তুমি_আমারই_রবে
বোনাস_পর্ব
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

“অসব পড়ে হবে। আগে একটু ঘুমুতে দাও। কতো বছর পর তোমাকে এভাবে কাছে পেলাম।”

“আমি জানি তো, কান ধরে উঠ বস করার ফলে ও আপনার হাঁটুতে সাংঘাতিক ব্যাথা হচ্ছে। অথচ আপনি মুখ ফুুটে বলছেন না।”

“সামান্য ব্যাথা রূপা। ঠিক হয়ে যাবে। টুকটাক বিষয় নিয়ে এতো মাথা ঘামাতে নেই। তুমি শুধু আমাকে একটু ঘুমুতে দাও। দেখবে, ঘুম থেকে উঠলেই হাঁটুর ব্যাথা উধাও হয়ে গেছে।”

আমি উনার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বললাম,,

“এতো ঘুমুলে কুমিল্লায় যাবেন কিভাবে? ঘড়িতে দেখুন, দশটা অনেক আগেই পাড় হয়ে গেছে।”

উনি বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন,,

“হয়ে যাক। এ্যানি টাইম কুমিল্লায় যাওয়া যাবে। দয়া করে আমাকে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমুতে দাও।”

“আমার ঘুম আসবে না। এমনিতেই আজ অনেক ঘুমিয়েছি।”

“তোমার ঘুমুতে হবে না। তুমি শুধু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।”

“এ্যাঁ। তা ও পারব না।”

উনি হঠাৎ মাথা তুলে ঘুম ঘুম চোখে বাঁকা হেসে আমার ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে বললেন,,

“তাহলে আদর করতে দাও!”

“এই না না। আচ্ছা আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

উনি ঘাঁড় থেকে মুখ তুলে আবার আমার বুকে মাথা রেখে খুব শক্ত করে আমাকে আলিঙ্গন করে বললেন,,

“আমি না উঠা অব্দি তুমি কোথাও যাবে না। ঘুম থেকে উঠেই যেনো তোমার মুখটা প্রথমে দেখতে পাই।”

আমি উনার মাথায় হাত বুলাচ্ছি আর আদুরে স্বরে বলছি,,

“ঠিকাছে। ঘুমান আপনি।”

পরম আবেশে ঘুমিয়ে পড়লেন উনি। আমি হালকা হেসে উনার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে আছি। এই ঘুমন্ত অবস্থায় লোকটাকে যে কি পরিমান অপূর্ব লাগে তা বলে বুঝানো যাবে না। ইচ্ছে করে এই লোকটার অমায়িক মুখটার দিকে তাকিয়ে যুগের পর যুগ কাটিয়ে দেই। আহার, নিদ্রার মোটে ও প্রয়োজন নেই। একদম ক্লান্তিহীন চোখে কেবল উনার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকা! ভাবতেই ব্যাপারটা কেমন সুখ সুখ লাগছে। একেবারে হৃদয়ে গেঁথে যাওয়ার মতো।

কি হলো জানি না আমার, আবেগে খুব বেশি প্রস্ফুটিত হয়ে আমি উনাকে দুহাতে শক্ত করে ঝাপটে ধরে উনার কপালে দীর্ঘ একটা চুমো খেয়ে মনে খুব তৃপ্তি নিয়ে চোখ দুটো বুজে নিলাম। আমার ও বেশ ঘুম ঘুম পাচ্ছে। ঘুমানোর একটা ঠিকঠাক জায়গা পেলে চোখ দুটো বেশিক্ষণ খোলা থাকতে চায় না। মৌণতায় জনাজীর্ণ হয়ে আমি ঘুমের দেশে পা বাড়ালাম। এই ঘুমটা যেনো সহজে না ভাঙ্গে আমার। ঘুমটা ভেঙ্গে গেলেই হয়তো লোকটার বুকে এভাবে একাত্ন হয়ে মিশে থাকা যাবে না। বুকের ভেতরটায় সুখ সুখ প্রশান্তি ও মুহূর্তের মধ্যে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।

