#জীবনসঙ্গী_৩
#Chhamina_Begam

এগারো টা বেজে গেছে। একটু পরেই মাহির মেহেন্দির অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে । অনুষ্ঠান বাড়ি ভিতর রাখা হয়েছে ছাদের ওপর । আদিলাকে ওর আম্মু আগেভাগেই খেয়ে নিতে বলেছিল । কিন্তু আদিলা উত্তেজনার বশে কিছু খেতেই পারেনি । মাহিকে মেহেন্দি পরানো হয়ে গেলে আদিলা নিজের হাতে লাগাবে । কিন্তু মাহির মেহেন্দি লাগানো শেষ হতে হতে আরও অনেকগুলো ছোট ছোট বাচ্চা, ওর মামী ,মামাতো বোন সবাই এসে হাজির ।সবাইকে মেহেদি লাগিয়ে দিতে হবে ‌। এতো গুলো হাত দেখে আদিলার পিলে চমকে গেছে। তবুও সবাইকে মেহেন্দি লাগানো হয়ে গেলে আদিলা নিজের বাম হাতে মেহেন্দি লাগিয়ে নিল । কিন্তু মুশকিল হলো ডানহাত নিয়ে । ও দুই হাতেই মেহেন্দি পরতে ভালোবাসে । কিন্তু বাম হাতে মেহেন্দি লাগানোর জন্য ও সেই হাত দিয়ে ডান হাতে দিতে পারছে না । ইতিমধ্যে ঘন্টার কাটা একের ঘরে পৌঁছে গেছে । সেই কোন সকালে একটু নাস্তা করেছে । তারপর এই বেলা অবধী

মাহি বিছানায় বসে হাত মেলে দিয়ে মেহেন্দী শুকাচ্ছে । আদিলা উকি মেরে দেখল শুকিয়ে গেছে । নিজের ডান হাত মেলে ধরে বলল ,
– “আপু আমি এই হাতেও মেহেন্দি লাগাব । কিন্তু একা একা দিতে পারছিনা । দিয়ে দে না প্লিজ ”
মাহি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
– ” আমার টা শুকিয়ে গেছে । একটু দাঁড়া । আমি হাতটা ধুয়ে আসি । ”
-“আচ্ছা ”

মাহি হাত ধুয়ে এসে আদিলার ডান হাতে লাগিয়ে দিল । আদিলা তো খুব খুশি। কারণ মেহেন্দির ডিজাইন ওর খুব পছন্দ হয়েছে । কিন্তু একটু পরেই আদিলার হাসি মুখ চুপসে গেল । কেননা পেট তখন গুড়গুড় আওয়াজ শুরু করে দিয়েছে । সেই কোন সকালে নাস্তা করেছে! এক্ষুনি কিছু একটা খাওয়া দরকার । । কিন্তু কিভাবে ? হাত দুটো তো…. আদিলা হাতের দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে বকে দিল । কি ক্ষতি হত আগে খেয়ে নিলে ? না হয় দশ মিনিট দেরি হত । তবুও তো এখন এই যন্ত্রণা সহ‍্য করতে হতো না । আদিলা রান্নাঘরে গিয়ে ওর আম্মুকে বলে খাইয়ে দিতে । কিন্তু ওর আম্মু তখন রান্না নিয়ে ব্যস্ত । দায়িত্ব দেওয়া যায় এমন কাউকে আশেপাশে না পেয়ে সাফ মানা করে দিলেন আদিলাকে । এদিকে ক্ষিদেয় পেট চো চো করছে আদিলার । মনে হয় পেটের ভিতর মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে । এখন কি করবে ও ? একটু ভেবে সে মাহিকে ডাকতে গেলো । কিন্তু গিয়ে দেখে মাহি আরমানের সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত । মাহিকে এই মুহুর্তে বিরক্ত করা ঠিক হবে না ভেবেও সে ডাকলো মাহিকে ,
-” আপু ”
-” কি হয়েছে রে ” মাহি ফোনের স্পিকারে হাত চাপা দিয়ে বলে ।
-” আমার খুউউব খিদে পেয়েছে ।কিন্তু হাতবন্ধ । খাইয়ে দাও না ”
আদিলার শুকিয়ে যাওয়া মুখখানা দেখে খুব মায়া হয় মাহির । বলে,
-” আচ্ছা। দুই মিনিট দাঁড়া ” বলে আরমানকে বিদায় জানিয়ে কল কেটে দেয় ।
– ” তুই এখানে বস । আমি খাবার নিয়ে আসি ”
-” হুম , প্লিজ ”

