#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১৬
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

কেমন আছো?
ভালো। আপনি?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি আপনি কল করেছেন।

জিসান বললো,
–“না চিনতে পারার ই কথা। জারার থেকে তোমার ফোন নাম্বার নিয়েছিলাম। তাই ভাবলাম তোমাকে কল করি।তো কি করছিলে?

জেসি মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
–“তেমন কিছু নয়। একটু কফি খাচ্ছিলাম।
–“ওয়াও!আমিও কিন্তু কফি খাচ্ছি, সাথে তোমার কথা ভাবছি। আমাদের মাঝে কত্ত মিল আছে দেখছো?

জেসি ছোট্ট করে উত্তর দেয়,
–“তাই?
–“হুম তাই তো।তো ঘুমাবে কখন?
–“আজকে যদি আমি ঘুমাতে না দেই কেমন হবে?
–“এমনটা আপনি করবেন না আমি জানি!

জিসান কপাল বাজ করে বললো,
–“কেন করবো না মনে হচ্ছে?

জেসি কফির কাপ একপাশে রেখে,ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে এসে শুয়ে পরে, তারপর শিমুল তুলোর নরম কোলবালিশ জরিয়ে বললো,
–“ডাক্তার মানুষ আপনি। আগামীকাল প্রেসেন্ট দেখতে হবে যার দরুন জেগে থেকে প্রেমালাপ করা আপনারা নন। অবশ্য এটা উচিৎ ও নয়, কারণ আপনাদের উচিলায় প্রেসেন্ট মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে আসে সেখানে আপনাদের সুস্থ থাকা জরুরি।

জিসান লাইট অফ করে দিয়ে খাটে শুয়ে বললো,
–“বাহ্ তুমি তো দেখছি আমাকে খুব বুঝো।
–“তাই?
–“হুম ঠিক তাই।
আচ্ছা এবার ঘুমিয়ে পরো, আবার আগামীকাল কথা হবে ইনশা আল্লাহ।
–“আচ্ছা।
শুভ রাত্রি।
–“শুভ রাত্রি।

ফোন রেখে দু’জনেই দু’জনকে নিয়ে কল্পনার রাজ্যে ঘুরতে ঘুরতে পারি জমায় ঘুমের দেশে।
________
সকাল বেলা ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে পদ্ম।তার ঘুম কে বিসর্জন দিয়ে এখন তৈরি হতে হবে। তারপর আল্লাহ তা’আলার নাম নিয়ে র‌ওনা হতে হবে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে।এই মুহূর্তে পদ্ম’র মনে হচ্ছে সবকিছু বাদ দিয়ে ঘুমাতে পারলে বেশি ভালো হয়,অথচ জায়ানের থেকে বেশি তিনিই এক্সাইটেড। এখন যদি যাওয়া বন্ধ করে ঘুমায় তাহলে ঘুম থেকে উঠে তিনিই হাত পা ছড়িয়ে কান্না জুড়ে দিবেন।তাই এই ঝুঁকি এড়াতে জায়ান কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে হেরে গিয়ে, সুরসুরি দিয়ে পদ্ম’র ঘুম ভাঙ্গাতে সফল হয়।তাও এখন বসে বসে ঝিমুচ্ছে পদ্ম। এরমধ্যে জায়ান শাওয়ার নিয়ে চলে এসেছে। পদ্ম কে বসে বসে ঝিমুতে দেখে, পদ্ম’র কাছে এসে নিজের চুল গুলো নাড়াচাড়া করে,যার ফলে পানির ছিটেফোঁটা পদ্ম’র মুখশ্রী তে পরে। আঁখিপল্লব দুটো খুলে পিট পিট করে তাকায় পদ্ম। সুন্দর একটা ঘ্রান পদ্ম’র ঘ্রাণেন্দ্রিয় জুরে খেলে যায়।
পদ্ম জিজ্ঞাসা করে,
–“কি ইউজ করেছেন আপনি? খুব সুন্দর ঘ্রান।

