###জীবন যখন যেমন (৫ম পর্ব)
###লাকি রশীদ
সেদিন মা অর্ধেক গোশত দিয়ে ভুনা রেঁধে ছিল।
বাকিটা দিয়ে বিরিয়ানি করেছিল। কুরবানীর ঈদ ছাড়া হাতে গোনা দিন আমাদের বাসায় গোশত আসে। মাটন দূরে থাক,বীফ কিনে আনাও এই পরিবারের জন্য অসম্ভব ব্যাপার। আমি রাকিবের
বাসায় মাছ, চিকেন সবকিছু খেলেও বীফ মাটন
খেতে পারিনা। একদিন লাঞ্চে খালা ও খালু দুজনেই আমাকে জোর করছেন গরুর ভুনা নিতে।
আমি বলি, আমার এতে এলার্জি আছে। পরে আমাকে একা পেয়ে রাকিব বলছে, তখন মিথ্যে বললি কেন তুই খাস্ না। আমার খুব মনে আছে,
তোদের বাসায় একদিন দুপুরে আমি আর তুই কম্পিটিশন করে বীফ বিরিয়ানি খেয়েছিলাম। আমাদের বাসার আজকের রান্নাটা মনে হয়, দেখতে ভালো ছিল না। তাই, তুই খাসনি।
এভাবে ফেঁসে যাবো, আমি আসলেই ভাবিনি। কবে কোনদিন আমাদের বাসায় খেয়েছিল, সেটা মনে রেখে বসে আছে তা ভাবিনি। একদৃষ্টিতে ওর
দিকে তাকিয়ে বলি, আমি বীফ বা মাটন হাতে নিলেই আমার চোখে তৎক্ষণাৎ আমার মা এবং বোনদের মুখ ভেসে উঠে। পানি খেয়েও গলা দিয়ে নামাতে পারি না। পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে যদি ওদের নিয়ে যাই, তবে আবার খেতে পারি।
কাউকে বলিস না প্লিজ তুই। সে বলেছে কি না বলেছে………. জানি না। তবে পরের কুরবানীর ঈদে খালা অনেকটা গোশত, কলিজা,সিনার হাড়,
পায়ার হাড়(ছোট ছোট করে কাটা)…….. আলাদা
আলাদা প্যাকেট করে তাদের ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়েছেন।
আমি এসব পেয়ে ফোনে যখন বকা শুরু করেছি,
তখন রাকিব আমি কিছু বলিনি রে ভাই।মার সাথে কথা বল্…….. বলে ফোন খালাকে দিয়ে দিয়েছে।
খালা ফোন ধরেই বলছেন, একটা প্রশ্নের উত্তর দাও শুধু। আমি মা কিভাবে তুমি ছেলে ও তোমার পরিবারকে রেখে, মুখে গোশত দেই। তুমি যখন চাকরি পাবে, ঈদে তখন অনেক গোশত আমি মা কে পাঠিয়ে দিও। এতোটাও আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ হইও না যে তাতে এক মা আঘাত প্রাপ্ত হয়। তোমাকে নিচু দেখানোর জন্য এগুলো দেইনি, ভালবেসে দিয়েছি বাবা। তুমি আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ। ঠিক আছে বাবা?
