###জীবন যখন যেমন(১ম পর্ব)
###লাকি রশীদ
ঘুমুচ্ছিলাম, হঠাৎ বুঝলাম চোখের উপর কে যেন বেশি পাওয়ারের তীব্র লাইটের আলো ফেলছে।
মিটমিট করে তাকিয়ে দেখি ভেন্টিলেটর দিয়ে সূর্যের আলো এসে চোখে পড়ছে। অনেক রাতে ঘুমিয়েছি। বন্ধু শফিকের ভাইয়ের বিয়ে ছিল গত রাতে। ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা বেজেছে। আমরা ৪ ভাইবোনের সবাই বাসায় না ফেরা পর্যন্ত মা ঘুমায় না। আমি ফেরার পর গজগজ করতে করতে ঘুমুতে গেছে। আমি বুঝি সারাদিন কাজ কর্ম করে, রাতে বসে থাকতে নিশ্চয়ই মার ভালো লাগে না। কিন্তু ঘুমাতে বলে গেলেও তো মা ঘুমায় না।
এই বদ্ধ,ছোট, ঘিঞ্জি ঘরে আমার দম বন্ধ বন্ধ লাগে। ফ্যানের বাতাসও যেন অনবরত গরম ছড়াচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই,বাসায় রুম মাত্র দুইটা।
আগে একরুমে ভাইয়া ও আমি,একটায় মা ও
আমার যমজ দুই বোন থাকতো। ৩/৪ মাস আগে ভাইয়া হঠাৎ বিয়ে করে আসে। এক রুম তাদের দিতে গিয়ে, আমার এই ষ্টোর রুমের মতো ছোট জায়গায় থাকতে হচ্ছে। কথা নেই, বার্তা নেই হঠাৎ এক দুপুরে এসে বলে মা তোমার বৌ বরণ করো। মা আর কি করবে,করলো। আমি সেদিন আমার স্বল্পভাষী মার চোখ কান্নায় লাল হতে দেখেছিলাম।
পরে শুনি তাদের প্রেমকাহিনী। ভাইয়া নাকি বছর দুয়েক ধরে উনাকে প্রাইভেট পড়াতো। উনার বাবা মা এই পরিবারে বিয়ে দিবেন না বলায়, উনি না কি এক কাপড়ে বের হয়ে এসেছেন। ভাইয়া বছর খানেক হলো মাষ্টার্স পাস করেছে। ২টা টিউশনি ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিছু সে করে না। সেই কবেকার ইটের গাঁথুনি আর টিনের চালের পলেস্তারা খসে পড়া বাসার বেকার যুবককে প্রানে ধরে কোন বাপ মা তাদের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিবে? যেখানে ভাবীর বাবার এই ঢাকা শহরে না কি দুইটা জুয়েলার্সও আছে। এটা শুনে অনেকে বলেছেন, তাহলে বুঝেশুনেই হাদি বিয়ে করেছে।
শুধু মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছে,৫ জন মানুষের
সামনে দুই বেলা চারটে দানা সামনে রাখাও কি যে কষ্টকর ব্যাপার হচ্ছে সেখানে আরো একজন কে
বাড়ালি বাপ? ভাইয়া সেটা শুনে বিজ্ঞের মতো বলছে, চিন্তা করো নাতো মা। ৫জন খেতে পারলে ৬ জনও খেতে পারবে। মা আর কিছু বলেনি।
