###জীবন যখন যেমন (৮ম পর্ব)
###লাকি রশীদ

পরদিন মাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনতে আনতে দুপুর হয়ে যায়। দোলার কথা ঠিকই আছে। মায়ের জমানো টাকা থেকে ভালো ভাবেই বিল দেয়া গেছে। বেশ কিছু টাকা হাতে আছে এখনো। এতো কষ্টে থেকেও মায়ের সঞ্চয়ের এই অভ্যাসটা, টাকা খোঁজার গ্লানি থেকে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। অভি আসার সময় বারবার বলেছে, পারিবারিক জটিলতার কোনো ঘটনা যেন মায়ের সামনে আলাপ না করা হয়। মাকে ঘুম পাড়িয়ে খাবার বাইরে থেকে আনতে যাবো, দেখি ছোট ফুপু বেশ বড় টিফিন ক্যারিয়ার এ খাবার নিয়ে উপস্থিত। দোলা বলছে, তুমি আর কষ্ট করে এসব আনতে গেলে কেন? উনি বললেন হাসপাতালে যেতে পারিনি রে,রাগ করিস না মা। বাসায় বড় ঝামেলা, তোদের আমি সব বলবো আরেকদিন।। তুই আমার উপর রাগ করে আবার আলুভর্তা খাসনে সোনা।

দোলার ক্যাটক্যাট করে কথা বলার অভ্যাসের জন্য, অনেকেই ওকে ভয় পায়। ঈদের সময় যে অভিমান করে ও এক টুকরো গোশতও না খেয়ে আলুভর্তা খেয়েছে…………. এটা অভি সবাইকে বলেছে। টিফিন ক্যারিয়ার থাকুক,পরে এসে ড্রাইভার নিয়ে যাবে না হয়। আমি বলি, তুমি কি একা দোলাকেই এতো ভয় পাও না কি? আমাদের তো কিছু বললে না। ফুপু এবার আদর করে বলছেন, তোদের শরীরে এতো রাগ নেই আমি জানি। ভাবী ঘুমে,পরে এসে কথা বলে যাব। আমি আবার আসবো রে, আমার জন্য তোরা মনে করে একটু দোয়া করিস সোনারা।

উনি চলে গেলে দোলা বলে, টাকাও সবাইকে সুখ দিতে পারেনা। এতো বিত্ত,বেসাত…….. তবুও ভাই
ফোনে সম্পত্তি নিয়ে অহরহ মারামারি চলছেই।আর ছোট ফুপু ছেলেমেয়েদের ঝগড়ার সমাধান খুঁজতে খুঁজতে ই শেষ। অঢেল সম্পত্তি রেখে গেছেন আমার ছোট ফুপা। সেটাই মনে হয় ফুপুর
অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, পৃথিবীতে কেউই মনে হয় শান্তিতে নেই। আর্থিক, মানসিক, শারীরিক……… একটা না
একটা ঝামেলা তে জড়িয়ে আছে সব। মা বলে,
ভালো তো এজন্যই হয়তো আমরা আল্লাহ কে ভুলিনি। নয়তো নাফরমান আমরা সুখে থেকে সৃষ্টিকর্তার কাছে নত হবার সময়ও হয়তো পেতাম না। আমরা মানুষ, এমনিতেই অনেক অকৃতজ্ঞ রে
বাবা।

বিশাল বড় এক টিফিন ক্যারিয়ার এ ভালো ভালো চার পদের তরকারি। মাঝারি ৩ বাটির আরেকটা তে ভাত ও পায়েস। মেঘলা দোলাকে বলছে,সব নাড়াচাড়া করে নষ্ট করো না। আগে আইসক্রিমের
আর মিষ্টির বাটিতে একেক বেলার টা নিয়ে নিয়ে রাখলে অনেক দিন যাবে আমাদের। ফ্রিজের ডিপ
পোরশনে রাখলে টেষ্ট নষ্ট হবে না। দোলা বলছে,
আমি বাটি আর চামচ এনে দিচ্ছি। আমি বুঝবো না, তুই সুন্দর করে তুলে নে। আমি চেয়ে চেয়ে ভাবছি,মেঘলা টা আসলেই আমাদের মায়ের মতো হয়েছে। মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করতে করতে সবকিছু মায়ের মতো এতো নিপুণ ভাবে করতে শিখেছে……. ভালো লাগে দেখতে। আল্লাহ পরিবারের একেক জনকে একেক রকম বানিয়ে মনে হয় ব্যালেন্স করে দেন। সবকিছু তুলে রাখার
পর, টেবিলের উপর ফ্যান ছেড়ে ঠান্ডা হতে দিলো। দোলা চট করে মায়ের জাউভাত বসালো। মা উঠলে খাইয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে। তারপর, আমরা ভাইবোন খেতে বসলাম।

