###জীবন যখন যেমন( ২য় পর্ব)
###লাকি রশীদ

আমি ভার্সিটিতে যাবার জন্য মা এর কাছে বিদায় নিতে যাই। দেখি মা রান্নাঘরের ছোট জানালার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জড়িয়ে ধরে বলি, কি ব্যাপার আমার মা এতো চিন্তা মগ্ন কেন? মা তার স্মিত হাসি হেসে বললো, ভাবছি এ পরিবারের ভবিষ্যত কি? বললাম,এতো ভাবাভাবি
করে কোনো লাভ নেই মা। ভবিষ্যত ইনশাআল্লাহ অনেক ভালো হবে। তোমার দোয়া কখনো বিফলে
যেতে পারে বলো? সঙ্গে সঙ্গেই মা নিজেকে তার নিজস্ব শক্তিমান বলয়ে প্রবেশ করিয়ে বলছে,হ্যা
তা তো অবশ্যই। রিযিকের মালিক তো একমাত্র আল্লাহতাআলা। মানুষ তো আমি, মাঝে মধ্যে ভুল হয়ে যায় আমার। যা বাবা, আল্লাহর হাওলা।

উঠোনে নেমে ভাবছি, তোমার কোনো ভুল হচ্ছে না গো মা। আসল কথা হলো, তোমার ব্রেইন আর
কতো লোড নিবে। বাবা থাকতে তোমার সব কাজ
এর সহচর ছিল বাবা। কি সুন্দর প্রজাপতির মতো সারাটা দিন তুমি দৌড়ে দৌড়ে বেড়াতে। বাবার জীবদ্দশায় কখনো মার সাথে ঝগড়া হতে আমরা দেখিনি। আর হলেও হয়তো বা সেটা চারদেয়ালে
ই আবদ্ধ ছিল। তখন অনেক সুখে না থাকলেও
এখনকার মতো এতো তীব্র অভাবের কামড় ছিল না। আমার বাবার কাছে আমার দাদীও থাকতেন। দাদী বলতেন,আর কারো ঘরে আমি আরাম পাই না। বড়বৌমার সাথে আমি থাকবো। চাচারা তখন অনেক খুশি, বলেছিলেন তাহলে মাসে মাসে মায়ের খাওয়া খরচ ও ঔষধের টাকা না হয় দিয়ে দেবো আমরা। বাবা তার স্বভাবসুলভ শান্ত স্বরে বলেছে, মায়ের খাওয়ার খরচ আবার ছেলে নেয় কিভাবে? ঔষধের টাকাও আপাতত লাগবে না, বেশি সমস্যা হলে তোদের বলবো না হয়। ব্যস,
আমার চার চাচার এখানেই তাহলে দায়মুক্তি হয়ে গেল।

আমার বাবা বড়ভাই হওয়ায় সব চেয়ে কম জমি ভাগে পেয়েছেন। কতো জন তাকে বলেছে, তুমি কেন মানবে? আমার বড়মামা খুব বকা দিয়েছেন, তোমার ২টা ছেলে। এদের বিয়ে শাদি হলে কতো জায়গার দরকার তুমি বোঝো না? ২টা মেয়েরও তো প্রাপ্য সম্পত্তির অংশ দিতে হবে। কিছু বলো না বলে তোমার ভাইয়েরা সুযোগ নেয়। আহ্লাদে বলে ভাইজান তুমি বড়, তোমার ভাগে কম নিয়ে নাও। তুমিও তাদের কথায় গলে যাও। তুমি চুপ থাকলে আর আমি না না বললাম, তাতে তো হবে না রে ভাই। বাবা হচ্ছে এমন মানুষ, তাকে বেশি বললে সত্যিই তার মনে হয়, এতো মুলোমুলি না করে মেনে নেওয়াই ভালো। বড়মামা কে আশ্বস্ত করলো, ঠিক আছে আমি মানবো না। প্রাপ্য অংশ দিতে বলবো।