মাহি রান্নাঘর থেকে আদিলার জন্য মাছ ভাজি আর ডাল ভাত নিয়ে আসে । আদিলা ভেবেছিল মাহি হয়তো ওকে খাইয়ে দেবে । কিন্তু যেই মাহি হাত ধুয়ে ওকে খাইয়ে দিতে বসল অমনি আবার ফোন বেজে উঠল । ফোনের স্ক্রিনে ভেসে উঠল একটি হাসি মুখ ‘ আরমান কলিং ‘ । একটু বিব্রত হল মাহি । কাচুমাচু হয়ে বলল,
-” একটু দাঁড়া , আমি এক্ষুনি আসছি ”

কিন্তু মাহি সেই যে গেল আর পাত্তা নেই। কি আর করার ? আদিলাও আর ডাকলো না । খাবারের প্লেটটার দিকে হতাশ হয়ে তাকিয়ে রইল । একবার ভাবল হাত ধুয়ে খেয়ে নেবে । কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ল মাহি আপু অনেক যত্ন করে লাগিয়ে দিয়েছে । তাই ধুয়ে ফেলতে ইচ্ছে করল না । থাক না আর একটু । শুকোতে আর কতক্ষণ লাগবে ? কিন্তু পেট বাবাজী মানুষের আবেগকে বুঝলে তো ! সে তার নিজস্ব ছন্দে জানিয়ে দিচ্ছে এই মুহুর্তে তাকে কিছু ঘুষ দিতেই হবে । না হলে সে হট্টগোল শুরু করে দেবে । পেটটা মোচড় দিয়ে উঠছে । হঠাৎ করেই ভীষণ কান্না পেল আদিলার । বুভুক্ষুর মতো একদৃষ্টে চেয়ে রইল প্লেটটার দিকে । যেন কতকাল তার তৃষ্ণা মেটেনি !

সেই সময় রাহাত মাহির রুমের সামনে দিয়ে ফাহিমের রুমে যাচ্ছিল গোসল করতে ।মাহির রুমের দরজা খোলা থাকায় দেখতে পেল আদিলা খাবার সামনে নিয়ে মন খারাপ করে বসে আছে। রাহাতের মনে হল এই সুযোগে সরি বলে আসা যায় । অন্য সময় তো ফ্রি পাওয়া যায় না ওকে । সারাদিন ছোটাছুটি করে বেরোচ্ছে । আর না হলে কেউ না কেউ সঙ্গে থাকছেই । নক করলে আদিলা মাথা তুলে তাকায় । এমনিতেই ক্ষিদের চোটে চোখে সরষে ফুল দেখছে সে । রাহাতকে দেখে রাগের মাত্রা আর এক ধাপ উপরে উঠে গেল । কিন্তু ক্লান্ত চোখ দুটো দিয়ছ সেই রাগের বহিঃপ্রকাশ ঠিক মতো হল নি । রুমে ঢুকে রাহাত আদিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে ,
-” হাই ”
আদিলা জবাব দেয় না ।
-” আই এম রিয়েলি সরি ফর দ‍্যাট ডে । আসলে আমারও এগারোটায় ট্রেন ছিল । আর পৌঁছতেও একটু দেরি করে ফেলেছিলাম । ট্রেন মিস করলে আমাকে আরো তিন ঘন্টার মত অপেক্ষা করতে হত। তাই আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারিনি । সরি ”