এতো বড় বড় পিস রুই মাছের একা খাওয়া সম্ভব না। আমি আর দোলা খেলাম। মেঘলা মজা করে খাচ্ছে আর বলছে, এটা নিয়ে দেখো। খুব মজা হয়েছে,দেশী মোরগের ভুনা। আমরা সবাই ফুডি, বাবার কাছ থেকেই পাওয়া হয়তো। তাছাড়া,এক ধরনের রান্নার পর হঠাৎ ভালো আইটেম দিয়ে খেলে অমৃত মনে হয়। দোলা এবার বলছে, এদের চালগুলো ছোট ছোট বলে খেতে আরো ভালো লাগছে। মেঘলা এবার বলছে, আমি চাকরি করলে ভেবে রেখেছি, শুধু কাটারিভোগ চাল খাবো। আরেকটা আছে না, নাজিরশাইল না কি এটা খাবো। আমাদের দোলা রাণী বলছেন, এতো এতো টাকা খাওয়ার পেছনে খরচ করার কোনো মানে নেই। প্রতিদিন চিকন চাল খাবার দরকার কি? মোটা চাল তো আরো ভালো। সামান্য খেলেই
পেট ভরে যায়।

খাওয়ার শেষ পর্যায়ে দোলা বললো, ছোটভাই যাস না। কথা আছে তোর সাথে। ৫ মিনিট লাগবে, তুই ন্যাকড়া দিয়ে টেবিলটা পরিস্কার কর। আমরা বাসনগুলো ধুয়ে রান্নাঘর গুছিয়ে আসছি। এসে বললো, এখন কিভাবে কি হবে কিছু ভেবেছিস তুই? আমি বলি, কি ভাববো বলতো। বলছে, মা এখন রান্নাঘরে যাওয়া উচিত হবে না। চুলার গরম
লেগে আবার কি হয় না হয়। আমি ভাবছি রাস্তার ও পাশের বস্তিতে মালা বু থাকে। ঔ যে আগে
আমাদের বাসায় কাজ করতো। বিশ্বাসী আছে,
ওকে আপাতত এক মাসের জন্য বলে দেখি। বেতন আলাপ করে ঠিক করবো। হিসাব করে দেখলাম, ঠিক ৬ দিন পর তোর পরীক্ষা শুরু হবে।
আর ২ সপ্তাহ পর, আমাদের এডমিশন টেষ্ট।

এগুলো আমাদের জীবনের মোড় বদলে দেবার জিনিস। এখন যদি আমরা কি রান্না করবো, কি বাজার হবে……. এসব নিয়ে চিন্তা করতে থাকি তবে সমস্যা আছে। আমি জমানো টাকা থেকেই
আপাতত এক মাসের খাওয়া,খরচ, বাজার সব আনাতে চাই। যেহেতু টাকাগুলো সবার রোজগার এর, তাই তোদের জিজ্ঞেস করছি। ঘরে বাজার থাকলে অনেক ঝামেলা মুক্ত থাকা যায়। বুয়া সময়মতো শুধু রেঁধে দিবে। এখন তোরা বল।

