#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১১
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

পদ্ম চেয়ার ছেড়ে উঠে যায়, তারপর চিন্তিত স্বরে বললো,
–“আপু তুমি কোথায় যাচ্ছ?তখন তোমাকে ডাকতে গেলাম নাস্তা করার জন্য, তুমি বললে একটু পরে আসছি। কিন্তু এভাবে তৈরি হয় কোথায় যাচ্ছ?

খাবার টেবিলে বসে থাকা সবার দৃষ্টি এখন জেসির দিকে, সবাই তাকিয়ে আছে জেসির উত্তরের আশায়। জেসি জোর পূর্বক হেসে বললো,
–“পদ্ম আমার খাবারটা তাড়াতাড়ি বেড়ে দাও দেখি,খেয়েই দ্রুত বের হতে হবে!
–“কিন্তু কোথায় যাবে তুমি?
–“আমি ঢাকায় আমার বাসায় ফিরে যাচ্ছি। তোমরা ভালো থেকো কেমন? আমাকে আবার ভুলে যেও না যেন। কি মনে থাকবে তো আমাকে?

পদ্ম’র কপাল খানিক ভাঁজ পড়ে, সাথে সাথে ইলোরা এসে বললো,
–“সেকি মেয়ে আজকেই চলে যাবে কেন, পদ্ম জায়ান ওরা তো আরো কিছুদিন থাকবে এখানে। তুমিও ওদের সাথে যেও?

জেসি হেসেই বললো,
–“না আন্টি, অনেক তো থেকেছি। আপনাদের এখানে এসে খুব ভালো সময় কেটেছে। আমার সব সময় মনে থাকবে।আর হ্যা আপনি আংকেল ইনফেক্ট আপনারা সবাই আমাদের বাসায় যাবেন আমি খুব খুশি হবো গেলে। আমার বাপি ও অনেক খুশি হবে।

পদ্ম মলিন মুখে বললো,
–“আপু আমাদের সাথে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো?আর তো দুটো দিন মাত্র।
–“না পদ্ম আমাকে যেতে হবে,বাপি কল করেছিল। তাছাড়া গাড়ি কাছাকাছি চলে এসেছে।
–“আচ্ছা চলো নাস্তা করে নাও।
–“আচ্ছা চলো।

তারপর সবাই গল্প গুজব করতে করতে নাস্তা করে, আজকের নাস্তা চিত‌ই পিঠা,টাকি মাছের ভর্তা, শুঁটকির ভর্তা, রুটি,মুরগির গোশত,ঝাল পিঠা।
খাওয়ার সময় জায়ান একটা হাড় পেলো,যা পদ্ম’র খুব পছন্দ।তাই বসে বসে ভাবছে কিভাবে হাড় টা পদ্ম কে খা‌ইয়ে দিবে, যেখানে তার শশুর বাবা, শাশুড়ি মা আছে। ভাবতে ভাবতে ঠিক করলো, খাইয়েই দিবে।
তারা আছে তো কি হয়েছে, আমি আমার ব‌উকে না খাইয়ে দিব, তাতে অন্যের কি?
তাই নিজেকে স্থির করে, সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে, পদ্মা যখন নিজের খাবার খাওয়ার জন্য হা করে এই সুযোগে জায়ান নরম হাড় টা পদ্ম কে খাইয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় পদ্ম। সবার প্রথমে বাবার দিকে নজর দেয় পদ্মা, জামাই এর এহেন কান্ডে মুচকি হাসেন তিনি। সাথে বাকিরা তো আছেই, তারপর দ্রুত খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যায় ইলোরা আর তৈমুর রহমান। এই সুযোগে অনিতা বললো,
–“আমরা চলে গেলে, তোর মনে হয় আরও সুবিধা হয় তাইনা ভাইয়া?