কিন্তু আলোচনার দিন আমার ছোট চাচা ছাড়া বাকি তিন চাচা যখন বাবাকে বারবার অনুরোধ করলো, বাবা বললো আমার ৩টা ছোট ভাইয়ের আবদার না মানি কি করে? আমার মনে আছে, বড়মামা তখন রাগে, ক্ষোভে মাথা নেড়ে বলেছিল, অনেক বড় ভুল করলে মুমিন। পরে ঠিকই দেখো পস্তাবে, আমার কথা মিলিয়ে নিও শুধু। এটা নিয়ে রাগ করে বড়মামা বাবা ও মায়ের সাথে অনেক দিন কথা বলেননি। মাকে বলেছিলেন,রেবু তুই
তো একটা ইডিয়ট,পড়েছিস আরেকটা ইডিয়টের
সাথে। তোদের জীবনেও কিছু হবে না। বড়মামা একটা গালি ই জানতেন সেটা হলো ইডিয়ট। বাবা মারা যাওয়ার পর, বড়মামা বেঁচে থাকা অবস্থায় আমাদের অনেক আর্থিক সাহায্য করেছেন।

সেই সময় মা মামার কথামতো ভাইয়াকে মাসের শেষে পাঠাতো। প্রথম প্রথম ভাইয়া উনার বাসায় গিয়ে,পরে আর যেতে চাইতো না। মা তখন আমাকে পাঠাতো। গিয়ে বুঝতে পেরেছি ভাইয়া কেন যেতে চায় না। দরজা খুলে মামী ভীষণ অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকাতেন। উনার ৫ মেয়ে, তখন ৩ জনের বিয়ে দিয়েছেন। ২ জন অবিবাহিতা ছিল। আমি গেলেই না ডাকলেও ওরা এসে গল্প করতে বসে যেতো। মামী ভেতর থেকে তাদের ডাক দিলেও বসে থাকতো। ২ বোন উচ্চ স্বরে হাসতো আর আমি আমার দৈহিক সুন্দর হওয়া
কে নিজে নিজে অভিসম্পাত করতাম। কি হতো একটু বিশ্রী হলে। বড়মামী বাধ্য হয়ে তখন বিশাল পানের বাটা নিয়ে সোফায় বসে থাকতেন। পরের মাসে বলেই দিলেন,বাসায় না এসে তোমার মামার
ফার্মেসিতে এখন থেকে চলে যেও। সোমত্ত মেয়ে রা বাসায়, তোমার মামার তো কোনোকালেই কান্ড
জ্ঞান হলো না। মনে হয় না,এই জীবনে আর হবে।

অন্যমনস্ক হয়ে আমি এসব ভাবছিলাম বলেই হয়তো শাওন কে দেখিনি। সে দেখি ফোরষ্ট্রোকে বসে আমাকে ডাকছে। বেশ খানিকটা দূরত্ব রেখে বললাম, কি হয়েছে? ডাকছিস কেন? তাড়াহুড়ো করে বলছে, উঠে এসো আমি তোমাকে পৌঁছে দেবো। আমি বিরক্ত হয়ে বলি, তুই জানিস না কি আমি কোথায় যাবো? তুই যেখানে যাচ্ছিলি সেই জায়গায় যা। এবার বলছে, ভার্সিটিতে যাচ্ছো না? আমি যে গাড়িতে যাই সেই গাড়ি ওয়ার্কশপে‌। তাই আজ একা একা যাচ্ছি বলে তোমাকে ডাকলাম।প্লিজ আসো না। আমার সত্যি সত্যিই ভয় লাগছে যেতে।

আমি হাটা শুরু করে বলি, তাহলে যাস্ না। তোর সব বোনেরাই তো কি সুন্দর ঘর সংসার করছে। ফাহিম ভাইকে বল,তোকেও বিয়ে দিয়ে দিবে। ব্যস ল্যাঠা চুকে গেল। এবার অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে কাওয়ার্ড বলে চলে গেল। আমি মনে মনে বলি, আমাকে যেন ভুতে ধরেছে। তোর সাথে এতোক্ষণ কথা বলেছি,এটাও যদি ফাহিম ভাইকে পাড়ার
কেউ বলে দেয়, আমার খবর আছে। এমনিতেই কতো জ্বালায় দিন যাচ্ছে, আবার নতুন জ্বালা কে
সেধে সেধে ঘরে নিয়ে আসতে চায়?