আমি ও মেঘলা দুইজন ই মাথা নাড়লাম ও বললাম, অনেক ভালো বুদ্ধি। তবে বলা তো যায় না, আল্লাহ না করুক মায়ের জন্য কিছু টাকা রেখে দিস্। আর সন্ধ্যার পর বাজারের লিষ্ট দিস। এবার আমার বুদ্ধিমতী বোন বলছে,শোন ছোট
ভাই বাজার আনার পর পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত
তুই খাওয়া,ওয়াশরুমে যাওয়া আর ঘুম ছাড়া কোনো কিছু করবি না। সময় নষ্ট করবি না মোটেই শুধু ইচ্ছা হলেই মাকে দেখতে পারবি। মায়ের জন্য টাকা রাখা আছে,সেসব নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। ভাইয়ার রুমে আজ থেকে তোর সবকিছু এনে রেখে দে। আমি বলি, টিউশনি দুটোতে আজ বলে আসবো। মাঝে মাঝে যেতে হবে তো। গ্যাপ দেখে দেখে না হয় যাবো। এবার সে হুকুম দিচ্ছে, এখন আর কোনো শব্দ হবে না বাসায়। তুই গিয়ে ভালো করে একটা ঘুম দে। যা
তাড়াতাড়ি, তাহলে রাতে অনেকক্ষণ পড়তে পারবি। আমি কোনো কথা না বলে চলে এলাম।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি, ভাইবোনও আল্লাহ তাআলার দেয়া কতো বড় নেয়ামত। দোলা যেভাবে ভেবেছে, বাইরের আর কেউ কি এমন করে ভাবতে পারতো?এই রুমের ছোট জানালা দিয়ে ছোট এক টুকরো আকাশ দেখা যায়। আমি এই আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছি,ডাঃ খালেদা ম্যাডামের মতে, দিন আপনি আমাদের পাল্টাবেন ই ইনশাআল্লাহ। উনার ধারনা কবুল করে নিন মাবুদ।

চোখ বুজলেই শাওন কে দেখি, তুমি শুধু একটু সাহস করে “ওকে” বলো। আর কোনো কিচ্ছু লাগবে না। অসংখ্য বার কানের কাছে শুধু
গুঞ্জরিত হচ্ছে,কাওয়ার্ভ আস্ত একটা কাওয়ার্ড তুমি। একটা মেয়েকে বারবার বকে ফিরিয়ে দিতে আমারও খারাপ লাগে। কিন্তু সেই অনুভূতি কে জেগে উঠতে দেই না আমি। প্রতি পলে পলে হত্যা
করি। শাওন আজ অন্তত ঠিক কথা বলেছে,
আমার মনে হচ্ছে তুমি আস্তে আস্তে আমাকে খুব
ভালবেসে ফেলছো। চোখের সামনে ভাসছে, রাগ
ক্ষোভ নিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা সেই দুটি চোখ।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। উঠে দেখি আছরের আখেরি ওয়াক্ত হয়ে গেছে। ঝটপট নামাজ পড়ে মায়ের রুমে গিয়ে দেখি রাকিব গল্প করে করে চামচে করে মাকে জাউভাত খাওয়াচ্ছে। আবার কি বলে দুজনে হাসছেও। আমাকে দেখেই বললো, খালাম্মা কে
একদম ফিট লাগছে না রে? কিরকম বাচ্চা একটা
মেয়ে মনে হচ্ছে না? আমি বলি,হ্যা তোর চেয়েও কম বয়সী মনে হচ্ছে। মা বলছে, হয়েছে মিথ্যে কথা বলে দুজনের আর গোনাহ্ বাড়িয়ে কাজ নেই। রাকিব এবার বলছে,সাদি তাড়াতাড়ি তোর বাক্স প্যাটরা রেডি কর ভাই। অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি আটকে রেখেছি। আমি বললাম, কোথায় যাবো? মা বলছে,এমনিতেই এই ক’দিনে বাবা তোর পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। রাকিব এসেছে তোকে নিতে। ওখানে চলে যা, পরীক্ষা দিয়ে না হয় চলে এলি।