– “আচ্ছা ঠিক আছে” দায়সারা ভাবে বলল আদিলা । এই মুহুর্তে এই লোকটাকে অসহ‍্য লাগছে ওর । কেন যাচ্ছে না ? আদিলার কথা শুনে রাহাত ভ্রু কুচকে গেল । এত ঠান্ডা রিয়াকশন ! কিন্তু ফাহিম তো আমাকে অন‍্য কিছু বলেছিল । যাই হোক । ব্যাপারটা ভালোই ভালোই মিটে গেল এই যথেষ্ট । রাহাত বাইরে বেরিয়ে আসতে নিলে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে ,
-” সরি ফর লি কোয়েশচেন । বাট তুমি খাচ্ছ না কেন ?”
-” তা জেনে আপনার কাজ কি ? “প্রায় ঝাঝিয়ে উঠল আদিলা । রাহাত হতচকিয়ে গেল । হলো কি এই মেয়ের ? এখনই তো ঠিক ছিল । আর এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কি এমন হল যে এতটা রেগে গেল ! তখনি নজর পড়ল টেবিলের ওপর রাখা খাবারের প্লেটটার দিকে । ভালো করে নিরীক্ষণ করল আদিলাকে । শুকনো মুখ আর হাতের মেহেন্দি দেখে বুঝতে বাকি রইল আদিলার এমন আচরণের কারণ কি ।খুব মায়া হল রাহাতের । করবে না করেও গলা খাকড়ি দিয়ে সংকোচমিশ্রিত গলায় জিজ্ঞেস করেই বসল সে আদিলাকে ,
-” যদি কিছু মনে না করো আমি খাইয়ে দিতে পারি । তুমি কি খারাপ খুব ভাববে আমি খাইয়ে দিলে ? ”

নিজের কথাটা নিজের কাছেই বড়ো বেখাপ্পা শোনাল রাহাতের । তবুও এক অজানা কারণে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি সে । খুব লোভ হচ্ছে এই সুন্দর মুহুর্তটাকে উপভোগ করার । কিন্তু আদিলা কি রাজি হবে ? ওর কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায় আদিলা । দৃষ্টিতে এক কৌতুহলী ভাবের সাথে আড়ষ্টতা মিশে আছে । হতভম্ব হয়ে আছে সে । এমনটাও কেউ করে নাকি ? এক অপরিচিত লোকের হাতে কেন খাবে সে ? কি হয় সে তার ? কিন্তু অবচেতন মন থেকে কেউ একজন বলে উঠল খেয়ে নে আদিলা । এই মুহূর্ত তোর জন্য খাওয়াটা বেশি জরুরী । এর সাথে হিসাব নিকেশ তো তুই পরেও বুঝে নিতে পারবি । আইডিয়াটা সঙ্গত মনে না হলেও মনে ধরল আদিলার ।
আদিলাকে চুপ থাকতে দেখে রাহাত বলল ,
-“দেখো তুমি তো জানোই একটা বিয়ে বাড়িতে কত রকমের কাজ থাকে ? সবাই এখন নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত । তাই আমি যদি তোমাকে খাইয়ে দিই তোমার কি খুব খারাপ লাগবে ? ”

আদিলার মনে হল সাথে সাথে হ‍্যাঁ বলে দেওয়াটা বেহেয়াপনা হয়ে যাবে । তাই একটু গাইগুই করে বলল,
-” আচ্ছা ”

রাহাত একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
– “ঠিক আছে। একটু বসো । আমি হাতটা ধুয়ে আসি ।”
আদিলাও একটা মিষ্টি হাসি দিল। হাত ধুয়ে এসে রাহাত বিছানায় বসে আদিলাকে কাঁটা বেছে বেছে খাইয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল ,
-” তুমি মাংস খাও না ? মাংস রান্না করেছে তো ”
-“আসলে আমি মাংস একটু কম খাই “,
-“ও আচ্ছা ”

বেলকনি থেকে রুমে এসে মাহি হতভম্ব হয়ে যায়।অবাক হয়ে দেখছে খুব যত্ন সহকারে আদিলাকে খাইয়ে দিচ্ছে রাহাত । ওর খুব ভালো লাগলো দৃশ্যটি দেখে । বলল,
– ” বাবা ! আজ তো দেখছি সূর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে ।এর মধ্যেই তোদের প্যাচ আপ হয়ে গেল ? ”
আদিলা আর রাহাত দুজনেই সলজ্ব হাসি দিল ।
-“আচ্ছা , আচ্ছা। এত লজ্জা পেতে হবে না তোদের । আমি কিছু দেখিনি ,,, ” মাহি বলে হেসে দেয় । তারপর আবার বলে ,

