#জুনিয়র_পদ্ম
পর্ব-০২
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
নয়নতারা,টগর,পর্তুলিগ,গন্ধরাজ ফুল গাছ বারান্দায় টবে লাগানো।এর মধ্যে নয়নতারা আর গন্ধরাজ ফুল ফুটে আছে। নয়নতারা ফুলের মধ্যে একটা প্রজাপতি বসে আছে,পদ্মর ইচ্ছে করছে এই সুন্দর দৃশ্য টা ক্যামেরা বন্দি করে রাখতে কিন্তু কোথাও একটা বাধা কাজ করছে। মনের শান্তি টাই আসল,মনে অশান্তি সৃষ্টি হলে কিছুই ভালো লাগে না,তাই প্রজাপতির থেকে চোখ সরিয়ে বেখেয়ালি ভাবে দূরের রাস্তায় গাড়ি চলাচল দেখছে পদ্ম। দু-একটি রিকশা চলাচল করছে আর কয়েকজন মহিলা এবং পুরুষদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে, হয়তো সকালের এক্সারসাইজ করার জন্য বের হয়েছে। আবার কেউ দূরের পথ পারি দিতে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছে।
পিছনে জায়ান এসে দাঁড়ায়,পদ্ম বুঝতে পারে কিন্তু কোন ভাবান্তর প্রকাশ করে না।জায়ান ক্ষীণ স্বরে বলে,
–“আজকের সকালটা স্বপ্ন ছিল একদিন আজকে সেটা পূরণ হলো”আলহামদুলিল্লাহ”। আপনি আমার পাশে থাকলে অন্য সব কিছু যেন তুচ্ছ মনে হয়!
–“কেন করলেন এরকম? আপনি খুব ভালো করে জানেন আমার পরিবার সম্পর্কে। তবুও এভাবে ঠকালেন ?
জায়ান অনুযোগের স্বরে বললো,
–“ইনশা আল্লাহ আমি আপনার পরিবারের যোগ্য জামাই হবো একদিন। শুধু আপনি আমাকে একটু সাপোর্ট দিলেই হবে।
–“আপনি খুব ভালো করে জানেন কিছুদিন পর পর আমার বিয়ের ঘর আসে! তখন আমি কি জবাব দিব?
–“কয়েকটা বছর ম্যানেজ করে নিতে পারবেন না? আপনি পড়াশোনায় ভালো করে মনোযোগ নিবেশ করেন তাহলে আর আপনাকে বিয়ের জন্য জোর করবে না।
পদ্ম’র খুব রাগ ওঠে, কারণ জায়ান খুব ভালো করেই জানে পদ্ম পড়াশোনা করতে চায় না! গতবছর করোনা পরিস্থিতির কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটো পাশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রী। সেই বছর পদ্ম ও অটোপাশ করে, এরপর ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে থাকবে বলে ঠিক করে পদ্ম কিন্তু তেমন ভাবে পড়াশোনা করার ইচ্ছা নেই! ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনা সবচেয়ে বড় শত্রু পদ্ম’র। নিজের বাবার ভয়ে এই পর্যন্ত পড়াশোনা করে এসেছে। এখন বিভিন্ন স্থান থেকে বিয়ের ঘর আসছে,আর বিয়েই একমাত্র পদ্ম’র স্বপ্ন পূরণের পথ! তাই বিয়ে করে নিবে বলে ঠিক করে। কিন্তু যেখান থেকেই বিয়ের ঘর আসে না কেন, পাত্র’র থেকে পাত্র’র পরিবার কে পছন্দ হয় পদ্ম’র! একজন পাত্র কেও পছন্দ হয় না।
–“কি হলো পারবেন না আমার জন্য পড়াশোনায় মনোযোগ নিবেশ করতে?