,
,

ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে আমি বেডের একটা কোণায় এলোমেলো ভাবে আবিষ্কার করলাম। হাত, পা ছড়ানো ছিটানো। ছোট ছোট চুল গুলো চোখে, মুখে উপচে পড়ছে। পাখার বাতাসে চুল গুলো পাল্লা দিয়ে হাওয়ায় উড়ছে। কিছুক্ষন পর পর আবার টাল মাটাল হয়ে ওরা আমার মুখে এসে পড়ছে। সামান্য শুড়শুড়ির অনুভব হচ্ছে মুখটায়। চুলগুলোই হলো সেই শুড়শুড়ির উৎস। বিরক্তি নিয়ে পিটপিট চোখে চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে কানের পিছনে গুজে নিলাম। ছোট ছোট চোখে পুরোটা রুমে চোখ বুলুতেই জানালার থাই দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়েছে। তার মানে বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে। আকস্মিকতায় নাক, মুখ কুঁচকে আমি হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। শাড়িটা ভালো করে বুকে জড়াতেই ওয়াশরুমের দরজা খুলে হিমু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলেন। চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে উনার। উন্মুক্ত শরীরে উনি চুল গুলো এক হাত দিয়ে ঝেঁড়ে হালকা হেসে আমার দিকে একবার তাকিয়ে সোজা ব্যালকনিতে চলে গেলেন। আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে উনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছি। এক প্রকার ঘোর লেগে গেছে আমার, উনার স্নিগ্ধ, সুন্দর, লাবণ্যময় অবয়বের উপর। কেমন যেনো উনি আমায় চুম্বকের মতো টানছেন। বসে থাকতে পারলাম না আমি। অন্যমনস্ক হয়ে আমি বসা থেকে উঠে ধীর পায়ে হেঁটে ঠিক উনার পিছনের দিকটায় এসে দাঁড়ালাম। এর মধ্যেই হিমু হঠাৎ পিছু ফিরে বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকালেন। দুহাত দিয়ে উনি আমাকে ঝাপটে ধরে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে বললেন,,

“খুব শান্তির একটা ঘুম হলো আজ। আগামী ১০০ বছর ও হয়তো এভাবেই তোমাকে বুকে নিয়ে খুব শান্তিতে ঘুমুতে পারব রূপা। ভাবতেই খুব উৎফুল্ল লাগছে।”

আমি মলিন হেসে বললাম,,

“হাঁটুর কি অবস্থা আপনার? ব্যাথা আছে?”

“একদম ফিট আছি৷ সব ব্যাথা উধাও হয়ে গেছে।”

“সত্যি তো?”

“তিন সত্যি।”

আমি হালকা হেসে বললাম,,

“এর আগে আমাকে ডেকে দিলেন না কেনো? দেখেছেন, অলরেডি সন্ধ্যা হতে চলেছে!”

“কিভাবে ডাকব বলো? আমি নিজেই তো, এই একটু আগে ঘুম থেকে উঠলাম। আর ঘুম থেকে উঠেই আমার সুহাসিনীর মায়াভরা মুখটা দেখলাম। ব্যাস এটুকুতেই আমার সুখ সীমাবদ্ধ। আশেপাশের তাকানোর সময় ই পাই নি। সুখ ছেড়ে কোনো বোকা ও আশেপাশে তাকায় না। আর আমি তো একজন প্রেমিক পুরুষ।”

আমি মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে বেশ উতলা স্বরে বললাম,,

“ইসসস। অনেক ঘুমিয়েছি আজ আমরা। আমি তো এখনো শাওয়ার ও নেই নি। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ কিছুই করা হলো না৷ বাড়ির সবাই হয়তো এতোক্ষনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য্য হয়ে পড়েছেন।”

“বাড়ির সবাই এতোটাই অধৈর্য্য হয়ে পড়েছিলেন যে, আমাদের এখানে রেখেই উনারা কুমিল্লায় চলে গেছেন। ঘুম থেকে উঠতেই ইনবক্সে লোপার ম্যাসেজটা পেলাম।”

“চলে গেছে মানে?”

“আমি ও খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম। এরপর লোপা বলল, এক সপ্তাহ বাদেই আমাদের বিয়ে। দুই পরিবারের ই একটা প্রিপারেশন আছে। এখন থেকেই বিয়ের এরেন্জ্ঞমেন্ট শুরু করতে হবে। তাই আমাদের রেখেই উনাদের চলে যাওয়া।”

আমি মন খারাপ করে বললাম,,

“তাই বলে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন?”