আমার মাঝে মাঝে হাসিও পায়। ভাইয়ার সাহস আছে বলতে হবে। আমি আগামী মাসে মাষ্টার্স ফাইনাল দেবো, ক্লাশ নাইন থেকে এই পর্যন্ত কতগুলো প্রেমের প্রস্তাব যে পেয়েছি তার ঠিক নেই। অন্যতম কারণ হয়তো একটাই, আমাদের অসামান্যা রুপবতী মায়ের সব রুপ আল্লাহ তাআলা ঢেলে আমাদের ৪ ভাইবোনের মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই বলে এদেরকে আল্লাহ বড় যত্ন করে যেন বানিয়েছেন। আমার এসব প্রেমে জড়ানোর কোনো ইচ্ছাই নেই। এমনিতেই অনেক সমস্যা, আবার এসব অপ্রয়োজনীয় জিনিষে মগ্ন হয়ে জীবনটাকে ফালুদা বানানোর কোনো দরকার নেই। নয়তো আমার আপন চাচাতো বোন শাওন
ই ৩ বছর ধরে বলছে আমাকে সে ভীষণ ভীষণ ভালবাসে। আমি সাড়া দিচ্ছি না। একই সীমানার অভ্যন্তরে ওরাও থাকে। ওরা ৩ ভাই চাচার ব্যাবসা
সুত্রে ব্যাবসায়ী। তাদের ঝা চকচকে টাইলসে মোড়ানো বাসা, বিভিন্ন মডেলের ৩টা দামী গাড়ি, সর্বোপরি আকাশছোঁয়া অহংকার কোথায় যেন আমাকে সাবধান করে দেয়………. ভুলেও কখনো ঐ বৃত্তে টা দিও না সাদি। পা পুড়ে যেতে পারে।
এই যে ভাইয়া চাকরি পাচ্ছে না চাইলে তো তারা তাদের অফিসে একটা চাকরি দিতে পারে। ভুলেও
তারা সেটা বলেনা। মা ভাইয়াকে বলেছিল, আমি বলে দেখি। বলার সাথে সাথে শাওনের সবচেয়ে বড়ভাই ফাহিম বলেছে, মনে থাকলে দেখবো চাচি। তবে এ আশায় বসে না থেকে ওকে অন্তত সব জায়গায় চেষ্টা করতে বলো। মা এসে বলল,
আমরা মানুষ কতটা খারাপ বাপ। নিজেদের কেউ নীচে পড়ে থাকলে টান দিয়ে উপরে তুলতে এতো কষ্ট হয়? আশেপাশে একটু নজর বুলালে কি হয়?
রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় কে সাহায্য করলে তো আল্লাহ তাআলা দ্বিগুণ সওয়াব দেন। আমি মাথা নীচু করে শুনছি আর মায়ের অপমানে জর্জরিত লাল গাল দুখানা কে মনে হচ্ছে আদর দিয়ে সব গ্লানি ধুয়ে মুছে দেই। কিন্তু কিছুই করতে না পারা এই ছেলের লজ্জায় হাত আর উঠেই না।
আমি কিছু না করতে পারলেও আমার ছোট বোন দোলা ক্যাটক্যাট করে বললো, তোমাকে আমি তখন যেতে মানা করিনি মা? তাহলে কেন গিয়েছ
বলো? অহংকারে যারা আমাদের সাথে কথা ই বলে না, তারা চাকরি দিবে? এটা বুঝা তো কমন
সেন্সের ব্যাপার। একমাত্র শাওন আপু ছাড়া আর একটা মানুষও যেন আমাদের চিনে না, কখনো দেখেনি এমন একটা ভাব করে। তবে তুমি কেন ওদের কাছে ভিক্ষুকের মতো হাত পাততে যাবে?
দোলা ও মেঘলা আমার যমজ দুই বোন। এই দুজনের অসাধারণ কষ্ট করার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছেন। দুজনেরই খুব ইচ্ছে মেডিকেলে পড়ার। এখন বলা যায় কোমর বেঁধে লেগেছে। কোচিং সেন্টারের ক্লাশ করায়, প্রাইভেট টিউশনি তো আর আছেই। মা মাথা নেড়ে বলে,সাধে কি আর যাই রে মা? সারা দিনে খেটেখুটে এসে চারটা ভাত যদি তোমরা না পাও, চলবে কিভাবে?