জায়ানের কথায় ভাবনার সুতা কাটে পদ্ম’র। রাস্তায় চোখ নিবদ্ধ করেই বললো,
–“আমার সবচেয়ে কঠিন কাজ টাই আপনি করতে বলছেন!যেটা আমি কখনোই করতে পারবো না।
থমথমে মুখে বারান্দার গ্রিলে হাত রাখে জায়ান।এ বাড়ির দক্ষিণ কোনায় একটা নিম গাছ আছে,যার একটা ছোট ডালে বসে আছে দুটো জোড়া বুলবুল পাখি। পাখি দুটোর মধ্যে গভীর মনোনিবেশ করে জায়ান।জায়ানের মনে হচ্ছে পাখি দুটো খুব সুখী দাম্পত্য, ভালো জীবন কাটাচ্ছে!একে অপরের সাথে খুব নিভির আলাপে মগ্ন হয়ে আছে।এরা দিনের পরিকল্পনা করে তাই এরা সুখি, এদের মতো আমরা মানুষরা যদি সারা জীবনের পরিকল্পনা না করে, দিনের পরিকল্পনা করতাম তাহলে আমরা ও হয়তো সুখি হতে পারতাম।
বুলবুল পাখি দুটোর মধ্যে নেই কোন তৃতীয়জন,সে আর পদ্ম যদি পাখি হতো তাহলে তো এদের মতো সুখি জীবন কাটাতে পারতো। ইচ্ছে মত এই নীলাভ আকাশে উড়ে বেড়াতো।কতোই না সুন্দর হতো।
পাশে কান্নার শব্দ শুনে ধ্যান ভাঙ্গে জায়ানের! পদ্ম কাঁদছে, জায়ান ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পদ্ম কে ঘুরে দার করায়। চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–“প্লিজ এভাবে কাঁদবেন না, আপনি কাঁদলে আমার কষ্ট হয়।
পদ্ম’র কান্না যেন হুরমুর করে বেরেই চলে।অধর দুটো কামড়ে ধরে,তাও নিজেকে আটকাতে পারে না পদ্ম।কান্না মিশ্রিত কন্ঠেই বলে,
–“কেন করলেন জায়ান? আমি কিভাবে মুখ দেখাবো আব্বু কে?
জায়ান কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না। আসলে কোন কোন সময় আমরা জীবন কে যতটা সহজ মনে করি, জীবন টা কিন্তু ততোটা ও সহজ নয়, আবার জটিল ও নয়! এই দুইয়ের মাঝামাঝি অবস্থান।
_______
জান্নাত অনেক বুঝানোর পর পদ্ম মুখে খাবার নেয়, কিন্তু চোখের পানি মুছতে মুছতে খাচ্ছে এদিকে অর্পিতা টিস্যু পেপার এগিয়ে দিচ্ছে! এভাবেই কেঁদে কেটে খাওয়া শেষ করে পদ্ম। খুব ভোরেই চলে যেতে চায় পদ্ম কিন্তু এরশাদ আর জান্নাত যেতে দেয়নি। আজকে বসন্তের প্রথম দিন তাই সবার সাথে আনন্দ করলে পদ্মর মন ভালো হবে বলে কেউ চায়নি পদ্ম চলে যাক,তা ছাড়া জায়ানের বোন অর্পিতা,অনিতা আর কাজিন মুশফিক আর ইরা মিলে জায়ানের বিয়ে উপলক্ষে ট্রিট হিসেবে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্লান করেছে।বড় রা বলে,শুধু তোমরা একা বেড়াতে যাবে তা তো হবে না আমরাও ট্রিট যাই জায়ানের থেকে! কারণ জায়ানের বিয়ের সব ক্রেডিট কিন্তু আমাদের বড়দের।জায়ান ও খুশি মনে সম্মতি দিয়েছে, এই উসিলায় পদ্ম’র সাথে ও কিছু মূহূর্ত কাটাতে পারবে।
অবশ্য এই পরিকল্পনা এক সপ্তাহ আগে করা হয়েছে! বিয়ে এবং বসন্তের শপিং তাই আগেই করা আছে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই তৈরি হয়ে নেয় বসন্তের পোশাকে।জায়ানের আম্মু,বড় আম্মু এবং বোনেরা শাড়ি পরেছে হলুদের সাথে লাল সবুজ রঙের পার আর পদ্ম’র জন্য জায়ান নিজে পছন্দ করে কাঁচা হলুদ রঙের গাউন এনেছে। পদ্ম’র গাউন খুব পছন্দের যদিও শাড়িও পছন্দ তবে বাহিরে শাড়ি কমফোর্টেবল ফিল করে না তাই। সাথে ফুলের গহনা চুরি সব কিছু মিলিয়ে বসন্তের ছোঁয়া।