উনি হঠাৎই ঘোরে লাগা চোখে আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছেন আর বলছেন,,

“উনারা গেছেন, ভালোই হয়েছে। আমি আমার রূপার সাথে একটু প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করতে পারব।”

আমি এক ধাক্কা দিয়ে উনাকে আমার সামনে থেকে সরিয়ে দৌঁড়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম আর হাসতে হাসতে ওয়াশরুমের ভেতর থেকে উনাকে বললাম,,

“আপনার এই কামনা কিছুতেই পূরণ হবে না হিমু। বিয়ে না হওয়া অব্দি আমি কিছুতেই আপনার কাছে ধরা দিবো না। আপনি যতোই উৎ পেতে থাকুন না কেনো, কিছুতেই আপনার কামনা পূর্ণ হবে না।”

উনি ওয়াশরুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অধৈর্য্য হয়ে বললেন,,

“আর কতো ওয়েট করাবে রূপা? আমার ও তো বৌ কে কাছে পেতে মন চায়, আদর করতে মন চায়, তার সাথে প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করতে মন চায়।”

“উফফফ চুপ করুন তো আপনি। বিয়ের পর অসব দেখা যাবে। এখন চুপচাপ আমার রুমের কাবার্ডের ড্রয়ার থেকে একটা শাড়ী এনে দিন দেখি। সাথে ম্যাচিং করা ব্লাউজ, পেটিকোট।”

উনি মনমরা হয়ে বললেন,,

“পারব না আমি। তুমি এসে নিয়ে যাও।”

“পারতে আপনাকে হবেই। তাড়াতাড়ি নিয়ে আসুন। আমি অপেক্ষা করছি।”

উনি ছোট বাচ্চাদের মতো গলা জড়ানো কন্ঠে বললেন,,

“আনছি।”

হয়তো শাড়ী আনতে উনি আমার রুমে চলে গেছেন৷ আমি ও এবার শাওয়ার নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। প্রায় অনেকক্ষন পর ওয়াশরুমের দরজায় টোকা পড়ল। কল বন্ধ করে আমি কানটা খাঁড়া করতেই শুনতে পেলাম হিমু দরজায় টোকা মারছেন আর শক্ত গলায় বলছেন,,

“এনেছি। নিয়ে যাও।”

আমি বেশ চেচিয়ে উনাকে বললাম,,

“শাড়িটা বেডের উপর রেখে আপনি ড্রইং রুমে যান। ডাইনিং টেবিলের উপর যা পাবেন তাই নিয়ে আসবেন। টেবিলে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো খাবার পেয়ে যাবেন। শাওয়ার সেরে এসেই আমাকে কিছু খেতে হবে হিমু। ক্ষিদেয় আমার পেট চো চো করছে।”

উনি বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন,,

“ধ্যাত৷ এবার ও কাছে পাওয়া হলো না। একটার পর একটা হুকুম করেই যাচ্ছে।”

হনহনিয়ে উনি চলে গেলেন। আমি হাসতে হাসতে এক প্রকার কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছি। বেশ কিছুক্ষন পর হাসি থামিয়ে আমি নিশ্চিন্তে শাওয়ার নিয়ে গাঁয়ে টাওয়াল জড়িয়ে সোজা রুমে ঢুকে পড়লাম। দ্রুত পায়ে হেঁটে আমি প্রথমেই রুমের দরজায় খিল লাগিয়ে দিলাম। হিমুর সাথে একদম বিশ্বাস নেই। হুট করে রুমে ঢুকে গেলে, আর আমাকে এই অবস্থায় দেখলে তো উনার মাথাই ঠিক থাকবে না। তড়তড় করে অসভ্যতাটা মাথায় চড়ে বসবে।

শাড়িটা গুছিয়ে পড়ে আমি ভেজা চুলটা টাওয়াল দিয়ে মুছতেই দরজায় টোকা পড়ল। হিমু বেশ ব্যস্ত হয়ে জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলছেন,,

“রূপা। দরজা খোলো। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করলে কেনো?”