জায়ান ভ্রু কুঁচকে তাকায়, পদ্ম হঠাৎ ঘ্রান নিয়ে বলবে তা ভাবেনি জায়ান।সে ভেবেছিল পানির ছিটা দেওয়ার জন্য এখন পদ্ম তীব্র প্রতিবাদ জানাবে, অথচ পদ্ম কিনা পরেছে ঘ্রান নিয়ে।
জায়ান ও ভাব নিয়ে বললো,
–“ইউনিক কিছু ইউজ করিনি,ঘ্রান মনে হয় আমার নিজস্ব।
–“এই তো শুরু হয়ে গেছে নিজের ক্রেডিট নেওয়া। একটু সুযোগ পেলেই হয়েছে।
–“ক্রেডিট! সেটা আবার কি?
–“আপনি যেগুলা করেন সেগুলোই।

তারপর কাপড় চোপড় নিয়ে শাওয়ারে নিতে যায় পদ্ম, জায়ান অগোছালো হেসে চুল গুলো নেড়েচেড়ে বারান্দার দিকে যায়।
________
আট মাস পর,
পদ্ম আপনি কোথায়?

পদ্ম জায়ান কে খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখে, একটা চেয়ারে আরাম করে বসে পদ্ম বাটি হাতে নিয়ে কিসের যেন বার বার ঘ্রান নিচ্ছে।জায়ান কাছে এগিয়ে এসে বললো,
–“কি করছেন আপনি?আর বাটিতে এগুলো কি?

পদ্ম ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়,
–“হুইল পাউডার!
–“হোয়াট? এগুলো দিয়ে কি করছেন আপনি?

জায়ানের দিকে বাটিটা এগিয়ে দিয়ে পদ্ম বললো,
–“এই দেখুন কি সুন্দর ঘ্রান,আহা মন একদম ভরে যায়। ইচ্ছে করে সারাক্ষণ ঘ্রান নিতেই থাকি বুঝলেন। কাপড়ে যখন হুইল পাউডার দেওয়া হয় তখন কি সুন্দর ঘ্রান আসে কিন্তু শুকিয়ে গেলে ঘ্রান গুলো চলে যায়। আচ্ছা বলেন তো এই হুইল পাউডারের ঘ্রানের মতো কোনো পারফিউম আছে?

জায়ান বিরক্ত নিয়ে বললো,
–“আমি জানি না।

পদ্ম সারে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।এই কয়টা মাসে জায়ানের জীবন তেজপাতা বানিয়ে দিচ্ছে।সব অদ্ভুত অদ্ভুত বায়না ধরে আর সে গুলো পুরুন করতে হয় জায়ানের। মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে ইচ্ছে করে গ্রামে আম্মুর কাছে পাঠিয়ে দিতে, কিন্তু মুশকিল হলো পদ্ম কে ছেড়ে জায়ান নিজেই থাকতে পারবে না।বড্ড ভালোবাসে যে তার ঘুমবাবু কে।

–“আপনি একটু খুজ নিয়ে দেখুন তো এরকম ঘ্রানের পারফিউম আছে কিনা?
–“আপনি না পারফিউম ইউজ করেন না? তাহলে পারফিউম দিয়ে কি হবে বলেন?

পদ্ম বসা থেকে উঠে গিয়ে বললো,
–“ইউজ করিনা ঠিক আছে কিন্তু সুবাস তো নেওয়া যায় নাকি। বুঝতে পারছি আপনি আমাকে এনে দিবেন না, এটা বললেই পারতেন। আপনার এনে দিতে হবে না। আমি আব্বু কে বলবো এনে দিতে।