-“আচ্ছা তোরা বস । আমি একটু আম্মুর সাথে দেখা করে আসি ,”
মাহি বেরিয়ে গেল ।

আদিলার খাওয়া শেষ হলে রাহাত হাত ধুয়ে মুখটা মুছিয়ে দেয় ।এতে আদিলা একটু লজ্জা পেয়ে যায় । মা , ভাইয়া ছাড়া বড়ো হওয়ার পর এই কাজটা আর কেউ করেনি ।
– “এ হে ! এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? তুমি কি এখন তোমার মেহেন্দি লাগানো হাত দিয়েই মুখ মুছতে নাকি ? ”
আদিলা মুচকি হাসি দিয়ে বলল ,
– ” থ‍্যাঙ্ক ইউ “,
– ” মোস্ট ওয়েলকাম ”
– “এতক্ষণে মনে হচ্ছে প্রাণটা ফিরে এলো আমার” আদিলার স্বতস্ফূর্ত কথায় রাহাত হাসল ।
– ” খাওয়া দাওয়া করলে জন্য এমন মনে হচ্ছে? ” – “আসলে আমি একদম খিদে সহ্য করতে পারিনা ”
– “ও আচ্ছা, তাই এরকম বাচ্চাদের মত কান্না করছিলে? ”
– “আমি ? কোথায় কান্না করলাম ? আর আমাকে কোনদিন থেকে বাচ্চা মনে হচ্ছে আপনার ? ”
– ” সব দিক থেকেই । বাচ্চারা যেমন খিদে পেলে কান্না করে তুমিও তেমনি কাদো কাদো মুখ করে বসে ছিলে । ”
আদিলা চোখ সরু করে রাহাতের দিকে তাকায় ।
– আচ্ছা, আচ্ছা । আর বলব না আমি”
বলে রাহাত একটা মিষ্টি হাসি দেয় । আদিলা হাসিটা খেয়াল করে মৃদু হাসে । তারপর সম্বিত ফিরতেই নিজের আচরণেই অবাক হয়ে যায় ।
– “আচ্ছা তাহলে পরে কথা হবে । আমি এখন আসি”
-“হুম ” মাথা দুলিয়ে সায় দেয় আদিলা ।
রাহাত বেরিয়ে যেতেই স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে আদিলা ।

বিকেল হতে হতে মাহিদের পুরো বাড়িটা আত্মীয়-স্বজনে ভরে গেল। ছাদের মধ্যেই মাহির হলুদের অনুষ্ঠান আরম্ভ হলো বিকেল চারটায় ।এক এক করে মাহির আম্মু ,মামি, প্রতিবেশী সবাই ওকে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে । আদিলাও একটা সুন্দর হাসি দিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিলো মাহির গালে ।
মাহির ফুফাতো বোন মেঘনা বলল,
-“চলো কিছু নাচ গান হয়ে যাক ”
সবাই তার কথায় সায় দিয়ে বলল “ওকে হয়ে যাক”।

মাহিকে আজ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে হলুদ শাড়িতে । ও আজ হলুদ রঙের ফুলের গহনা পড়েছে । পরীর মতো সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে । পুরো ছাদ হলুদ রঙের আর্টিফিশিয়াল ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে । যেন হলুদের মেলা বসেছে আজ ।

মেঘনা একটি বলিউড গানে তালে তাল মিলে নাচল ।এরপর সবাই আদিলাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিল ডান্স করার জন্য । আদিলা ইতস্তত করে বলে ,
– “কিন্তু আমি তো কোন প্রিপারেশন করিনি । কিভাবে করব আমি ? ”
– “কোন ব্যাপার না। তুই তো ভালো নাচ করিস । তুই পারবি করতে । কর না প্লিজ একটা ” মাহি অনুরোধ করে ।
– ” আচ্ছা। ঠিক আছে ” আদিলা সম্মতি জানায় ।
DJ তে বাজছে নেহা কাক্কার এর নতুন “yaad piya ki aane lagi..”.গানটি ।আদিলা গানের তালে তালে খুব সুন্দর করে নাচলো । নাচ শেষ হতেই চারিদিক থেকে হাততালির বৃষ্টি হতে লাগলো । ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে রাহাত ও হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে মুখে অপার মুগ্ধতা। এতটা মুগ্ধ সে কবে হয়েছিল কোনো মেয়েকে দেখে ? হ‍্যা মনে পড়েছে । ক্লাস এইটে থাকতে স্কুলের এক শিক্ষিকা কে ওর খুব ভালো লাগত । তিনি যখন শুধু একটা পাঞ্চ ক্লিপ মেরে চুল খুলে রাখতেন তখনও এই রকম মুগ্ধহয়ে দেখত রাহাত । যখন শাড়ি পড়ে ক্লাসের কড়িডর দিয়ে অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে গল্প করতে করতে আসতেন তখনও এই ভাবেই মুগ্ধ হত রাহাত । সে অবাক হয় । ভাবতেই পারছে না বিনা প্রস্তুতিতে কেউ এত সুন্দর ডান্স করতে পারে !