এবার গলা চড়েছে দোলার, শোনো মা না পেলে পেটে পাথর বেঁধে থাকবো। তবুও তুমি দয়া করে এই বড়লোকদের কাছে যেও না। মা বলল, ঠিক আছে আর কখনো যাবো না। এবার মা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলছে, আল্লাহর দিন আল্লাহই পার করবে।
আমার ৪ চাচা,বড়চাচা পরিবার নিয়ে ইংল্যান্ড এ
থাকেন। উনার ভাগের জমিতে আলিশান বাড়ি বানানো আছে। দেশে আসলে তখন তা খোলা হয়। বাকি ৩ জন এই বাউন্ডারির মধ্যেই থাকেন। দুই ফুপু, দুইজন ই ঢাকাতেই আছেন।
এতো কষ্ট করে চোখ বুজে বুজে পড়ে থেকে কি হবে? উঠে পড়ি,ফ্রেশ হয়ে দেখি মা ভাত ভাজি করছে। রাতের ভাত ফ্রিজে থাকলে সকালে ভাত ভাজি আর চা খেয়েই যার যার কাজে বেরিয়ে পড়ি। পিছনে দাঁড়িয়ে দেখি ঘামে মাখামাখি হয়ে আছে মুখটা। নরম হয়ে যাওয়া শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখটি মোছাতে যাবো মা হেসে বলল, কি রে
গরমের মাঝে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বাবা? টেবিলে বোস, আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। আমি নড়ি না, বললাম আমি নাড়ছি মা। তুমি অন্য কাজ করো।
জানি আমার উপর মা ভরসা করতে পারে না। কি
ভাবে যেন এতো সতর্ক থাকার পরও হাত থেকে ফেলে দেই, ঝামেলা কমানোর বদলে বাড়াই। মা বলল, সাহায্য করতে হলে চায়ের সসপ্যানে পানি বসিয়ে কাপগুলো ধুয়ে রাখ।সর্ষের তেলে পেঁয়াজ ভাজা হচ্ছে, পাশেই আগে করে রাখা স্ক্র্যামবল্ড
দুটো ডিম। এবার সামান্য গাজর ও বরবটি ঢেলে
মা ঝুরি করে রাখা ভাত ঢেলে দিলো। ভাইয়া ও দোলা ঝাল ছাড়া খেতে পারে না। ঝটপট কয়েক
টি কাঁচা মরিচ ফালি এবার ফ্রাইপ্যানে পড়লো। দোলা বলে তোমার এই ভাত ভাজিতে ঠিকমতো সব সস পড়লে কি মজার ফ্রাইড রাইস সেটা হয়ে যেতো মা, কি বলবো। মার চোখ সেই না খাওয়া মজাদার ডিস, বাচ্চাদের সামনে না দিতে পারার কারণে মুহূর্তেই ছলছল হয়ে যায়। মেঘলা এবার সেটা বুঝতে পেরে বলছে,এটাই বা তোর সেই ফ্রাইভ রাইসের তুলনায় কম কিসে? আমি খেয়াল করে দেখেছি, মায়ের মুখ বিষাদগ্ৰস্ত হলে সবচে আগে আমি ও মেঘলাই সেটা নোটিশ করি।
পানি ফুটে গেছে,চাপাতা দিতে যাবো…… মা বলে
পানি মেপে দিতে হবে রে। মায়ের কথা মতো ৬ কাপ দিয়ে আরো ১ কাপ পানি বাড়তি দিলাম।
বড় বড় চায়ের কাপ,তাই ৬ চা চামচ চাপাতা দেই।
এরমধ্যে ই দোলা ভেতরে ঢুকে ঝটপট প্লেটগুলো ধুয়ে টেবিলে দিলো। মেঘলা ফিল্টার থেকে পানি নিয়ে জগ ভরে নিল। ভাইয়ারা এখনো উঠেনি। দোলা ক্যাটক্যাট করে বলছে, দরজা নক করতো ছোট ভাই। মাকে ওদের জন্য আবার সবকিছু গরম করে দিতে হবে। সাথে সাথে মা মানা করছে,
খবরদার নক করতে হবে না। ওরা উঠলে খাবে,
সবাই এতো বেশি না বুঝলেও চলবে। আমি বুঝি দোলার যেন ভাবির সাথে ঝগড়া না লাগে সেজন্য তার এই সতর্কতা।
ছোট ঘর,চেয়ার টানায় হয়তো বা শব্দ হয়েছে। তাই ওরাও উঠে পড়েছে। ভাইয়ার মুখ ঠিক থাকলেও ওর বৌয়ের বিরস মুখ দেখে ভাবছি, সবেমাত্র অশান্তি শুরু হলো বলে। এতো সোজা জীবন হলে তো হতোই। মা ভাত ভাজির বাটি থেকে ভাইয়াকে নিতে বললো। সে এক চামচ উনার প্লেটে দিতেই কানে এলো, আর দিও না। এবার সে নিজের প্লেটে নিয়ে বলছে, এতো কম খেলে চলবে কি করে সিমা? উনার নাম নাসিমা,