জায়ান ইনোসেন্ট ভাব করে বললো,
–“কিসের ভালোর কথা বলছিস তুই? আর খাওয়ার সময় বেশি কথা বলতে নেই জানিস না, শুধু কট কট কট কট। এতো কট কট কিভাবে করিস তুই মুরগির মত!

সুমন হেসে বললো,
–“সালাবাবু চালিয়ে যাও, আমিও বিয়ের প্রথম প্রথম তোমার আপুর পা মনে করে আমার বাবার পায়ে নিজের পা ছুঁয়ে দিয়েছিলাম।

নিজের দুলাভাইয়ের মুখে এরকম কথা শুনে বরকে যায় জায়ান! দ্রুত নিজের পা গুটিয়ে নেয়।আর এদিকে পদ্ম সহ জামিয়া,অর্পিতা,জেসি,সুমাইয়া,শিমু,কলি,রেশমা সব গুলোর হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেছে। তখন জেসি বললো,
–“তারমানে জায়ান সেইম কাজ আপনার সাথে করেছে!রাইট ভাইয়া?

সাথে সাথে আবারো তুমুল ব্যাগে হাসির রোল পড়ে গেল।

এই মুহূর্তে পদ্ম’র ইচ্ছে করছে জায়ানের গলা টিপে ধরতে। কি লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হলো তাকে, শুধুমাত্র এই জায়ানের বাচ্চার জন্য। কটমট চোখে তাকায় পদ্ম, তখন কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে বসে থাকে জায়ান।
তখন পদ্ম বলে,
–“তারাতাড়ি খাবার শেষ করেন ঔষধ খেতে হবে।

জায়ান অবুঝের মতো মাথা দুলিয়ে সম্মতি দেয়।
_______
নাস্তা সেরে, গাড়ি আসলে জেসি চলে যায় ঢাকায়। আর সকালের নাস্তা সেরে জায়ান আর সুমন মিলে বাজারে যায়, বিয়ের পর শশুর বাড়িতে জামাই অনেক বাজার করতে হয়,গ্রামে একটি নিয়ম আছে তাই,ইয়া বড় একটা রুই মাছ, টেংরা মাছ (পদ্ম’র প্রিয় সে জন্য আনা),সব ধরনের সবজি, পাঁচ কেজি করে, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, পাঁচ কেজি গরুর গোশত, পাঁচটা দেশি মুরগি, পাঁচটা ফার্মের মুরগী,দুটো ক্ষীরের হাঁড়ি, দুটো দ‌ইয়ের হাঁড়ি,ছানা মিষ্টি,কালো মিষ্টি (পদ্ম’র খুব পছন্দ যার জন্য আনা)। ইত্যাদি ইত্যাদি।
পাশের বাড়ির কাকি,জেঠিমা, দাদু এসেছেন নতুন জামাই কি কি বাজার করেছে দেখতে।জায়ানের বাজারে পুরো উঠুন জুরে গেছে, পাড়া-প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
তখন ইলোরা বললো,
–“জামাইয়ের আনা মাছ কাটতে আইয়েন (আসেন) ভাবিরা।

দুজন খুশি মনে ইলোরার সাথে মাছ কাটতে বসে। পদ্ম আগে মিষ্টির প্যাকেট খুলে, একটা মিষ্টি নিয়ে মুখে পুরে দেয়। তারপর মিষ্টির ঝোল লেগে থাকা আঙুল গুলো মুখে দিয়ে, ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে জায়ান। এতে করে খানিক লজ্জা পায় পদ্ম।
জায়ান এগিয়ে এসে বললো,
–“আপনি না এখনো একটা বাচ্চা! অথচ কিছুদিন পর বাচ্চার মা হবেন!কবে বড় হবেন বলেন তো?

জায়ানের প্রতিটা কথায় হতভম্ব হয় পদ্ম।এর উত্তর দেওয়ার মতো একটি ও পায় না সে।
জায়ান আবার বলে,
–“একা একা খাচ্ছেন আমাকে দিবেন না? আপনি এতো নিষ্ঠুর!