উনার কথায় আমি তো পুরোপুরি বুঝে গেছি, কিন্তু আমার মাকে কে বোঝাবে? বারবার বলছে,
বন্ধুর বাসায় কেউ আবার এতো এতো গোশত পাঠায় নাকি? আমাদের খাওয়ানোর জন্য তুই আবার কিছু বলিসনি তো বাপ? এরকম হলে এসব কিন্তু আমার জন্য হারাম হয়ে যাবে বাবা।
আমি হেসে বলি, তোমার কি মনে হয় মা যতদিন বেঁচে আছি ততদিন যদি একপিস গোশতও না খাই…….. তবুও কোনো দিন কারো কাছে খুঁজে
আনবো আমি? তোমার মনে নেই, বাবা থাকতে ও
অনেকদিন আমাদের বাসায় খেয়েছে। হয়তো বা এসব মনে করেই দিয়েছে,কে জানে? এবার মা আশ্বস্ত হয়ে বলছে, তবে ঠিক আছে।
আমার চাচা ও ফুপুরা সবাই অবস্থাশালী,সবাই ঈদের সময় গোশত পাঠান। মাঝে মাঝে দোলা বলে, অমুক বাসা থেকে এতো কম দিয়েছে যেন ফকির আমরা। সাথে সাথেই মা ধুম বকা শুরু করে ,সবকিছূতে একটা না একটা খুঁত ধরা তোর স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো কি তোর প্রাপ্য নাকি, দিয়েছে খেলে খেলি না খেলে না। এতো বেশি বকর বকর ভালো না। সব বাসার গোশত একসাথে মেশালে আমাদের ২ দিন ভালোভাবে চলতো।
কিন্তু, দোলা এ থেকে একটা টুকরোও খেতো না। দেখা যেতো ও আলু ২/৩টা নিয়ে সেদ্ধ বসিয়েছে। তাওয়ায় সরিষার তেলে সামান্য, পরিমাণ পেঁয়াজ, মরিচ ভাঁজছে। মা প্রথমবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করছে, আলু সেদ্ধ দিয়ে কি হবে? ও বলছে, ভর্তা হবে। গোশত খেতে ইচ্ছে করছে না আমার। কেউ যদি কোনো জিনিস খেতে না চায়,তাকে তো আর জোর করে চেপে ধরে খাওয়ানো যায় না। সুতরাং, এতে মা রাগ করতে পারে না। তবে আমি তখন বেশ বুঝতে পারি, মেয়ে খায়নি বলে আমার মা এর মুখেও যেন রুচে না। পরে রাকিবদের বাসা থেকে দেয়াগুলো থেকে আবার দোলা ও মা খেয়েছে।
ভাগ্য ভালো সেদিন রান্না প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল,
যখন ভাইয়া চলে গিয়েছিল। মা ভাইয়ার এভাবে চলে যাওয়া দেখে প্রথমে ভেঙ্গে পড়লেও তার অসাধারণ সহ্যশক্তি বলে বলীয়ান হয়ে মুহূর্তে ই
নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় আমার ও মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, তোরা ২
ভাইবোন এতো কাদছিস্ কেন বলতো? আমি ঠিক আছি রে বাবা। ঝগড়া ঝাঁটি সব পরিবারেই হয়। দেখিস হাদি ঠিকই ফিরে আসবে। জীবনে কখনো মাকে ছাড়া থেকেছে নাকি সে বল্? দেখি আমার রান্না দেখে আসি কদ্দুর। আয় রে মেঘলা। ওরা সরে যেতেই আমি দোলাকে বলি, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, এসব সব প্ল্যান হচ্ছে ভাবীর। অবশ্য বেচারীকেও দোষ দেয়া যায় না, এভাবে এক পরিবেশ থেকে এসে সম্পুর্ন বিপরীত অন্য কোনো পরিবেশে থাকবে কিভাবে?