আমি রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলি, আমি যাচ্ছি না রে। মাকে রেখে গিয়ে আমি একদম শান্তি পাব
না। মা বলছে, আমি এখন পুরোপুরি ঠিক আছি।
তুই নিশ্চিন্তে যা তো। আমি মৃদু স্বরে বলি, তুমি ঠিক আছো সেটা তো আমিও জানি। সমস্যা হচ্ছে আমার, আমি ওখানে গিয়ে চিন্তামুক্ত হয়ে পড়তে
পারবো না। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু যাদের সাথে আমি চলি তাদের একটা বড় গুন হলো, বারবার একটা কথা বলে বলে বিরক্ত করে না। রাকিব বললো,
হ্যা খালাম্মা এটাও ঠিক কথা। মনে চিন্তা থাকলে ভালোর চেয়ে বরং খারাপ হবে। তারচেয়ে,ওর ইচ্ছে মতোই যাবে না হয়। তাহলে, আমি এবার উঠি। আমি বলি,আরে না চা খেয়ে যাবি।

মেঘলা দেখি চা বসিয়েছে,আর চিড়াভাজা দিচ্ছে। দোলা একটা দু টুকরো করা নারকেল থেকে ছূরি দিয়ে কেটে কেটে টুকরো বের করছে। আমি বলি,এসব করছিস কেন? বললো, তোর সাথে দিয়ে দিচ্ছি।চিড়াভাজার সাথে নারকেল তো তোর ভীষণ প্রিয়। আমি বলি,আশ্চর্য্য আমি কোথাও যাচ্ছি না। এবার দোলা রাণী তার মোটা মোটা চোখ মেলে বলছেন,কেন যাবি না? আমি বলি, এমনি যাবো না। আমার বাসায় থাকতে আমার তো কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রেগে গেছে,মা ভালো আছেন। আমরা দেখে রাখবো। তুই ওখানে থাকলে বিদ্যুৎ চলে গেলেও পড়তে পারবি,কারণ আইপিএস থাকবে। আমি বলি, আমি বিদ্যুত গেলে মোমবাতি দিয়েও পড়তে অভ্যস্ত আছি। বেশি বুঝতে যাস না।

মেঘলা ট্রেতে করে আমের ছোট ছোট টুকরো করে দুই বাটিতে ও চিড়া ভাজা আর চা দুই কাপ নিয়ে এসেছে। ও খুশিতে বললো তাহলে ছোট ভাই যাচ্ছে না? ভালো হয়েছে, ভীষণ ভয় হচ্ছিল মায়ের শরীর খারাপ হলে আমরা একা কি করব? দোলা চেঁচিয়ে উঠলো,হ্যা বুদ্ধি নিয়ে তো তোমরাই ভাইবোন জন্মেছো শুধু। এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কি করে? রাগ উঠলে ও সবাই কে তুমি করে বলে। গটগট করে চলে যেতেই, মেঘলা বলছে আমি কি বললাম? ও রেগে গেল কেন? আমি বলি,মাথার ব্যামো হইছে। রাকিব অনেক কড়া করে চা খায়। আর চায়ে দুধ চিনি এতো বেশি পরিমাণে খায়………… মনে হবে চায়ের জন্য দুধ না দুধের জন্য চা। এতো বড় বড় বাটিতে আম দেখে রাকিব বলছে, ঘরের সব আম তো দেখি আমাকেই দিয়ে দিয়েছিস। আমি বলি,খা অনেক আছে। ছোট চাচা কালকে এনেছে। পরে বলবো এই ঘটনা তোকে।

নাস্তা শেষ করে রাকিবকে বিদায় দিতে গিয়ে উঠোনে দাঁড়িয়ে বললাম,ছোটচাচা ও ছোট চাচী ইউরোপ ট্যুরে গিয়েছিলেন। তাই, অপারেশন এর সময় মাকে দেখতে পারেন নি। কালকে চিড়া,
খৈ,আম, কাঁঠাল,জাম, নারকেল সহ অনেক ফল নিয়ে এসেছেন। যাবার সময় একটা টাকার খাম আমাকে দিতেই বললাম,চাচা এখন লাগবে না।লাগলে অবশ্যই আপনার কাছে থেকে নেবো।
সাথে সাথেই বলছেন, তোমরা এখনো আগের সেই রাগ পুষে আছো? বিশ্বাস কর আমি ওখানে ভিকটিম ছিলাম।

