালোবাসাতে।বেস্ট ফ্রেন্ড ভালোবাসার থেকে কম নয়।যেটা তুমি একদমই বুঝতে পারছ না।
অহনাঃতাহলে বলো ভালোবাস।
–আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে কালকে ভার্সিটিতে গেলে কিছু বলব।যাবে কিন্তু ভার্সিটিতে ওকে?
অহনাঃসত্যি বলবে তো?
–হুম বলব।অবশ্যই যাবে।ক্লাস শেষ করে কিছু বলব তোমাকে।
অহনাঃওকে তাহলে যাব।
–হুম আসি তাহলে এখন…
অহনাঃশুন না।
—হুম বল?
অহনাঃভালোবাসি তোমায়।
অহনার কথা শুনে রবি একটা মুচকি হাসি দিল।কিছু না বলে রুমে থেকে বের হয়ে গেল।নিচে গিয়ে দেখে ইশিতা আর তার মা বসে আছে রবি গিয়ে একটা সোফায় বসে বসল।আন্টি রবিকে বলল….
আন্টিঃতা ওর রাগ ভাগাতে পারলে তো?
–জ্বি আন্টি কালকে ভার্সিটিতে যাবে বলল।
আন্টিঃইশিতা গিয়ে অহনাকে খাবারটা দিয়ে আয় দুপুর থেকে কিছু খাইনি।(ইশতাকে বলল)
রবি কথাটা শুনে কেন যেন একটু অন্য রকম ফিল করল।তার জন্য অহনা না খেয়ে আছে।রবি ইশিতাকে কিছু বলতে যাবে তার আগে ইশিতা রবিকে বলল চলো আমার সাথে। রবি হয়তো এটাই চেয়েছিল।রবি ইশিতার পাশাওাশি হেটে যেতে শুরু করল। অহনার রুমে ইশিতা আগে ঢুকে পড়ল।পেছন পেছন রবিও। অহনা আবার রবিকে দেখে আর ইশিতার হাতে খাবার দেখে বুঝে গেল তারা কেন আসছে আবার।

অহনা বসে পড়ল।আর রবির হাতে ইশিতা খাবার গুলো দিয়ে কানে কানে বলল খাইয়ে দিও দুলাভাই। কথাটা শুনতে রবির চোখ কপালে ওঠে গেল কোথায় বিয়ে কোথায় কি তার আগে দুলাভাই। রবি কিছু বলতে যাবে ইশিতাকে তার আগে ইশিতা সেখান থেকে তার মায়ের কাছে চলে গেল।ইশিতার চলে যাওয়া দেখে তার মা বলল রবিকে রেখে আসছে কেন একা।ইশিতা বলল ওরা একটু রোমাঞ্চ করুক না।বস তুমি….
আন্টিও আর কিছু না বলে হালকা হেসে বসে রইল।এইদিকে রবি খাবার হাতে নিয়ে বসে আছে কিছু বলছে না।তাই অহনা রবিকে বলল….
–কি হলো খাবার গুলো হাতে নিয়ে বসে থাকবে নাকি খাবে?
রবিঃনা না আমি কেন খাব এগুলো তোমার জন্য এনেছে ইশিতা।
–কই ইশিতা তুমি তো আনলে?
রবিঃএকটু আগে তো ইশিতা দিয়ে গেল।
–আমি তো একটু আগে ইশিতাকে দেখি নি।

রবি বুঝল অহনা দেখার পরেও রবিকে বোকা বানাচ্ছে। রবি আর তর্ক না করে খাবার গুলো অহনার দিকে এগিয়ে দিয়ে খেতে বলল।কিন্তু অহনা তো খাবেই না।তাঁকে নাকি খাইয়ে দিতে হবে।শেষে বাধ্য হয়ে রবি পাশের বেসিন থেকে হাত ধুঁয়ে ভাত মেখে অহনাকে এক লোকমা খাইয়ে দিল।দেখল অহনা বেশ আরাম করে খেলো।পরপর তিন লোকমা খাইয়ে দিল রবি খেয়াল করল অহনার চোখের কোনে পানি জমে গেছে।

রবি অহনাকে কিছু বলতে যাবে তবুও যেন বাকরুদ্ধ হয়ে রইল। রবির মনে এক অজনা ভয় কাজ করতে লাগল।

#To_be_continue…….
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here