সে ভালবেসে হয়তো কিছুটা কাটছাঁট করে বলে।
এবার গমগমে স্বর ভেসে এলো, এসব আমার জীবনেও আমি খাইনি। এটুকুই খেতে পারবো না,
আর তুমি আরো নিতে বলছো? দোলা কঠিন স্বরে বললো, সেটা বিয়ে করে আসার আগে তোমার ভাবা উচিত ছিল ভাবি। আমরা কখনো আমাদের মায়ের রান্নায় খুঁত ধরি না। দয়া করে সেটা তুমি মনে রাখলে খুশি হবো।
সাথে সাথে ই কোথাও অগ্নুৎপাত হলো যেন, আমি কি মায়ের রান্নাকে খারাপ বলেছি? তুমি শুধু শুধু ঝগড়া লাগানোর চেষ্টা করবে না বললাম। ভাইয়া এবার দোলাকে ধমকাচ্ছে, বেয়াদবের মতো তোর ভাবির সাথে কথা বলছিস কেন শুনি? এবার সেও বলছে,হক কথা বললে বেয়াদব ই বলে লোকে।অনেক দিন পর আমাদের বাসায় জোরে কথা বলা ও ঝগড়া হচ্ছে বলে, মা মনে হয় কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছিল, এবার দোলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, চটজলদি খেয়ে চুপচাপ যা। পরে বাসে উঠতেই পারবি না। এবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, শুধু বিয়ে করে নিয়ে এলেই হয় না, মেয়েটা কি খাবে না খাবে সেটাও খেয়াল রেখো। খাদ্যাভ্যাস একেক জনের একেক রকম হওয়া দোষের কিছু নয়…….বরং এটাই স্বাভাবিক।
ভাবি এবার একটু অবাক হয়ে দেখি মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি, সে ভাবছে এই মাড়হীন ত্যানাত্যানা কাপড় পরা মহিলা টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত শাশুড়ির মতো ঝগড়া না করে এতো ব্যাক্তিত্বময় আচরণ করছে কেমন করে? হিসেবে তো ঠিক মিলছে না !!! ভাইয়া বলে,
ঠিক আছে মা। ওকে জিজ্ঞেস করে নিয়ে আসব।
বিয়ের পর ভাইয়া চাকরি খোঁজায় আরো ঢিলেমি
শুরু করেছে মনে হলো। দোলা অবশ্য বলে,আরে
নিউলি ম্যারিডদের এসব কতো রং ঢং দেখবি। ভাবে ভঙ্গিতে মনে হবে, বাসাতেই স্থায়ী আবাস গড়ে তুলবে। আমার কেন যেন মনে হয়,প্রত্যেকটি
দিন যেন আমাদের পরিবারের কাছে আগের দিন থেকে কঠিন হয়ে পড়ছে। জীবন তার কঠোর রুপ যেন বারবার তুলে ধরছে। আমার বাবার সবকটি ভাইয়েরা দিব্যি দেশে বিদেশে ঘুরছেন, ভালো আছেন…….. শুধু আমার বাবাই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। আর মাকে রেখে গেলেন চারটি
বাচ্চার পাহাড় সমান দ্বায়িত্ব দিয়ে।
আমার মনে আছে এখনো,ছোটবেলায় আমার মা
রান্নাঘরে সবজি কাটতো আর ডাইনিং টেবিলে বসা আমাদের ৪ ভাইবোন কে বলতো, জোরে জোরে পড়ো। আমি যেন তোমাদের পড়া রান্নাঘর থেকে শুনতে পাই। সেভাবে পড়তে পড়তে এই পর্যন্ত আসা। সংসারের চাকা কিছু টা সচল আছে একমাত্র চারজনের টিউশনির বদৌলতে। মা অবশ্য বলে,টিউশনি কখনোই সংসার চালাতে পারে না বাবা,যদি আল্লাহ তাআলা এটাকে সংসার চালানোর উসিলা না বানিয়ে দিতেন। আজ বলছি সবাই মনে রেখো, কখনো টিউশনির টাকা হারাম ভাবে ঘরে আনবে না। আমি হেসে বলতাম, টিউশনির টাকা আবার হারাম ভাবে ঘরে আনা যায় কিভাবে? এটা তো ফিক্সড ই থাকে। এরচেয়ে বেশি কি কেউ দিবে না কি? মা বলতো,
টাকার কথা বলছি না। ধরো সময়ের ব্যাপার টা,
বলে ঢুকেছো দেড়ঘন্টা পড়াবে কিন্তু সময়ের আগেই উঠে পড়লে……… এটা হালাল হলো কি করে?
