#ডাক্তার সাহেব পর্ব- ১০
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা

দুজন দুজনের ঠোঁটের কাছে আসতেই অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনার সম্মুখীন হলাম। আচমকা মনে হলো কেউ একজন আমার পিঠে হাত দিয়েছে। আমার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। শুধু মনে হচ্ছে নীলের ঠোঁটে নিজেকে ডুবিয়ে দিই এখনই। নিজের কোমল ঠোঁট জোরা দিয়ে নীলকে আঁকড়ে ধরি। হাতের স্পর্শ উপেক্ষা করেই নীলের দিকে ঠোঁট বাড়িয়ে দিলাম। মাতাল হয়ে যাচ্ছি আমি। শরীরের অনুভূতি গুলো প্রখর হচ্ছে। চোখটা বন্ধ করে ফেললাম। এই বুঝি নীল ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়াবে। এর মধ্যেই নীলের জোরালো কন্ঠসুর ভেসে আসলো

– সিঁথি চোখ খুলো। চোখ না খুললে তো বুঝতে পারব না চোখে কী হয়েছে। চোখ খুলো।

চোখ বন্ধ করেই অবচেতন মনে ভাবতে লাগলাম সে এমন বলছে কেন! আমি চোখটা হালকা করে খুললাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে বলল

– দেখি দেখি চোখের অবস্থা।

কোনো কিছুই আমার মাথায় কাজ করছিল না। নীল কেন এমন করছে! আমি কী কোনো ভুল করেছি যে, নীল এমন করছে! আমি চোখটা ভালো করে খুলে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে থমকে গেলাম। বড় খালা মানে রিদির মা দাঁড়িয়ে আছে৷ মাকে দেখতে এসেছে। বড় খালাকে দেখে চোখটা এক হাত দিয়ে আরও চেপে ধরে কিছুটা স্থিত গলায় কন্না সুরে বললাম

– খুব ব্যথা করছে। কী হয়েছে বুঝতে পারছি না। চোখ দিয়ে তো তাকাতেই পারছি না।

কথাটা বলেই বড় খালার দিকে অপর চোখে তাকালাম তার সন্দেহের দৃষ্টি এখনও আমার দিকে। তার যে সন্দেহ কাটেনি সেটা তার চোখের ভঙ্গিমায় বলে দিচ্ছে। আমিও বা কম কিসে। স্কুলে অভিনয়ের প্রতিযোগিতায় বরাবরেই প্রথম হতাম। আমিও আরও জোরে চোখ চেপে ধরে নীলকে বলতে লাগলাম

– ভাইয়া দেখুন না কী হয়েছে। খুব কষ্ট হচ্ছে।

খালা আমাকে নীলের দিক থেকে ফিরিয়ে তার দিকে নিয়ে কাপড় দিয়ে মুখ চেপে আমার হাতটা চোখ থেকে সরিয়ে ভাপ দিতে লাগল আর বলতে লাগল

– এ ছেলেটাকে কী দেখাচ্ছিস? সে চোখের কী বুঝবে? আর ছেলেটা কে? এত লেপ্টালেপ্টি হয়েই বা ছিলিস কেন? বড্ড বেশি ইতর হয়ে গেছিস। এখনই এসব করে বেড়াচ্ছিস। তোর বাবাকে সব বলতে হবে।

আমি কিছুটা রাগ গলায় বললাম

– খালা উনি একজন ডাক্তার। আমার চোখটা দেখলে বুঝতে পারত কী হয়েছে। বাবার বন্ধুর ছেলে। বড় ভাইয়ের মতো আর তুমি কী না যা’তা বলছো।

খালা চোখে ভাপ দিতে লাগল। আর আমি চোখটা হালকা করে খুললাম। খালা আমার মুখটা উপরে তুলে চোখটা ভালো করে দেখে বলল

– এই তো ঠিক হয়ে গেছে। তোর মা কোথায়?