ভার্সিটির ক্লাশ শেষে রাকিব ও আমি ওর বাসায় চলে আসি। রাকিবের বাসাকে আমার সেকেন্ড হোম বলা যায়। এই বাসার সবচেয়ে উপকারী দিক হলো, রাকিবের কোনো বোন নেই। মেয়ে বিবর্জিত বাসা বলা যায়। ওর মাকে আমি খালা ডাকি, উনি ও উনার হাজব্যান্ড আর রাকিবকে নিয়ে উনাদের পরিবার। স্কুল জীবন থেকেই এই বাসায় আমার বসতি বলা যায়। পরবর্তীতে আমাকে একটা ডুপ্লিকেট চাবি পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। কখনো একা আসতে মন চাইলে যেন আসতে পারি। খালা ও খালু দুজনেই সরকারি চাকুরিজীবি। ক্লাশমেট ছিলেন দুজন, আগামী বছর রিটায়ার্ড করবেন। আমি মাঝে মাঝে বলি,তোমাদের কতো সুন্দর সেট লাইফ। কোনো ঝুটঝামেলা নেই,ছেলেও মাষ্টার্স শেষে চাকরি পেয়ে বিয়ে করবে। কতো নাইস !!! খালা তখন মুরগির মাংস বাটি থেকে প্লেটে তুলে্ বলে, কি জানি বাপু আমার তো এই সেট জিনিসটাই এখন
বিরক্তিকর মনে হয়। এখন বুঝি জীবনে দুঃখ,কষ্ট, বেদনা থ্রিলিং সবকিছুরই প্রয়োজন আছে। আমি তখন মনে মনে হাসি আর বলি, দুদিন আমাদের সংসারে থেকে এসো বুঝবে দুঃখ, বেদনা কষ্ট কাকে বলে।

তবে এই ভদ্রমহিলা আমাকে এতো ভালবাসা দিয়েছেন একজীবনে তা শোধ করা সম্ভব নয়। রাকিবের এক বছরের বড় আরেকটা ভাই ছিল। আমাদের স্কুলেই এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। ৬ বন্ধু মিলে কক্সবাজার বীচে সাঁতার কাটতে গিয়ে নিখোঁজ হন। উদ্ধার কর্মীরা পরদিন তার লাশের হদিস পায়। ছেলে হারানো এই মা তখন আমার সাথে তার মৃত ছেলের চেহারায় মিল দেখতে পান। ভীষণ ভাবে আমাকে আঁকড়ে ধরতে চান,
আমার অস্বস্তি লাগছে দেখে খালু হাত ধরে খুব
অনুরোধ করে বলেন, ২/৩ মাস একটু সহ্য করো বাবা। সম্ভব হলে এই কয়টি দিনের জন্য আমার বাসায় থেকে গেলে। আমি না হয় তোমার মায়ের কাছে অনুমতি নিয়ে আসবো। আমি তখন ভাবি, এখানে দমবন্ধ লাগবে। খালা তো ছুটি নিয়েছেন,
অফিসে যান না। এই সন্তানহারা মায়ের কষ্ট লাঘব করা আমার মতো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আমি ভাইয়ার মতো এতো কথা বলতেই পারি না। ‌রাকিব বুঝতে পেরে বলে, আমি বাবাকে
বলে দেবো, তোকে আর এসব বলবে না। আমি মাথা চুলকে বলি, দাঁড়া এখন বলিস না। আমার মায়ের সাথে আলাপ করে কালকে তোকে আমি জানাবো দোস্ত।

এই পর্যন্ত জীবনে যখনি যেখানে আটকে গেছি,মা আমার পথ প্রদর্শক ছিল এবং আছে। বাসায় এসে সবকিছু খুলে বলতেই বললো,ছেলে হারানো
অস্থির মাকে শান্তনা দেয়া, স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো তো ভালো কথা বাবা। মানুষকে সাহায্য
করলে আল্লাহ তাআলাও খুশি হন। কিন্তু, ওখান কার সুখ,স্বাচ্ছন্দ্য দেখে আবার আমাকে ভুলে যাবি না তো বাবা? আমি এমনিতেই অনেক দুঃখী মানুষ। তোর দূরে চলে যাওয়া আমার সহ্য হবে না। আমার মায়ের পাখির মতো বুকে মাথা রেখে বলি, তুমি কি করে ভাবলে তোমাকে আমি ভুলে যাবো মা? এটা কি কখনো সম্ভব,বলো? রাকিবকে
বলে দেবো, আমি সেখানে যাচ্ছি না। মা এবার হাসিমুখে বলে,আরে দূর বোকা ছেলে আমি তো এমনি এমনি বলছিলাম। যা, তবে প্রতিদিন ফোন দিবি। আমি রাতে প্রতিদিন প্রায় ঘন্টাখানেক মার সাথে কথা বলতাম। সারাদিনের সব ঘটনা একদম
পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিতাম। মা ভীষণ খুশি হতো।