পদ্ম জিবে কামড় দেয়, সত্যি তার ভুল হয়েছে জায়ান কে দেওয়া উচিৎ ছিল।তাই তাড়াতাড়ি একটা সুন্দর দেখে প্রিজ এনে বললো,
–“এক্ষুনি দিচ্ছি।
–“উহু এভাবে নয়।
–“তাহলে?
–“আপনার হাতে খাইয়ে দিতে হবে,যেভাবে করে আপনি খেয়েছেন।
–“পারতাম না।
–“তাহলে আমিও খাবো না।

পদ্ম আর দ্বিরুক্তি না করে, একটা মিষ্টি নিয়ে জায়ানের মুখের সামনে ধরল।জায়ান আরো সামনে এগিয়ে এসে নিজের বাম হাত পদ্ম’র কোমরে রেখে পদ্ম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। পদ্ম মিনমিনে গলায় বললো,
–“ককি করছেন কেউ চলে আসবে।

জায়ান পদ্মর কথা না শুনে,ডান হাত দিয়ে পদ্মর মিষ্টি নেওয়া হাত ধরে খেয়ে নেয় মিষ্টি টা তারপর আঙুল গুলো ও চেটে খেতে লাগলো। এতে করে শিহরণ খেলে যায় পদ্ম’র শরীরে।
জায়ান কে অনুরোধ করে বলে,
–“প্লিজ ছারুন কেউ চলে আসবে।

জায়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
–“আসলে আসুক, আমার ব‌উয়ের সাথে আমি রোমাঞ্চ করছি এতে অন্যের কি?

–“তাই বলে পাবলিক প্লেসে!তোর কি কোনো কান্ড জ্ঞান নেই ভাইয়া?

হঠাৎ অনিতার এহেন কথায়, জায়ান পদ্ম দুজন দুদিকে ছিটকে দারায়। অনিতা আর না দাঁড়িয়ে দৌড়ে পালায়, এখানে থাকলেই বিপদ, জায়ান ধরে ঠিক কান মলে দিবে। অনিতা যেতেই, পদ্ম রেগে মেগে আগুন হয়ে বললো,
–“বলেছিলাম আমি আপনাকে, ফাজিল ছেলে কোথাকার। সবসময় আমাকে এভাবে লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলেন আপনি।

এতে করে বিস্তর হাসে জায়ান, নিজের মাথা চুলকায়। তারপর গান গাইতে গাইতে চলে যায়।যা শুনে পদ্মর রাগ দ্বিগুণ হয়।
_____

ইলোরা মাছ কেটে পতিবেশিদের কিছু দেয়,আর বাকি গুলো রান্না করে। তাছাড়া মিষ্টি দই এগুলো ও দিয়ে পাঠায়, সুমাইয়া শিমু আর কলিকে।
দুপুরের ভোজন বেশ জমে, মাছের বড় মাথা জায়ান আর সুমন কে দেওয়া হয়।জায়ান জানে বড় মাছের মাথা পদ্ম’র খুব পছন্দ তাই নিজে না খেয়ে পদ্ম কে দিয়ে দেয়। পদ্ম ফিরিয়ে দিতে গেলে, ধমকে ওঠে জায়ান। এতে করে চুপসে যায় পদ্ম, দ্বিরুক্তি করার অবকাশ থাকে না।

তারপর বিকেলের দিকে পদ্ম আর জায়ান বাদে সবাই চলে যায়। বোরিং সময় কাটাতে রেশমা ক্রামবোর্ড নিয়ে আসে খেলার জন্য, অনেক দিন হয়েছে পদ্ম ক্রাম খেলে না সেই স্কুলে থাকাকালীন খেলা হতো।তাই পদ্ম বললো,
–“আমিও খেলবো।

জায়ান নিজের ক্রেডিট নিয়ে বললো,
–“আমার সাথে খেললে কখনোই জিততে পারবেন না।
–“ইশশ্ বললেই হলো। দেখা যাক কে জিতে।
–“ওকে ডান।