দোলা ফোঁস করে উঠে নিচু গলায় বললো,হ্যা্ শুধু পরের ছেলেকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে বিয়ে করতে পারে তোমার বেচারী। এইসব বেয়াদব মেয়েদের ধরে খুব চাবকানো উচিত। আমি বলি,হ্যা কিছু কিছু মেয়ে এতো বেশি বাস্তবজ্ঞানহীন হয়, তাদের জন্য অনেকগুলো পরিবারের কষ্টই হয় শুধু। দোলা একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
তুমি যদি শাওন আপুকে এর মধ্যে ফেলো, তবে সেটা ভুল ছোটভাই। ওর রেজাল্ট ভীষণ ভালো। চাচা চাচীকে অনেক কষ্টে নাকি মানিয়েছে,মাষ্টার্স
দিয়ে সে বিয়ে করবে।
তোমার বেচারী ভাবী তো সবদিকেই অষ্টরম্ভা। না পড়ালেখাতে, না কাজে কর্মে না ভালো ব্যবহারে। অভি ভাই সেদিন ঠিকই বলেছে, এই ভদ্রমহিলা তো আপাদমস্তক একজন গুড ফর নাথিং। আমি এবার বলি, এখানে শাওন আবার কোথা থেকে এলো? আমি ভাবছি, ভাইয়া আগে যা একটু চাকরি বাকরি খুঁজতো,বিিয়ের পর সেটাও বাদ দিয়ে দিল। তাকে নিয়ে মায়ের কতো স্বপ্ন,কতো আশা আকাঙ্ক্ষা…… সবকিছু কেমন যেন একটা উল্টৌপাল্টা পথ ধরে এগোচ্ছে।
খেতে বসে দেখি এতো মজার বিরিয়ানি হয়েছে।প্যাকেট বিরিয়ানি মসলা আমাদের জন্য বেশ এক্সপেনসিভ হয়ে যায়। তাই,মা অনেক জাতের গরম মশলা মা আজ আমাকে দিয়ে আনিয়েছে, তা ভেজে পাটাতে শুকনো করে গুঁড়ো করে নেয়। এলাচি, দারচিনি, জায়ফল,জয়ত্রী,গোল মরিচ ও
লং এর পরিমাণ তাতে নিখুঁত থাকে। আগে বাবা বিরিয়ানি খেতে খেতে বলতো, তোর মা বিরিয়ানি খাইয়ে খাইয়ে কতো কিছু যে আমার কাছে থেকে হাতিয়ে নিল। মা সাথে সাথে চিৎকার দিত, ছিঃ ছিঃ এতো বড় বড় মিথ্যা কথা বাচ্চাদের সামনে বলো ক্যামনে? বাবা এবার মনকাড়া হাসি দিয়ে বলল, তোমার বাচ্চারা কি তোমাকে চেনে না রেবু? মা এবার বলছে, হয়েছে খাওতো। খাওয়ার সময় যতো আজেবাজে কথা তোমার। বাবা নেই তাই সেই হাসি নেই,মন ভালো করার মতো কথাও নেই।
এই ঘটনার দুই দিন পরও ভাইয়া যখন ফিরলো না, মা এবার অস্থির হয়ে পড়লো। আমাকে রাতে পড়ার সময় বারবার বলছে,কিরে সাদি তোর ভাই ২দিন ধরে কোথায় কি করছে………. একটা খবর নেয়া যায় না? তোদের মা বাবা কেউই তো হারামী মনের মানুষ ছিলাম না। সারাটা জীবন আপন পর সবাইকে ভালবেসে এসেছি দুজনে। তোরা এতো সৃষ্টি ছাড়া হলি ক্যামনে বাপ? আমি বলি, আমরা হারামী হলাম কি করে জিজ্ঞেস করতে পারো? হারামী মনের মানুষ আবার কি? হারামীর আবার মন হয় নাকি? এবার মা রেগে গেছে, তোর সাথে তো দেখি কথাই বলা যাবে না। একটা বললে তুই
আরেকটা বুঝিস। দোলা আর তুই বেশি শিক্ষিত হয়ে গেছিস। আমি দেখি,আর রাগালে আজকে আমার খবর আছে। বললাম, ঠিক আছে যাও। আমি লেখাটা শেষ করে ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি।