তাড়াহুড়ো করে আমি টাওয়ালটা বেডের উপর ছুড়ে মেরে ভেজা আর এলোমেলো চুলে দরজার খিলটা খুলে দিলাম। অমনি হিমু আমার দিকে না তাকিয়েই হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে ডেস্কের উপর পাউরুটি আর জেলির ট্রে টা রেখে বেশ গম্ভীর ভঙ্গিতে পিছু ঘুড়ে আমার দিকে তাকালেন। আমার দিকে তাকাতেই উনার গম্ভীর ভাবটা হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলো। ঘোর লাগা দৃষ্টিতে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি উনার মাথায় শয়তানী চড়ে বসেছে। ভেজা চুলেই খোঁপা করে আমি উনাকে ক্রস করে বেডের উপর বসে নাস্তার ট্রে টা হাতে নিয়ে ছাগলের মতো পাউরুটি চিবুচ্ছি আর আড়চোখে উনার দিকে তাকাচ্ছি। হিমু এখনো একই দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। এক পা দু পা করে উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে আচমকাই আমার খোঁপাটা এক টানে খুলে দিলেন। অমনি ভেজা চুল গুলো খোঁপা থেকে উন্মুক্ত হয়ে পাখার বাতাসে উড়তে লাগল। আমি অস্থির দৃষ্টিতে হিমুর দিকে তাকাতেই হিমু আমার হাত থেকে নাশতার ট্রে টা ডেস্কের উপর রেখে একদম আমার গাঁয়ের সাথে এসে চিপকে বসলেন। চোখ বন্ধ করে উনি আমার চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছেন। কিছুক্ষন পর পর নাক দিয়ে আমার ঘাড়ে স্লাইস করছেন। খানিক ক্ষন বাদে বাদে আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি। শ্বাস বড় হয়ে আসছে আমার। কিছুতেই যেনো উনাকে আমার কাছ থেকে সরাতে পারছি না। আমি নিজে ও উনার পাশ থেকে উঠতে পারছি না। এক পর্যায়ে উনি আমাকে হেচকা টান দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। চোখ বড় বড় করে আমি উনার শার্টের কলার চেঁপে ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,,

“হিহিহিমু। প্লিপ্লিপ্লিজ ছাড়ুন আমায়। দদদয়া করে এই এক সপ্তাহ আআআমার থেকে দূরে থাকুন। নিনিনিজেকে সামলে রাখুন। ঝোঁঝোঁঝোঁকের বসে নিজেকে কন্ট্রোললেস করে ফেলবেন না।”

উনি কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মনটা খারাপ করে হঠাৎ আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে তিলটায় গভীর একটা চুমো এঁকে বললেন,,

“খাবারটা খেয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। বাড়িতে হয়তো সবাই আমাদের জন্য টেনশান করছেন।”

“আআআগে তো ছাড়ুন আমায়। এভাবে আমার উপর উঠে থাকলে আমি রেডি হবো কিভাবে?”

“কি করব বলো? মনকে মানাতে পারি না। বার বার উতলা হয়ে তোমার কাছে ছুটে আসে। তোমার সান্নিধ্যে এসে একটু সুখ পেতে চায়।”

ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে উনি আমার উপর থেকে উঠে দাঁড়ালেন। পাউরুটির একটা পিস মুখে দিয়ে উনি আয়নার সামনে দাঁড়ালেন। কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো ভাজ করে উনি কাবার্ড থেকে একটা কালো রঙ্গের শার্ট বের করলেন আর পিছু ফিরে আমাকে বললেন,,

“রূপা। আজ কি ব্ল্যাক পড়ব?”

আমি কোনো রকমে শোয়া থেকে উঠে পাউরুটির একটা পিস মুখে দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে উনাকে বললাম,,

“আপনার যা ইচ্ছা।”

“বেশ। তাহলে ব্ল্যাক ই পড়ি।”

উনি খুব ব্যস্ত হয়ে শার্ট পড়ছেন। আমি টাওয়াল দিয়ে চুলটা ঝেঁড়ে সোজা সিঁথি করে চুলটা দুদিকে ছেড়ে দিলাম। গ্লাস ভর্তি পানি খেয়ে আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে সামান্য স্নো মেখে খনিকের মধ্যে রেডি হয়ে নিলাম। প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপএ নিয়ে আমি বড় একটা ব্যাগে গুছালাম। হিমু ও এতোক্ষনে রেডি হয়ে ফিটফাট। রুম থেকে বের হওয়ার আগে আমি শেষ বারের মতো পুরো রুমটায় চোখ বুলিয়ে নিলাম। রুম থেকে বের হয়ে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটটা ও অনেকক্ষন চোখ বুলিয়ে দেখলাম। অজান্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। হিমু হয়তো টের পেয়েছেন আমার খু্ব মন খারাপ হয়েছে। তাই উনি আমার কাঁধে হাত রেখে উনার বাহুডোরে আমাকে আবদ্ধ করে শান্ত স্বরে আমাকে বললেন,,