এভাবে মাস দুয়েক আমার ও রাকিবের গল্পে,
আদরে, ভালবাসায় খালা ঠিক হওয়া শুরু করেন। ইউটিউব ঘেঁটে দুধ চা বানানো শিখে আমি
চা বানাতাম আর রাকিব যখন যা কিচেনে পেত মুরগী,গরুর গোশত বা সবজি……… তা দিয়ে সে স্যান্ডউইচ বানিয়ে ফেলতো। আমরা ৪ জনের কলরবে বাসাটা মুখরিত হয়ে উঠতো। সেইসময় খালুর কৃতজ্ঞ দৃষ্টি বারবার আমাকে ছুঁয়ে যেতো।
খালার ছেলেরা তাদের তুমি করে বলতো, উনার অনুরোধে তাদেরকেও আমি তুমি বলতাম। ঠিক আড়াইমাস পরে আমি এক সন্ধ্যায় খালাকে বলি,
ছেলেদের আদর এতো দিন খাওয়া হয়েছে। এখন ঠিক করো কবে থেকে তুমি অফিস করবে। আস্তে আস্তে অফিস যাওয়া শুরু করতেই ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসি। কিন্তু কেন যেন এখন যে এতো
আসি,তা মায়ের কাছে লুকিয়ে রাখি।এসব শুনলে কেন যেন মা ইনসিকিউরিটিতে ভুগবে বলে মনে হয়। সবকিছু ক্লিয়ার না করে কিছু কিছু জিনিসে
ছায়া থাকাই ভালো।

খালা রাকিবের জন্য যখন কাপড় কিনেন, তখন আমার জন্যও কিনেন। এতো দামী দামী কাপড় পরতে অনভ্যস্ত আমার ভীষণ অস্বস্তি লাগে। আমার ও ভাইয়ার কাপড়ের সাইজ এক হওয়াতে
ওকে অর্ধেকটা দিয়ে দেই। স্কুলের আমার আরেক বন্ধু সানজানা বলে, কিরে ভাই? এই শার্ট প্যান্ট গুলোতে কতো ভালো লাগছে তোকে। আগে কি হালকা হালকা কালারের পরতি। আমি জানি,এরা
সবাই জানে কোথা থেকে দামী কাপড়গুলো পাই।
আমি লুকোছাপা করি না, সোজা বলতাম এগুলো
খালা মানে রাকিবের মা কিনে দিয়েছেন। আমরা গরীব মানুষ, এতো দামী কাপড় পড়লে ভাত খাওয়া বন্ধ করতে হবে রে। ব্যস, সব গুঞ্জন শেষ।
আমি দেখেছি সরাসরি কথা বললেই কানাঘুষা কমে যায়। এর অনেক খারাপ দিকও আছে। কিন্তু খালাকে বুঝাবে কে?

আজ ভার্সিটি থেকে বের হয়ে সোজা দুজনেই এখানে চলে এসেছি। কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করলাম, নামাজ পড়লাম। রাকিব মাইক্রোওভেনে সবকিছু গরম করে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো,ভাইরে ভাই। তুই কি আসবি নাকি আসবি না? এতো খিদে পেয়েছে বলার মতো না। রাকিব আবার মোরগ ও ডাল ছাড়া খেতে পারে না। আমি মাছ ভালবাসি। রান্নার লোক রাঁধে ভালো মাশাআল্লাহ। মায়ের মতো তেল কম দেয়। ইলিশ ভাজা খেতে খেতে রাকিবকে আজ সকালের ঘটনা বলতে থাকি। আধাখেচড়া শুনেই বলে,এক টা মেয়ে সেই কবে থেকে ভালবাসে বলছে। তুই কি করে এই রকম ভাবে ওকে ইগনোর করিস?যদি রিয়েল ভালবাসা না হতো, এতো দিনে কতটা প্রেম করে ফেলতো। তোর মোটা মাথায় এটা ঢুকে না?