পদ্ম কে তৈরি করতে গিয়ে অনিতা আর ইরার ঘাম ঝরার অবস্থা! পদ্ম কিছুতেই বোরকা ছাড়া বাহিরে বের হবে না বলে জেদ ধরে বসে আছে।ইরা বোঝাচ্ছে যে তারা সবাই তো সাথে থাকবে কিছু হবে না। পদ্ম বললো,
–“প্লিজ আমাকে জোর করো না আমি বোরকা ছাড়া বাহিরে বের হইনা কখনো।
অনিতা আর ইরা ব্যার্থ হয়ে, রুমের বাহিরে আসে।অনিতা বিরক্ত মাখা মুখশ্রী করে জান্নাতের কাছে এসে বললো,
–“আম্মু দেখনা ভাবীমনি কিছুতেই তৈরি হচ্ছে না। আমরা কখন বের হবো বলো তো? তুমি একটু বুঝাও না।
–“দারা আমি দেখছি। শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে নেই।
পদ্ম ফোন হাতে নিয়ে দেখে,মামি কল করেছিল গতকাল।কি জবাব দিবে সে? মামির ফোনে ডায়াল করবে তখন খুব পরিচিত কন্ঠস্বর শুনতে পায় পদ্ম! ফোন রেখে কাঁপা কাঁপা পায়ে হেঁটে যায় রুমের বাহিরে।যত এগিয়ে যাচ্ছে ততই যেন শরীর আসার হয়ে আসছে। কাছাকাছি গিয়ে দেখে,অসমি জান্নাতের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। পদ্ম কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
–“আমি তুমি কি আব্বু আম্মু কে সব বলে দিয়েছো?মামি বিশ্বাস করো আমি এমনটা করতে চাইনি। আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি,ইনফেক্ট আমি এসব কিছুই জানতাম না।
–“আরে শ্বাশুড়ি কি বলেন আমি কি বলবো আপনার আব্বু আম্মু কে?
পদ্ম’র মামি পদ্ম কে মজা করে মাঝে মাঝে শ্বাশুড়ি বলে ডাকে। পদ্ম’র মামি কিছুই বুঝতে পারলো না পদ্ম কি এমন করেছে যার জন্য এভাবে বলছে। তাই আবার বললো,
–“পদ্ম তুমি কিসের কথা বলছো বলোতো?
পদ্ম কে বলতে না দিয়ে জান্নাত বললো,
–“আপা পদ্ম আপনাকে না বলে আমাদের বাসায় যে এসেছে, সেই কথাই বলছে।তাই না পদ্ম?
পদ্ম বুঝতে পারলো, তার মামি বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানেনা। তাই নিজেকে ধাতস্থ করে মাথা ঝাঁকায়।অসমি বলে,
–“অহ এই কথা। ঠিক আছে আর কান্না করতে হবে না। তবে পদ্ম আমাকে এভাবে না বলে আসা উচিৎ হয়নি তোমার। কতোটা দুশ্চিন্তা করেছি জানো? আল্লাহ না করুক তোমার কিছু হলে তোমার আব্বু আম্মু কে কি জবাব দিব আমি?তারা তো তখন সব দোষ আমাকেই দিবেন।
–“এরকম ভুল আর হবে না মামি, তুমি আব্বু কে কিছু বলো না।
অসমি পদ্ম’র বাবা কে কথা টা না জানালেও পদ্ম’র মামাকে ঠিক জানাবে সাথে আরো তেল মসলা মিশিয়ে বলবে!সব সময় এরকম টাই করে অসমি। পাঁচ কে দশ করে ইনিয়ে বিনিয়ে বিদেশে স্বামীর কান ভাড়ি করে।যার দরুন পদ্ম কে ভুল বুঝে তার মামা!
–“আপু তুমি যে এখনো অবধি তৈরি হওনি, কখন যাবো আমরা?
পদ্ম’র মামাতো বোন ফারিহা বললো পদ্ম কে। পদ্ম এতোক্ষণে খেয়াল করে, তার মামি মামাতো ভাই বোন ও বসন্তের পোশাকে নিজেদের রাঙিয়ে তুলেছে। তখন অসমি ও বললো,
–“সেকি পদ্ম!আমরা বাসা থেকে তৈরি হয়ে এসে গেছি অথচ তুমি এখনো তৈরি হওনি?আর তোমার বান্ধবী কোথায় ওর কথা তো এতদিন বললে না!
পদ্ম কিছুতেই বুঝতে পারছে না তার মামি কোন বান্ধবীর কথা বলছে! তখন ইরা এসে বললো,
–“আসসালামু আলাইকুম।
মামি কেমন আছেন? আমি পদ্ম’র বান্ধবী ইরা।
ছোট ছোট চোখ গুলো কে খানিকটা বড় করে তাকায় পদ্ম!এসব কি বলছে এই মেয়ে?
#চলবে,, ইনশা আল্লাহ।