ফোন মায়ের সামনেই দেয়া যায়, কিন্তু মন কেন যেন কু গান গাইছে। ভাইয়া ফোন ধরেই বললো, আমি বাইরে তো এখন। মাকে বলিস কালকে বাসায় যাবো। তখন দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। জিজ্ঞেস করি, এখন তোমরা কোথায় আছো? সে কিছু বলার আগেই তার বৌ চেঁচিয়ে উঠলো, এই
ফোন রাখো তো। খেতে বসেও তুমি ফোন ধরেছো কেন? হেসে বলি, তোমার জন্য তো দেখি অনেক কঠিন আইন কানুন ভাইয়া। রেখে দাও। কালকে চলে এসো। যেহেতু মাকে বলে রাখছি কালকে আসছো বাসায়,আশা করি তুমি কোনো ভাবেই সে
টা মিস্ করবে না। হঠাৎ আমার মনে হয়, এমনি এমনি কি আর অনেক বাবা মা ভাবেন, এদের মতো অকৃতজ্ঞ বাচ্চাদের জন্য সারাজীবন খেটে খেটে কি লাভটা হলো? আমার ছোটফুপু দুকথার
পরই বলেন, শুধু শুধু এতোটা বছর ভুতের বেগার
খাটলাম। এর ৪ ভাগের এক ভাগ যদি আল্লাহর জন্য খাটতাম তাহলে বরং কাজে আসতো।
মাকে ৩ দিন ধরে একটা ফোন করার সুযোগ পায়নি ভাইয়া………. এটাতো অবিশ্বাস্য কথা। ভাবী কি ২৪ ঘন্টা নজরবন্দী রেখেছে নাকি তাকে? একটা খবর দিতে বা ৫ মিনিট কথা বলতে এতো অনীহা? আবার কালকে এসে যে কি করে আল্লাহ মালুম। দোলা উঁকি দিয়ে দেখছে, আমি ফোন হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে আছি। বললো,কি বলে ইডিয়টটা ছোটভাই? আমি বলি, এটা আবার কোন ধরনের কথা? বড়ভাইকে ইডিয়ট বলা !!! মা শুনলে তোকে চড় দিবে। বুদ্ধির হাঁড়ি দোলা রাণী এবার আমার সামনে এসে বললো, কি চিন্তা করছিস বললে কি হয় তোর? ভাইয়া কি বলেছে? সব শুনে বলল, তুই মাকে গিয়ে খবরটা জানিয়ে দে। শোন সবকিছু মাথায় ঢুকিয়ে চিন্তা করতে থাকবি না। এই সময়টা আমরা ৩ জনের জন্য কি গুরুত্বপূর্ণ ভাব্। স্বার্থপর ভাইয়া আর তার যোগ্যতাহীন বৌ এর জন্য ভেবে,এই মুহূর্তে সময় নষ্ট করলে,আর কেউ নয় আমরা ৩ জন ও মা ই সাফার করবো। এখন সময়ের অনেক দাম।
আমি ভেবে দেখি, ঠিক কথাই বলেছে দোলা। এদের নিয়ে ভেবে শুধু শুধু সময় নষ্ট করলে কোনো কাজে দিবে না। তারচেয়ে বরং ঘুমালেও
লাভ আছে। মাকে গিয়ে বলতেই বলেছে, কখন আসবে ওরা? বললাম,ওরা না মা, শুধু ভাইয়া আসবে তো বললো। মা এবার খুব বিরক্তির স্বরে বললো, কখন আসবে বলেছে? আমি বলি, এটা তো বলেনি মা। সাথে সাথেই আবার বকা, না বললে কি জিজ্ঞেস করা যায়না নাকি? তোদের যে
কি দিয়ে আল্লাহ বানিয়েছেন? মগজে ঘিলু বলতে কোনো জিনিস ই নেই। সময়টা জানা থাকলে সেই অনুপাতে রান্না করতাম। সকালে আসলে ভাত ভাজি করতাম। মরিচ বেশি দিয়ে করলে খুব মজা করে সে খায়।
মা বলছে আর আমি তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছি,ছেলে তোমার দামী রেস্টুরেন্টে বৌকে নিয়ে খাচ্ছে। তিনদিন ধরে মাকে একটা ফোন করার প্রয়োজনও মনে করেনি। আর তুমি এদিকে কি খাওয়াবে সেই চিন্তায় আছো !!!!