বুঝলি রাকিব আসলে বছর দশেক আগে আমার প্রবাসী চাচা আমাদের ভাগের এই বাগান টুকু চেয়েছিলেন। আমার মা সাথে সাথে বিক্রি করবেন না জানিয়ে বলেন, এখন হাতে টাকা নেই। হয়তো বা পরে আল্লাহ দিতে পারেন। তখন ছেলেরা দুটো রুম তুলবে না হয়। বড়চাচা তখন বাকী দুইভাইকে বলেন, শোনো এদেরকে আর কেউ সাহায্য করবে না। কথাটা মার কানে আসে। পরবর্তীতে ঈদ পরবে কেউ সাধলেও মা টাকা নেয়নি। একমাত্র পাগলা অভির সাথেই মা পারে না। রাকিব এবার বলে, শেষ পর্যন্ত খামটার কি গতি হলো?

আমি বলি, ছোট চাচা ভালো নাটক জানে। মাকে সালাম করে বলছে,ভাবী আমি কি জীবনেও আপনার সাথে কোনো বেয়াদবি করেছি বলেন? যখন সবাই বড়ভাই কে কম নিতে বলেছিল, তখন আমি লুকিয়ে উনাকে বলেছি, আপনি মানবেন না ওদের কথা। এটা তো আপনি জানেন, বড়ভাই আপনাকে বলেছে। কিন্তু, এরপর, অন্যায়ের সাথে বেশ কিছুদিন ওদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দোষ করে ফেলেছি। মাফ করে দিন প্লিজ। মা কিছু বলার আগেই দোলা বলে, চাচা টাকার খাম নিয়ে যান। আজ থেকে দশবছর আগে থেকে, যখন আল্লাহ মায়া করে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন এখনো রাখবেন ইনশাআল্লাহ।

এবার ছোট চাচা মার পায়ে ধরে বলছেন, আমার মা তো মারা যাওয়ার সময় আপনাকে বলেছিল, আপনি যেন আমাকে দেখে রাখেন। আমি ভুল করলে মাফ করে দেন। আপনি কি তবুও মাফ করবেন না আমাকে? এবার মা আমাকে বললো, সাদি খামটা নাও। শত হোক উনি তোমার বাবার ভাই চাচা। দোলা রেগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আমি পাশে গিয়ে বলি,চাচা চলে গেলেও মাকে এ ব্যাপারে কিছু বলিস্ না। ডাক্তার বলেছে, মায়ের সব কাজে হ্যা বলতে। রাকিব বলছে, আসলে খালাম্মা হচ্ছেন কচি নারকেল এর মতো। বাইরে শক্ত দেখান কিন্তু ভেতরটা একদম নরম। শালা, তুই তো মায়ের কিছুই পাসনি। না হয় কোন পাষান
৩বছর ধরে একটা মেয়েকে রিফিউজ করে?চলি।

সারাটা আকাশে কে যেন আবির গুলে দিয়েছে। শেষ বিকেলের লাল আলোর দিকে তাকিয়ে মনে হলো, সৃষ্টিকর্তার তৈরি সবচেয়ে বড় সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ। আর তার চেয়েও অদ্ভুত, বৈচিত্র্যময় হচ্ছে মানুষের মন। কখন কি যে চায়, কেউ বুঝে না। বুঝতে পারবেও না। যেমন এই মুহূর্তে আমার মন
চাচ্ছে একটিবার শাওনকে দেখতে। কিন্তু,কি জন্য
মন চাইছে দেখতে, সে কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। কারণহীন কারণে মনটা শুধু হাহাকার করেই যাচ্ছে। জানি দেখা যাবে না,তবুও ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখলাম ও বারান্দায় আছে কিনা। পর
মূহুর্তেই নিজেকে সাবধান করলাম,সাদি সাপের লেজে পা দিও না। যেমন আছো তেমনি থাকো।
আর তাতেই তোমার মঙ্গল। ঠান্ডা বাতাস আমার উত্তপ্ত হৃদয় টাকে ঠান্ডা করতে পারছে না। নতুন আরেক হাহাকার হয়তো বা জীবনে যুক্ত হলো।

(চলবে)

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here