তারপর গটগট পায়ে হেঁটে চলে যায় নিজের রুমে পদ্ম।জায়ান করুন চোখে সেদিক তাকিয়ে চেয়ারে বসে পরে।এই সামান্য একটা ইস্যু ধরে পদ্ম এখন দুপুরের খাবার খেতে চাইবে না,আর জায়ান কে বাচ্চাদের মত নানা কথা বার্তা বলে বুঝিয়ে তার পর মহারানী কে খাওয়াতে হবে।
জায়ান ফোন হাতে নিয়ে ইউটিউবে বিভিন্ন ভাবে লিখে সার্চ দিলো, হুইল পাউডারের মতো সুবাস এরকম পারফিউম আছে কিনা? কিন্তু কোথাও খুঁজে পেল না,এর পরিবর্তে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন আসছে পারফিউম এর কিন্তু হুইল পাউডারের মতো সুবাস এরকম পারফিউম পেল না খুঁজে। তারপর বিভিন্ন কসমেটিকস এর পেইজে গিয়ে খুঁজলো তাও পেল না।
তাই ব্যার্থ হয়ে পদ্ম’র কাছে গিয়ে বললো,
–“ঘুমবাবু সব জায়গায় খুঁজে দেখলাম কোথাও পেলাম না এরকম সুভাসের পারফিউম।

পদ্ম পিছনে বালিশ ঠেকিয়ে বসে আছে। কোন জবাব দিল না।জায়ান কাছে গিয়ে বসলো।তা দেখে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় পদ্ম।জায়ান ভয়ে ভয়ে বললো,
–“খেতে চলুন ঘুমবাবু আমার না খুব খিদে পেয়েছে।

পদ্ম তার পেটে মোলায়েম ভাবে হাত বুলিয়ে বললো,
–“বাবু তোমার বাবা কে বলে দাও সে যেন খেয়ে নেয়। আম্মু রেগে আছে তাই এখন সে খাবে না।

জায়ান আর একটু কাছে এসে, পদ্ম’র উঁচু পেটে চুমু এঁকে দিয়ে বললো,
–“বাবু তোমার আম্মু বলো যে বাবা তোমাকে ছাড়া খেতে পারে না। তোমাকে ভাতের লোকমান দিয়ে তারপর বাবা খেতে পারে। তার সাথে এটাও বলো আম্মু আমার খিতে পেয়েছে তাড়াতাড়ি খেতে দাও।

এতে কোন ভাবান্তর হলো না পদ্ম’র।তাই জায়ান পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো।এর কিছুক্ষণ পর পদ্ম বললো,
–“বাবু তোমার বাবা কে বলো, আম্মু হেঁটে যাবে না খাবার খেতে। আম্মু কে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে ডাইনিং রুমে।

পদ্ম’র এরকম বাচ্চামো কথা শুনে এক চোখ খুলে তাকায় জায়ান।যা দেখে লাজুক হাসে পদ্ম। জায়ান দেরি না করে উঠে এসে কোলে তুলে নেয় পদ্ম কে। তারপর যেতে যেতে বলে,
–“বাবু তোমার আম্মু সোজাসুজি বললেই পারতো যে তাকে আদর করতে। আমি তো সব সময় তার জন্য প্রস্তুত আছি।

জায়ানের এহেন দুষ্টুমি কথায়, পদ্ম লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখে জায়ানের বুকে।
_______
জায়ানের চাচা ইমান হোসেন এর বাসায় বিকালে এসেছে জায়ান আর পদ্ম।জায়ানের চাচাতো বোন ইরার বিয়ে সে জন্য। আজকে গায়ের হলুদ, বিয়েটা ছোট করেই দিচ্ছেন ইমান হোসেন। কারণ যে বিয়েতে যত খরচ কম হয়,ঐ বিয়েতে আল্লাহ তা’আলার রহমত থাকে বেশি। তিন বছর পর পদ্মর সাথে ইরার দেখা হলো, পদ্ম এসেই হাসি মুখে ইরাকে জিজ্ঞাসা করে, কেমন আছো ইরা? কিন্তু ইরা এমন একটা ভাব ধরে যেন সে অনেক ব্যাস্ত! ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারলো না পদ্ম, জায়ান আর অনিতা ও লক্ষ্য করেছে। কিন্তু কিছু বলে নাই। তখন ইরার মা এগিয়ে এসে বললো,
–“পদ্ম মা তুমি বসো,আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো? কি অবস্থা শরীরের?মাসে মাসে চ্যাক‌আব করো তো ? বাচ্চা নড়াচড়া করা শুরু করেছে?