রাত্রে ডিনারের পর মাহি ,ফাহিম, মেঘনা ,আদিলা, রাহাত, জিসান, সায়ন সব কাজিনরা মিলে ছাদে আড্ডা দিতে বসেছে । ছাদের মধ্যে কাঠখড়ি দিয়ে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করেছে জিসান। সবাই গোল হয়ে বসে আছে আগুনের চারপাশে। মাহির পাশে আদিলা, মেঘনা আর জিসান, সায়ন একসাথে আর ফাহিম, রাহাত একসাথে বসে আছে। সবাই নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছে ।ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি হলেও এখনো শীত যায়নি ।হালকা হালকা শীতে আর পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় রাতকে আরো বেশ মায়াবী করে তুলেছে । মেঘনা হঠাৎ বলে ওঠে ,
– ” আচ্ছা এমন রোমান্টিক ওয়েদারে গান হলে কেমন হয় ? ”
সবাই সম্মতি জানালে মেঘনা গান ধরে,
.. থোরি জাঘা দে দে মুঝে
তেরে পাছ কাহি র‍্যাহে জায়ু মে …

গান শেষ হতেই ফাহিম আদিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে “বুনু তুই একটা গান কর “। সাথে মাহিও জোর করে । ওদের দুজনের সাথে সাথে বাকিরাও একসঙ্গে বলে ওঠে প্লিজ একটা গান করো । অবশেষে গান গেয়ে ওঠে আদিলা …..
একদিন আপ য়ু হামকো মিল যায়েঙ্গে
ফুল হি ফুল রাহো মে খিল যায়েঙ্গে
ম‍্যায়নে সোচা না থা

সবাই মুগ্ধ হয়ে আদিলার গান শুনতে থাকে । সত্যিই আদিলা খালি গলাতে খুব সুন্দর গান গায় । রাহাত মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে আছে আদিলার দিকে । গান শেষ হলে সবাই জোরে হাততালি দিয়ে ওঠে ।
ফাহিম বলে,
– “রাহাত তুইও তো খুব সুন্দর গান গাইতে পারিস । একটা শোনা না ।”
রাহাত মুচকি হাসে ,

….লোগ ক‍্যাহতে হে পাগাল
হু মে ইয়েভি না জানু
দিল লুটায়া হে ম‍্যায়নে অব কিছিকি না মানু।
চ‍্যান লে কার কে ম‍্যায়নে বেচ‍্যানিয়া ইয়ে লি হে,
নিন্দে উরাকে ম‍্যায়নে তুমসে বাফায়ি কি হে
কসাম কি কসাম হে কাসাম সে
হামকো প‍্যায়ার হে সেরফ তুমসে,,,,

সবাই মুগ্ধ হয়ে রাহাতের গান শোনে । মেঘনাও মুগ্ধ হয়ে যায় । গান শেষে সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে , সাথে আদিলাও । এরপর সবাই যে যার মতো ঘুমুতে চলে যায় । কিন্তু রাহাত বসে থাকে ছাদে । অদ্ভুত লাগছে ওর । কেমন অচেনা মনে হচ্ছে নিজেকে ‌। এই নতুন আমিটাকে চিনতে বেশ কষ্ট হচ্ছে ওর । অনুভূতি গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে । বুঝেতে পারছে না সে । এই গানটাই কেন গাইল আজ ? অনেক ভাবে সে । ভেবে ভেবে রাতগাঢ় থেকে গাঢ়তর হয় ।

To be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here