সত্যি এক মাকে আরেক মা ছাড়া, অন্য কোনো
কিছুর সাথে মোটেও তুলনা করা উচিত হবে না।
আমি আস্তে করে পেছন থেকে সরে পড়ি।
সারাটা রাত তিনজন ই পড়েছি। ফজরের নামাজের পর দেখি, মা ময়দা ও গুড় গুলে পোয়া পিঠার ব্যাটার তৈরি করে রাখছে। আমরা বুঝি,
ভাইয়ার প্রিয় খাবার তৈরি হচ্ছে। দোলা বলছে,ও
কি শশুরবাড়ি আসছে নাকি মা? এতো ভোরে উঠে ই তুমি পিঠা তৈরির আয়োজনে লেগেছ। মা
এবার বড়বড় চোখ দিয়ে বললো, খবরদার দোলা আমার বড়ছেলেকে তুই কিছু বলবি না আজ। নয়তো তোর একদিন কি আমার একদিন, মনে রাখিস সেটা। মেঘলা এবার বলছে, সারারাত পড়ে এখন আমি চোখ মেলতে পারছি না মা। নয়তো তোমাকে সাহায্য করতাম। মা এবার হেসে বলল,এই কটা পিঠা তৈরি করতে দুই জন লাগবে না কি? তোরা ৩ জনই গিয়ে ঘুমা সোনারা।
দুপুর ১২টায় এলার্ম দিয়েছিলাম। উঠে দেখি দোলা চা বানাচ্ছেন আর মেঘলা ২ টা ম্যাগি নুডুলস পানি আর প্যাকেটে থাকা সাথের মশলার প্যাক দিয়ে বানানোর আয়োজন করছে। আমাকে বললো, তোকে নুডুলস দেই ছোটভাই? আমি বলি মা অন্য কোনো নাস্তা বানিয়েছে না কি? এবার বললো, রুটি ও পটল ভাজি টেবিলে আছে। মা কোন গাছ লাগাতে বাইরের বাগানে গেছে। আমি বলি, আমি রুটি ভাজি খাবো। দোলা তোদের সাথে সাথে আমাকেও এক কাপ চা দিস প্লিজ।
৩ জন নাস্তা খেতে খেতে কথা বলছি,সবার পড়া সবকিছু শুধু রিভিশন চলছে……… এর মধ্যে হঠাৎ মেঘলা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার কেন জানি ভীষণ ভয় করছে ছোটভাই। আমার পরীক্ষা কেমন হবে কে জানে? দোলা এবার ওর দিকে তাকিয়ে চেঁচাচ্ছে, এতো ভয় পেলে তো শুধু সমস্যা হবে, কাজের কাজ কিছুই হবে না। ঠিক তক্ষুনি মা এসে ঘরে ঢুকল। নিজের মনে বলছে,
খাজুরের মতো তার মেয়ে শাওন হয়নি। মনটা ভালো আছে তার। ভার্সিটিতে যাচ্ছে, আমাকে দেখে বলল, তুমি শুধু কষ্ট করে গাছ লাগাও আর আমরা শুধু খাই। আমি বলেছি তোর জন্য সবকিছু ফ্রি মা। যখন যা খুশি নিয়ে খাস। সাথে সাথে আমার ঘামে ভেজা মুখে আদর করে গেছে। আমি দেখি দোলা আমার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। কথা বললেই বাড়বে। তাই আমি চুপ করে থেকে মাকে বললাম, ঘামে শরীর ভিজে গেছে। ফ্যানের নীচে এসে বসো। নয়তো আবার অসুখ করবে। দোলা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
আজকে কিছুই হবে না। দেখছো না খুশিতে মা বৃক্ষরোপণ শুরু করেছে। আমি হেসে বলি, এখন প্রচন্ড রোদ উঠেছে। দয়া করে আর বাইরে যেওনা
সারাদিন অপেক্ষা করলাম আমরা, ভাইয়া আসেনি। মা মুখে কিছু বলছে না, কিন্তু অপেক্ষার
তীব্র জ্বালা পার করছে বুঝাই যাচ্ছে। আমার খুব ইচ্ছা ছিল, ভাইয়াকে আর কোনোদিনও ফোন করবো না। কিন্তু মায়ের বকায় আর চিৎকারে বাধ্য হয়ে মাগরিবের নামাজের পর ফোন দিয়েছি।
এখন বলছে, আমি এক কাজে ফেঁসে গেছি রে। ঘন্টা খানেকের মধ্যে আসছি ইনশাআল্লাহ। পরে
মনে হয়েছিল, সেদিন ফোন না দেয়াই ভালো ছিল। ফোন দিয়ে অজানা যন্ত্রণা সেধে ঘরে আনা
হলো শুধু। যার শুরু আছে তবে শেষ নেই।
(চলবে)