ইরার মায়ের এতো গুলো প্রশ্নে, পদ্ম বরকে যায় কোনটা রেখে কোনটার জবাব দেবে। ধীরে ধীরে জবাব দেয় সবকিছু।তারপর ইরার মা কাজের মেয়ে কে ডেকে জায়ান পদ্ম কে লেবুর শরবত তৈরি করে দিতে বলে।
এর কিছুক্ষণ পর জান্নাত আর এরশাদ হোসেন আসে। পদ্ম গিয়ে জরিয়ে ধরতে গেলে জান্নাত বাধা দিয়ে বললো,
–“কি করছিস দারা।

পদ্ম মলিন মুখে বললো,
–“আম্মু কি হয়েছে?
–“আরে বাহির থেকে এসেছি আগে ফ্রেস হয়ে আসি তারপর তো। এখন পরিস্থিতি সম্পর্কে তো জানিস। তুই বস আমি এক্ষুনি ফ্রেস হয়ে আসছি।

জান্নাত সাথে করে এরশাদ হোসেন কে ও নিয়ে গেলেন। অনিতা এসে বললো,
–“ভাবীমনি দেখ তো কুর্তি টা সুন্দর না?

অনলাইনে একটা পেইজে কুর্তি দেখিয়ে অনিতা বললো উপরিউক্ত কথাটা। পদ্ম অরো কিছু ড্রেস দেখে বললো,
–“অনিতা এই কালারটা বেশি সুন্দর দেখ?
–“আচ্ছা তাহলে এটাই অর্ডার করে দেই।

তারপর জান্নাত ফ্রেস হয়ে এসে, তার আদরের বউমা কে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।আর জিজ্ঞাসা করে কেমন লাগছে কি খেতে ইচ্ছা করে।তাকে যেন সব বলে,সে সর্বচ্চো চেষ্টা করবে যা মনে চায় এনে দেওয়ার। পদ্ম’র খুশি কে দেখে মনে হচ্ছে যেন নিজের মাকে কাছে পেয়েছে।দুই শ্বাশুড়ি ব‌উতে বড্ড মিল মা শা আল্লাহ।যেন কারো নজর না লাগে।
_______
গভীর রাত, জায়ান মাত্র‌ই ঘুমিয়েছে। পদ্ম তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছিল যার কারণে এখন ঘুম ভেঙ্গে গেছে।এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছে না পদ্ম’র।তাই রুমে পায়চারি করছে, পানি খেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের নিস্তব্ধ আকাশ দেখে কিছু সময়। তারপর রুমে এসে আরো পানি খেতে গিয়ে দেখলো পানিতে মোশা পরে আছে।তাই ডাইনিং গেল পানি খেতে, পানি খেয়ে ফিরে আসার পথে সোফার দিকটা নজর পড়ল পদ্ম’র, গুটি কয়েক রঙিন পেপার পরে আছে ফ্লুরে। পদ্ম এগিয়ে গিয়ে একটা পেপার হাতে নিয়ে দেখলো এতে খুব সুন্দর করে আর্ট করে লেখা”ভালোবাসি জায়ান কেন বুঝো না”?
এরকম লেখা দেখে পদ্ম ভ্রু কিঞ্চিৎ উঁচু করে ভাবে কে লিখেছে এটা? তারপর কৌতুহল বশত সবগুলো পেপার কুড়িয়ে নেয় পদ্ম। নিয়ে রুমে এসে একটার পর একটা পড়ে। একটার মধ্যে এরকম লেখা” কনগ্রেচুলেশন ডিয়ার!শুনলাম বাবা হতে চলেছো?

#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here