ভাইয়া তখন মাকে রাগাতো,আর ওরা যে কেউ কেউ ৫ তারিখ বেতন দিবে বলেও সময়মতো বেতন দেয় না সেটা কি মা? মা হেসে বলতো, সে তো সবারই সুবিধা অসুবিধা থাকতে পারে বাবা। এতো কিছু হিসেব করে কি আর দুনিয়া চলে?
একটা কাগজে কিসব লিখে, সাথে ৩০০ টাকা মা ভাইয়া কে দিল। ভাইয়া বলে,এইবেলা কোনোমতে চলা যায় না মা, তাহলে বিকালে একসাথে বের হতাম। আমি বেশ বুঝতে পারছি,ভাবী সামনে থাকায় মা কষ্ট করে রাগ কন্ট্রোল করছে। এবার বললো, কিছু থাকলে আমি কি আর বলি? কয়েকটি আলু ও টেংরার শুঁটকি আছে শুধু। যা তাড়াতাড়ি বাজারে যা। ছোট মাছ আর কিছু শাক
সবজি ২ দিনের মতো করে নিয়ে আয়।
দোলা, মেঘলা এসময় মাকে আদর করে বাইরে পা দিবে, ঠিক তক্ষুনি ভাবী বলল, আমি ছোটমাছ
শাকসবজি, শুঁটকি……… এসব কিছুই খাই না। ভাইয়া বলছে,কি খাবে বলো? উনি বললেন, চিকেন এনো। দোলা ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, খুব তাড়াতাড়ি চাকরি খোঁজো ভাইয়া।
নইলে কিন্তু খবর আছে। ভাবী এবার তীক্ষ্ম কন্ঠে বললেন, আমার সব কথাতেই তুমি কথা বলো কেন? দোলা বলছে, চোখে সমস্যা আছে নাকি? আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলছি, তুমি কেন নাক গলাচ্ছ শুনি? এবার তীব্র চিৎকার,হাদি তুমি দেখছো ও কি রকম অসভ্যতা করছে। দোলা কি যেন আবার বলতে যাচ্ছিল মা ধমক দিল দোলা
কে, খবরদার এই বাসার চিৎকার চেঁচামেচি কখনো কোনো দিন বাইরে যায়? এতো কথা বলিস কেন বেয়াদব মেয়ে কোথাকার !!! ভাবীর মুখে এবার রাজ্যজয়ের হাসি আর দোলা থমথমে
মুখে মাকে বলছে, আমার কি? তুমি আদর করে তোমার বৌকে চিকেন,মাটন সবকিছু আনিয়ে খাওয়াও। শুধু দেখো, কখন না আবার তোমার রক্ত বিক্রি করে এসব যোগাতে হয়। যে অবস্থা দেখছি, সেদিন খুব একটা দুরের পথ নয় দেখো।ঠাস করে দরজা খুলে ধুপধাপ শব্দে দোলা রাণী মেঘলা কে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন।
মা ঝুটা বাসন নিয়ে রান্নাঘরে যেতেই আমিও পিছু
পিছু বাকি বাসন নিয়ে গেলাম। এখন দেখি ভাইয়া এসে মাকে আস্তে আস্তে বলছে, আরো ৩০০/ টা
টাকা মোরগের জন্য দাও মা। এই টাকায় মোরগ হবে না তো। মায়ের বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে, আমার মার দিকে চেয়ে কানে বাজছে দূরদর্শী দোলার কথা, কখন না আবার তোমার রক্ত বিক্রি করে এসব যোগাতে হয়। মনে মনে আমি তখন জপছি, ইয়া আল্লাহ !!! রহম করুন আমার বিধবা মাকে। রহম করুন আমরা এতিম দের কে। আপনার রহমতের ছায়ায় আমাদের কে আশ্রয় দিন। কঠিন থেকে সহজ করে দিন জীবন কে। আমার মায়ের বাকি দিনগুলো আনন্দে, খুশি তে ভরপুর করে দিন। আপনার কাছে যা এক সেকেন্ডের ব্যপার মাত্র। আমি গোনাহগার এর দোয়া কবুল করে নিন ও আমার আল্লাহ।
###চলবে
###২য় পর্ব কালকে পাবেন ইনশাআল্লাহ