আমি বলি, তুই কি ভাবিস ওর পরিবার আমার হাতে ওদের মেয়ে কে তুলে দিবে? জেনে শুনে এই বিষপান করে লাভ কি? এবার সে চোখ ছোট করে বলছে,না হলে তো টা টা বাই বাই করে চলে আসবি। এরমধ্যে প্রেমের অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে, পরে যা ভীষণ কাজে আসবে। কয়জন আর বিয়ে হবে ভেবে প্রেম করে? আমি এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলি, খবরদার আর কখনো যদি এ ধরনের
নোংরা কথা বার্তা বলতে শুনি। আমাকে কি তোর মতো পেয়েছিস নাকি? যে কাপড় পাল্টানোর চেয়ে বেশি গার্লফ্রেন্ড পাল্টায়। এবার রাকিব জোরে হাসতে হাসতে বলে,স্যরি দোস্ত তোর এই
সতীপনার কথা তো আমি বেমালুম ভুলে গিয়ে ছিলাম। থাক ভাই, তুই তোর মতো ই ভালো থাক।

শুয়ে পড়ি, কখন দুই চোখ লেগে গেছে বলতেও পারি না। হঠাৎ শুনি রাকিব ধাক্কা দিয়ে বলছে,উঠ্
শালা। মুখেই কেবল বড় বড় কথা। এদিকে স্বপ্নে মেয়েদের দেখে দিব্যি কথা বলছে। আমার মনে হয়,হ্যা তাইতো আমি কিন্তু এতোক্ষণ স্বপ্নে শাওন এর সাথে কথা বলেছি। কান্নায় তার দুটো চোখ তার লাল হয়ে গেছে। আঙ্গুল তুলে সে বলছে, তোমার জন্য ই তো আমার এই অবস্থা। কাওয়ার্ড
কোথাকার !!!! নিজেকে বলি, আজকে কাওয়ার্ড শুনেছি বলে হয়তো স্বপ্নেও শাওন হানা দিচ্ছে। চুপচাপ উঠে আছরের নামাজ পড়ে টিউশনির জন্য রওয়ানা হই। শুনি পেছন থেকে রাকিব ডাক দিচ্ছে, কফিটা তো খেয়ে যা। আমি কথা না বলে,
চলতে থাকি। যেকোনো সময় খালা বা খালু চলে আসবেন। তখন আবার বের হওয়াটা কষ্টকর হবে।

বাসে উঠে পড়ি, আমার আজকে আমার ছাত্রকে অনেক খানি সময় দিতে হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে ওর পরীক্ষা। আমি যখন প্রথম ভার্সিটিতে ঢুকি তখন এই ছেলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নিচু ক্লাশের ছাত্র ছিল। তারপর আমি এ টিউশনি ছাড়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কারণ বাচ্চাদের পড়াতে অনেক কষ্ট। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে,এই বাচ্চার মা-বাবা আমাকে ভীষণ পছন্দ করেন। তারা নাকি দেখেছেন, আমি পড়ানো শুরু করার পর ছেলে অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে। আমি বলি, আপনাদের ছেলের মেধা আছে। ও যদি এভাবে পড়তে পারে, এমনিতেই অনেক দূর যাবে ইনশাল্লাহ। আমি না হয়ে অন্য কেউ তাকে পড়ালেও, সমস্যা হবে না। কিন্তু এরা এসব মানতে নারাজ। স্বামী উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নানা ব্যবসা
করেন। হরদম দেশে বিদেশে ঘুরছেন। স্ত্রী গৃহিণী,
তবে রঙিন প্রজাপতির মতো সারাক্ষণ উড়ে উড়ে যেন বেড়াচ্ছেন। স্বামী দেশে ফিরলেই উপলক্ষ্য পেয়ে পরের ছুটির দিন রাতেই পার্টি রাখেন। তখন আবার অনুরোধ শুরু হয়, তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে। একদিন এসেছিলাম, কিরকম লাগছিল যেন হংস মাঝে বক বসে আছে। আর আসিনি কখনো।

এতো বড় বাসা ভদ্রলোকের,যেন এক প্রাসাদ এটি। পৃথিবীতে কোনো কোনো মানুষকে আল্লাহ তাআলা এতো বিপুল ঐশর্য্যের মালিক বানিয়ে দিয়েছেন…….. সত্যি ই অদ্ভুত তার মহিমা। কারো কারো আবার দুমুঠো ভাত যোগাতেই পাগলপারা।
সত্যি ই সৃষ্টিকর্তা কতো বিচিত্র সাজে যে এ পৃথিবী সাজিয়েছেন। আমরা ক্ষুদ্র,তুচ্ছ, দীনহীন সেটা বুঝার চেষ্টা করলেও হয়তো কিছুই বুঝে আসবে না।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here