খেলা শুরু হলো, রেশমা আর পদ্ম একদলে। জায়ান আর সুমাইয়া একদলে,আর বাকিরা দর্শক হিসেবে বসেছে।
জায়ানদের সাদা গুটি আর পদ্ম’দের কালো গুটি।প্রথম দিকে রেশমা পদ্ম ভালো খেললেও পরে আর পারছে না তেমন, জায়ান সব গুটি এক এক করে পকেটে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এদিকে পদ্ম’র আঙুলের নখের কাছে রক্ত জমে গেছে!যা সব সময় এমন হয়,স্ট্রিকে টুকা দিলে এরকম টা হয়। এদিকে হাত ব্যাথা করছে অন্য দিকে পদ্ম বুঝে গেছে জায়ানের সাথে জয়ি হ‌ওয়া সম্ভব নয়, তাদের কালো গুটি এখনো পাঁচটা বিদ্যমান আর এদিকে জায়ানদের গুটি মাত্র দুটো আছে। আর সুমাইয়াও টা এখন যেন তার খেলার শক্তি বেড়ে গেছে, জায়ান যেভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে সেভাবেই একের পর এক গুটি পকেটে পুরে যাচ্ছে। পদ্ম মনে মনে ভাবছে,এ আমি হতে দিতে পারি না কিছুতেই না। তারপর বোর্ডে থাকা সবকটা গুটি আউলা ঝাউলা করে দেয়। সুমাইয়া রেগে গিয়ে বললো,
–“আপু তুমি কি করলে,আর একটু হলেই আমরা জিতে যেতাম।

জায়ান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বললো,
–“আমি কোথাও পুড়া পুড়া গন্ধ পাচ্ছি,বুঝলে সুমাইয়া। আমার যে জয়ি হতাম এটা সবাই জানে তাই ভিতরে ভিতরে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য আমরা এখনো জিতেছি,ওরা হেরেছে।তাই ওদের কে বলবো।হেরো হেরো হেরো।

পদ্ম’র গা পিত্তি ঝলে যায় রাগে।তাই ওখান থেকে চলে আসে নিজের রুমে। পিছন পিছন জায়ান ও আসে। পদ্ম কে রাগাতে না পারলে যেন পেটের ভাত হজম হয় না জায়ানের। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে পদ্ম, জায়ান পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
–“হেরো পিচ্ছি ব‌উ আমার, আজকে আপনার আর খাবার খেতে হবে না বুঝলেন! এমনিতেই তো ঠকে গিয়ে পেট ভরে গেছে হা হা হা,,,,

পদ্ম নিজেকে সামলাতে পারলো না,জায়ানের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। জায়ান বুঝতে পারছে না পদ্ম ঠিক কি করতে চলেছে।এর মধ্যে পদ্ম এগিয়ে গিয়ে জায়ানের থুতনিতে কামড় দিয়ে দেয়!জায়ানের চক্ষু বিস্ফোরিত হয়ে যায়, সাথে খানিক আউচ শব্দ করে। এতে প্রসন্ন হাসে পদ্ম, জায়ান কে ছেড়ে দিয়ে আগের ন্যায় দারায়।জায়ানের মাথায় দুষ্টুমি খেলে যায়, নতুন ভাবে পদ্ম কে রাগাতে বলে,
–“আমার আগেই আপনি আমাকে লাভ বাইট দিয়ে দিলেন?হাউ সুইট!

পদ্ম কোমরে হাত রেখে বললো,
–“লাভ বাইট মানে কি?
–“এই যে আপনি আমাকে যেটা দিলেন।

ছোট ছোট চোখ দুটো আরো ছোট করে তাকায় পদ্ম। মনে মনে আওড়ায় কি বলে এই লোক এতো জোরে কামড়ে দিলাম অথচ কি বাইট টাইট বলছে,,,,

#চলবে,, ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here