“মন খারাপ করো না রূপা। বিয়ের পর পরই আমরা আবার এখানে আসছি।”

আমি মৌণ দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

“তবুও। একটু খারাপ তো লাগবেই।”

উনি কিছু বললেন না। শুধু শান্ত চোখে আমার দিকে তাকালেন। আমার কাঁধে আরো শক্ত করে হাত রেখে উনি আমাকে নিয়ে বাড়ির পার্কিং এরিয়ায় চলে এলেন। অমনি লামিয়া আর নীলার আমাদের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। দুজনই সবেমাএ অফিস থেকে ফিরেছে। আমাকে ঝাপটে ধরে দুজনই মরা কান্না জুড়ে দিলো। মিথ্যে বলব না, আমি ও ওদের মতো হাউমাউ করে কেঁদে চলেছি। লামিয়া ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে আমাকে বলল,,

“ম্যানেজারকে বলে দিয়েছি তুই আর অফিসে যাবি না। যদি ও উনি বলেছিলেন ছাড়পএ জমা দিতে, এরপরে ও আমি বলেছি তোর কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আপাতত কোনো ছাড়পএ জমা দিতে পারবি না।”

আমি কিছু বললাম না। শুধু কেঁদেই যাচ্ছি। অনেকক্ষন কান্না কাটির পর ওদের থেকে বিদায় নিয়ে আমি হিমুর গাড়িতে উঠে বসলাম। হিমু খু্ব যত্নসহকারে সিট বেল্ট বেঁধে দিয়ে আমার চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে আমার হাত হাত রেখে শান্ত স্বরে বললেন,,

“প্লিজ রূপা। কুল ডাউন। কেনো এভাবে কাঁদছ বলো? কিছুদিন পরেই তো লামিয়া আর নীলার সাথে তোমার দেখা হবে। আমাদের বিয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তো ওরা দুজন থাকবেই।”

আমি টলমল চোখে হিমুর দিকে তাকালাম। হিমু আমার কপালে চুমো খেয়ে বললেন,,

“মন খারাপ করো না। ধৈর্য্য রাখো।”

গাড়িটা ছেড়ে দিলেন হিমু। আমি জানালার কাঁচ উঠিয়ে ফ্লাটের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লামিয়া আর নীলার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ছাড়ছি। দুজনই চোখে জল নিয়ে হাসি মুখে দু হাত নাড়িয়ে আমাকে বিদায় জানালো। বাড়ির মেইন গেইট থেকে গাড়িটা বের হতেই আমি ব্যাক সিটে মাথা ঠেঁকিয়ে হু হু করে কেঁদে দিলাম। হিমু এবার বেশ রেগে ক্ষীপ্ত কন্ঠে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“বলেছিলাম, না কাঁদতে। এরপরে ও কেনো কাঁদছ তুমি?’

আমি ভয়ার্ত চোখে একবার উনার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে কান্না থামিয়ে চোখের জল গুলো মুছে নিলাম। মিনিট পাঁচেক পর হিমু এক হাত দিয়ে আমাকে উনার বুকের সাথে মিশিয়ে অতি শান্ত কন্ঠে বললেন,,

“স্যরি। বাট তুমি ই বাধ্য করেছ আমাকে রাগতে।”

আমি কিছু বললাম না। শুধু নাক টেনে উনার শার্টটা খাঁমচে ধরলাম। কিছুদূর যেতেই আমার চোখে হঠাৎ ঘুম শওয়ার হলো। হিমুর বুকে মাথা রেখেই ক্ষনিকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি। সেই ঘুম ভাঙ্গল আমার হিমুর ঠোঁটের স্পর্শে।

#চলবে….🖤

(আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। বোনাস পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন। আর একটা কথা, আগামী পর্বেই হয়তো হিমু আর রূপার প্রেমকাহিনীর ইতি টানা হবে🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here