– কেবিনেই আছে। রিদি মায়ের দেখাশোনা করছে।

খালা নিজের মেয়ের প্রশংসা শুনে এক রাশ হেসে বলল

– আমি জানতাম আমার মেয়েটা তোর মায়ের অনেক যত্ন নিবে। অনেক লক্ষী মেয়ে রিদি।

কথাটা বলেই খালা হাসতে হাসতে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। মনে মনে ভাবতে লাগলাম রিদি আমার ছাই করবে। রিদি আমার বালের মেয়ে। যাইহোক খালার অনুপস্থিতে আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কয়েকটা নিঃশব্দ দম নিলাম। নীলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নীলের পাশে যেতেই সে পেছন সরে বলল

– সিঁথি শুনো সবসময় তোমার পাগলামি আর এ বাড়াবাড়ি গুলো আমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে সেটা আমার জন্য অপমানজনক। তোমার খালা চিনে না জানে না কী থেকে কী বলল। তুমি পাগলামি করো তবে সময় বুঝে করো না। সবসময় পাগলামি করা কী ঠিক? একটু আগে রিদির সাথে লেগে বসলে। আমি কী তোমার জামাই? রিদি আমার দিকে তাকালেই কী, বা সে কথা বললেই কী? এটা একটা ফেক প্রেম। এত সিরিয়াস কেন নিচ্ছ? কেন এত বাড়াবাড়ি করে সরল বিষয়টা জটিল করছো। দয়াকরে এসব বাদ দাও।

নীলের কথা শুনে আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম। আর নীল কথাগুলো বলে করিডোরের এক পাশে বসল। কেবিনে কী চলছে জানি না। রিদি খালাকে সবটা বলে দিয়েছে কী না সে চিন্তাও হচ্ছে। হাসিখুশি মুখটা ক্রমশেই মলিন হয়ে গেল। বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল। চোখের জলটা টুপ করেই পড়ে গেল। করিডোরটা শূন্য। আশেপাশে কেউ নেই। নীলের পাশে গিয়ে বসলাম। তার হাতটা ধরে আমার দিকে তাক করালাম। অভিমানে ভরা চোখদুটোতে তাকিয়ে হালকা গলায় বললাম

– আমি বুঝতে পারি নি।

– এত বুঝতে হবে না তোমাকে।

– সরি।

– আর সরি বলে কী হবে?

কথাটা বলতেই কেন জানি না মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চড়াও দিয়ে উঠল। নীলের দিকে তাকিয়ে তার গালে আমার ঠোঁট দুটো ছুইয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলাম

– রাগ কমেছে?

বলেই হাত দুটো দিয়ে মুখ ঢেকে দ্রূত করিডোর থেকে প্রস্থান নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলাম। আড়চোখে নীলকে শেষবার দেখেছিলাম সে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। নড়ছেও না চড়ছেও না। তার ভেতরের অনুভূতি কী হচ্ছে জানি না। তবে আমার ভেতরটায় তুলপাড় করা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যতক্ষণ না নীলকে কাছে পাব ততক্ষণ এ ঝড় থামবে না। কেবিনে প্রবেশ করে দেখলাম সব স্বাভাবিকেই আছে। রিদিও চুপ হয়ে বসে আছে। খালামনি মায়ের পাশে বসে মায়ের মাথায় হাত বুলাচ্ছে। আমি মেঝেতে ধপাশ করে বসে শুধু সে দৃশ্যটা কল্পনা করছিলাম। মনে হচ্ছিল দৃশ্যটা আমার চোখে স্থির হয়ে আছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে চেয়েও পারছি না। আচ্ছা নীলেরও কী একই অনুভূতি হচ্ছে। এটা কী আমি ঠিক করেছি? বুক কাঁপছে অনেক। নীল আমাকে খারাপ ভাববে না তো? ভাবতেই যেন মনের ভেতরের অস্থিরতা বেড়ে গেল। কী থেকে কী হচ্ছে কিছুই যেন টের পাচ্ছি না।

নীল না বলেই হাসপাতাল থেকে চলে গেছে। কল দিয়েছি কয়েকবার সে ধরল না। বাবা এসে খাবার দিয়ে গেছে। বড় খালাও বাসায় চলে গেছে। রিদি একপাশে শুয়ে আছে আর আমি একপাশে। খাবারটাও গলা দিয়ে নামেনি। কেন জানি না কষ্টে বুকটা ধরফর করছিল। কেন যে এ কাজ করতে গলাম জানি না। কেনই বা এমন করলাম এর উত্তর আমার কাছে নেই। মন খারাপ নিয়েই ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে নীলের মেসেজ পেয়ে খুশিতে মনটা ভরে উঠল। তবে সে খুশিটা বেশিক্ষণ আর স্থায়ী রইল না তার মেসেজটা পড়ে।

নোট- পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।

চলবে?

( কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here